পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ৮ মে, ২০১৫

একটি শোক সংবাদ

একটি শোক সংবাদ। অদ্য বিকাল ৫ ঘটিকায় রামপুরা নিবাসী.......ইন্তেকাল করিয়াছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া....রাজিউন। মরহুমের নামাযে জানাযা বাদ এশা .....অনুষ্ঠিত হবে।

মেয়ের জন্য ক্যাডবেরী এবং চকোবিন কিনে বাড়ী ফেরার পথে শফিক সাহেব মাসুমের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি একটি শোক সংবাদ শুনতে পেলেন।  মাইকে শোক সংবাদের খবর পেয়ে কিছুটা হলেও চমকে উঠলেন। কে মারা গেল তা শোনার জন্য আবারো খেয়াল করলেন। কিন্ত্তু ততক্ষণে দুরে চলে যাওয়ায় তা স্পষ্ট শুনতে পেলেন না। তিনি মাসুম কে জিগ্যেস করলেনঃ

- মাসুম কে মারা গেল?

- কি জানি ভাই? আমিতো চা বানাতে ব্যস্ত ছিলাম। কি বলছে তা শুনতে পাইনি।

- তুমিওতো দেখছি আমার মতো। কোন দিকেই খেয়াল দেও না।

- কি করমু ভাই? সব দিকে খেয়াল দিলে কি চলে?

- একটা সিগারেট দাও। আর কতো হইছে?

- ষোলো টাকা।

শফিক সাহেব ষোলো টাকা দিয়ে তার বাড়ীর দিকে হাঁটা দিলেন। পথে যেতে যেতে ভাবলেন-কে মারা গেল। কিভাবে মারা গেল। কিছুইতো জানতে পারলাম না। জানা কি জরুরী ছিল না? একজন মানুষ এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে। কি ভাবে যাচ্ছে? কোথায় যাচ্ছে? কিছুই তার জানা যাবে না। কি বিচিত্র এই মৃত্যু। হাঁটতে হাঁটতে তিনি তার বাড়ীর কাছে পৌঁছে গেলেন। দরোজায় দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপলেন। বেলের শব্দ শুনে অর্থি দৌড়ে এসে দরোজাটা খুলে দিল। শফিক সাহেবকে দেখে অর্থি চিৎকার করে উঠলোঃ

- বাবা....সামিউল দেইখ্যা যা বাবায় আইছে।

কিন্ত্তু মেয়ের ডাক চিৎকারে শফিক সাহেব বিন্দুমাত্র উৎসাহবোধ করলেন না। তিনি সোজা ঘরের ভেতর ঢুকে গেলেন। তার এ আচরণে মিতু বেশ অবাক হলো। সে জানে তার স্বামী তার সন্তানদের কতোটা ভালোবাসেন। প্রতিদিন আসার সময় মেয়ের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসেন। আজ এসেছেন একদম খালি হাতে। তার উপর ছেলে মেয়েদের প্রতি কোন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এমন অস্বাভাবিক আচরণে মিতু বেশ ঘাবড়ে গেল। কি হলো তার স্বামীর? মিতু উৎকন্ঠা নিয়ে জিগ্যেস করলোঃ

- কি ব্যাপার? তুমি মেয়ের ডাকে সাড়া দিলে না?

- কি? তুমি কি কিছু বললে?

- বললাম তুমি মেয়ের ডাকে কোন সাড়া শব্দ দিলে না? দ্যাখোতো ও কেমন মন মরা হয়ে গেছে? তোমার কি কিছু হয়েছে?

- না। তেমন কিছু না। রাস্তায় আসতে আসতে একটা মৃত্যুর সংবাদ শুনলাম। তাই একটু বিচলিত।

- কে মারা গেছে?

-জানি না।

- জানো না । অথচ না জেনেই কেমন আনমনা হয়ে গেছো?

- অর্থিকে ডাকো। অর্থি ...অর্থি...মা মণি..

