পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫

লেজওয়ালা মানুষ-দ্বিতীয় পর্ব

(পূর্ব প্রকাশের পর)

চিড়িয়াখানার পাশেই একটা খালি জায়গায় রিক্সাটা থামলো। রিক্সা হতে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ভবাকে বললাম -চলুন আগে কিছু খেয়ে টেনে নেই। তারপর ধীরে সুস্থে যাওয়া যাবে। ভবা মাথা নেড়ে সায় দেয়ায় পাশের একটা টং দোকানে বেন্ঞ্চিতে বসতে বসতে দোকানীকে বললামঃ মামা দুইটা চা আর বিস্কুট দেও। দোকানী আমার দিকে একবার আরেকবার ভবার দিকে আড় চোখে তাকালো। ভবার পোষাক আষাক দেখে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষিত করছে। গলায় ঝুলছে একটি ছবি। থুতনিতে হাল্কা দাঁড়ি। মাথায় ঝাঁকড়া চুল। চুলগুলো উসকো খুসকো। আর গায়ে একটা চটের বস্তা। এককোণে তা চাদরের মতো করে মোড়ানো। লুঙ্গী কখনো ধুয়েছে বলে মনে হয় না। রংচটা হয়ে গেছে। গা হতে বিশ্রী গন্ধ আসছে। কিন্ত্তু আশ্চর্য্য হলেও সত্য যে সেটাতে ঘৃণার উদ্রেক করছে না। কেমন যেন বোটকা গন্ধ। দোকানী চা আর বিস্কুট দিল। খেয়ে শেষ করলাম। তারপর দুজনে সিগারেট ধরালাম। উর্ধ্বগগণের দিকে তাকিয়ে বেশ কায়দা করে সিগারেটটা টানছে ভবা। দেখতে বেশ লাগছে। আশে পাশের লোকগুলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্ত্তু কেউ সাহস করে কিছু বলছে না বা জানতে চাইছে না। আমিও বেশ ভাব নিয়ে সিগারেট টানছি। সিগারেট খাওয়া শেষ করে টিকেট কাউন্টারে গেলাম। দুটা টিকেট কাটলাম। তারপর লাইন দিলাম। সামনে আমি। পেছনে ভবা। তার পেছনে অনেক মানুষজন দাঁড়িয়ে আছে। গেটের কাছে আসতেই গেটকিপার ভবাকে ঢুকতে দিচ্ছে না। ধমকের সুরে বলছেঃ

-এ্যাই তুই এইখানে কি করস? বাইরো বাইরো..

ভবা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ভড়কে গেলেও সে সাহস নিয়ে বললঃ

-টিকেট কাটছি। ট্যাকা দিছি। চিরাখানা দেখুম।

-তোর চিড়িয়াখানা দেখা লাগবো না। 

ভবাকে বের করার জন্য টানা হেঁচড়া শুরু করে দিল। লাইনটা বড়ো হওয়ায় একটা গোলযোগ সৃষ্টি হলো। লোকজন বলাবলি করছে-ওই ব্যাটা পাগল বলে কি ওর স্বাদ আহ্লাদ বলে কিছু নাই। কোন্ আইনে আছে যে পাগলরা চিড়িয়াখানায় ঢুকতে  পারবো না? ছাড় ওরে। ছাড়। ঐ বাই আপনে ঢুকেন। দেখি কোন হালায় আপনেরে আটকায়...চিৎকার চেঁচামেচিতে দাড়োয়ান বেশি সুবিধা করতে পারলো না। ভবাকে ঢুকতে দিল। যে প্রতিবাদটা আমার করার কথা সেটা করলো জনগণ...

নির্বিকার ভবা বেশ আহ্লাদিত। বেশ খোশমেজাজে আছে বলে মনে হলো। আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললোঃ

-যা বলেছিলাম মনে আছেতো?

-হুম।

-তাইলে চলেন শুরু করি। কোন্ দিকটায় যাওন যায়..চলেন ঐদিকটা দিয়া শুরু করি।

ভবা দেখলো যে পুর্বদিকটায় বেশ জটলা পাকিয়ে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। ইশারায় সেই দিকটা দেখিয়ে যেতে বললো। আমি ভবার অনুসরণ করলাম কিন্ত্তু কেন সেদিকটায় যেতে চাইলো সেটা বললো না। 
একে একে ঘুরে ঘুরে বাঘ, ভাল্লুক, উল্লুক, সিংহ, হাতি, উটপাখি,ময়ুর,বানর, শিয়াল ইত্যাদি যাবতীয় প্রাণী দেখা শেষ করলো। বেলা বেশ চড়ে গেছে। সুর্যের আলোর তেজ যেন বর্ধিত হচ্ছে। শরীরে বেশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। ভবাকে বললামঃ

-চলুন বের হই।

-আরে যাদুঘর দেখুম না? চলেন যাদুঘরে যাই।

আমি আর কি করবো যাদুঘরে গেলাম। সেখানে মৃতপ্রাণীদের সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি প্রাণীর নাম বাংলা এবং ইংরেজীতে বৈজ্ঞানিক নামসহ কোন্ দেশ হতে আনা হয়েছে, কবে মারা গেছে তার সন তারিখ উল্লেখ করা আছে। অবশেষে সব দেখা শেষ করে বের হলাম। ঘড়িতে তখন প্রায় তিনটা ছুই ছুই করছে। খিদেয় পেটও পোড়াচ্ছে। কি আর করবো শেষ মেশ একটা ইটালিয়ান হোটেলে ঢুকে দুজনেই ভাত আর ডিম-ডাল দিয়ে আহার শেষ করলাম। তারপর চলে গেলাম পাশের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। সেখানে একটা গাছের নিচে বসলাম। তারপর চলে এলাম মুল আলোচনায়। ভবাকে বললামঃ

-এবার বলেন কেন আমাকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসলেন? আর লেজওয়ালা মানুষতো পুরো চিড়িয়াখানা জুড়ে ঘুরে ঘুরে কোথাও দেখতে পেলাম না। এমন কি যাদুঘরেও নেই। তাহলে লেজওয়ালা মানুষ কই?

আমার এমন কথা শুনে ভবা খ্যাক খ্যাক করে এমন বিচিত্রভঙ্গীতে হাসতে লাগলো যে আমি ভবার দিকে অবাক দৃষ্টিকে তাকিয়ে রইলাম।
(চলবে)