পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৬

করিম মাহেবের চিন্তা-ভাবনা ও হাঁস-মুরগীর ছানাপোনা-পর্ব সাত

(ষষ্ঠ পর্বের পর হতে)

বিষয়টি কেমন যেন ঠেকলো করিম সাহেবের কাছে। সব কিছুই আল্লাহময়? নিজেকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না করিম সাহেব। চা টা শেষ করে তিনি আবারো নিজের লেখার প্রতি মনোযোগ দিলেন। বার বার পড়লেন। তারপর তিনি বেশ গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন।

দর্শন বেশ গভীরের বিষয়। হুট করে কেউ সেটা বুঝতে পারে না। প্রতিটি বিষয়ের মধ্যেই দর্শন লুকিয়ে আছে। সেই দর্শন উপলব্ধি করার জন্য চাই মনের গভীরতম সত্তা অর্থাৎ চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ। সাধারণ মানুষ  দর্শন বুঝতে পারে না। কারণ তাদের চিন্তা-চেতনার স্মূক্ষ্মতম স্তরটি রুদ্ধ হয়ে আছে। সেই চিন্তা চেতনার রুদ্ধদ্বারটি উন্মুক্ত না হলে উন্নত চিন্তা বা উচ্চতম চিন্তা-ভাবনা করতে পারে না। সেই চেতনাটি জাগ্রত করার জন্য প্রয়োজন ধ্যান। ধ্যান ব্যতীত জ্ঞান সম্ভবপর নয়। তাই যারা এই জ্ঞানের সন্ধান পেয়েছেন, তারা ধ্যানের মাধ্যমেই পেয়েছেন।

সকালের নরোম রোদ এখন আস্তে আস্তে তার দীপ্তি ছড়াতে শুরু করেছে। করিম সাহেব তার চিন্তা-ভাবনা ছেড়ে দিয়ে বাহিরে যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। আর ঠিক সেই সময় রহিমা এসে হাজির। হাতে বাজারের ব্যাগ। করিম সাহেব বেশ বুঝতে পারলেন-তাকে বাজারে যেতে হবে। তিনি ঠিক এই বিষয়টি অপছন্দ করেন। বাজারে জিনিস পত্র দামাদামি করে কিনতে তার ভালো লাগে না। দোকানীরা কোন জিনিসই সঠিক দামে বিক্রি করে না। ব্যবসা করবিতো ভালো কথা কিন্ত্তু লাভের নামে গলাকাটা কাটবি কেন?

-এই নেও। বাজার নেই।

-তাতো বুঝতেই পারছি।

-ভালো। আজকে একটু ভালো মন্দ বাজার করো।

-কেন?

-কেন আবার? আজ তোমার ছোট মেয়ের জন্মদিন। ওর জন্মদিনতো আর ঘটা করে পালন করতে পারবো না..

একথা বলেই রহিমার বুক হতে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেল। সে দেখেছে আশে পাশে প্রতিবেশিদের বাড়ীতে কতো ঘটা করে ছেলে-মেয়ের জন্মদিন পালন করে। আর আমার মেয়ের কপালে জুটেছে একটা হা-ভাতে বাবা। যে বাবা কেবল বড়ো বড়ো কথা বলতে পারে..কিন্ত্তু টাকা-পয়সা কামাতে পারে না।

করিম সাহেব রহিমার দীর্ঘশ্বাসের অর্থ বোঝেন। কিন্ত্তু তার কিছু করার নেই। কারণ তিনি হাতে পায়ে বন্ধী। তিনি নিজে অনেক চেষ্টা করেও কোন কিছুতেই এগুতে পারছেন না। তাই তিনি অবসর পেলেই বই পড়েন। তাছাড়া এ বয়সে কাজ করার মতো শক্তি সামর্থ্য তার নেই। তিনি বাজারের ব্যাগটি হাতে নিলেন। তারপর বেরিয়ে পড়লেন।

পথে যেতে যেতে ভাবলেন-আল্লাহর তাহলে রুপ হচ্ছে দুটি। একটি আহাদ আল্লাহ আরেকটি সামাদ আল্লাহ। সর্বসত্তাময় মহান আল্লাহ পাক তার সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টারুপ ধরেছেন-খালিক তথা সৃষ্টিকর্তা রুপে। আর রবরুপে ধরেছেন পালনকর্তা। তাহলে যে আমাকে আলো-বাতাস দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন, সেটা কি স্রষ্টার রবরুপের বহিঃপ্রকাশ? 
(চলবে)