পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

মনা পাগলার খোঁজে-সপ্তম পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)
আমার দাঁড়িয়ে থাকাটা প্রিন্স বাজারের দারোয়ানের খুব বেশি পছন্দ হয়নি। একজন পাগলের জন্য আরেকটি পাগল হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত পথিকের মতো বিশ্রাম নিবে প্রিন্স বাজারের সামনে তা-কি হয়? কখনো না। দারোয়ান বেশ ভারিক্কি গলায় বললোঃ

-এখানে দাঁড়াইছেন কেন্?

-কেন ভাই? কোন সমস্যা?

-অবশ্যই সমস্য। আপনে এইখানে শুধু শুধু দাঁড়াইয়্যা থাকবেন? এইটা কেমুন কথা? যান এইখান থিক্কা।

অপমানজনিত কথা। কিন্ত্তু কি করবো? সেখান থেকে চলে আবার হাঁটা শুরু করলাম। কাছাকাছি আসতে আসতে একটা অজনিত আশংকা পেয়ে বসলো। কি জানি কি হয়? যদি তার দেখা পাই, সে কি আমাকে দেখে অবাক হবে? না-কি সে তার স্বভাবসুলভ আচরণ করবে? আর যদি না-পাই তাহলে কোথায় খুঁজবো তাকে? তাকে যে আমার দরকার। আমি মীরপুর মাজারের কাছাকাছি চলে এলাম। এসেই পড়লাম বিপাকে। কোন্ দরজা দিয়ে যাবো? বড়ো গেইট দিয়ে নাকি বাজারের সামনে যে রাস্তাটা গিয়েছে সেটা দিয়ে প্রবেশ করবো? কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ভাবলাম যা থাকে কপালে সামনের দরজা দিয়েই প্রবেশ করবো। 

আমি সামনের রাস্তা ধরে এগুতে থাকলাম। আর আশে পাশে চোখ বোলাতে লাগলাম। দেখি তার দেখা পাওয়া যায় কি-না? মাজারের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কিছু কিছু লোক এমন আচরণ করে যে, সে সত্যিকারের কোন বড়ো কোন ফকির। যে কোন সমস্যার সমাধান সে করে দিতে পারে। তাদের ভিক্ষার পদ্ধতি এমন যে সাধারণ মানুষ তো ধোঁকায় পড়বেই এমন কি অনেক শিক্ষিত লোকও বোকা বনে যেতে পারে। তাদের কারণেই অনেক অনেক সত্যিকারের পাগলরা ঢাকা পড়ে যায়। তাদের কারণেই মাজারের বদনাম হয়। হয় অলিদের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্রদ্ধভাব। এই মনোভাবের কারণেই সাধারণ মানুষ এমন কি অনেক শিক্ষিত মানুষও অলিদের ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে ওঠে। ব্যবসা করার ফন্দি ফিকিরের কারণেই তাদের এই বেশ-ভুষা। আমার দেখা একটা ঘটনার কথা বলি। একজন লেংড়া লোক এবং একজন অন্ধলোক ঝগড়া করছে। অন্ধলোকটি থাকতে চাচ্ছে একদম সদর দরোজার কাছাকাছি। যাতে লোকজন বের হবার সময় তাকে সবাই দেখতে পায় এবং ভিক্ষার ইনকামটা বেশি হয়। অপরদিকে লেংড়া লোকটাও থাকতে চাচ্ছে সেই জায়গাটায়। তারও ইচ্ছা ভিক্ষার পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য। একপর্যায়ে মারামারি বেঁধে যায় তাদের মধ্যে। পরের লোকজনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সেই সময় একজন বলেছিল যখন দেখবেন কোন লোক ভিক্ষা চাওয়ার ক্ষেত্রে ঠিকমতো বলতে পারছে না, তখন ধরে নেবেন এইলোকটি সাধারণ ভিক্ষুক নয়। সে কোন অভাবগ্রন্থ। জীবন বাঁচানোর তাগিদে সে ভিক্ষা করছে। পেশাদার হলে সে কায়দা করে আপনার কাছে ভিক্ষা চাইছে। যাই হোক...আমি হাঁটতে হাঁটতে আরো সামনে গেলাম। নাহ। সে সেখানেও নাই। আমি মাজারের ভিতরে যাওয়ার জন্য অযু করলাম। তারপর মাজারের ভিতরে ঢুকলাম। মাজার জিয়ারত শেষ করে বের হয়ে এলাম। মনের মধ্যে কেমন যেন খস খস করছে। এতদুর হাঁটাহাঁটি করেও মনার দেখা পেলাম না।
(চলবে)