পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

শ্বেতার ডায়রী-পন্ঞ্চম পর্ব

তারিখঃ ১৭ই এপ্রিল, ২০১৪
বারঃ বৃহসপতিবার

আজকে আমাদের ক্লাসে জালাল স্যার পদার্থের ধর্ম পড়াচ্ছিলেন। স্যার বলছিলেন-পদার্থ কাকে বলে? পদার্থের ধর্ম কি? পদার্থ কতো প্রকার ও কি কি? স্যার পড়ানোর ফাঁকে লক্ষ্য করলেনঃ সাজিদ মাহিনের সাথে ফিস ফিস করে কথা বলছে। কি বলছিল ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। কিন্ত্তু তাদের কথোপকথন স্যারের দৃষ্টি এড়ালো না। স্যার কঠিন দৃষ্টি নিয়ে সাজিদের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলেনঃ এ্যই ছোকরা, কি নাম?

-স্যার, সাজিদ।

-সাজিদ? আচ্ছা কি নিয়ে এত কথা বলছিলে?

-মাহিন জানতে চাইলো-ধর্ম কি?

-তা স্যাার আপনি কি বললেন? ব্যাঙ্গাত্মক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে স্যার সাজিদকে প্রশ্ন করলেন।

-স্যার আমি বলেছি ধর্ম হলো যা ধরণ করে আছে। অর্থাৎ একটা বস্তু যে গুণাবলী ধারণ করে আছে তাই তার ধর্ম।

-হুম। তাহলে ধর্ম নিরপেক্ষতা কি?

-স্যার ধর্ম নিরপেক্ষতা হলোঃ যে কোন পদার্থের গুণাবলী নষ্ট না করে কিংবা অন্যের গুণাবলীকে প্রষ্ফুটিত করার জন্য বা  ত্বরান্তিত করার জন্য সহায়তা করে।যেমনঃ শয়তান।

জালাল স্যার রাগে গজ গজ করতে করতে বললেনঃ বেয়াদব। এক্ষুণি ক্লাস থেকে বের হ।
তোমার সেই দিনের খেয়ালীপনায় সমস্ত ক্লাসের ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটা পিন পতন নীরবতা নেমে এসেছিল।সবার কাছে তুমি হাসির পাত্র বনে গেলে। কি লাভ হলো বলোতো? তোমাকে সেই দিন বের করে দেয়ায় আমার যে কি কষ্ট হচ্ছিল তা তোমাকে বোঝাতে পারবো না। কিন্ত্তু কেন তুমি এমন কাজটা করলে তা কিন্ত্তু কোনদিন বলোনি।

রাত তখন আনুমানিক তিনটা। শীতের রাতগুলো মেরাথন প্রকৃতির হয়। আমার আজকের রাতটি আরো বেশি মেরাথন মনে হচ্ছে। আকাশের চাঁদ তখন কুয়াশার চাদরে ঢাকা। মাঝে মাঝে গাড়িতে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে তা পেটানোর চটোপৎঘাত পাওয়া যাচ্ছে। শুনেছি শীতে মশাদের বেশি প্রডাক্টিভিটি থাকে না। শীতের প্রকোপের কারণে মশাদের বংশবৃদ্ধি হয় না। প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়। কিন্ত্তু মানবের ক্ষেত্রে কোন বাঁধই মানে না। কি করবো বুঝতে পারছি না। আর আমাকে নিয়ে কি করতে চায়, তাও স্পষ্ট হয়নি। কোর্টে চালান দেবে না-কি থানা হাজতে ঢুকিয়ে দেবে তাও বুঝতে পারছি না। কি যে করি? 

তারিখঃ ১৯শে এপ্রিল, ২০১৪ইং
বারঃ শনিবার
আজকে তুমি একটা অদ্ভুত কথা বললে। আমি তোমাকে বলেছিলাম-তোমার পাগলামির রহস্য কি? তুমি বললেঃ মনা পাগলা। যখন প্রশ্ন করি মনা পাগলাটাকে, তখন বললে-মনা পাগলা হলো মনের ভেতর যে পাগলের বাস, সেই পাগলই হচ্ছে মনা পাগলা। প্রত্যাকটি মানুষের মনের মধ্যে আরেকটা মানুষ থাকে। সেটা হলোঃ মনের মানুষ। আর আমারটা হলোঃ পাগল। তাই আমার পাগলামির রহস্যজনক ব্যক্তির নামঃ মনা পাগলা। 
তুমি যে পাগল হয়ে যাচ্ছ-তা কি তুমি বুঝতে পারছো? তোমাকে একজন মনোবিজ্ঞানের ডাক্তার দেখানো উচিত। সেদিন দেখলাম তুমি ঝুম বৃষ্টিতে কোট-প্যান্ট টাই গলায় ঝুলিয়ে হাঁটু সমান পানিতে ভিজতে ভিজতে যাচ্ছো। আবার হাতে একটি সিগারেট ধরাচ্ছ। ম্যাচটি ভিজে যাওয়ায় বার বার চেষ্টা করছো। কায়দা করে ধরিয়ে টানতে টানতে যাচ্ছো। আশে পাশের মানুষজন হা করে তাকিয়ে দেখছে। আমার কি যে খারাপ লাগছিল, তা তোমাকে বোঝাতে পারবো না। প্লিজ সাজিদ, বুঝতে চেষ্টা করো-জীবনটা অনেক দামী। এটাকে এভাবে হেয়ালিপনা করে নষ্ট করে দিও না।

