পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৫

মনা পাগলার খোঁজে - ষষ্ঠ পর্ব

(পুর্ব প্রকাশের পর)
আমার কাছে ভাবতে খুব অবাক লাগে যে নবী আমাদের আল্লাহ এবং তাঁর পারিপার্শ্বিকতা সর্ম্পকে জানালেন, সত্য-মিথ্যার প্রভেদ দেখালেন সেই ইসলামের নবী পরিবার নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হলেন তাঁর মৃত্যুর পর। কারবালা নামক স্থানে যে নির্মম নির্যাতনের স্ট্রীমরোলার তৎকালীন শাসক শ্রেণী চালিয়ে ইমাম হোসাইন (আঃ) কে হত্যা করেছিল তারা আর কেউ ছিল না। তারাও ছিল মুসলমান। তবে কোন্ শ্রেণীর মুসলমান, তা ইমামের একটি ভাষণের মধ্যে প্রষ্ফুটিত হয় আর সেটি হলোঃ"তোমরা কি আমাকে চেন না? চেয়ে দেখ, আমি কে? আমি রাসুল(আঃ) এর প্রিয়তম দৌহিত্র। আমি খাইবার বিজয়ী শেরে খোদা হযরত আলী (আঃ) এর ছেলে। আমি খাতুনে জান্নাত মা ফাতেমাতুজ্জোহরার স্নেহের লাল। তোমরা কি নানাজানের মুখে শোননি, আমি আমার ভাই হাসান বেহেস্তের সর্দার? আমি তোমাদের কি ক্ষতি করেছি যে তোমরা আমাকে হত্যা করতে চাও? আমাকে হত্যা করে তোমরা আল্লাহ এবং তার রাসুল(আঃ) কাছে কি জবাব দেবে? তারপর তিনি যে কথাটি বললেন তা সত্য এবং মিথ্যাকে মুমিন এবং মোনাফেকদের পৃথকীকরণের জন্য সমস্ত মুসলিম জনগণের কাছে শিক্ষা হয়ে রইলো। তিনি বলেছিলেন, "আলাম তাসমাও আলাইসা ফি কুম মুসলিম?" অর্থঃ তোমরা কি আমার কথা শুনতে পাওনা? তোমাদের মধ্যে কি একজনও মুসলমান নেই? "

সত্য বরাবরই তিতা। আল হাক্কু মুরুন। তাই উক্ত বিষয়ে  আর কথা বলতে মন চাইছিল না। কিন্ত্তু না বলেও পারছি না। মনাকে এ বিষয়ে একবার প্রশ্ন করেছিলাম। মনা তার স্বভাব সুলভ জবাবই দিয়েছিল। আমি বলেছিলাম-কারবালা ও তার পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে কথা বলতে গেলে নানান অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হয়। অনেক বদনাম শুনতে হয়। অনেক গন্ঞ্জনা সহ্য করতে হয়। তার মধ্যে কমনটি হলোঃ ভাই আপনি কি শিয়া? - এই অভিযোগটি প্রায়ই শুনতে হয়। আমার কথা শুনে মনা বললোঃ শোন্ বেআক্কেল, সত্য যেটা সেটা চিরন্তন সত্য। কেউ মানুক আর না মানুক। সেই সময় ঠিক কি ঘটেছিল, আমরা যেহেতু সেসময় ছিলাম না তাই আমরা তা বিভিন্ন বই-পুস্তক হতে কিংবা কোন বিজ্ঞজনের নিকট হতে তা জানতে পারছি। বিজ্ঞজনরা তা বিভিন্ন পুস্তকে লিপিবদ্ধ করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। এর যেমন পক্ষে এবং বিপক্ষে অনেক যুক্তি তর্ক থাকতে পারে তেমনি থাকতে পারে অনেক অজানা ইতিহাস। আর ইতিহাস হচ্ছে কালের স্বাক্ষী। তাই সেখানে যে ঘটনা ঘটেছিল তা সত্য। কেউ এটা অস্বীকার করতে পারবে না। ঠিক কি ঘটেছিল তা জানতে হলে তোকে ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হতে হবে। তুই যদি কোন কিছু লুকিয়ে কিংবা অতিরন্ঞ্জিত করে কল্পকাহিনী তৈরী করে বাজারে পুস্তকাকারে বিক্রি করিস, তাহলে সেই বই পুস্তক পড়ে একটা শ্রেণী তৈরী হবে। সাথে তৈরী হবে এর বিপক্ষে অবস্থানকারী দল। তো পক্ষ-বিপক্ষ উভয়ের মাঝে কোলাহলের বীজ বুনন করলো কে? ঐ যে লেখক। যে লিখে পুস্তক আকারে লিপিবদ্ধ করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। কাজেই সত্য নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ হতে তুই বিচার করতে পারবি না। তবে জেনে রাখ এই ভারতীয় উপমহাদেশে সুলতানুল হিন্দ হযরত খাজা গরীব নেওয়াজ (রহঃ) তার এক মকতুবাদে বলেছিলোঃ 

'এই বাজে নাবী বার সারে তাজে নাবী,
এই দাদ শাহানশাহ যে তীগ্বে তো বাজে নাবী।
এই তো কে মেরাজে তো বালাতর শোদ,
ইয়েক ক্বামাত আহমদী যে মিরাজ--নাবী।'

অর্থঃ "হে নবীর দুলাল, তোমার মস্তকেই নবীর শোভা পায়, হে সম্রাট, তোমার তরবারি নবীর ন্যায বিচারের প্রতীক, হে হোসাইন, তোমার মিরাজ হয়েছে অনেক উর্ধ্ব স্তরে, আহমদ নবীর মিরাজ থেকেও এক স্তর উপরে।" [দেওয়ান-ই-মইনউদ্দিন]

সমস্ত অলী-আউলিয়ারগণ সর্বদাই ইমামদের অনুসরণ করে গেছেন। যারা তাদের অনুসারী তারাও ইমামদের অনুসরণ করে চলেছেন এবং ভবিষ্যতেও অনুসরণ করবেন। তোর কথাই যদি ধরি, তাহলে দ্যাখ সমস্ত অলীগণই শিয়া। কারণ আল্লাহ পাক শানে কালামে পাকে পাক-পান্ঞ্জাতনকে অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

অামি মনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি কি বুঝাতে চাইলাম আর মনা কি বুঝলো? যাক সত্য-মিথ্যার বাহারতো প্রকাশকরাই করে থাকে। বিভেদের বীজও তারাই বুনন করে। লিখেও করে আবার ছাপিয়েও করে।
আমি হাটতে হাটতে প্রায়ই মীরপুর এক নম্বর চলে এলাম। মীরপুর এক নাম্বারের কাছেই প্রিন্স বাজার নামে একটি শপিংমল আছে। আমি সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। সেখান থেকে মাজার রোড কাছেই। আমি একটু বিশ্রাম নেয়ার জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে আছি।
(চলবে)