পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৬

করিম সাহেবের চিন্তা-ভাবনা ও হাঁস-মুরগীর ছানা পোনা - চতুর্থ পর্ব

(পূর্ব প্রকাশের পর হতে)

করিম সাহেবের মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। তিনি কি করবেন-ঠিক ভেবে পেলেন না। তিনি ভেবেছিলেন, হয়তো রহিমা বেশ খুশিই হবে। কিন্ত্তু খুশি হওয়ার পরিবর্তে রহিমা যে রুপ দেখালো, তাতে মনে হলো সে যেন রহিমার আসল রুপটি দেখতে পেয়েছেন। তিনি শুনেছেন-রাগের সময় মানুষের আসল চেহারা বের হয়ে আসে।  যেমনঃ কোন এক ব্যক্তি যদি অপর কোন ব্যক্তির আচরণে ত্যতবিরক্ত হয়ে তাকে কুত্তার বাচ্চা বা শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দেয়, আশে পাশের লোকজন সেই লোকটিকে তার আকারেই দেখছে। কিন্ত্তু যে লোকটি যাকে গালি দিচ্ছে, সে ঐ ব্যক্তিকে কুকুরের বাচ্চা বা শুকরের বাচ্চা রুপে দেখছে বলেই তাকে উক্তরুপ সম্বোধন করছে। কিংবা হতে পারে সে লোকটি এমন কোন আচরণ করেছে যে তার আচার আচরণ কুকুর কিংবা শুকোরের বাচ্চা সদৃশ্য বলে অনুমিত হয়েছে বলেই সে এরুপ গালি দিয়েছে। 

করিম সাহেব সবকিছু ভুলে যেতে চেষ্টা করলেন। কিন্ত্তু তার অবচেতন মন কিছুতেই কথা শুনছে না। তিনি কিছুক্ষণ মৌন রইলেন। তারপর চোখ বুঁজে দীর্ঘভাবে বেশ কয়েকবার শ্বাস নিলেন। আবার ছাড়লেন। এভাবে বেশ কয়েকবার করার পর দেখলেন যে তার রাগ নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেছে। মনটাও বেশ বদলে গেছে। তিনি আবারো পড়ার দিকে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করলেন। যেই বইটা হাতে নিতে যাবেন দেখেন টেবিলের উপর চা এবং মুড়ি ভাজা রাখা। তিনি একমুঠো মুড়ি হাতে নিয়ে মুখে পুরে চিবাতে লাগলেন আর ফাঁকে ফাঁকে বইয়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখলেন। পড়া শুরু করলেনঃ

দ্বিতীয় অধ্যায়ের নাম "শীষ নবীর জ্ঞান - এখানে আল্লাহর সন্দর্শন বা প্রত্যক্ষণ সর্ম্পকে বলা হয়েছে । প্রত্যক্ষণ দুই প্রকার। সত্তা সারের প্রত্যক্ষণ ও নামের প্রত্যক্ষণ। সত্তাসারের প্রত্যক্ষণ হলোঃ আল্লাহর জ্যোতিঃ বা আলোকের প্রত্যক্ষণ এবং সাধকের প্রত্যক্ষণের শক্তি ও ক্ষমতা অনুসারে তাঁর নিজের আকারের মাধ্যমে আল্লাহ-রুপ-দর্পণে সম্ভব হয়। দর্পণের প্রতি লক্ষ্য করলে দর্পণ অদৃশ্য হয় এবং সেখানে নিজের আকার প্রতিফলিত দেখা যায়। আপনি আপনাকে জানবেন এই হেতু আল্লাহ আপনার দর্পণ হন। এবং তাঁর গুণাবলী আপন জীবনে প্রকাশ করে আপনি তাঁর দর্পণ হন। আল্লাহর নাম অসংখ্য এবং তাঁর নামগুলো সত্তাসার ও তাঁর বিভিন্ন গুণ বা দিকের মধ্যে সর্ম্পক স্থাপন করে এবং আল্লাহর জ্ঞান লাভের সহায়ক হয়। বাহ্যিক জগতে এক একটি নাম এক একটি স্বতন্ত্র বস্ত্তুকে বুঝায় কিন্ত্তু ঐশী জগতে একই বস্তুকে নির্দেশ করে।

