পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০১৬

মনা পাগলার মৌনতা........এবং শেষ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

অাজহারের সম্ববিৎ ফিরে এল মনার অন্য আরেকটি কথায়। মনা বলছেঃ

মানব দেহ আধ্যাত্মবাদের এক অপরিসীম ভান্ডার। এই দেহের মধ্যেই আছে সবকিছু। গুরু ধইর‌্যা না জানলে এবং সাধন পদ্ধতি না জাইন্যা সাধন করলে হিতে বিপরীত অইতে পারে। কারণ আধ্যাত্মবাদ কোন ছেলেখেলা নয়। এইডা কোন মামুলী ব্যাপার না। দেহসাধনের লিগ্যা গুরু ধইর‌্যা দেহের লতিফা, মোকাম-মন্ঞ্জিলগুলি চিইন্ন্যা তারপর হেইডা সাধন ভজন করণ লাগে। সুফীবাদের সাধন অনেক কঠিন ব্যাপার। সুফীবাদের সাধন পদ্ধতি অইলোঃ তাজকিয়ায়ে নফস...নফসের পরিশুদ্ধতা অর্জন। আর মান আরাফার সাধন ভজন অন্য জিনিস। মান আরাফার সাধনও দেহের জন্য গুরুত্বপুর্ণ। আপনে যুদি আপনের দেহডার মইদ্যে যে লতিফা (অালোককেন্দ্র) গুলি আছে হেইগুলি চিনবার চান, মোকাম (ঘর বা স্থান) গুলি দেখবার চান, তাইলেই সাধনের প্রয়োজন অয়। আর যুদি মনে করেন দরকার নাই, তাইলে আপনে যে ইবাদত বন্দেগী করবেন, হেইডা অইবো অন্ধের মতন। মাইনে নিরাকার আল্লাহর ইবাদত। নিরাকার মাইলে ন আকার। আকারহীন। ভাইরে, নিরাকার আল্লাহও রবরুপে আপনেরে সাহাইয্য করবো সহায়তা করবো। কোন কমতি অইবো না। কিন্ত্তু আপনে হের দীদার লাব করতে পারবেন না। যেম্ তে আইছেন, হেম্ তেই যাইবেন গা। যুগ যুগ ধইর‌্যা আইবেন আর যাইবেন।

-কিন্ত্তু নিরাকার আল্লাহতো কোরআনেই উল্লেখ আছে...

-ভাইরে আছে। এইডা প্রাথমিক জ্ঞান। তারপর বিশেষ জ্ঞান। বিশেষ রাস্তা..ওয়া জায়ালনা মিনকুম শিঁরাতাও ওয়া মিনহাজ একটা শরীয়ত তথা আইন-কানুন আর একটা অইলো মিনহাজ বিশেষ পথ। এই বিশেষ পথটাই অইলো তরীকত..তরক থিক্ক্যা তরীকত। আর শেষে তে হরফ থাকায় হেইডা দিয়া বুঝায় তৌহিদ মাইনে একত্ববাদের রাস্তা....লা মওজুদা ইল্লাল্লাহ...আল্লাহ ছাড়া কিছুই নাই সবই আল্লাহ। আল্লাহু কুল্লিশাইয়িন মুহিত। তার মাইনে অইলো...জগতটাই আল্লাহময়...
ভাইরে এই দেহডা পন্ঞ্চ উপাদান দিয়া আল্লাহয় বানাইছে। হেইগুলি কি কি? হেইগুলি অইলোঃ আব আতশ বাত খাক ও নুর। এইগুলি অইল এক একটা আল্লাহ। সৃষ্টির উপাদানগুলিতো আল্লাহর বাইরে নয়। আল্লাহর মইদ্যেই। যুদি বাইরে থিক্ক্যা আনতো, তাইলে না হয় বুঝতাম আল্লাহর রাজ্যের বাইরেও আরেকটা জগত আছে। আল্লাহর বাইরে কোন জগতের অস্তিত্ব নাই। যুদি না থাকে তাইলে হেই উপাদানগুলিও আল্লাহর। নামরুপ ধইর‌্যা ভিন্ন নামকরণ করা অইছে। এইগুলিরে কয় ফকিরি ভাষায় পন্ঞ্জ অযুদ। পাক পান্ঞ্জাতন। পাক মাইনে পবিত্র। অযুদ মানে দেহ। পন্ঞ্জ অযুদ মানে পাঁচটা পবিত্র দেহ। তন মানেও দেহ। তাইলে পন্ঞ্চ দেহ লইয়্যা পাক পান্ঞ্জাতন। মুহাম্মদ,আলী, ফাতেমা হাসান, হোসাইন।
এইগুলি লইয়্যাই আল্লাহর পরিবার। কোরআনে হেগো লইয়্যাই নাহনু তথা আমরা শব্দটা ব্যবহার অইছে। সৃষ্টির সাথে সম্পর্কিত যত আয়াতই আছে সব জায়গাই নাহনু ব্যবহার অইছে। কিন্ত্তু একত্ববাদের ক্ষেত্রে অানা শব্দ ব্যবহার করছে। এই তৌহিদে শুধুই তিনিই। এই জগতটারে কয় হুইয়াত বা তিনিত্ব.......অাইনিয়াত থেকেই হুইয়াত আমিত্ব থিক্ক্যা তুমিত্ব..
আলিফ লাম মিম...অানা লতিফা মুনজিল আমি তুমি সে....

