পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৫

মনাপর্ব পাগলার খোঁজে-অষ্টম

(পুর্ব প্রকাশের পর)
মনার দেখা না পেয়ে মনটা হতাশায় পরিপুর্ণ হয়ে গেল। দুঃখভারাক্রান্ত মনে একটা টং দোকানে বসে পড়লাম। দোকানীকে বললামঃ

-একটা চা দেন, মামা।

-চা কি মামা দুধ চিনি বাড়াইয়্যা দিমু?

-বাড়াইয়্যা দিবেন মানে কি?

-মানে কিছু না। দুধ চাতে অনেকেই দুধ চিনি বাড়াইয়্যা খায়তো। হেরলাইগ্যাই জিগাইলাম।

তার কথাটা আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হল। তার মানে সে আমার অবস্থা দেখে মনে করেছে আমি ফেন্সি খেয়েছি। নয়তো গাজায় টান দিয়েছি। যারা নেশা করে তারা হয়তো সেটা পছন্দ করে। আমার কাছে মনে হলো দোকানীর কাছে যারা আসে তারা সবাই খোরে আদম। আমারও মন চাইলো বিষয়টা অনুসন্ধান করে দেখার। এম্মিতেই মনার দেখা পেলাম না। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত। তার উপর দোকানী যেভাবে সন্দেহ করছে তাতেতো দেখি খাওয়াই উচিত। আমার কৌতুহলী মনটা নেশা করার জন্য ব্যস্ত একটা ভাব দেখালো। আমি মামাকে জিগ্যাসা করলাম

-মামা ব্যবস্থা কিছু আছে না-কি?

-কোনটা মামা?

-এই ধরেন সস্তা ধরণের কোন কিছু?

-আছে মামা। এই নেন। 

দোকানী আমাকে একটা সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে টং দোকানের পেছনের দিকটা দেখিয়ে বললো

-ঐ দিকটায় যান। কেউ বিরক্ত করবো না। আর পুলিশও আসবো না। যান মামা।

আমি সিগারেটটা নিয়ে ধরালাম। ধরিয়ে দেখি বিকট গন্ধ। বুঝলাম। সস্তা বলতে সে গাঁজাকে বুঝিয়েছে। আর দামী বললে সে হয়তো ফেন্সি ধরিয়ে দিতো। যাই হোক। সেখানে গিয়ে দেখি ছেলে বুড়ো সবাই দিব্যি গাঁজা টানছে। আমার টানার ধরণ দেখে তারা বুঝলো যে আমি আনকোড়া। অর্থাৎ নতুন। বুড়োরা দেখি কলকিতে ধরিয়ে জোড়ছে টানছে। যে পরিমাণ ধোয়া বের হচ্ছে আর উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে তাতেতো যারা খায় না তারাও নেশাগ্রন্থ হয়ে যাবে। সিগারেটটা শেষ করার পর টের পেলাম আমার গলাটা কেমন যেন শুকিয়ে যাচ্ছে। আর মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। মুহুর্তের মধ্যেই চেনা পরিবেশটা হটাৎ কেমন যেন অচেনা হয়ে গেল। আমি দেখতে পাচ্ছি আশে পাশের মানুষগুলো যেন কেমন হয়ে যাচ্ছে। কথা বলার ধরণগুলো পাল্টে যাচ্ছে। কেমন যেন কথাগুলো জড়তায় আবিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি হটাৎ উঠে দাঁড়ালাম। মাথাটা ঘুরছে। দোকানীকে বললামঃ

-মামা পানি দাও।

-মামা পানি না খাইয়্যা একটা গরম চা দুধ-চিনি বাড়াইয়্যা বানাইয়্যা দেই খাইয়্যা দেহেন। হের পর কথা কইয়েন। দেহেন কেমুন লাগে?

-দে...ন..খা..ই

দোকানী আমাকে দুধ চিনি বাড়িয়ে একটা চা দিল। চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে ঠোঁট পুড়ে ফেললাম। কিন্ত্তু বেশ লাগছে। যেদিকে লোকজন কথা বলছে সেদিকটায় খেয়াল করলে বেশ স্পষ্ট কথা শোনা যাচ্ছে। আবার অন্য দিকটায় তাকালে কেমন যেন অপরিচিত লাগছে। 
আমি দোকানীর পাওনা মিটিয়ে সেখান হতে বের হয়ে নিরিবিলি একটা স্থান দেখে বসে পড়লাম। যেদিকটায় সচরাচর কেউ আসে না। সেটা হলো মাজারের পেছন দিকটায় যে পুকুর ঘাটটা আছে সেখানে। পাশেই শান বাধানো বেদী। আমি একটার উপর হেলান দিয়ে বসে পড়লাম। গাছের গুড়িতে মাথা ঠেকিয়ে পা দুটো জড়ো সড়ো করে চোখ বুঝে ঝিম মেরে বসে রইলাম। নীরব নিঃস্তব্ধ। চারদিকে সুনশান নীরবতা। মাঝে মাঝে মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। চোখ বুঁজে থাকতে বেশ লাগছে। জায়গাটা এতোটাই নীরব যে নিজের কানে শুনছি নিজের ভেতরের তর্জন-গর্জন। বুকের ভেতরের ধুকধুকানি। ঠিক তক্ষুণি মনাকে দেখতে পেলাম। মনা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে। আর হাসছে। আর বলছেঃ

-কিরে তুই এখানেও চলে এলি?

-কি করবো? কিছুইতো ভালো লাগে না।
 (চলবে)