" যে ব্যক্তি নিজেকে জানে সে তার প্রভুকে জানে।" ঐশী জ্ঞানই আল্লাহর বাহ্যিক প্রকাশ সর্ম্পকে সামান্য জ্ঞান দান করতে পারে যা এই জগতে সম্ভব হয়। এই জগতে যদি এই জ্ঞান লাভ করতে না পারে তবে পরজগতে এই জ্ঞান লাভ করতে পারে না। এখানে যে অন্ধ, পরজগতেও সে অন্ধ হবে সঠিক পথ থেকে সে বহু দুরে থাকবে।

মরমী সাধক বা অতীন্দ্রিয়বাদী সন্দর্শন করেন যে আল্লাহ এক। দৃশ্যমান জগতের সকল বস্ত্তুর অস্তিত্ব আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। এক আল্লাহ বহুরুপে প্রকাশিত হয় যে ব্যক্তি 'বহু' এর জ্ঞানলাভ করে সে 'এক' এর জ্ঞান লাভ করে। অদৃশ্য ও অতুলনীয় পরম সত্তা "বহু" আকারের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করে। যদিও 'এক' ও 'বহু' - এর মধ্যে পার্থক্য আছে, তবুও স্রষ্টাই সৃষ্টি এবং সৃষ্টিই স্রষ্টা এবং 'সার্বিক সত্তাসার' হতে বহু 'বিশেষ সত্তাসারের' উৎপত্তি হওয়ার ফলে এমন মনে হয়, বাহ্যিক জগতের বহুর 'বহু' আকার এক পরম দর্পণে প্রতিফলিত হয়। অন্যভাবে বললে, বহু-রুপ দর্পণে এক আকারই প্রতিফলিত হয়। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে লক্ষ্য করার ফলে অনেক সময় আশ্চর্য হতে হয়, কিন্ত্তু যারা জ্ঞানবান বা 'সত্তাকে অনুধাবণ করতে সক্ষম', তারা আশ্চর্য হয় না।

শীষ নবীর জ্ঞানের অধ্যায়ে ইবনুল আরাবীর "ওয়াহ্ দাতুল ওযুদ" মতবাদ ও আল্লাহর জ্ঞানলাভের কথা বলা হয়েছে। এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে প্রার্থনার অর্থ জ্ঞান লাভ করা এবং জ্ঞান লাভের অর্থই আল্লাহকে সন্দর্শন করা

করিম সাহেব হুম করে একটি শব্দ উচ্চারণ করলেন। এর অর্থ হতে পারে সে বিষয়টি উপলব্দি করতে পারছেন। তিনি আবারো এক মুঠো মুড়ি মুখে পুড়লেন আর ধীরে ধীরে তা চিবাতে লাগলেন। চায়ে চুমুক দিয়ে তিনি উঠোনের দিকে তাকালেন। দেখলেন, মা মুরগীটা একটু দুরে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খাবার খাচ্ছে। আর তার পাশেই একটি ছানা খোঁড়াতে খোঁড়াতে একটি তেলাপোকা মুখে নিয়ে দৌড়াতে চেষ্টা করছে। কিন্ত্তু পারছে না। তার খোঁড়া পায়ে জোর না থাকায় তারই অন্যান্য  ভাই-বেরাদাররা তেলাপোকাটা নেয়ার জন্য চেষ্টা করছে। তা দেখে মা মুরগীটা ছো মেরে তেলাপোকাটা নিয়ে নিল। করিম সাহেব বেশ আশ্চার্য বোধ করলেন।
(চলবে)