আজহার মনা পাগলার কথা শুনে বেশ ঘাবড়ে গেল। কি বলবে-কিছুই বুঝতে পারছে না। সে তো এই কথা নতুন শুনছে। কখনো পড়েওনি কিংবা চিন্তাও করেনি। আর চিন্তা করার অবকাশ কোথায়? চার পাশ থেকে যে ভাবে টিভি চ্যানেল হচ্ছে আর প্রতিটি চ্যানেলের মধ্যে ধর্মবিশারদরা যেভাবে এই মাজার পন্থিদের গালাগাল করছে তাতে মনা যে সত্য বলছে না মিথ্যা বলছে তা যাচাই বাছাই করাও মুশকিল। মুলতঃ টিভি চ্যানেলের ধর্মীয় বক্তৃতা বিবৃতি শুনে মানুষ জন বিভ্রান্তে পতিত হবে সহজেই। কারটা বিশ্বাস করবে? শহরের অনেকেরই পক্ষে সম্ভব হয় না কোরআন পড়া কিংবা হাদীছ শরীফ দেখা। সত্য-মিথ্যা যাচাই বাছাই করার সুযোগ কোথায়? তারা ধরেই নিয়েছে মোল্লারা যা বলছে তা সবই সত্য।

রাত অনেক গভীর হয়েছে...শুধু কথা বলতে বলতেই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে তারা। চারদিকে কেমন সুসান নীরবতা নেমে এসেছে। এর মধ্যে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক আর দুর থেকে ভেসে আসা শেয়ালের ডাক...মাঝে মাঝে দু চারটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ সম্পুর্ণ পরিবেশটাকে করে তুলেছে মায়াময়..সেই মায়াময় পরিবেশটা তাদেরকে শেখাচ্ছে কিছুটা উপলব্দি করার ক্ষমতা...কে তৈরী করলো এই মায়াময় পরিবেশ....কে তাদের শিখিয়েছে...ভোরের আলোয় বিকশিত হবার সাথে সাথে রাতের এই পরিবেশটা তৈরী করা...এম্মনিতেই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা বিধৌত পরিবেশ পরিশেষে রাতের আবেশ...একটা ঘুম ঘুম ভাব এম্মনিতেই চলে এসেছে...আজহার বললো

-মনা ভাই চলুন ঘুমিয়ে পড়ি...সকালে আবার শুরু করা যাবে

-কিরে ভাই কইলেন হারা রাইত কতা কইবেন....আর এহন দেহি ঘুমাইতে কইতাছেন...আসল কতা তো এহনও কই নাই...

-ভাইরে আপনের আসল কথা শুননের ইচ্ছা থাকলেও আর পারছি না...ক্লান্তিতে ঘুম চলে আসছে...পরে আবার শুরু করা যাবে।

আজহার মনা পাগলার বিছানা ঠিক করে দিয়ে ঘুমাতে চলে গেল। আর মনা তার বিছানায় শুয়ে ভাবছে তার গুরুর কথা.....তার ধ্যানের কথা....
"হারিয়ে আপন করিবে ধ্যান
মিলিবে আপন সোনারই বরন।।
অনন্ত জীবন পাইবে আপন
মরন কখন হবেনা তোমায়।।"

মনা তার সর্বস্ব অর্পণ করার কথা চিন্তা করে ধ্যানের গভীরে হারিয়ে যেতে চাইছে...

মিনকালকুল বিকাল কুল ইলাইকাল কুল ইয়া কুল্লুল কুল। হে সবের সব তোমাতেই সব। তুমিই সব তোমার দিকেই সব।
মনা যখন ধ্যানের গভীরে হারিয়ে গেল ঠিক তখনই মনা দেখলো তার পাশে তারই মতো দেখতে অবিকল চেহারার কেউ একজন তার পাশেই বসে আছে। তা দেখে মনা সজোরে চিৎকার করে উঠলো....ওরে বাবারে....