(দ্বিতীয় পর্বের পর)
পুলিশের গাড়িটি নানা দোলাচালে হেলেদুলে চলছে। অনেকটা নৌকা দোলার মতো। ঝাঁকুনিতে ঝিমুনি এম্মনিতেই এসে যায়। তাইতো বলি পাশের পুলিশ দুটি কেন ঘুমাচ্ছে?
আমি মনে মনে আমার সুখ স্মৃতির কল্পনায় হারিয়ে গেলাম। সেবার আমি আর শ্বেতা দুজনে একটা নৌকা ভাড়া করলাম। কোথায় যা'ব জানি না। কোথাও আমার হারিয়ে যেতে নেই মানা টাইপের। আমি নৌকায় বসে আছি। আমার পাশে শ্বেতা। শ্বেতার পরণে ছিল লাল পারের সাদা শাড়ি। কপালে ছিল লাল রংঙের টিপ। হাতে ছিল শাঁখার চুড়ি। তাকে দেখতে কেন যেন হিন্দুয়ানি ঘড়ানার কোন গৃহস্থ বাড়ির বউয়ের মতো লাগছিল। নৌকার গলুইয়ে বসে শ্বেতা পানিতে হাত ডুবানের চেষ্টা করলো। একটু উপুড় হয়ে বসে পানি ধরছে আর তা আমার চোখে মুখে ছিটিয়ে দিচ্ছে। যে স্থানটায় আমি আর শ্বেতা গিয়েছিলাম সেটা ছিল - আড়িয়াল বিল। বিলের চারদিকে কেবল পানি আর পানি। সেই পানিতে পদ্মফুল ফুটে আছে। লাল টকটকে পদ্মফুল। শ্বেতা হাত দিয়ে পদ্মফুল তোলার চেষ্টা করছে। কিন্ত্তু পারছে না। সে আবারও চেষ্টা করলো। একটা পদ্মফুল ধরে সেটাকে টান দিতেই ছিঁড়ে গেল। আরেকটা ধরার চেষ্টা করছে। কিন্ত্তু আচমকা নৌকাটা দুলে উঠায় শ্বেতা পড়ে যেতে চাইল। ঠিক তক্ষুণি আমি তাকে ধরে ফেললাম। সে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার তাকানোর ভংগিটা ছিল অসাধারণ। চোখের কোণে কাজল দেয়ায় চোখের পানিতে কাজলগুলো ধুয়ে নেমে আসতে চাইছে। শ্বেতা ভয় পেয়ে এমনভাবে জপটে ধরেছিল যে আমি সহজে ছুটতে পারছিলাম না। আমি সেই প্রথমই কোন মেয়ের শরীরের ঘ্রাণ পাই। কি মিষ্টি একটি গন্ধ নাকে এসে লাগছে। চোখ মুদে আসে সেই ঘ্রাণ সুদীর্ঘভাবে টেনে নিতে চাইলে। আমি চোখ দুটো মুদে রইলাম আর মনে মনে আবৃত্তি করলামঃ
তুমি তো জানো না কিছু-না জানিলে,
আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে
যখন ঝরিয়া যাবো হেমন্তের ঝড়ে-
পথের পাতার মতো তুমিও তখন
আমার বুকের পরে শুয়ে রবে?
অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন
সেদিন তোমার!
তোমার এ জীবনের ধার
ক্ষয়ে যাবে সেদিন সকল?
আমার বুকের পরে সেই রাতে জমেছে যে শিশিরের জল,
তুমিও কি চেয়েছিলে শুধু তাই;
শুধু তার স্বাদ
তোমারে কি শান্তি দেবে?
আমি ঝরে যাবো-তবু জীবন অগাধ
তোমারে রাখিবে ধরে সেদিন পৃথিবীর পরে
আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে।
শ্বেতা তখনো কাঁদছে। এই ভয়ে যে যদি পানিতে পড়ে যেত। তাহলে কি হতো? সেতো সাঁতার জানে না। তাকে সান্তনা দিয়ে বললামঃ
-তুমিতো আমাকে বললেই পারতে। কেন বলোনি?
-এমন সুন্দর প্রকৃতি। এমন সুন্দর একটা দিন। আর তোমাকে বলতে হবে - প্লীজ আমাকে একটা পদ্মফুল ছিঁড়ে খোঁপায় পড়িয়ে দাও না?
-আহা, আমি বুঝবো কি করে?
-তোমাকে বুঝতে হবে কেন? তোমার ভেতর কি রোমান্টিক অনুভুতি নেই?
-ছিল এবং এখনো আছে। আমি তোমাকে চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম-তুমি কি করো? তোমার দিকে তাকিয়ে ছিলাম বলেইতো তোমাকে ধরতে পেরেছি। না ধরলে কি সর্বনাশ হয়ে যেত। বলোতো?
-এখনোতো ধরে আছো। ছাড়ছো না কেন?
-ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। মনে হয় এভাবে ধরে রাখি সারাটা জীবন...
কতক্ষণ ধরে ছিলাম জানি না। সেই সুখ স্মৃতি ভংগ হলো সেই বেরসিক পুলিশটির ডাকে। দেখলাম এবার সে বেশ আগ্রহ নিয়েই পাশের পুলিশ দুটোকে জাগালো। তারপর বেশ আগ্রহ নিয়ে ডায়রী হতে শব্দ করে পড়া শুরু করে দিলঃ
তারিখঃ
১৪/০২/২০১৪
বারঃ
শনিবার
আজ
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আজকে আমি
আর সাজিদ সারাদিন একসংগে
কাটিয়েছি। একসংগে দুপুরের খাবার
খেয়েছি। পড়ন্ত
বিকেলের সুর্যালোক পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সুর্যাস্ত দেখেছি। লাল রক্তিম সুর্যটা
যেন সারাদিনমান ক্লান্ত থেকে বিশ্রাম নিতে
চলে যেতে চাইছে। আর
আমি চাইছি সাজিদের প্রেম।
একটু আদর...কিন্ত্তু ও
একটা হাদারাম কিচ্ছু বোঝে না।
মেয়েরা কি সবকিছু বুঝিয়ে
দেয়? ওর সরলতা আমাকে
মুগ্ধ করে বলেই ওকে
আমি এতোবেশি ভালোবাসি। আমার প্রাণের চাইতেও
ওকে ভালোবাসি। ইশ্ ও যদি
আরেকটু চালাক-চতুর হতো...ধুর কি সব
ভাবছি...
সাজিদ সাজিদ সাজিদ.....আমি
তোমাকে ভালোবাসি...ভালোবাসি....ভালোবাসি....
পুলিশটা
আমার দিকে আবারো আড়চোখে
তাকালো। আমিও তাকালাম। দেখলাম
তার বুক পকেটের উপর লেখা - মোঃ
আব্দুস সাত্তার। পাশের পুলিশ দুটো
ওর সেই বিদঘুটে শব্দ
উচ্চারণের প্রতি বিন্দু মাত্র
আগ্রহ দেখালো না।
আমি ঘুমন্ত পুলিশ দুটোর
বুক পকেটের দিকে তাকালাম।
একজনের নাম মস্তফা আরেক
জনের নাম ঠিক বোঝা
যাচ্ছে না। আমি ভালো
করে তাকিয়ে পড়তে চেষ্টা
করলাম।
(চলবে)
(চলবে)