পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ১৬ মে, ২০১৬

একনাদীদ - প্রথম পর্ব



হযরত মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী (রহ:) বলেছেন-
" পীরেরা জাতে খোদা একনাদীদ
নেই মুরিদ ! নেই মুরিদ!! নেই মুরিদ !!!
অর্থাৎ পীরের জাত আল্লাহ পাকের জাত যে মুরিদ এটা দেখেনি অর্থাৎ একরুপে দেখেনি সে মুরিদ হয়নি সে মুরিদ হয়নি।। সে মুরিদ হয়নি।।।
প্রশ্ন হলো মাওলানা সাহেব কেন একথা বলেছেন ? পীরের জাত বলতে মাওলানা সাহেব কি বুঝাতে চেয়েছেন ? আর মুরিদদেরকে কেন তা বিশ্বাস করতে বলেছেন ? আর না করলে সে মুরিদ হয়নি বলে তিনবার উল্লেখ করেছেন তাহলে সে কি? আর মুরিদ বলতে কি  বুঝানো হয়েছে বা কাদের বুঝানো হয়েছে?
প্রসংগত উল্লেখ যে মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি ছিলেন তৎকালীন সময়ে একজন জগৎ বিখ্যাত মাওলানা তিনি শামশের তাব্রিজির হাতে বায়াত গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীকালে মসনবী শরীফ প্রনয়ণ করেন যাকে ফারসী ভাষায় মানব রচিত কোরআন বলা হয় উপরোক্ত আয়াতটি তারই কিতাব মসনবী শরীফ থেকে উদ্বৃত
খোদার জাত বা আল্লাহ পাকের জাত শব্দটির মাঝে লুকায়িত আছে গভীরতত্ত্ব জাত হচ্ছে বৈশিষ্ট্য বা উপাদান যা দ্বারা কোন কিছু সৃষ্টি হয় আর গুণ হচ্ছে তার চরিত্র খোদার জাত বলতে খোদা যে জাত বা উপাদানে সৃষ্ট তথা জাত নুর আর প্রত্যেকটি উপাদানের দ্বারা সৃষ্ট বস্তুুরই একটা চরিত্র বা গুণ থাকবেই খোদা খোদ বা নিজস্ব বা স্বয়ং শব্দজাত অর্থাৎ নিজস্ব বা স্বয়ং নুর মূল অর্থটি দাড়ায় নিজস্ব নুর ' তাখাল্লাখুবি আখল্লাকিল্লাহ ' আল্লাহর নুরে নুরাম্বিত হও - কথাটির অর্থই হচ্ছে আল্লাহর নুরে আল্লাহময় হয়ে যাওয়া অথবা ' ছেবগাতাললাহে ওয়া মান আহসানু মিনাললাহে ছেবগাতান' আল্লাহর রঙে রন্ঙিত হও - কথাটির মর্মার্থই এখানেই
প্রশ্ন হলো আল্লাহ  তাহলে কি? আল্লাহ শব্দটির অর্থ আল ইলাহ আল-সর্বজনীন বা সর্ব আর ইলাহ অর্থ উপাস্য আল্লাহ শব্দটির অর্থ হচ্ছে - সার্বজনীন উপাস্য আর হু শব্দটির অর্থ - তিনি বা যিনি সুতরাং আল্লাহু অর্থ - সার্বজনীন উপাস্য যিনি যিনি আল্লাহ তিনি সার্বজনীন উপাস্য উপাস্য অর্থ হচ্ছে যার উপাসনা করা হয় (উপাসনা - উপ+আসন উপ সম্নুখে বা নিকটে আর আসন অর্থ বসা অর্থাৎ উপাসনা - নিকটে বসা ) জগতে প্রতিটি সৃষ্টিই কোন না কোন বস্তুুর উপাসনা করছে অর্থাৎ ইবাদত করছে ইবাদত আবদ শব্দ হতে এসেছে আবদ অর্থ দাস আর ইবাদত অর্থ দাসত্ব করা সুতরাং কাল্পনিক হোক বা বাস্তব হোক কেউ না কেউ কারো না কারো ইবাদত করছে আর মূল কার্যটাই হচ্ছে বন্দেগী করা সুতরাং সর্বদিক হতে যার উপাসনা করা হোক না কেন তার একমাত্র প্রাপ্য হচ্ছেন যার উপাসনা করা হচ্ছে তার অর্থাৎ আল্লাহ পাকের যাকে বলা হয় প্রভূ (প্র - প্রকৃস্ট  আর ভূ - ভূত বা আত্না বা বীজ বা স্বত্ত্বা )
