পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৬ মে, ২০১৫

মাটির পুতলা - শেষ পর্ব

(পূর্ব প্রকাশের পর)
সামিউল দেখলো তাশরীফ সত্যিই বিষয়টা নিয়ে বেশ গভীর চিন্তায় নিপতিত হয়েছে। তাকে ঐ অবস্থায় দেখে সে গুণ গুণ করে আল্লামা ইকবালের একটি শায়ের আবৃত্তি করছিলঃ
Roshan To Woh Hoti Hai, Jahan Been Nahin Hoti
Jis Ankh Ke Pardon Mein Nahin Hai Nigah-E-Pak

An eye which in its vision does not imbibe pure virtue
Is capable of seeing, no doubt, but is not all‐seeing.

- কিরে কিছু ভেবে পেলি?

-হুম। দেখলাম পন্ঞ্চভুত ছাড়াও আরো কিছু উপাদানের প্রয়োজন আছে। নিজের দেহের সাথে মিলিয়ে দেখলাম।
-তাই? কি পেলি?
-তাহলে এইবার তুই শোন। তাশরীফ বলা শুরু করে
আমাদের দেহটি তিনটি অংশে বিভক্ত। আর তা হলো-
স্থুলদেহ (Physical Body), সূক্ষ্মদেহ (Etheric Body) এবং সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মদেহ (Astral Body)। স্থূলদেহ হচ্ছে দেহের বাহ্যিক আবরণ। সূক্ষ্মদেহ হচ্ছে দেহের আভ্যন্তীণ উপকরণ সমুহ। আর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মদেহ হচ্ছে দেহের প্রাণশক্তি তথা ঈসায়ী শক্তি বা রুহ। যে পন্ঞ্চভুতের কথা বলেছিস তার মধ্যে আরো কিছু গুণাবলী রয়ে গেছে যা তুই বলিস নি। যেমন আমি দেখলাম পন্ঞ্চ ভুত হতে উদ্ভূত এই দেহে প্রত্যেক ভুত হতে পাঁচ পাঁচটি করে আরো পঁচিশটি বস্তুু ও গুণের সৃষ্টি হয়েছে। যথাঃ-
মাটি হতে-অস্থি, মাংস, নখ, চর্ম ও লোম।
পানি হতে-শুক্র, শোনিত,মজ্জা,মল ও মুত্র।
অগ্নি হতে-ক্ষুধা, পিপাসা, নিদ্রা, আলস্য ও ক্লান্তি।
বায়ু হতে-ধারণ, চলন, ক্ষেপন, সংকোচন ও প্রসারণ।
আকাশ হতে-কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও লজ্জা।
তাছাড়া  আরো পন্ঞ্চবিংশতি গুণ ও বস্তুু আছে। তাঁদের সংমিশ্রণে দেহ সংক্রিয় হয়ে থাকে। যথাঃ- আত্না, প্রকৃতি, বুদ্ধি, আমিত্ব, মন, চক্ষু, কর্ণ, জিহ্বা, নাসিকা, ত্বক, কফ, পানি, পাদ, পায়ু, উপস্থ, শব্দ,স্পর্শ, রুপ, রস, গন্ধ, ঈথার(আকাশ), বায়ু, অগ্নি, জল, মাটি ও আপ্ত। সর্বমোট পঁচিশটি।

তাশরিফের কথা শুনে সামিউল হা হয়ে গেল। সে জিগ্যেস করলোঃ

-তুই এত কিছু জানলি কিভাবে?

-আরে ব্যাটা। তুই কেবল নিজেকে পন্ডিত ভেবে বসে আছিস। নিজের পান্ডিত্য জাহির করার জন্য আমার সাথে তর্ক করতে আসছিস?

-তাই? না। ঠিক আছে। তোর কথার দৌড় কত দুর দেখি। আচ্ছা বলতো - অাদমকে আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন তার নিজ সুরতে। বলা হয় - খালাকাল আদামা আলা সুরাতিহি। তাহলে হাওয়া কার সুরতে সৃষ্টি? আল্লাহ আদমকে কাদা মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। কিন্ত্তু হাওয়াকে কিভাবে সৃজন করেছেন?

সামিউলের কথা শুনে তাশরীফ মাথা নীচু করে রইল। তা দেখে সামিউল বললোঃ

তাকা আমার দিকে। শোন আমরা পাল পাড়ায় দেখেছি কেউ মাটি আনছে। কেউ পানি আনছে। কেউ বা পুতুল তৈরীর ছকে ঢেলে সেটাকে আকৃতি দিচ্ছে। আবার কেউ সেই আকৃতিতে রং মেখে তাকে সাজাচ্ছে। তাইতো। এবার তুই চিন্তা করে দেখ - সৃষ্টির প্রারম্ভে সৃষ্টিকর্তা ঐ উপাদানসমুহ (পন্ঞ্চভুত) কোথায় পেলো?
আমরা জানি বা দেখি জীব জগতে মৈথুন প্রক্রিয়ায় মায়ের উদরে জীবের জন্মদান করা হয়। সেই জন্মদান করার সময় জীব তার আকৃতি নিয়ে বের হয়। তাহলে আদম কোন্ উদরে সৃষ্টি হলো? বল।
 নারী পুতুলটা দেখেই আমার মনে এই চিন্তার উদয় হয়। কারণ নারী ব্যতীত পুরুষের পক্ষে সৃষ্টি সম্ভব নয়। আবার শুধু নারী দিয়েও সৃষ্টি সম্ভব নয়। তাহলে আদম সৃষ্টির রহস্য বর্ণিত আছে। কিন্ত্তু হাওয়া সৃষ্টির রহস্য বর্ণিত হয়নি। কেন?
শোন হযরত খাজা শাহ্ পীর চিশতী (রহঃ) তাঁর চিশতী উদ্যানে বলেছেনঃ
"একেতে বহুত হয় বহুতে এক হয় না।" এই কালামের রহস্যটা বুঝতে পারলে তুই প্রকৃত সত্যটা জানতে পারবি। শোন
তোকে একটা হিন্টস দিচ্ছি। এ সব কিছুর উত্তর পবিত্র কোরআন পাকে বর্ণিত আছে। তুই সেই আলোকে জবাব দে। দেখি তুই কতো বড় জানলেওয়ালা হয়ে গেছিস?

সামিউলের কথা শুনে তাশরীফ তার দিকে অপলক তাকিয়ে রইলো। আর সেটা দেখে সামিউল মুচকি মুচকি হাসছে আর  মীর্যা গালিবের আরেকটি শায়ের আবৃত্তি করছেঃ

Hairat He Tum Ko Dekh Kar Misjid Main Ae! Insaan
Aaj Kya Baat Ho Gai Jo Khuda Yaad Aa Gaya