পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ৩৬

( পুর্ব প্র্রকাশের পর হতে ) 

যা রচিবে তাই সত্য তুমি
কবি তবো মনোভূমি,
রামের জনম স্থান
অযোধ্যার চেয়ে সত্য যেন

...... সত্যি সত্যি কবি যদি মানস নেত্রে রামায়ণ কাহিনী তৈরি করেন, জাগতিক সূক্ষ্মা সত্ত্বার জীবন্ত হয়ে তা ফুটে থাকতে পারে । প্রতিটি মানুষের প্রতিটি চিন্তাই জাগতিক সূক্ষ্মাসত্ত্বায় চিত্র হয়ে ফুটে আছে, খারাপ চিন্তাই হোক আর ভালো চিন্তাই হোক । শক্তি জাগরণ প্রয়াসী ব্যক্তিরা অনেকেই তাই চৈতন্য সত্ত্বাকে উত্তোলনকালে নানা ধরণের ছবি দেখে থাকেন--- যে ছবিগুলো তাঁদের কাছে অদ্ভূত হেঁয়ালির মতো মনে হয় ।

এর কারণ, তাঁরা নিজেরা এ ধরণের কোন চিন্তা কখনও করেছেন বলে তাঁদের মনে পড়ে না । যে পটভূমিতে এই দর্শন হয় তা দর্পন সাদৃশ্য, সেই স্বচ্ছ দর্পন সাদৃশ অবস্থাকেই ফকির লালন বাবা বলেছেন ''আরশি নগর'' আর তিব্বতি লামারা বলেছেন ''স্বচ্ছ পাথর"। এ স্বচ্ছ পাথরে বা আরশি নগরে যে শুধু জীবের তরঙ্গজনিত প্রতিফলনই দেখা যায় তা নয়, স্থূল দেহান্তে জীবাত্মার অবস্থানও হয় এই সূক্ষ্ম জগতে ।

ফলে এই আরশি নগরে যাঁদের প্রবেশাধিকার হয়েছে, তাঁরা স্থূল দেহ শেষে মানুষের সূক্ষ্মা অস্তিত্বও সেই মার্গে গেলে দেখতে পান । এ ক্ষেত্রেও অদ্ভূত এক তত্ত্ব কাজ করে, এ তত্ত্ব সম্পর্কে বিশেষভাবে ওয়াকিবহাল হয়েছেন আধ্যাত্মবিদরা । আধ্যাত্মপুরুষেরা পরমাত্মার উপর ছয়টি, কারও মতে পাঁচটি আবরণে আবদ্ধ জীবরূপে স্বতন্ত্র সত্ত্বার কল্পনা করেছেন ।

ঘটনাটি এই ধরণের--- শূন্যস্থিত শক্তি স্বভাব গুণে বিস্ফোরিত হলে নানা তরঙ্গে গোলাকার, কিছুটা ডিম্বাকৃতি অবস্থায় ছড়িয়ে পড়ে । অধিমনোবিজ্ঞানে এই বিস্ফোরণের ফলে সম্প্রসারণশীল গোলক একান্নটি কোয়ান্টাম পদ্ধতিতে অর্থাৎ ধাপে ধাপে ছড়িয়ে পড়ে । একান্নতম ধাপে শক্তির ফ্রিকোয়েন্সি হেতু তা অণুর বা পরমাণুর রূপ নেয় ।
তাদেরই পারস্পারিক যোগাযোগে স্থূল বস্তু সত্ত্বার উদ্ভব হয় । বস্তু সত্ত্বা তার শেষভাগ থেকে আবার উৎসে ফিরে যাবার জন্য স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়, অর্থাৎ বিস্ফোরণের শক্তি যখন শেষ হয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রের টানে দ্রুত আভ্যান্তরমুখী হয়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ''Centripetal Force'' নাম দেওয়া হয়েছে । কিন্তু জগতের গোলাকার পরিধির প্রান্তভাগে ইতোমধ্যে স্বাভাবিকভাবেই জড় থেকে প্রাণ, প্রাণ থেকে মন, মন থেকে যে বুদ্ধির বিকাশ ঘটে তাতে মনুষ্য জাতি ও জীব আত্মপ্রকাশ করে । 
 
( চলবে )