(পুর্ব প্রকাশের পর)
সামিউলের কথা শুনে তাসরীফ বেশ গভীরভাবে মেলাতে চেষ্টা করছে। একবার সে দেবী দুর্গা কিংবা কালী আবার যে পুতুলটা দেখেছিল সেটার দিকে খেয়াল করার চেষ্টা করলো। সত্যিইতো । তাদের সবটিতেই রুপ,রস,গন্ধ সবই আছে। আচ্ছা রস তার মানে পানি। শুকালেতো পানি থাকার কথা না। তাছাড়া সেটা তো জিহ্বায় থাকার কথা এবং শরীরের অধিকাংশইতো পানি। অর্থাৎ রক্ত, শ্লেদ বা আরো কিছু। তাছাড়া সেটা থাকলেতো জিহ্বা ভিজে থাকার কথা। ঠিক তখনই সে আবিস্কার করলো সে কেন নিজের দিকে তাকিয়ে দেখছে না? সে এবার বেশ সিরিয়াসলি ভাবনায় ডুবে গেল।
সামিউল তাশরীফকে নিয়ে রমেশের বাড়ী থেকে বের হয়ে বাড়ীর পথ ধরে। গ্রামের মেঠো পথে হাঁটতে হাঁটতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। চৈত্রের খর রোদে হাঁটার ফলে দুজনেই বেশ ঘামিয়ে যায়। পথের ধারে শিমুল গাছের নীচে তারা বিশ্রামের জন্য বসে পড়ে। ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। বাতাসে রোদের তাপ স্পষ্ট। হাল্কা গরম লাগলেও বেশ ভালো লাগছে। তাশরীফ জিগ্যেস করে
- কিরে তোকে না বললাম তুই ঐ পুতুলটার দিকে কেমন যেন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিলি। কারণটা বললি না?
- কারণটা কিছুটা রহস্যজনক মনে হলেও সেই সময় আমি অন্য একটি ভাবনায় হারিয়ে গিয়েছিলাম। তাই ঐ সময় অনেকক্ষণ পুতুলটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কি ভাবছিলাম সেটা বুঝতে হলে তোকে বেশ মনোযোগ নিয়ে শুনতে হবে। আর বিষয়টির সাথে কিছুটা হলেও আধ্যাত্মবাদ জড়িয়ে আছে। আছে জ্ঞানের অনেক উপলক্ষ। সুতরাং তোকে বেশ মনোযোগ এবং ধৈর্য নিয়ে শুনতে হবে।
- অারে ভনিতা বাদ দিয়ে তুই বলতো কেন তুই ঐভাবে তাকিয়ে ছিলি আর কি চিন্তা করছিলি?
- শোন আমি কি ভাবছিলাম আর কেন ঐ পুতুলটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
আমাদের দেহটি পন্ঞ্চভুতে সৃষ্টি। তাইতো? সেই পন্ঞ্চভুতগুলো কি কি? ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও বোম। মাটি, পানি, আগুন, বাতাস, ও আকাশ। এগুলোকে আরবীতে বলা হয় খামছা আনাছের। তো যে পুতুলটি পাল পাড়ায় তৈরী করা হচ্ছে-সেইটির মধ্যে কি এই পন্ঞ্চ উপাদান বিদ্যমান নয়? যদি বিদ্যমান না থাকে তাহলে কোন্ উপাদানটির ঘাটতি আছে? অর্থাৎ কোন উপাদানটি নেই? পুতুলটি তৈরী করার জন্য মাটি দেখেছিলাম। সেই মাটিকে পানি দ্বারা মোথিত করতে দেখেছি। তারপর বাতাসের সংস্পর্শতো সর্বদায় পাচ্ছে। তারপর আগুন দিয়ে পোড়ানো হচ্ছিল। সেটাও দেখেছি। আর আকাশ ভুতের যে কথা উল্লেখ আছে তা হচ্ছে স্পেস অর্থাৎ আকাশ। আকাশের উচ্চতা থাকায় সেটা বেড়ে উঠতে সাহায্য করছে। সেখানেও দেখেছি আকাশ ভুতের উপস্থিতি। এ পন্ঞ্চভুতের সংমিশ্রণে যদি আত্মা তৈরী হওয়ার কথা থাকে, তো আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি না কেন? তাহলে বুঝা যাচ্ছে - এ পন্ঞ্চ উপাদান কেবল খাঁচা বা ছকটাই তৈরী করতে পারে। আত্মা নয়। আত্মা অন্য জিনিস। কিংবা সেটি এমন একটি অজানা বিষয় যেটার সংস্পর্শে তা জীবিত হয়ে ওঠে। তাহলে সেটাকে আমরা কি বলতে পারি? যদি আত্মা বলি তাহলে আত্মা কিভাবে দেহে ক্রিয়া করে? কিংবা এই পন্ঞ্চভুতের সমষ্টি একীকৃত সমষ্টি চৈতন্য হওয়ার কথা থাকলে তো কুমারের তৈরী পুতুলের মধ্যে তা ক্রিয়া করার কথা। তা করছে না কেন?
