সেজদায়ে তাজিমি এবং কিছু প্রাসংগিক কথা
সেজদায়ে তাজিমি-শব্দটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। একটি হলো সেজদা এবং অপরটি তাজিম। প্রশ্ন হলো সিজদা বলতে কি বুঝায় ? এবং অপরটি হলো তাজিম বলতে কি বুঝায়? এ দুটির ফয়সালা না হলে সেজদায়ে তাজিমি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পাওয়া কঠিন। সিজদাহর অাভিধানিক অর্থ হলো-বিনয়তা ও নম্রতা প্রকাশ করা। তাজিম শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো-সম্মান করা।
সুতরাং সেজদায়ে তাজিমি হলো-সম্মানের সহিত বিনয়তা ও নম্রতা প্রকাশ করা।
সেজদার প্রকারভেদ
ক) সেজদায়ে এবাদত - শুধুমাত্র আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত।
খ) সেজাদায়ে তাযিম - সম্মানসূচক সেজদা কামেল পীর অর্থাৎ ওলী আল্লাহদের জন্য আদায় করা হয়।
গ) সেজদায়ে তেলায়াত - কোরআন মজিদে সেজদার আয়াত পাঠ করার পর তা আদায় করা হয়।
ঘ) সেজদায়ে সাহু - নামাযের মধ্যে ভুল-ভ্রান্তি হলে তা শুদ্ধ করার জন্য আদায় করা হয়।
ঙ) সেজদায়ে শোকরানা - আল্লাহর অবদানের উপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য আদায় করা হয়।
আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সেজদাহ তাযিম।
সেজদায়ে তাজিম কার জন্য আদায় করা হয়ঃ
সেজদায়ে তাজিম অর্থাৎশ্রদ্ধার সেজদাহ কার জন্য আদায় করা হয়? যার হৃদয়ে আল্লাহর আরশ স্থাপিত।
হাদিস শরীফে আছে "কুলুবুল মো'মেনীনা আরশুআল্লাহ"। অর্থঃ- মু'মেন ব্যক্তির ক্কলব আল্লাহ পাকের আরশ। মু'মেন ব্যক্তি কারা? যারা আল্লাহ পাকের আরেফ বিল্লাহ অর্থাৎ সুফী সাধক, অলি আউলিয়া, পীর মাশায়েখগন।হাদিছে কুদছিতে আরো বলা হয়েছেঃ-"লা য়াযালো আবদী য়াতাকাররাবু ইলাইয়া বিন মাওয়াফিল হাত্তা উহিববোহু ফা ইযা আহবাব তুহু কুনতু সামউহুল লাযি ইয়াস মাউ বিহী ওয়া বাসারুহুল লাযী ইউবসেরু বিহী ওয়া ইয়াদুহুল লাতী ইউবতেশু বিহা ওয়া রিজলুহুল লাতী ইয়ামশী বিহা।"
অর্থঃ- "যখন আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অন্বেষণ করে তখন আমি তাকে ভালোবাসি আর আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শ্রবণ করে এবং তার চোখ হয়ে যাই যা দ্বারা সে দেখে। আর তার হাত হয়ে যাই যা দ্বারা সে ধরে বা স্পর্শ করে। তার পা হয়ে যাই যা দ্বারা সে চলাফেরা করে।"
অর্থাৎ আল্লাহর অযুদ (অস্তিত্ব) তার মধ্যে প্রস্ফুটিত হয়। আর যার মধ্যে আল্লাহ পাকের অস্তিত্ব প্রস্ফুটিত হয় একমাত্র তিনিই সেজদায়ে তাজিমি পাবার যোগ্য। এই সেজদার মধ্যে কোন শর্ত নেই।
পবিত্র কুরআনের আলোকে সিজদায়ে তাজিমির আয়াতসমুহঃ
১. "ওয়ালা কাদ খালাকনাকুম সুম্মা সাওয়ার না কুম সুম্মা কুলনালিল মালায়েকাতিস জুদুলে আদামা ফাসাযাদু ইল্লা ইবলিস লা ইয়া কুমমিনাস সাজদীন ।" - সুরা আরাফ আয়াত-১