তারিখঃ ২৩শে এপ্রিল, ২০১৪ইং
বারঃ বুধবার
আমি ঠিক তোমাকে বুঝে উঠতে পারছি না। কখনো মনে হয় তুমি যা কিছু করছো, তা ইচ্ছাকৃত। অথবা আমার কাছ থেকে চলে যাওয়ার জন্য। কোন্ টা যে ঠিক, সেটাও পরিস্কার নয়। তোমাকে নিয়ে যেদিন আমি আমাদের বাড়ীতে গেলাম-আমার আব্বা-আম্মাকে সালামতো দাওনি, উল্টা তুমি আব্বার সাথে ধর্ম নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়লে? তার সাথে দর্শন কপচানো শুরু করে দিলে? দর্শন যদি তোমাকে বুঝানো হয়, তাহলে তুমি জিরো পাবে। যে মেয়েটা তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে তার দর্শন না বুঝে তুমি কি দর্শন করতে চাইছো? তুমি কি জানো-প্রেম ছাড়া কোন ইবাদত কবুল হয় না। প্রেম সমস্ত ইবাদতের মুল। ইশকে মাজিজি না বুঝলে ইশকে হাকিকি কিভাবে বুঝবে? 
তোমাকে একটা উদাহরণ দেই। নারী -বা জননী - এক মহাশক্তির রূপ ! এর বিশেষ এক অঙ্গ - শক্তির ভান্ডার ! আর পুরুষ -- নিজে স্বয়ং মহান সত্যের স্বরূপ ! এদের বিশেষ অঙ্গে সেই স্বরূপ বিরাজমান !!এর অনাচার ব্যাভিচার - তৃতীয় - এক অশুভ শক্তির সৃষ্টি !! সদগুরুর নিকট বসে শিখতে হয়- এর যৌগিক পদ্ধতি ! এই যৌগিক পদ্ধতিতেই - মহাতৃপ্তি বা মহাশান্ত - প্রশান্ত !!রতি + মতি-- গতি -(2) নিম্নগতি ; উর্ধগতি = জ্যোতি (গুরুর কৃপায় উর্ধগতিতে)। যেখানে সুর কেটেছে পুনরায় সেইখানে সুর জোড়া লাগলে - তবেই তৃপ্ত আত্মা !! তোমার মনা পাগলা কি সেটা জানে? ভেবে দ্যাখো-
আজলে (আদিতে) একটি নূর (জ্যোতি) ভেঙে দুটি হল - এরা মিলবে বা মিলছে কখন ? না আধখানা ই আছে ? তাহলে উপাসনা কি অর্ধেক ? আবার এক ছাড়া দ্বিতীয় নাই !! এর রহস্য কি ? তোমার মনা পাগলা কি জানে? যদি জানে তাহলে উত্তর দিও।

পুলিশটাকে দেখলাম মনোযোগ সহকারে ডায়রীটা পড়ছে। কোন ব্যাঙ্গাত্মক ভাষা ব্যবহার করছে না। বেশ মনোযোগ দিয়েই দেখলাম পড়ছে। কোন তারিখেরটা পড়ছে সেটা বুঝতে পারলাম না। কারণ সে আগের মতো শব্দ করে পড়ছে না। আমি চিন্তা করলাম বসে থেকে লাভ কি? তার চাইতে কোয়ান্টাম মেথড পদ্ধতিতে চলে যাই না কেন -আমার মনের বাড়ীতে। আমি কোয়ান্টাম পদ্ধতি অবলম্বন করে মনের বাড়ীতে চলে গেলাম। আমার মনের বাড়ীটি বেশ চমৎকার। বাড়িটির চর্তুপার্শ্বে দেবদারু আর শাল -সেগুণ গাছ পালা দিয়ে ঘেরা। সেই বাড়ীর সামনের সদর দরোজার পাশে দুটি ফুলের বাগান। ঘরে প্রবেশ করতেই দেখলে পাওয়া যাবে দেয়ালে ঝুলছে বিখ্যাত বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি। পাশে দুটি আরাম কেদারা। পাশে সারি সারি বই। যেটা ইচ্ছা সেটা হাত বাড়িয়ে নেয়া যাবে। ক্যাসেট প্লেয়ার আছে। ইচ্ছে করলে গানও ছেড়ে দেয়া যেতে পারে। গান শুনতে শুনতে বই পড়া যাবে। আমি সেই আরাম কেদারায় আরাম করে বসলাম। বইগুলো হতে একটি বই হাতে নিলাম। বইটির নামঃ আসরারে হাকিকি-মকতুবাতে খাজা। আমি হাল্কা মিউজিক দিয়ে রবীন্দ্রনাথ সংগীত শুনছি আর বইটি পড়ছি।
(চলবে)