পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ২৭

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সে যাই হোক, কথাটি হচ্ছে এই যে একদল মানুষ ব্যাখার অতীত জীবনের বহু ঘটনাকে বিধাতা পুরুষের ললাট লিখন বলে ধরে নেন এবং সেখানে যা লিখিত আছে তা ঘটবেই এবং তাকে অতিক্রম করা যাবে না--------- এরূপ বিশ্বাস করেন । কিন্তু একজন খেয়ালী বিধাতা পুরুষ কপালে আপন মর্জিতে যা খুশি তাই লিখে দেবেন এবং মানুষ জীবকে তাই ভোগ করতে হবে এমন কোন কাহিনীতে বর্তমান আমি মিঠু বিন্দুমাত্র আস্থাতে নেই । আমি বিশ্বাস করি, মানুষ পৃথিবীতে নিজস্ব কর্মফলই ভোগ করে তা ইহজন্মের হোক, গতজন্মের হোক । তার সুখ দুঃখের স্রষ্টা সে নিজেই, অন্য কেউ নয় । একটা মানুষের কর্মফলই গুপ্তচিত্র হিসাবে চিত্রগুপ্তের অর্থাৎ আত্মার খাতায় তার বর্তমান,ভবিষ্যৎ কে এঁকে রেখে দেয় । সেই ভবিষ্যৎই মানুষের কর্মজীবনে নির্দিষ্ট সময়ে ঘটনাগুলি ঘটে যায় । 

তবে বিধাতা পুরুষের অস্তিত্বে আমি মিঠু বিশ্বাস করি এবং দেব দেবীর অস্তিত্বেরও । কিন্তু আল্লাহ্ বা ভগবান এর স্বতন্ত্র দেহ ধারী কোন অস্তিত্বরূপ নেই, উনি প্রকৃতপক্ষে নিরাকার । এই নিরাকার রূপ ধরে কোন মহাসাধক বা মহাপুরুষের ভিতর জাগ্রত হন । তখন উনি আকার সাকার রূপ নেন । 

হিন্দুমতে নির্গুণ (VOID) কে ভগবান বলেন কারণ ভগবান ভগের অধিকারী, ভগ হলো-- যোনী বা শক্তি (KINETIC ENERGY). এই ভগ শূন্যতার মধ্যে নিস্ক্রিয় থাকে । তখন অবিচলিত নিরবতা । আর এই অবিচল নিরবতাকেই পরব্রহ্ম বা পরমাত্মন রূপে বর্ণনা করা হয়েছে । শক্তি যখন তার নিজস্ব চরিত্র অনুযায়ী নড়ে ওঠে, তখনই জগত বা SPHERICAL UNIVERSE কিছুটা OVAL ভঙ্গিতে ফুটে ওঠে, যাকে আরেক নামে VACCUM FLUCTUATION IN QUANTUM FIELD বলে । দেশে (SPACE) এ জগত রহস্যের যে বিচিত্র লীলা খেলা চলছে কখনও তাতে একমেবাদ্বিতীয়ম অবস্থা হলেও আবার দ্বৈতের আবির্ভাব হয় । অবস্থাটা গভীর ভাবে বিচার করতে গেলে শিব শঙ্কের পুরুশ-প্রকৃতি তত্ত্ব দাঁড়াতে চায় বটে কিন্তু চিরকালীন একটা দ্বৈত সত্ত্বা স্বীকৃত হয় না । এক্ষেত্রে শিব শঙ্করের অদ্বৈতবাদ সত্য বটে ।

কিন্তু তাই বলে "ব্রহ্ম সত্য জগত মিথ্যা" এ কথা গ্রাহ্য নয় । ব্রহ্ম থেকে উদ্ভুত যে জগত তা মায়ারূপে প্রতিফলিত হলেও যেহেতু তা সত্য স্থিত শক্তি থেকে উদ্ভুত, তাই তা মিথ্যা হতে পারে না । জগত অদৃশ্য হলেও শূন্য সুপ্তভাবে থাকে । শুণ্য সুপ্তভাবে থেকে আবার প্রকাশিত হয় বলে তার অস্তিত্ব যে নষ্ট হয়ে যায় তা নয় । বীজের মধ্যে যেমন মহীরূহ থাকে, শূন্যের মধ্যেও তেমনই জগত থেকে যায় । 

( চলবে )