পীর শব্দটি ফারসী যার অর্থ বয়ো:বৃদ্ধ বা জ্ঞানী ব্যক্তি পবিত্র কোরআনে কোথাও পীর শব্দটি উল্লেখ নেই আছে মুর্শিদ শব্দটি ( "ওয়ামাইউদলিল ফালান তাজিলাহু ওয়ালিয়াম মুর্শিদা" সুরা কাহাফ ) মুর্শিদ শব্দটির মূল রশদ্ যার অর্থ পথ প্রদর্শক এই মুর্শিদই হচ্ছেন ফারসি ভাষায় পীর যিনি তার উম্মতদের (অনুসারীদের) পথ প্রদর্শন করে থাকেন হাদীরুপে (" লি কুল্লি কাওমিন হাদিন " ) আর এই উম্মতদেরকেই বলা হয় মুরিদ
সুতরাং মুরিদ যিনি তিনি তার মুর্শিদের অনুসারী তথা উম্মত কারণ এই মুর্শিদরাই খোদার জাত সমগ্র সৃষ্টিজগত হচ্ছে আল্লাহ পাকের পরিবার তিনি তার পরিবারের ভরণ-পোষন তথা যাবতীয় কর্ম পরিচালনা করেন খলিফাতুল আর্দ ( আল্লাহর প্রতিনিধি) দ্বারা তারাই আবার হাদীরুপে আর্বিভূত হয়ে সৃষ্টি কর্ম পরিচালনা করেন সুতরাং মুরিদের সামনে তার পীরই হচ্ছেন সাক্ষাৎ আল্লাহ তথা উপাস্য বা আরাধ্য বস্তুু তথা নারায়ণ (নর+আয়ন নর-পুরুষ আয়ন-চেহারা অর্থাৎ পুরুষের চেহারা তথা ফাছাম্মাওয়াজহুল্লাহ বা আল্লাহর চেহারা ) আল্লাহ তার সৃষ্টির ভারসাম্য রাখেন এই মুরিদুন ছেফাতের মাধ্যমে যে মুরিদ অভেদ্যচক্রটি বুঝতে পারেনি সে তার মুর্শিদ (তথা আল্লাহ) কেই চিনতে পারেনি তার নিগুঢ় রহস্য ধরতে পারেনি বাসারিয়াত সুরতের আড়ালে সে যে কে- তা সে বুঝতেই পারেনি  এজন্যই মাওলানা রুমী (রহ:) বলেছেন - সে মুরিদই হয়নি কথাটি একবার নয় তিনবার বলেছেন
এখন যারা মুরিদ হয়েছেন অথচ তার মুর্শিদের স্বরপটি ধরতে পারেননি তারা কি মুরিদ থাকতে পারেন বা তারা কি মুরিদ ? মাওলানা সাহেবের কথা মতোতো তারা মুরিদই না তাহলে তারা কি? ধর্ম মতে তারা কাফের কাফের কুফর হতে এসেছে যার অর্থ  ঢেকে রাখা বা গোপন করা অর্থাৎ যার অন্তরে সত্য ঢাকা পড়ে আছে কুফর যার অন্তরে আছে সেই কাফের আর মুনাফিক তারাই যারা মুরিদ হয়ে কাফের অন্তর নিয়ে গুরুবাদের বিরুদ্ধে গোপনে বিষোদাগার করে যাচ্ছেন মুনাফিক নিফাক হতে এসেছে নিফাক অর্থ ভন্ড,প্রতারক ফাসেক ফিসক হতে এসেছে যার অর্থ নিন্দনীয় কার্য যিনি নিন্দনীয় কার্যে লিপ্ত তিনি ফাসেকীতে আছেন সুতরাং দেখা যাচ্ছে কাফের থেকেও মুনাফিকরা অত্যন্ত ভয়াবহ তাদের স্বরুপ ধরাটা দু:সাধ্য যদিও মুর্শিদ জানেন কিন্ত্তু তিনি অনেক সময় তা প্রকাশ করেননা  সেটা তার বদ্যানতা