ছলেমানের মাথা ভন ভন করে ঘুরছে। সে ভেবে পাচ্ছে না - এটা কিভাবে সম্ভব? ত্রিশ বছর পর তালেব ব্যাপারীর লাশ কিভাবে অবিকৃত রইল? অথচ এই ত্রিশ বছরে তার কোন অস্তিত্বই থাকার কথা না। পন্ঞ্চ ভুতের উপাদানে তৈরী এ মানব দেহ মৃত্যু নামক বিষয়টির সাথে জড়িত। প্রতিটি ভুতের ভৌত উপাদানগুলো সেই ভুতের সাথে মিশে যাবার কথা। অথচ তা না হয়ে হলো উল্টাটা। সেই দেহটি রইল অবিকৃত। এটা কিভাবে সম্ভব হলো ?
চিন্তায় বিভোর ছলেমান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। অথচ সে তার মাথা থেকে সম্পূর্ণ চিন্তাটি মুছে ফেলতে পারছে না। সে তার দোকান সাদিয়া জুয়েলার্স থেকে বের হয়ে পাশের টং দোকানে চা খেতে গেল। দোকানী রহিম ব্যাপারী জানে ছলেমান ভাই সবসময় হাসি খুশি মানুষ। দেখা হলেই সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে। জানতে চায় সার্বিক অবস্থা। সেই ছলেমান ভাই আজকে কেমন যেন মন মরা লাগছে। কোন কথাই বলছে না। সে চা দিতে দিতে বললোঃ
- কি ব্যাপার ছলেমান ভাই? কেমুন জানি দেহাইতাছে আপনারে? কি হইছে? শরিলডা কি খারাপ?
- না রে ভাই। সেইরকম কিছু না। মনডা একটু খারাপ।
-মনের আবার কি অইলো?
-আরে ভাই সকালে নামাজ পইর্যা দোকানে আহনের সময় সুরুজ বাইয়ের লগে দেহা। হেয় কইলো মোতালেব ব্যাপারীর বাপ তালেব ব্যাপারীর লাশ নাকি বাইর অইছে। আর হেই লাশ নাকি একটু্ও পঁচে নাই।
-কও কি? ওর বাপতো মারা গেল না অইলেও বিশ পঁচিশ বৎসর অইলো। হেই লাশ পঁচে নাই-এইডা কেমুন কথা?
-আরে বাই আমিওতো হেই কতা ভাবতাছি। এইডা কেমতে সম্ভব?
-আরে আল্লাহয় চাইলে কি না অয়? মালিকের দয়া অইছে। হের লাইগ্গ্যা হয়তো অয় নাই...
-অইবার পারে। কিন্ত্তু..তারপরও
-তুমি কি দেকছো?
-না। আমি দেহি নাই। তয় হুনছি গ্যারামের বেবাকতে দেকছে।
-হুনছি সাংবাদিকও নাকি ঢাকা থিক্কা আইছিল। হেরা বেবাক খবর লইয়্যা গেছে। বিষয়ডা বড়ো আচানক ঠেকতাছে...এমুন একটা খবর আর আমি দেকতে পারি নাই?
তাদের কথা বার্তার মাঝে কবির সিকদার এসে উপস্থিত হয়। সে এসেই রহিমের কাছে পানি চায় আর একটা সিগারেট চায়। পানি পান করে সে সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে বলে
-ছলেমান রাইতে বারিত আহিস। আমাগো পীর সাহেব আসবো...
-তাইলে তো ভালয় অয়। একটা জিনিস জাননের আছে। হের কাছ থিক্কা জানতে পারমু।
-কি জানতে চাস?
-আরে ঐ যে হেই ঘটনাটা..
-কোনডা...
-মোতালেইপ্যার বাবার ঘটনাডা
-ও। আরে আমি গেছিলাম দেকতে..যাউগ্যা তুই রাইতে বারিত আহিস। কতা আছে তোর লগে... আমি যাইগ্যা। সবাইরে দাওয়াত দেওন লাগবো।
কবির সিকদার হন হন করে হেঁটে চলে যায়। ছলেমানের মনে কি যেন একটা চিন্তা আসে। সে বেশ খুশি হয়। তার মনে হয় সে তার চিন্তার একটা কুল কিনারা করতে পারছে..তার ভাবনার বিষয়টি হয়তো সে জানতে পারবে...এ আনন্দে তার চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
(চলবে)