অর্থঃ এবং নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করলাম। আবার আমি ফেরেস্তাদেরকে বললাম যে, তোমরা আদমকে সেজদা কর। তখন তারা সেজদা করল। ইবলিস সে সেজদা করেনি।
২. " কালা মা মানায়াকা আল্লা তাসজুদা ইজ আমার তুকা কালা আনা খায়রুম মিনহু খালাক তানি নারিন ওয়া খালাক তাহু মিন তীন।" - সুরা আরাফ আয়াত-২২
অর্থঃ আল্লাহ তায়ালা বললেন, তোমাকে কোন জিনিস বাধা প্রদান করলো যে তুমি আদমকে সেজদা করনি। যখন আমি তোমাকে আদেশ করলাম। সে (শয়তান) বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম তুমি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছ আর তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছ।
৩. "ফা ইজা সাওয়াইতুহু ওয়া নাফাকতু ফিহে মের রুহি ফা কাউলাহু সাজদীন।"- সুরা হাজর আয়াত-২৯
অর্থঃযখন আমি তাকে সম্পূর্ণভাবে তৈরী করব এবং তার মধ্যে আমার আত্মা ফুকে দিব। তখন তোমরা সকলেই (ফেরেস্তা) তার (আদম) সম্মুখে সেজদায় পড়ে যাবে।
৪. " ফা সাজাদাল মালায়ে কাতু কুল্লু হুম আজ মাউন।" - সুরা হাজর আয়াত-৩৩
অর্থঃঅত:পর সমস্ত ফেরেস্তা সেজদা করলো।
৫. "ইল্লা ইবলিসু আবা আইয়া কুনা মা আস সাজেদিন।" - সুরা হাজর আয়াত-৩১
অর্থঃ ইবলিশ ব্যতিত সে সেজদাকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল।
৬. " কালা ইয়া ইবলিসো মালাকা আললা তাকুনা মা আস সাজেদীন।" -সুরা হাজর আয়াত-৩২
অর্থঃ তিনি বললেন হে ইবলিশ কি ব্যাপার তুমি সেজদাকারীদের অর্ন্তভুক্ত হও নি।
৭."কালালাম আকুন লে আস জুদা লে বাশারিন খালাক তাহু মিন সালসালিন মিন হামায়িন মাসনুন।" -সুরা হাজর আয়াত-৩৩
অর্থঃ সে বলল আমি এমন মানুষকে সেজদা করবো না। যাকে তুমি কালো ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছো।
৮. "ওয়া ইজ কুল না লিল মালায়ে কাতিস জুদুলে আদামা ফাসাজাদু ইল্লা ইবলিস আবা।" - সুরা তোহা আয়াত-১১৬
অর্থঃ আর যখন আমি ফেরেস্তাদেরকে বললাম যে, আদমকে সেজদা কর। তখন সকলেই সেজদা করলো। কিন্ত্তু ইবলিশ ব্যতীত সে অস্বীকার করল।
৯. "ফা ইজা সাওয়াইতুহু ওয়া নাফাকতু ফিহে মের রুহী ফাকাউ লাহু সাজেদীন।"
অর্থঃযখন আমি তাকে সুন্দরভাবে সম্পূর্ণরুপে তৈরী করবো এবং নিজের আত্মা ফুকে দিব তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যাবে।
১০. "ফাসাজাদাল মালায়েকাতু কুল্লুহুম আজ মাউন ইল্লা ইবলিস ইস্তাক বারা ওয়া কানা মিনাল কাফেরীন।" সুরা সোয়াদ আয়াত-৭৩ ও ৭৪
অর্থঃ তখন সমস্ত ফেরেস্তা সেজদা করলো কিন্ত্তু ইবলিশ ব্যতীত। সে অহংকার করলো এবং কাফিরদের অর্ন্তভুক্ত হলো।
১১."কালা ইয়া ইবলিসো মা মানায়াকা আন তাসজুদা লেমা খালাকতু বে ইয়া দাইয়া আস তাকবারতা আম কুনতা মিনাল আলিন।" সুরা সোয়াদ আয়াত-৭৫, সুরা সোয়াদ আয়াত-৭২
অর্থঃ বললেন যে, ইবলিশ তোমাকে কোন জিনিস তাকে সিজদা করতে বাধা দিল যাকে আমি নিজের দুই হাত দ্বারা তৈরী করেছি? তুমি কি অহংকার করছো? বা তুমি কি আলিনদের(বড়লোক) মধ্যে নিজেকে গণ্য কর?
