পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২০ জানুয়ারী, ২০১৬

করিম সাহেবের চিন্তা-ভাবনা ও হাঁস-মুরগীর ছানা পোনা - পন্ঞ্চম পর্ব


(চতুর্থ পর্বের পর হতে)

করিম সাহেব ভেবে পেলেন না - যে মা মুরগীটা তার পঙ্গু বাচ্চাটিকে আগলে রাখছে, সেই মা মুরগীটা কেন তার সেই বাচ্চাটির নিকট হতে তেলাপোকাটি ছিনিয়ে নিল? অতঃপর ভক্ষণ করলো? তাহলে কি ধরে নেবো মা মুরগীটার হৃদয়ে মায়া-মমতা বলে কিছু নেই? তা কি করে হয়? সেটা হলে তো সে তার পঙ্গু বাচ্চাটিকে আগলে রাখতো না। তাহলে কি তার ভেতর লোভ কাজ করছিল? কিন্ত্তু পরক্ষণেই করিম সাহেব বুঝতে পারলেন সেই রহস্যটি। তিনি দেখলেন - তার অন্যান্য ছানাগুলো মাকে খেতে দেখে তারাও দৌড়ে আসছে। খাবারটা নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। এবং মা মুরগীটা খাদ্যটা নিয়ে দুরে সরে যাচ্ছে। এই অসম লড়াইয়ে হয়তো পঙ্গু বাচ্চাটি পারতো না। খাদ্যটা নিয়ে মা মুরগীটা দুরে সরে যাওয়ায় তার সেই পঙ্গু বাচ্চাটি সম্পুর্ণ নিরাপদ রইল এবং তার অন্যান্য সঙ্গী-সাথীদের থেকেও বেঁচে গেল। করিম সাহেব বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলেন। যাক্ মা মুরগীটার মাথায় বুদ্ধি আছে। তা না হলে সেই পঙ্গু বাচ্চাটির খাদ্য নিয়ে তার অন্যান্য সঙ্গী-সাথীরা কাড়াকাড়ি করলে সে হয়তো আরো বেশি আহত হতো। সেই পরিণাম থেকে মা মুরগীটা তাকে বাঁচালো।

করিম সাহেব চায়ে চুমুক দিয়ে আবারো তার লেখার দিকে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করলেন। তিনি কি লিখতে চাইছিলেন, সেটাই ভুলে গেছেন। তিনি তাকিয়ে দেখছেন তার পুর্বের লেখাটি। লেখাটি শেষ করেছিলেন -

প্রশ্ন উঠছে-যারা শহীদ হয়েছে তাদেরকে মৃত বলা নিষেধ। কেবল তারাই জীবিত।আর বাকী যারা মারা যাবে তারা সবাই মৃত। তিনি কোরআনুল করিমের সেই আয়াতটি আবার পড়া শুরু করলেন এবং বেশ ভালোভাবেই বিচার বিশ্লেষণ করা শুরু করলেন। তিনি দেখলেন সেই আয়াতটিতে লেখা আছেঃ" ওয়া (এবং) লা (না) তাকুলু (তোমরা বলিও) লিমাই (যাহারা) ইউকতালু (নিহত হয়, হত্যা করা হয়,কতল করা হয়) ফি (মধ্যে) সাবিল (পথে,রাস্তায়) লিল্লাহে(আল্লাহর) আমওয়াতুন (তাহারা মৃত,তাহারা মরিয়া গিয়াছে) বাল (বরং) আহইয়াউন (তাহারা জীবিত) ওয়ালাকিন (কিন্ত্তু,যদিও) লা (না) তাসউরুন (তোমরা অনুভব কর, তোমরা বোঝো, তোমরা জানো, তোমরা খবর রাখো)।" অর্থঃ "এবং তোমরা বলিও না, যাহারা নিহত হয় আল্লাহর পথের মধ্যে তাহারা মৃত। বরং তাহারা জীবিত, কিন্ত্তু তোমরা জানো না।[সুরা বাকারা আয়াত নং-১৫৪]

