পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৫

মনা পাগলার খোঁজে-নবম পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)

-ভালো লাগবে কি করে? তোকে তো ভাবে পেয়ে বসেছে রে। এই ভাবতো ভালো না। এই ভাব দুনিয়া হতে পুরোপুরি মুক্তি দেয় না। একবার মনে হয় দুনিয়াটা মায়াজাল..মিথ্যা একটা অবভাষিক কিছু..আবার পরক্ষণেই মনে হয়.. না দুনিয়াই মজা..দুনিয়া অনেক কিছু। না দুনিয়া, না আখিরাত..মনের মধ্যে এ দোটানা ভাব পেয়ে বসে। তখনই কিছু ভালো লাগে না...

-কিন্ত্তু আমিতো সেটা চাই নি। আমি চাই আগে জেনে বুঝে তারপর এগুতে...আমার জানার ইচ্ছা প্রবল

-জেনে বুঝে যে আগাতে চাস...কি জেনে আগাবি...কিতাব পড়ে..নজরুলের কথা শুনিসনি..নজরুল কি বলেছে..

-কি বলেছে?

-কেন খুঁজে ফের দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি কংকালে
হাসিছেন তিনি অমৃত হিয়ার নিভৃত অন্তরালে।
সেই কিতাব পড়, যা জানলে বুঝলে তুই নিজেকে পাঠ করতে পারবি। জানতে পারবি স্রষ্টার রহস্য। সৃষ্টির রহস্য।

-কিন্ত্তু সেই কিতাব কিভাবে পাঠ করতে হয় সেটাতো জানি না..

-আগে তোকে সেটাই খুঁজে বের করতে হবে। যে তোকে নিজেকে পাঠ করতে শেখাবে...

-কিন্ত্তু তাকে পাবো কোথায়...

-হৃদয় বনে অতি গোপনে একার বাঁশি শুনেছি প্রাণে
মরমে মরি চাহি নেহারি  প্রাণ বঁধুয়া নাহিক হেথা।।
[হযরত খাজা শাহ পীর চিশতী-চিশতী উদ্যান] 
তোর হৃদয় মাঝে যে ডাক আসে তার কথা নীরবে নিশীথে একাকী বসে শোন...সে কি বলে...

-তার মানে আপনি ধ্যানের কথা বলছেন?

- তা না হলে আর কিসের কথা বলবো রে...মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) যে হেরা গুহায় ধ্যান করেছিলেন তাতো তুই শুনেছিস তাই না? কিভাবে ধ্যান করতে হয় তা কি জানিস?

-নাতো?

-তাহলে তো তুই কিছুই জানিস না। তোকে যে কিভাবে ধ্যান শোখাবো? শোন...

হারিয়ে আপন করিবে ধ্যান মিলিবে আপন সোনারই বরন
অনন্ত জীবন পাইবে আপন মরন কখন হবে না তোমায়।
চাহিয়ে থাকো রুপেরই পানে মিশিয়ে যাও তাহারাই ধ্যানে
স্মরিবে তাহার তাহারই জ্ঞানে আপনা আপন হারিয়ে হেথায়।
[হযরত খাজা  শাহ্ পীর চিশতী-চিশতী উদ্যান] 

কি বুঝলি? তোকে ধ্যান করতে হলে তোর নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হবে। অর্থাৎ তোর মধ্যে যে চেতনা আছে সেই চেতনাকে স্পর্শ করতে হবে। যখন তুই তাকে স্পর্শ করতে যাবি তখন দেখবি তোকে নানা রকম প্রলোভন দেখাবে..নানা প্রকার ভয় ভীতি দেখাবে...

-কে দেখাবে?

-তাগুত তথা শয়তান। কোরআন আর কিছুই নয়। মহা নবী হেরা গুহায় ধ্যানমগ্নঅবস্থায় যে বাণী লাভ করেছিলেন তা ছিল তার অন্তরের ভেতর থাকা মহান স্রষ্টার ডাক। স্র্রষ্টা তোর ভেতর সুপ্তাবস্থায় ঢাকা পড়ে আছে। এই ঢাকা পড়া অবস্থাটা হলো কুফুরি অবস্থা। কুফর অর্থ ঢেকে রাখা। সালাত ব্যাতীত তথা ধ্যান ব্যতীত সেই কালিমা থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই। আর ধ্যান করতে হলে গুরুর দয়া নিয়েই করতে হয়। নয়তো তাগুত তথা শয়তান বাধা বিঘ্ন সৃষ্টি করে। মন-মস্তিষ্কে সপ্ত ইন্দ্রিয়ের দ্বার দ্বারা শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ ইত্যাদি নানারুপ প্রলোভনের সৃষ্টি করে। একেই বলা হয় মুর্তি। এই মুর্তি মন-মস্তিষ্কে যখন গেঁথে যায় তখন স্র্রষ্টা ঢাকা পড়ে যায় তথা কুফুরির মধ্যে থাকে। এই জন্যই বলা হয়েছেঃ লা তাকরাবুসসালাতা ওয়া আনতুম শুকারা। অন্য স্থানে বলা হয়েছেঃ লা সালাতা ইল্লাবিল হুজুরী কল্বব। আর কোরআনে বলা হয়েছেঃ "ইয়া আয়ুহাল লাজিনা আমানুত্তা কুল্লাহা ইয়াবতাগুত ইলাহিল ওলিসাতা ওয়া জাহিদু ফি সাবিলিল্লাহি লা আল্লাকুম তুফলিহুন।" এখানে আমানু বলতে তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে যারা এই সালাত করে একটা ওসিলা নিয়ে। ওসিলা ব্যতীত সালাত আদায় করতে গেলেই বিপদে পড়তে হয়। হবে। এই ওসিলাই হলো কামেল মুর্শিদ। তাকে সাথে নেয়ার অর্থ হলো তুই শরিক করলি। অর্থাৎ মুশরিক হলি।

-শেরেক করাতো মহাপাপ। আল্লাহ পাকতো বলেছেন তিনি সবকিছু ক্ষমা করতে পারেন। কিন্ত্তু যারা শরিক করবে তাদের তিনি কোন মতেই ক্ষমা করবেন না। শেরেক করা অমার্জনীয় অপরাধ।

-তুইতো দেখি বেশ জানিস। আচ্ছা বলতো শেরেক ছাড়া কোন মানুষ আছে? আছে কোন সৃষ্টি? 

মনার কথা শুনে আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। এম্মনিতেই আজকে একটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছি। তাতেই মাথাটা বন বন করে ঘুরছে। তারপর মনার বকবকানি। কিছু বুঝি কিছু বুঝি না। এখন আবার আরেকটা কথা বলছেঃ শেরেক ছাড়া কোন মানুষ আছে কি-না? 

আমি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম-শেরেক বা শিরক অর্থ অংশীদার। কিসের অংশীদার। অংশ বলতে আমরা বুঝি ভাগ করা। জমি জমা ভাগ করতে গেলে এই অংশীদারের ব্যাপারটা আসে। কেন আসে? পিতার অংশ এবং মায়ের অংশ থেকে সৃষ্টি আমি। তার মানে আমার ভেতর এক অংশ পিতার এবং আরেক অংশ মায়ের। এখানেওতো শেরেক আছে।মনে হয় মনা এই শেরেকের কথা বলে নাই। না-কি বলেছে? জিগ্যেস কিছু করবো? না-কি আরেকটু চিন্তা করবো? যেহেতু সে বলেছে " শেরেক ছাড়া কোন মানুষ আছে কি-না "?
(চলবে)