১২. "ওয়া ইজ কুলনা লিল মালায়ে কাতিস জুদুলে আদামা ফাসাজাদু ইল্লা ইবলিস কানা মিনাল জ্বিন্নে ফা ফাসাকা আন আমরে রাব্বেহী।" সুরা কাহাফ আয়াত-৫০
অর্থঃএবং যখন আমি ফেরেস্তাদেরকে বললাম যে আদমকে সেজদা কর। তখন সকলেই সেজদা করল। ইবলিশ ব্যতীত। সে বলল আমি কি? তাকে সেজদা করবো? যাকে তুমি মাটি দ্বারা তৈরী করেছ।
১৪."ওয়া ইজ কুলনা লিল মালায়ে কাতিস জুদু লে আদামা ফাসাজাদু ইল্লা ইবলিশ আবা ওয়াস্তাক বারা ওয়া কানা মিনাল কাফেরীন।" সুরা বাকারা আয়াত-৩৪
অর্থঃ এবং যখন আমি ফেরেস্তাদেরকে নির্দেশ দিলাম তোমরা আদমকে সেজদা কর। তখন সকলেই সেজদা করল ইবলিস ব্যতীত। সে অমান্যকারী হলো এবং অহংকার করল ও কাফির হয়ে গেল।
১৫." ওয়া রাফায়া আবা ওয়াই হে আলাল আরশে ওয়া খাররু লাহু সুজ্জুদান।" সুরা ইউসুফ আয়াত-১০০
অর্থঃ হযরত ইউসুফ (আ:) নিজের পিতা-মাতাকে সিংহাসনে বসাইলেন এবং সকলেই ইউসুফের (আ:) শ্রদ্ধার জন্য তার সামনে সেজদায় পড়ে গেলেন।
১৬."ইয কালা ইউসুফো লে আবিহে ইয়া আবাতে ইন্নি রা আই তো আহাদা আশারা কাউ কাবান ওয়াশ শামসা ওয়াল কামারা রা আইতু হুম লী সাজেদীন।" সুরা ইউসুফ আয়াত-৪
অর্থঃ যখন ইউসুফ (আ:) নিজের পিতাকে বললেন যে, আব্বাজান আমি এগারটি তারকা এবং সূর্য ও চন্দ্রকে দেখলাম যে, তারা সকলেই আমাকে সেজদা করছে।
উপরোক্ত আয়াতসমুহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় - সেজদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্ত্তু "তাজিম" কথাটির উল্লেখ নেই। এই তাজিম কথাটি একটি বেদাত তথা নব্য সংযোজন। কেননা যেখানে স্পষ্ট সেজদা কথাটি উল্লেখ আছে সেখানে তাজিমি সেজদা কথাটি স্পষ্ট কোরআন বিরোধী একটি কথা ।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে সেটা যদি ইবাদতের জন্য সেজদা হতো তাহলে ইবলিস অবশ্যই তা পালন করতো। যেহেতু সেটি ইবাদতের জন্য নয় সেহেতু ইবলিশ সেটা মানতে দ্বিধা করেছে। সে সেজদা দেয়নি। এটাতো ইবলিশের কথা। আল্লাহ পাক আদেশ করেছেন সেজদা দাও। সেটা ইবাদতের জন্য না সম্মান প্রদর্শন করার জন্য সেটা তার ইচ্ছাধীন। কেননা আল্লাহর আদেশ পালন করা ফরজ। আর ফরজ কথাটির অর্থ হলো অবশ্যই পালনীয়। আদেশ যেহেতু আল্লাহর সেহেতু তা অমান্য করা অপরাধ। আর সে অপরাধে ইবলিশ অপরাধী। যারা তা মানবে না তারাও ঐ একই অপরাধে অপরাধী।
সেজদায়ে তাজিমি-শব্দটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। একটি হলো সেজদা এবং অপরটি তাজিম। প্রশ্ন হলো সিজদা বলতে কি বুঝায় ? এবং অপরটি হলো তাজিম বলতে কি বুঝায়? এ দুটির ফয়সালা না হলে সেজদায়ে তাজিমি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা পাওয়া কঠিন। সিজদাহর অাভিধানিক অর্থ হলো-বিনয়তা ও নম্রতা প্রকাশ করা। তাজিম শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো-সম্মান করা।