বিষয়টি বেশ অদ্ভুত লাগলো করিম সাহেবের কাছে। কারণ, আল্লাহ পাক নিজেই বলছেন, যে বিষয়টি তোমরা বুঝবে না। অর্থাৎ যে লোকটি মারা গেল যাকে সবাই দেখলো এবং যার জানাজা পড়া হলো এমন কি সবাই মিলে তাকে দাফন পর্যন্ত করা হলো, তাকে সবাই মৃত হিসেবে জানলেও আল্লাহ পাক বলছেন যে, সে জীবিত । কিন্ত্তু কিভাবে জীবিত? সে সর্ম্পকে আল্লাহ পাক নিজেই বলছেন যে, তোমরা বুঝবে না। শর্ত হলোঃ- যারা আল্লাহর রাহে মৃত। বিষয়টি বেশ রহস্যজনক মনে হলো করিম সাহেবের কাছে। তিনি মনে মনে ভাবলেন এর একটি বিশদ ব্যাখ্যা প্রয়োজন। কিন্ত্তু সে ব্যাখ্যা কিভাবে দেবে? কে দেবে সেই ব্যাখ্যা?

তিনি কোরআন শরীফের তফসীরের শরাপন্ন হলেন। তিনি তফসীরে কোরআনুল করিম ডাঃ জাহাঙ্গীর আল সুরেশ্বর কর্তৃক রচিত এর প্রথম খন্ডটি হাতে নিলেন। অতঃপর সুরা বাকারার ১৫৪নং আয়াতের ব্যাখ্যা জানার জন্য উক্ত পুস্তকের ৭৪ নং পৃষ্ঠায় দেখতে পেলেন, সেখানে লেখা আছে - প্রথমেই বলা হয়েছে 'এবং' শব্দটি যুক্ত করে যে, যাহারা আল্লাহর পথের মধ্যে তথা "ফি" তথা "ইলা" নয় তথা "দিকে" নয়- নিহত হয়েছেন, তথা কতল হয়েছেন, তাদেরকে মৃত বলতে তথা 'মরে গেছে' বলতে একদম মানা করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ধর্মযুদ্ধটিকে 'জেহাদ' বলা হয়, আসলে এই জেহাদটিকে ছোট জেহাদ বলা হয়েছে। তাবুকের যুদ্ধে জয়লাভ করার পর মহানবীর (সাঃ) কাছে আসার পর মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন যে, তোমরা ছোট জেহাদে জয়লাভ করেছ, এবার তোমরা বড় জেহাদের দিকে ধাবিত হও। প্রশ্ন উঠেছিল, বড় জেহাদ বলতে কি বোঝানো হয়েছে? মহানবী (সাঃ) বলেছিলেন, আপন নফসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটাই হলো আসল জেহাদ তথা জেহাদে আকবর তথা বড় জেহাদ। কোরআন যতই রুপকতার আশ্রয় নিক না কেন, মুল কথাটি বলাই কোরআনের এক মাত্র উদ্দেশ্য। মুল হতে বিচ্যুত হয়ে কোন কথাই কোরআনে বলা হয় নাই। সুতরাং আপন নফসের বিরুদ্ধে জেহাদ করাটাই মুল উদ্দেশ্য। এখন প্রশ্ন হলো, নফস তো পবিত্র, তাহলে নফসের বিরুদ্ধে কেমন করে এবং কেন জেহাদ করতে যাব? প্রতিটি নফসের সঙ্গে শয়তানকে খান্নাসরুপে একান্ত পরীক্ষা করার জন্য দেওয়া হয়েছে। এই খান্নাসটিকে নফস হতে তাড়িয়ে দেবার জন্য ধ্যান সাধনাটিকেই জেহাদ বলা হয়েছে। ধর্মযুদ্ধের জেহাদটি এখানে গৌণ এবং আপন নফসের মধ্যে অবস্থিত খান্নাসরুপী শয়তানটির বিরুদ্ধে জেহাদ করাটি হলো মুখ্য। এই গৌণ এবং মুখ্য উভয় বিষয়টিকে একত্র করে অতুলনীয় সুন্দর করে কোরআনে যে বাক্যটি গঠন করা হয়েছে ইহা কোন মানুষের পক্ষ সম্ভব নয়।
(চলবে)