পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০১৫

লেজওয়ালা মানুষ-তৃতীয় পর্ব

(পূর্ব প্রকাশের পর)

আমি তাকে প্রশ্ন করলামঃ

-আপনি এভাবে হাসছেন কেন?

-হাসির কথা বলছো। তাই হাসলাম। শোন,  তোমাকে চিড়িয়াখানায় আনছি দুটি কারণে। প্রথম কারণ হলোঃ পশু-পাখিদের আচার আচরণ প্রত্যক্ষ করার জন্য। আর দ্বিতীয় কারণ হলোঃ তাদের সাথে মানুষরুপী জীবদের তুলনা করার জন্য। কারণ  প্রতিটি জীবই স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্টের অধিকারী। তা সে মানুষ হোক আর প্রাণীই হোক। স্রষ্টার মহত্ত্ব এইখানেই। তিনি কাউকে সমান বৈশিষ্ট্য দিয়ে তৈরী করেননি। তাই পশুদের মাঝেও কম-বেশি আচার আচরণে পার্থক্য দেখা যায়। যা তুমি ইতঃপুর্বে দেখেছো। ঠিক বলছি কি-না?

-জ্বি। বানরের যে বাঁদরামি তা অন্য প্রাণীর নেই। ময়ুরের যে পেখম আছে তা অন্য পাখিদের নেই।

-কিন্ত্তু কোন পশুর মধ্যে তুমি মানবতা নামক গুণ দেখতে পাবে না। অথচ প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কমবেশি পাশবিকতা দেখতে পাবে। এর কারণ কি?

-মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। তাই। 

-আশরাফুল মাখলুকাত? আশরাফুল মাখলুকাত বলতে যা বোঝায় মানুষরপী জীব কি বোঝে যে সে আশরাফুল মাখলুকাত? সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে হলে যে গুণাবলী অর্জন করতে হয় তাতো অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই দেখা যায় না। সেওতো আকার প্রাপ্ত মানব। তাহলে পাশবিকগুণাবলী নিয়ে সে কি করে দাবী করে যে আশরাফুল মাখলুকাত? ভালো করে লক্ষ্য করো নাই হয়তো। একটু স্বরণ করার চেষ্টা করো। আমরা যে সময় বাঘের খাঁচার সামনে গিয়েছিলাম কি দেখেছি? দেখলাম হিংস্র বাঘটিকে একটি মানুষ আহার দিচ্ছে। তার গায়ে হাত দিচ্ছে। গলায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বাঘটি আরাম পেয়ে হয়তো তার সাথে খেলায় মেতেছে। অথচ বনের ভেতর হলে তা কি সম্ভব হতো? কারণটা কি? কারণ হলো ঐ বনের হিংস্র প্রাণীটি তার হিংস্রতা ভুলে মানবের গুণাবলী অর্জন করছে। তাই সে মানুষের সাথেই খেলায় মেতে উঠেছে। সেই বাঘটিকেই যদি জংগলে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে সে টিকতে পারবে না। কারণ সে যে মানবতার গুণাবলী পেয়েছে তাতে সে শিকার করবে কি করবে না তা নিয়ে সংশয়ে পড়ে যাবে। এমনতো হতে পারে যে তার জীবনও হারাতে পারে।

একটা পাগলের মুখে যুক্তিপুর্ণ কথা শুনে থ মেরে গেলাম। আর কথাগুলো এমনভাবে বলছে যেন সে পরীক্ষা করে দেখেছে। কি অবলীলায় বলে যাচ্ছে। তর্ক করার চাইতে তার কথা শুনতে বেশ লাগছে। 
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ভবা বললোঃ

-আমি কি বলছি তা কি তুমি বুঝতে পারছো?

-জ্বি চেষ্টা করছি।

-অথচ দেখ মানবের ভেতর যে হিংস্রতা আছে তা জানা সত্ত্বেও সে মানবীয় গুণাবলী বর্জন করতে চলেছে। সে বিকারগ্রন্থতায় ভুগছে। সে পশুর জীবনকেই আধুনিকতার সংস্পর্শে এনে তা ভোগ বিলাসে মত্ত হতে চলেছে। যেখানে কোরআন বলছেঃ ফিতরাতুল্লাহি ফাতারনাসা আলাইহা-তার সেই স্বভাব বা প্রকৃতির উপরই তাকে সৃষ্টি করা হইয়াছে। তার দায়িত্ব ছিলঃ তাখাল্লাখু বি আখলাকিল্লাহ - আল্লাহর গুণাবলী অর্জন করা। কারণ ছিবগাতুল্লাহি ছিবগাতান আল্লাহর রংয়ে রন্ঞ্জিত হওয়া। মুল কথা হলোঃ মানবতার গুণাবলী অর্জন করা। তা না করে সে করছে উল্টা।

(চলবে)