সুতরাং সেজদায়ে তাজিমি হলো-সম্মানের সহিত বিনয়তা ও নম্রতা প্রকাশ করা।
সেজদার প্রকারভেদ
ক) সেজদায়ে এবাদত - শুধুমাত্র আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত।
খ) সেজাদায়ে তাযিম - সম্মানসূচক সেজদা কামেল পীর অর্থাৎ ওলী আল্লাহদের জন্য আদায় করা হয়।
গ) সেজদায়ে তেলায়াত - কোরআন মজিদে সেজদার আয়াত পাঠ করার পর তা আদায় করা হয়।
ঘ) সেজদায়ে সাহু - নামাযের মধ্যে ভুল-ভ্রান্তি হলে তা শুদ্ধ করার জন্য আদায় করা হয়।
ঙ) সেজদায়ে শোকরানা - আল্লাহর অবদানের উপর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য আদায় করা হয়।
আমাদের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে সেজদাহ তাযিম।
সেজদায়ে তাজিম কার জন্য আদায় করা হয়ঃ
সেজদায়ে তাজিম অর্থাৎশ্রদ্ধার সেজদাহ কার জন্য আদায় করা হয়? যার হৃদয়ে আল্লাহর আরশ স্থাপিত।
হাদিস শরীফে আছে "কুলুবুল মো'মেনীনা আরশুআল্লাহ"। অর্থঃ- মু'মেন ব্যক্তির ক্কলব আল্লাহ পাকের আরশ। মু'মেন ব্যক্তি কারা? যারা আল্লাহ পাকের আরেফ বিল্লাহ অর্থাৎ সুফী সাধক, অলি আউলিয়া, পীর মাশায়েখগন।হাদিছে কুদছিতে আরো বলা হয়েছেঃ-"লা য়াযালো আবদী য়াতাকাররাবু ইলাইয়া বিন মাওয়াফিল হাত্তা উহিববোহু ফা ইযা আহবাব তুহু কুনতু সামউহুল লাযি ইয়াস মাউ বিহী ওয়া বাসারুহুল লাযী ইউবসেরু বিহী ওয়া ইয়াদুহুল লাতী ইউবতেশু বিহা ওয়া রিজলুহুল লাতী ইয়ামশী বিহা।"
অর্থঃ- "যখন আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য অন্বেষণ করে তখন আমি তাকে ভালোবাসি আর আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শ্রবণ করে এবং তার চোখ হয়ে যাই যা দ্বারা সে দেখে। আর তার হাত হয়ে যাই যা দ্বারা সে ধরে বা স্পর্শ করে। তার পা হয়ে যাই যা দ্বারা সে চলাফেরা করে।"
অর্থাৎ আল্লাহর অযুদ (অস্তিত্ব) তার মধ্যে প্রস্ফুটিত হয়। আর যার মধ্যে আল্লাহ পাকের অস্তিত্ব প্রস্ফুটিত হয় একমাত্র তিনিই সেজদায়ে তাজিমি পাবার যোগ্য। এই সেজদার মধ্যে কোন শর্ত নেই।
পবিত্র কুরআনের আলোকে সিজদায়ে তাজিমির আয়াতসমুহঃ
১. "ওয়ালা কাদ খালাকনাকুম সুম্মা সাওয়ার না কুম সুম্মা কুলনালিল মালায়েকাতিস জুদুলে আদামা ফাসাযাদু ইল্লা ইবলিস লা ইয়া কুমমিনাস সাজদীন ।" - সুরা আরাফ আয়াত-১
অর্থঃ এবং নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করলাম। আবার আমি ফেরেস্তাদেরকে বললাম যে, তোমরা আদমকে সেজদা কর। তখন তারা সেজদা করল। ইবলিস সে সেজদা করেনি।
