পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন-পর্ব ৩৩

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সূক্ষ্ম জগতে ধ্যান দর্শন আত্মার স্বচ্ছ দর্পন পর্যায়ে যাঁদের প্রবেশাধিকার আছে তাঁরা এইজন্যেই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ইত্যাদির নানা ছবি দেখতে পান । তিব্বতের লামাদের কাছে নাকি একধরণের স্বচ্ছ পাথর আছে, যে পাথরে ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ছবি ফুটে থাকতে দেখা যায় । আসলে তিব্বতীয় পাথর সম্পর্কে যে গল্প আছে তা যথার্থ পাথর নয় অন্য কিছু, সে গোপন রহস্য ভেদ হবার নয় । 

গুহ্যবিদ্যার গোপন কথা সাধকরা কখনই প্রকাশ করতে চান না, তাই হয়তো পাথরের গল্প করেছেন । আসলে এই স্বচ্ছ পাথর হল আত্মার স্বচ্ছ দর্পন । পূর্বেই বলেছি যে, ব্যক্তি ও বস্তুর বা বিশ্বজগতের গঠনপ্রণালী একই ধরণের । বস্তুর যদি স্থূল বন্ধনের এক প্যাঁচ খোলে তো বিশ্বেরও স্থূলবন্ধনের এক প্যাঁচ খুলে যায় । তখন দুই স্বচ্ছতার পর্যায়ের মধ্যে এক সমান্তরাল ভাব সৃষ্টি হয় অর্থাৎ আত্মার সূক্ষ্ম অবস্থাও বস্তুর সূক্ষ্ম অবস্থা একটা স্বচ্ছ ব্যবধানের এপার ও ওপারে থাকে । যতক্ষণ ব্যবধান ততক্ষণ ব্যক্তির অভ্যন্তরস্থ স্বচ্ছতার নাম আত্মন এবং বিশ্বের অভ্যন্তরের স্বচ্ছতার নাম ব্রহ্মণ । শেষ ব্যবধান ঘুচে গিয়ে দুইটি যখন একাকার হয়ে যায় তখন হয় পরমাত্মন । 

ফলে বিশ্ব আত্মায় তরঙ্গ নিক্ষিপ্ত কোন ছবি জীবাত্মায় তার প্রতিসরণ ঘটায় , ঘটনাটাটি এইরকমঃ ধরা যাক বহু পূর্বে পৃথিবীতে কোন এক যুদ্ধ হয়েছে, যেমন মহাভরতের যুদ্ধ । সেই যুদ্ধের তরঙ্গজনিত প্রতিফলন বিশ্ব আত্মার স্বচ্ছ অবস্থায় ফটোর নেগেটিভে ধরা ছবির মত হয়ে আছে । বিশ্ব আত্মার যে স্তরে এই ছবি ফুটে আছে জীবাত্মার সে স্তর উন্মোচিত হলে -- এবং বিশ্ব আত্মায় প্রতিফলিত ছবির তরঙ্গের সঙ্গে জীবাত্মার অনুরূপ স্তরের আকস্মাৎ সমান্তরাল ভাব হলে অর্থাৎ correspondence of wave length হলে জীবাত্মায় সেই বিশ্ব আত্মায় প্রতিফলিত ছবির প্রতিসরণ ঘটবে । এই বিশ্ব আত্মার বিশেষ কোন তরঙ্গ পর্যায়ের ছবির সঙ্গে জীবাত্মার আন্তর-সচ্ছতার নির্দিষ্ট স্তর সমান্তরাল হলেই এমন হয় । 

(চলবে)