পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০১৫

পুতুল খেলা

রহিম সাহেব তার মেয়ে অর্থির জন্য একটি পুতুল কিনেছেন। পুতুলগুলো চায়নার তৈরী। একটি চাবি আছে। সেটাতে চাবি দিলেই পুতুলটি নাচতে থাকে। শুধু নাচেই না একটি মিউজিকও প্লে হয়। সেই মিউজিকের তালে তালে সেটা ঘুরে ঘুরে নাচে। পুতুলটি পেয়ে তার মেয়েটি খুশিতে আটখানা। সে যখনই সময় পাচ্ছে তখনই পুতুলটিতে চাবি দিচ্ছে। ছেড়ে দিচ্ছে । সেটি মিউজিকের তালে তালে নাচছে হাতে তালি দিচ্ছে। হাতে থাকা ছাতাটি ঘুরাচ্ছে। অসম্ভব খুশিতে তিনিও বেশ প্রফুল্ল বোধ করছেন। তিনিও মেয়ের সাথে সেই পুতুল নিয়ে খেলছেন। অর্থি চিৎকার করে বলছেঃ

-বাবা বাবা ধইরো না...

তিনি মেয়ের কথা শুনছেন না। তিনি সেটা নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখছেন। দেখলেন দুটি পেন্সিল ব্যাটারী আছে। একটি সাউন্ড বক্স আছে। একটি সার্কিট বক্স আছে। গায়ের পোষাকের নিচে একটি বক্স করে রাখা। বাহির থেকে দেখে বুঝার উপায় নেই। তিনি চাবি দিচ্ছেন..সেটাকে ছেড়ে দিচ্ছেন গুনগুন করে গান গাইছে। ঘুরে ফিরে নাচছে...আবার তার পুণরাবৃত্তি করলেন। ব্যাটারী খুললেন। সেটা থেমে গেল। চালাচ্ছেন চলছে। একটু বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেন। দেখা গেল সেটা কিছুক্ষণ সেখানে থেকে মোড় ঘুরিয়ে আবার চলা শুরু করছে....

তিনি যখন পুতুলটি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছেন ততক্ষণে অর্থি কান্না শুরু করে দিয়েছে। অর্থির কান্না শুনে পাশের রুম থেকে মিতু ছুটে এসে দেখলেন তার স্বামী পুতুল খেলায় মেতে আছে। তার পাশে থাকা অর্থির দিকে তার কোন খেয়াল নেই। মেয়েটি কান্না করতে করতে গড়াগড়ি যাচ্ছে। সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। এটা দেখে মিতুর বেশ রাগ হলো। সে রহিম সাহেবকে লক্ষ্য করে বলছেনঃ

-কি হলো তোমার? মেয়েটি কান্না করছে তুমি কি শুনতে পাচ্ছ না?

সম্বিত ফিরে পেয়ে রহিম সাহেব মিতুকে বলছেঃ

-দ্যাখো এর মধ্যে দুটি ব্যাটারী একটি সাউন্ড বক্স একটি সার্কিট আছে। চাবি দিলেই দম পেয়ে সেটা গান গাচ্ছে। ঘুরছে..নাচছে...

-সেটা দেখার কিছু নেই। তুমি অর্থিকে পুতুলটা দাও। ওর কান্না থামাও...দেখছো না মেয়েটা কান্না করছে...

-আরে বাবা দিচ্ছি..একটু দেখতে চাইছি চীনারা এটা কিভাবে ব্রেন খাঁটিয়ে বানিয়েছে...আবার সিল মেরে দিয়েছে মেইড ইন চায়না...ওদের বেশ বুদ্ধি আছে বলতে হবে...

-ওদের বুদ্ধি দেখে তোমার কাজ নেই। তুমি পুতুলটা দাও...

এ কথা বলেই মিতু ছো মেরে পুতুলটা ছিনিয়ে নিয়ে মেয়ের হাতে দিলেন। পুতুলটা পেয়ে তার কান্না বন্ধ করে চোখ মুছতে মুছতে বগলদাবা করেই সেখান থেকে চলে গেল।

রহিম সাহেব বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। এটা কিভাবে সম্ভব? এতোটাতো মিল থাকার কথা না। যে সৃষ্টি করে সে হয় সৃষ্টি কর্তা। আরবীতে সৃষ্টিকর্তাকে বলা হয় খালিক।  যেমন পুতুলটি সৃষ্টি করেছে চায়না। লেখা মেইড ইন চায়না। তাহলে পুতুলটির খালিক হচ্ছে চীন। আমি যদি আমার দিকে তাকাই। তাহলে দেখি আমার সৃষ্টি কর্তা হচ্ছেন আমার পিতা। তাহলে সে হচ্ছে খালিক। আর আমার মা আমাকে লালন পালন করেছেন। আরবীতে লালন-পালন করাকে বলা হয় রব অর্থাৎ পালন কর্তা। তাহলে মা হচ্ছেন রব। তারাওতো সে একই প্রকৃয়ায় একইভাবে সৃষ্ট। তাহলে আমরা যদি প্রকৃতভাবে বিচার করি তাহলে তো সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন খালিক সেই মহান জাত পাক সুবহান। তিনিইতো আমার আহার যোগাচ্ছেন। আমার কর্মের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনিইতো রব। চিন্তার গভীরে তিনি হারিয়ে গেলেন।