ভবা পাগলা দৌড়াতে দৌড়াতে একটা গলির ভেতর ঢুকে পড়লো। তার পেছনে জনা কয়েক
লোক লাঠি নিয়ে তাড়া করছে। চারদিকে একটা শোরগোল পড়ে গেল। ধর ধর শব্দ ছাড়া আর
কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। চেয়ে চেয়ে দেখা
ছাড়া কিছুই করার নেই। কিছুক্ষণ পর দেখলাম লোকগুলো দল বেঁধে আবার তাদের
গন্তব্যের দিকে চলে যাচ্ছে। কিন্ত্তু ভবাকে দেখা যাচ্ছে না। একটা অজানা
আশংকা নিয়ে এগিয়ে গেলাম। দেখি ভবাকে দেখা যায় কি-না? চারিদিকে চোখ বোলালাম।
না। তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তাহলে সে কোথায় গেল? না-কি তাকে মেরে
ফেললো? আর মেরে ফেললে তো তার লাশ থাকার কথা…তাওতো দেখা যাচ্ছে না। তাহলে
লোকটা গেল কোথায় ? ব্যর্থ মনোরথে ফিরে যাচ্ছিলাম। যেই গলির ভেতর ঢুকবো
ওম্মনি শুনলাম কে যেন ফিস ফিস করে বলছেঃ
-গ্যাছে?
চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করলাম। কিছু দেখা যায় কি-না? নাহ! কাউকে তো দেখছি না। ঠিক তক্ষুণি আবার শুনলাম সেই আওয়াজ
-গ্যাছে গা সব। ও ভাই কথা কষ না কেন? কুত্তাগুলি গ্যাছে….
খেয়াল করলাম যেখান থেকে আওয়াজটা আসছিল সেইদিকটায়। দেখলাম প্রাচীরের ওপাশ
থেকে ভবা পাগলা ক্ষাণিকটা মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিল। আমার
মনটা আনন্দে নেচে ওঠলো। যাক্ ভবা তাহলে এ যাত্রা বেঁচে গেল। আমি বললামঃ
-ভয় নেই। চলে আসুন। ওরা সব চলে গেছে।
আমার কথা শুনে কিছুটা আতংক নিয়ে আবারো চারিদিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে
নিল লোকগুলো আশে পাশে আছে কি-না? সাবধানী চোখে তাকিয়ে ঝপাৎ করে লাফ দিয়ে
প্রাচীরের ওপাশ হতে এপাশে এসে দাঁড়ালো। তারপর বললোঃ
-যাক কুত্তাগুলা যাওয়ায় কামড়ের হাত থেকে বেঁচে গেলাম।
-কুকুর দেখলেন কোথায়? ওরা তো মানুষ…
-মানুষ! ভবা বেশ অবাক হলো।
অবাক করা দৃষ্টি নিয়ে কিছুটা ঝুঁকে আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ
-মানুষ! তুই কি বুঝিস মানুষ কাকে বলে? হাতে লাঠি সোটা মুখে গালি আর মোটা সোটা দেহ নিয়ে বেড়ে ওঠা ওরা মানুষ?
বার বার মানুষ মানুষ শুনতে শুনতে কানের ভেতর কোন সমস্যা হচ্ছে না-কি কে
জানে? ভবা যেভাবে বলছে তাতে চারদিকে ঘুরে বেড়ানো পরিচিতমানুষগুলোকে দেখে
কি মনে হয় কে-জানে? আমি আবার তাকে প্রশ্ন করলামঃ
-তাহলে ওরা কি?
-ওরা কুত্তা। পাগলা কুত্তা।
-তারা আপনাকে তাড়া করছিল কেন?
-কেন আবার। কুত্তার কি কোন অজুহাত লাগেরে ব্যাটা। সামান্য ছুতা পেলেই
হলো। ব্যাস্ ঘেউ ঘেউ করে তেড়ে আসবে তোর দিকে। তুই কি বললি না বললি সেটাকে
তারা থোড়াই কেয়ার করবে।
কথা বলতে বলতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। আর আমার বড্ড জানতে ইচ্ছে করছিল –
কেন ভবা পাগলা ঐ মানুষগুলোকে কুকুর বলছিল। আর ঐ মানুষগুলোই বা কেন তাকে
মারতে চাইছিল? জানার আগ্রহ থেকে তাকে বললামঃ
-আপনি যদি কিছু মনে না করেন তো সমস্ত ঘটনাটা জানার আগ্রহ প্রকাশ করছি।
-কারণ জানতে চাস, না? ঠিক আছে। চল। তোকে বলি। যেহেতু তুই আমাকে ঐ
কুত্তাদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিস সেই সুত্র ধরেই তোকে সব বলবো। চেনাবো
ল্যাজওয়ালা মানুষগুলো কে। কিন্ত্তু তার আগে আমাকে কিছু কথা দিতে দিতে হবে।
-কি কথা?
-সেটা হলো তুই আমাকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাবি। কোন প্রশ্ন করতে পারবি না।
আমি যা যা বলবো যা যা দেখতে বলবো তুই ঠিক তাই করবি। তারপর তোর কথা শুনবো।
উত্তর দেব। তার আগে নয়।
-ঠিক আছে।
লেজওয়ালা মানুষগুলো দেখার আগ্রহটা জন্মে গিয়েছিল। তাই আর না করতে পারলাম
না। সাথে সাথে রাজী হয়ে গেলাম। আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে চিড়িয়াখানা খুব
বেশি দুরে নয়। রিক্সাভাড়া মাত্র বিশ/ত্রিশ টাকা। একটা রিক্সা ডেকে
চিড়িয়াখানার কথা বললাম। রিক্সাওয়ালা ওঠেন বললে আমি আর ভবা পাগলা রিক্সায়
ওঠে বসলাম। রিক্সা চলা শুরু করলো। ভবাকে রিক্সায় উঠতে দেখে রিক্সাওয়ালা
কেমন করে যেন তাকালো আমার দিকে। সেই কৌতুহলী দৃষ্টিগুলো আরো বেড়ে চললো যখন
রিক্সাটা ধীরে ধীরে চিড়িয়াখানার দিকে এগিয়ে চললো। সবাই গার্লফ্রেন্ড নিয়ে
বউ ছেলে-মেয়ে নিয়ে চিড়িয়াখানায় যাচ্ছে। আর আমি যাচ্ছি একটা পাগলের সাথে।
আমার দিকে তাকিয়ে ভবা মুচকি মুচকি হাসছে। আর কৌতুহলী দৃষ্টিগুলো প্রখরতা
নিয়ে আমার দিকে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। কেমন যেন বেক্ষাপ্যা লাগছে নিজেকে।
কিন্ত্তু কিছুই করার নেই। কেননা ভবাকে কথা দিয়েছি-কোন প্রশ্ন করবো না।
শুধু দেখবো। তাই দেখে যাচ্ছি আর মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে কৌতুহলী
মানুষগুলোর দিকে তাকাচ্ছি।
দেখতে দেখতে চিড়িয়াখানার কাছাকাছি চলে এলাম।
(চলবে)