পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৬

করিম সাহেবের চিন্তা-ভাবনা ও হাঁস-মুরগীর ছানাপোনা - ষষ্ঠপর্ব

(পন্ঞ্চম পর্বের পর)

করিম সাহেব যে বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছেন, তাহলোঃ কোরআনুল করিমের যে ব্যাখ্যা ডাঃ জাহাঙ্গীর আল সুরেশ্বর সাহেব দিয়েছেন, সেটাতো তার নিজের বক্তব্য। তিনি যা বুঝেছেন, সেটাই তিনি নিজের ভাষায় ব্যাক্ত করেছেন। মুল বিষয়টি কি আসলেই তাই? পশু বৃত্তিক কার্য্যাবলী পরিত্যাগ করার জন্য প্রতিটি ধর্মই কমবেশি জোর দিয়েছে। তেমনি জোর দিয়েছে "মনুষ্যত্ব গুণগুলো অর্জনের" অর্থাৎ সৎপথে পরিচালিত হবার। তাহলে কি পশুবৃত্তিক নফসকে দমন করার জন্য যে জেহাদের কথা বলা হয়েছে সেটাই কি সত্য ? কিন্ত্তু যে নফস - এর কথা বলা হচ্ছে তার আগে কি আমাদের জানা উচিত নয় কি? নফস কি? করিম সাহেব কাগজ কলম নিয়ে বসলেন। এবং কাগজের মাঝখানটায় লিখলেনঃ

নফস (Nafs) কি?

নফস অর্থ প্রাণ। আবার অনেকেই একে আত্মা বলে থাকেন। আত্মা হচ্ছে কতোগুলো উপাদানের দ্বারা সৃষ্ট। সেই উপাদানগুলো কি? সেই উপাদানগুলো হচ্ছে-মাটি,পানি,আগুন,বাতাস এবং আকাশ। এই পঞ্চউপাদানকে অনেকে পন্ঞ্চভুত বলে থাকেন। সংস্কৃতভাষায় এদেরকে বলা হয়-ক্ষিতি,অব,তেজ,মরুৎ এবং ব্যোম। আরবী ভাষায় এদেরকে বলা হয় খামছা আনাছের। খাক(মাটি),বাত(বাতাস),আব(পানি),আতশ(আগুন) এবং ইথার(আকাশ)।

প্রশ্ন হলোঃ এই পন্ঞ্চ উপাদান কিভাবে সৃষ্টি হলো? কে সৃষ্টি করলো এ পন্ঞ্চ উপাদান? আর কোরআন শরীফে কি এ ব্যাপারে কোন কিছু উল্লেখ আছে?

আসমান এবং জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই আল্লাহ পাকের সৃষ্টি। যদি তাই হয়,তাহলে ধরে নিতে হয়, উক্ত উপাদান সমুহও আল্লাহ পাকের সত্তার অধীন। যেমনঃ একটি মাকড়শার কথা ধরা যাক। খাদ্য তৈরী করার জন্য মাকড়শা  যে জাল তৈরী করে, সেই জাল তৈরী করার জন্য উপকরণ সে পেল কোথায়? সে উপাদানসমুহ তার নিজের মধ্যেই ছিল। সে তার লালা দিয়ে সেই জাল তৈরী করে। সেই জালের মধ্যে কোন কীট পতঙ্গ আটকে গেলে আর ছুটতে পারে না। এক সময় সেই আটকে পড়া কীট পতঙ্গটি অনাহারে মারা গেলে মাকড়শা সেটা গলদঃকরণ করে নিজের জীবন বাঁচিয়ে রাখে। মজার তথ্য হলোঃ স্ত্রী মাকড়শা যে বাচ্চা জন্মদান করে, সেই বাচ্চাগুলো মায়ের দেহ আহার করে নিজের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখে। আল্লাহ পাক যখন ছিলেন তখন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। সেই এক আল্লাহ পাক হতেই সমস্ত কিছুর সৃষ্টি। অর্থাৎ সমস্ত কিছুই আল্লাহ পাকের অস্তিত্বের সাথে সায়ুজ্যপুর্ণ। কারণ আল্লাহ পাক নিজেই বলেছেনঃ-

"কুলহু আল্লাহু আহাদ। অর্থঃ বল তিনিই আল্লাহ-আহাদ
আল্লাহু সামাদ।অর্থঃ আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত সামাদ (অর্থাৎ নিরপেক্ষ, স্বনির্ভর, স্বাধীন, মুক্ত, মুখাপেক্ষীহীন)
লাম ইয়ালিদ ওয়ালামউলাদ। অর্থঃ তিনি জন্ম দেন না এবং তাকে জন্ম দেওয়া হয় না।
ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ। অর্থঃ এবং আহাদের কিছুই (বা কেহই) তাহার (অর্থাৎ সামাদের) সমগোত্রীয়/সমতুল্য নয়।

এখানে আল্লাহ পাক আহাদ এবং আল্লাহ সামাদ। যার অর্থ হচ্ছেঃ আল্লাহর প্রকাশের রুপ দুইটি। আহাদরুপ এবং সামাদ রুপ। সামাদ সত্তা পুরুষ, আহাদ সত্তা প্রকৃতি বা নারী। জড় জগত, জীব জগত, মনুষ্য জগতে এবং মনুষ্য জগতের মধ্যকার জাহান্নাম ও জান্নাত জগত সকলই আহাদ জগতের অন্তর্ভুক্ত। আহাদের অন্তর্ভুক্ত সত্ত্বাসমুহ একে অপরের উপর নির্ভরশীল। শব্দটি মুলতঃ বহু বচন। সুতরাং আহাদ শব্দটিকে এক না বলে একক বলা হয়েছে। পরষ্পর নির্ভরশীলতায় আহাদের সবাই একধর্মী। একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজন অচল।

তার মানে যে উপাদান দ্বারা সৃষ্টি করা হয় তার সব উপাদানই আল্লাহ সত্তাময়। মুল কথাটি হলোঃ আকাশ আল্লাহর সত্তা, বাতাস আল্লাহর সত্ত্বা, আগুন আল্লাহর সত্ত্বা, পানি আল্লাহর সত্ত্বা এমনকি মাটিও আল্লাহর সত্ত্বা। তার মানে হলোঃ পুরো বিষয়টি হচ্ছেঃ ওয়াহদাতুল ওযুদ। অর্থাৎ সর্বেশ্বরবাদ।
(চলবে)