- তুইতো ভালো জিনিসই চিন্তা করতেছিলি। আর আমিতো ভেবেছিলাম অন্য কিছু?
- তুই কি ভাবছিস আমি বুঝতে পারিনি?
- সেটাই কি স্বাভাবিক না? শত হলেওতো সেটা একটা নারী পুতুল। একথা বলে তাসরীফ হাসিতে ফেটে পড়ে।
- দ্যাখ, তোকেতো অামি প্রথমেই বলেছিলাম বিষয়টি হাসি ঠাট্টা না করে সিরিয়াসলি চিন্তা করতে। কারণ এর মধ্যে রয়েছে জ্ঞানের বিষয়। যা সৃষ্টি এবং স্রষ্টা সর্ম্পকে চিন্তা করতে সাহায্য করবে। কিন্ত্তু তুই বিষয়টাকে নিয়ে হাসি তামশায় পরিণত করছিস।
-সরি দোস্ত। আর করবো না। যা প্রমিস। আর সিরিয়াসলি নিতে বলছিলি না-ঠিক আছে সিরিয়াসলি নিলাম। ক্যারি অন মাই ফেন্ড।
-না। তুই কথা বলার রেশ কেটে দিয়েছিস। এখন আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তুই থাক। অামি চললাম।
এ কথা বলেই সামিউল চলে যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালো। আর অম্মনি তাশরীফ সামিউলের জামার আস্তিন ধরে টেনে বসিয়ে দিল।
- সরি দোস্ত। একটু ঠাট্টা করছিলাম। মনে কিছু করিস না। সত্যি বলছি এখন থেকে তুই সিরিয়াসলি পাবি। এবং তোর সাখে অামার জানা বিষয়ও শেয়ার করবো। প্লীজ।
তাশরীফের কথা শুনে সামিউল বসে পরে। তারপর সে আবার বলা শুরু করে
- আচ্ছা তোর কি জানা আছে এই পন্ঞ্চ ভুতের কার কি গুণ-কি রুপ এবং কোথায় স্থিতি?
- না। কিন্ত্তু তুইতো আত্মার কথা বলছিলি। সেটার কথা না হয় বল।
- সেটা পরে আসবে। তার আগে ঐ পন্ঞ্চভুতের অারো কিছু বৈশিষ্ট্য আছে তা জানা দরকার। সেটাই শোন আগে।
পৃথিবী (ক্ষিতি) - গন্ধ গুণ । শুক্লবর্ণ। স্থির রুপ। নাসিকায় স্থিতি ।
পানি ( অপ) - রস গুণ। কিন্ঞ্চিৎ গৌর বর্ণ। দ্রব্য রুপ । জিহ্বায় স্থিতি ।
আগুন (তেজ) - রুপ গুণ। ভস্ম বর্ণ। সুন্দর রুপ। চক্ষে স্থিতি।
বায়ু (মরুৎ) - স্পর্শ গুণ। শ্যামল বর্ণ । শ্যামার্ত্তরুপ। চর্ম্মে স্থিতি।
আকাশ (ব্যোম) - শব্দ গুণ। ধুম্র বর্ণ। সূক্ষ্ম রুপ। কর্ণে স্থিতি।
পুতুলটার দিকে খেয়াল করলে দেখবি ঐগুণগুলো উপস্থিতি আছে। কিংবা একটি প্রতিমার কথা চিন্ত্তা কর। দেখবি যে গুণগুলোর কথা বলা হয়েছে তার সবই উপস্থিত আছে।
সামিউলের কথা শুনে তাসরীফ বেশ গভীরভাবে মেলাতে চেষ্টা করছে। একবার সে দেবী দুর্গা কিংবা কালী আবার যে পুতুলটা দেখেছিল সেটার দিকে খেয়াল করার চেষ্টা করলো। সত্যিইতো । তাদের সবটিতেই রুপ,রস,গন্ধ সবই আছে। আচ্ছা রস তার মানে পানি। শুকালেতো পানি থাকার কথা না। তাছাড়া সেটা তো জিহ্বায় থাকার কথা এবং শরীরের অধিকাংশইতো পানি। অর্থাৎ রক্ত, শ্লেদ বা আরো কিছু। তাছাড়া সেটা থাকলেতো জিহ্বা ভিজে থাকার কথা। ঠিক তখনই সে আবিস্কার করলো সে কেন নিজের দিকে তাকিয়ে দেখছে না? সে এবার বেশ সিরিয়াসলি ভাবনায় ডুবে গেল।