বাবার স্নেহের ডাক শুনে অর্থি তার ছোট ভাই সামিউলকে সাথে নিয়ে আসছে। তিনি সামিউলকে কোলে তুলে নিলেন। আর অর্থির জন্য আনা চকোবিনের প্যাকেটটা হাতে দিলেন। ক্যাডবেরির প্যাকেটটাও দিলেন। সেগুলো পেয়ে অর্থি খুশিতে আটখানা হয়ে গেল। সে তার ভাইকে রেখে দৌড়ে পালিয়ে গেল। তিনি মিতুকে বললেন-এককাপ চা দাও। তিনি ছেলেকে কোলের থেকে নামিয়ে বাথরুমে গেলেন। মাগরিবের ওয়াক্ত হয়ে যাওয়ায় তিনি অযু করে নামায পড়ার জন্য জায়নামায চাইলেন। নামায পড়ে তিনি চা চাইলেন। চা খেতে খেতে তিনি ভাবছেন সেই শোক সংবাদের কথা। চা টা শেষ করে তিনি একটি বই নিয়ে পড়তে বসলেন। বিছানায় হেলান দিয়ে বই পড়ছেন। কবরের আযাব ও মৃত্যুর পর। বইটা পড়ার সময় তার মাথায় কি যেন একটা চিন্তা আসলো। তিনি বিছানা হতে নেমে কাগজ কলম নিয়ে বসলেন। ইন্টারনেট সার্চ করলেন। বিভিন্ন স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করলেন। তার পর লেখা শুরু করলেনঃ

মৃত্যু কি এবং কেন?

মৃত্যু (ইংরেজি: Death) বলতে জীবনের সমাপ্তি বুঝায়। জীববিজ্ঞানের ভাষায় প্রাণ আছে এমন কোন জৈব পদার্থের (বা জীবের) জীবনের সমাপ্তিকে মৃত্যু বলে। অন্য কথায়, মৃত্যু হচ্ছে এমন একটি অবস্থা (state, condition) যখন সকল শারিরীক কর্মকাণ্ড যেমন শ্বসন, খাদ্য গ্রহণ, পরিচলন, ইত্যাদি থেমে যায়। কোন জীবের মৃত্যু হলে তাকে মৃত বলা হয়।
মৃত্যু বিভিন্ন স্তরে ঘটে থাকে। সোমাটিক মৃত্যু হল সামগ্রিকভাবে কোন জীবের মৃত্যু। নির্দিষ্ট অঙ্গ, কোষ বা কোষাংশের মৃত্যুর আগেই এটি ঘটে। এতে হৃৎস্পন্দন, শ্বসন, চলন, নড়াচড়া, প্রতিবর্ত ক্রিয়া ও মস্তিষ্কের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। সোমাটিক মৃত্যু ঠিক কখন ঘটে তা নির্ণয় করা দুরূহ, কেননা কোমা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, এবং ঘোর বা ট্রান্সের মধ্যে থাকা ব্যক্তিও একই ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে থাকেন।

সোমাটিক মৃত্যুর পর অনেকগুলি পরিবর্তন ঘটে যা থেকে মৃত্যুর সময় ও কারণ নির্ণয় করা যায়। মারা যাবার পরপরই পার্শ্ববর্তী পরিবেশের প্রভাবে দেহ ঠান্ডা হয়ে যায়, যাকে বলে Algor mortis। মারা যাবার পাঁচ থেকে দশ ঘণ্টা পরে কংকালের পেশীগুলি শক্ত হয়ে যায়, যাকে বলে Rigor mortis, এবং এটি তিন-চার দিন পরে শেষ হয়ে যায়। রেখে দেয়া দেহের নীচের অংশে যে লাল-নীল রঙ দেখা যায়, তাকে বলে Livor mortis; রক্ত জমা হবার কারণে এমন হয়। মৃত্যুর খানিক বাদেই রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। আর তারপরে দেহের যে পচন শুরু হয়, তার জন্য দায়ী এনজাইম ও ব্যাক্টেরিয়া।

দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিভিন্ন হারে মারা যায়। সোমাটিক মৃত্যুর ৫ মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্কের কোষগুলির মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে হৃৎপিণ্ডের কোষগুলি ১৫ মিনিট এবং বৃক্কেরগুলি প্রায় ৩০ মিনিট বেঁচে থাকতে পারে। এই কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সদ্যমৃত দেহ থেকে সরিয়ে নিয়ে জীবিত ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।[সুত্রঃউইকিপিডিয়া]

বিষয়টি জানা ছিল না। বেশ ভালো একটি তথ্য পেলেন।
[চলবে]