২. " কালা মা মানায়াকা আল্লা তাসজুদা ইজ আমার তুকা কালা আনা খায়রুম মিনহু খালাক তানি নারিন ওয়া খালাক তাহু মিন তীন।" - সুরা আরাফ আয়াত-২২
অর্থঃ আল্লাহ তায়ালা বললেন, তোমাকে কোন জিনিস বাধা প্রদান করলো যে তুমি আদমকে সেজদা করনি। যখন আমি তোমাকে আদেশ করলাম। সে (শয়তান) বলল, আমি তার চেয়ে উত্তম তুমি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছ আর তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছ।
৩. "ফা ইজা সাওয়াইতুহু ওয়া নাফাকতু ফিহে মের রুহি ফা কাউলাহু সাজদীন।"- সুরা হাজর আয়াত-২৯
অর্থঃযখন আমি তাকে সম্পূর্ণভাবে তৈরী করব এবং তার মধ্যে আমার আত্মা ফুকে দিব। তখন তোমরা সকলেই (ফেরেস্তা) তার (আদম) সম্মুখে সেজদায় পড়ে যাবে।
৪. " ফা সাজাদাল মালায়ে কাতু কুল্লু হুম আজ মাউন।" - সুরা হাজর আয়াত-৩৩
অর্থঃঅত:পর সমস্ত ফেরেস্তা সেজদা করলো।
৫. "ইল্লা ইবলিসু আবা আইয়া কুনা মা আস সাজেদিন।" - সুরা হাজর আয়াত-৩১
অর্থঃ ইবলিশ ব্যতিত সে সেজদাকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে অস্বীকার করল।
৬. " কালা ইয়া ইবলিসো মালাকা আললা তাকুনা মা আস সাজেদীন।" -সুরা হাজর আয়াত-৩২
অর্থঃ তিনি বললেন হে ইবলিশ কি ব্যাপার তুমি সেজদাকারীদের অর্ন্তভুক্ত হও নি।
৭."কালালাম আকুন লে আস জুদা লে বাশারিন খালাক তাহু মিন সালসালিন মিন হামায়িন মাসনুন।" -সুরা হাজর আয়াত-৩৩
অর্থঃ সে বলল আমি এমন মানুষকে সেজদা করবো না। যাকে তুমি কালো ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছো।
৮. "ওয়া ইজ কুল না লিল মালায়ে কাতিস জুদুলে আদামা ফাসাজাদু ইল্লা ইবলিস আবা।" - সুরা তোহা আয়াত-১১৬
অর্থঃ আর যখন আমি ফেরেস্তাদেরকে বললাম যে, আদমকে সেজদা কর। তখন সকলেই সেজদা করলো। কিন্ত্তু ইবলিশ ব্যতীত সে অস্বীকার করল।
৯. "ফা ইজা সাওয়াইতুহু ওয়া নাফাকতু ফিহে মের রুহী ফাকাউ লাহু সাজেদীন।"
অর্থঃযখন আমি তাকে সুন্দরভাবে সম্পূর্ণরুপে তৈরী করবো এবং নিজের আত্মা ফুকে দিব তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যাবে।
১০. "ফাসাজাদাল মালায়েকাতু কুল্লুহুম আজ মাউন ইল্লা ইবলিস ইস্তাক বারা ওয়া কানা মিনাল কাফেরীন।" সুরা সোয়াদ আয়াত-৭৩ ও ৭৪
অর্থঃ তখন সমস্ত ফেরেস্তা সেজদা করলো কিন্ত্তু ইবলিশ ব্যতীত। সে অহংকার করলো এবং কাফিরদের অর্ন্তভুক্ত হলো।
১১."কালা ইয়া ইবলিসো মা মানায়াকা আন তাসজুদা লেমা খালাকতু বে ইয়া দাইয়া আস তাকবারতা আম কুনতা মিনাল আলিন।" সুরা সোয়াদ আয়াত-৭৫, সুরা সোয়াদ আয়াত-৭২
অর্থঃ বললেন যে, ইবলিশ তোমাকে কোন জিনিস তাকে সিজদা করতে বাধা দিল যাকে আমি নিজের দুই হাত দ্বারা তৈরী করেছি? তুমি কি অহংকার করছো? বা তুমি কি আলিনদের(বড়লোক) মধ্যে নিজেকে গণ্য কর?
