পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন--পর্ব ৩৫

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

অতীতের চিত্র দেখতে হলে কুণ্ডলিনীর গতিমাত্রা তীব্রতম হতে হবে। আলোর গতি অপেক্ষাও এর গতি বেশি হওয়া প্রয়োজন--- Tachyon moves faster than the speed of Light, So goes back in Time........... এসব তত্ত্ব নিয়ে জগতেও তোলপাড় ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও তাঁদের এমন ত্রুটি রয়েছে, যে জন্য অলৌকিক কথা কতকগুলি অভিজ্ঞতা হলেও তার যে যথার্থ বৈজ্ঞানিক ভিত্তি কি তাঁরা তা ধরতে পারছেন না। আবার এই অলৌকিক ক্ষমতাগুলিকে ব্যবহার করে কেউ কেউ বা রীতিমত প্রতারণা করবার চেষ্টা করছেন বা মহাপুরুষ সেজে প্রতারণার পথ ধরেছেন। 

অধুনা ইউরোপীয় প্যারাসাইকোলজীর নামে যে জগতে প্রবেশ করে দিশেহারা অবস্থাতে আছেন, সে অবস্থা ভারতীয়রা অনেক আগেই অধিগত করেছিলেন এবং মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এগুলি যে এক ধরণের অন্তরায়, তা বুঝে বহু পূর্বেই এসব পরিত্যাগ করেছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য ছিল সত্যকে জানা। বিশ্বের উৎস কোথায়, সত্য কোথায়, তা জানার জন্যই তাঁদের অভিযাত্রা। শেষ পর্যন্ত সেই সত্যকে তাঁরা জেনেছেন এবং আবিষ্কার করেছেন যে, সবই সত্য, জীব, অজীব, সব। অন্তরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে অর্থাৎ স্থূলতার খোলস খুলে ফেললে নিত্য ও অনিত্যের মধ্যে কোন ভেদ থাকে না। কিন্তু সেসব কথা থাক। যে কথা বলা হচ্ছিল তাই বলা যাক। অর্থাৎ দৈব ভাষার জগতে প্রবেশের পূর্ব পর্যায়ে দিব্য দর্শন জগতের কথা প্রতীকময় দৈব ভাষা জগতে প্রবেশ করার আগে অদ্ভুত এক দৈব দর্শন হয় কোন এক ঘটনা প্রবাহে--- ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগে যে এমন হতে পারে এই ইচ্ছা শক্তিই পীর ও সাধুদের করায়ত্ত্ব আছে বলে হাজার হাজার লোক তাঁদের সান্নিধ্যে আসার জন্য ব্যকুল হয়ে থাকেন। তবে ইচ্ছা শক্তি জাগরিত হয়েছে এমন পীর বা সাধুদের সংখ্যা কম। কদাচিৎ দেখা যায়। সবই খুঁত, নিখুঁত নয় । 

চল্লিশ বছর পদ্ম আসনে বসে অনেকেই সাধনা করেছেন। কিন্তু চল্লিশ বছরে মানুষের স্থূল দেহ বন্ধনের অন্তরালে যে 'অনন্ত অসীম' বিরাজ করছে তার কোন সন্ধান পান না। অথচ এইসব পীর সাধুদের শিষ্য সামন্তের অভাব নেই। সে ধরণের অপদার্থদের সংখ্যা কম নেই। যাকে এঁরা আত্মতত্ত্ব বলেন সেই আত্মতত্ত্ব বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এঁদের কারোরই নেই। না থাকার কারণ, শাস্ত্রে বাক্যের প্রতি নির্ভেজাল আত্মসমর্পণ এবং প্রশ্ন করার স্পর্ধাহীনতা। 

মানুষ নিজেই যে একধরণের স্র্রষ্টা বা ঈশ্বর অপেক্ষা কোন অংশে কম নয়। এ কথা তারা জানেন না। তাই তো রবীন্দ্রনাথের ভাষা ও ছন্দ কবিতায় বাল্মীকি সম্পর্কে ব্রহ্মার বক্তব্য যে কতদূর সত্য সাধারণ মানুষ তাতো বোঝেই না আর পীর বা সাধুরা বুঝবেন কি? রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেন বলেই লিখেছেন---

যা রচিবে তাই সত্য তুমি কবি তবো মনোভূমি, 
রামের জনম স্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য যেন...... 


(চলবে)