১২. "ওয়া ইজ কুলনা লিল মালায়ে কাতিস জুদুলে আদামা ফাসাজাদু ইল্লা ইবলিস কানা মিনাল জ্বিন্নে ফা ফাসাকা আন আমরে রাব্বেহী।" সুরা কাহাফ আয়াত-৫০
অর্থঃএবং যখন আমি ফেরেস্তাদেরকে বললাম যে আদমকে সেজদা কর। তখন সকলেই সেজদা করল। ইবলিশ ব্যতীত। সে বলল আমি কি? তাকে সেজদা করবো? যাকে তুমি মাটি দ্বারা তৈরী করেছ।
১৪."ওয়া ইজ কুলনা লিল মালায়ে কাতিস জুদু লে আদামা ফাসাজাদু ইল্লা ইবলিশ আবা ওয়াস্তাক বারা ওয়া কানা মিনাল কাফেরীন।" সুরা বাকারা আয়াত-৩৪
অর্থঃ এবং যখন আমি ফেরেস্তাদেরকে নির্দেশ দিলাম তোমরা আদমকে সেজদা কর। তখন সকলেই সেজদা করল ইবলিস ব্যতীত। সে অমান্যকারী হলো এবং অহংকার করল ও কাফির হয়ে গেল।
১৫." ওয়া রাফায়া আবা ওয়াই হে আলাল আরশে ওয়া খাররু লাহু সুজ্জুদান।" সুরা ইউসুফ আয়াত-১০০
অর্থঃ হযরত ইউসুফ (আ:) নিজের পিতা-মাতাকে সিংহাসনে বসাইলেন এবং সকলেই ইউসুফের (আ:) শ্রদ্ধার জন্য তার সামনে সেজদায় পড়ে গেলেন।
১৬."ইয কালা ইউসুফো লে আবিহে ইয়া আবাতে ইন্নি রা আই তো আহাদা আশারা কাউ কাবান ওয়াশ শামসা ওয়াল কামারা রা আইতু হুম লী সাজেদীন।" সুরা ইউসুফ আয়াত-৪
অর্থঃ যখন ইউসুফ (আ:) নিজের পিতাকে বললেন যে, আব্বাজান আমি এগারটি তারকা এবং সূর্য ও চন্দ্রকে দেখলাম যে, তারা সকলেই আমাকে সেজদা করছে।
উপরোক্ত আয়াতসমুহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় - সেজদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্ত্তু "তাজিম" কথাটির উল্লেখ নেই। এই তাজিম কথাটি একটি বেদাত তথা নব্য সংযোজন। কেননা যেখানে স্পষ্ট সেজদা কথাটি উল্লেখ আছে সেখানে তাজিমি সেজদা কথাটি স্পষ্ট কোরআন বিরোধী একটি কথা ।
প্রশ্ন উঠতে পারে যে সেটা যদি ইবাদতের জন্য সেজদা হতো তাহলে ইবলিস অবশ্যই তা পালন করতো। যেহেতু সেটি ইবাদতের জন্য নয় সেহেতু ইবলিশ সেটা মানতে দ্বিধা করেছে। সে সেজদা দেয়নি। এটাতো ইবলিশের কথা। আল্লাহ পাক আদেশ করেছেন সেজদা দাও। সেটা ইবাদতের জন্য না সম্মান প্রদর্শন করার জন্য সেটা তার ইচ্ছাধীন। কেননা আল্লাহর আদেশ পালন করা ফরজ। আর ফরজ কথাটির অর্থ হলো অবশ্যই পালনীয়। আদেশ যেহেতু আল্লাহর সেহেতু তা অমান্য করা অপরাধ। আর সে অপরাধে ইবলিশ অপরাধী। যারা তা মানবে না তারাও ঐ একই অপরাধে অপরাধী।
[ বিঃদ্রঃ হাকীকাতে সেজদা.এ.তাজিমী অনেক গুরুত্ব বহন করে। শরীয়তের জ্ঞান দিয়ে বিচার করলে তা অবশ্যই একটি শেরেক। কিন্ত্তু চিশতীয়া খান্দানভুক্ত অনেক অনেক বিখ্যাত অলী আউলিয়াগণ এ সিজদাহ করে আসছেন এবং করে যাবেন। এ ব্যাপারে বিশৃংখলাসৃষ্টিকারীরা অবশ্যই ঐ ইবলিসের অনুসারী। যিনি প্রথম থেকেই এর বিরোধীতা করে আসছেন। আর কেউ যদি এ ব্যাপারে কোন আপত্তি তোলে, তাহলে যার বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা হয়েছে-এ দুয়ের মধ্যে সুধী পাঠকবর্গ জ্ঞানের আলোকে ধরতে পারবেন কে ফেরেস্তার দলে আর কে ইবলিশের দলে? ]