পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন-পর্ব ৩২

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

সূক্ষ্মজগতে ধ্যান দর্শন--

দিব্যজগতে প্রবেশ করে দৈবী-ভাষা অধিগত হবার আগে আত্মার স্বচ্ছ দর্পনে জীবন্ত কতকগুলি চিত্র দেখা যায়, দৈবী ভাষার পূর্বস্তর হিসেবে একে বলা যায় দৈবীদর্শন । দৈবী-ভাষাতে জীব ও জগতের ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বোঝা যায় । দৈবী দর্শনে এই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের চিত্র দর্শন হয় । ধ্যান যোগের মাধ্যমে এই চিত্র দর্শন পর্যায় পার হলে তবেই দৈবী সত্ত্বার সঙ্গে একাত্ম হয়ে দৈবী ভাষার মাহাত্ম্য বোঝা যায় । এই দৈবী দর্শন কিভাবে হয় বর্তমান অধ্যায়ে সে কথাই আগে বর্ণনা করে নিচ্ছি । 

দেহতত্ত্ব বিশ্লেষণকালে পূর্বেই বলেছি যে, শক্তি বায়ুতাড়িত হয়ে মেরুদণ্ডের রন্ধপথে উর্ধদিকে যত উঠতে থাকে ততই মস্তিষ্ক স্নায়ুতে শক্তি তরঙ্গের তারতম্য হিসেবে মানুষের নিজের অভ্যন্তরেই নানা স্তরে নানা পর্যায়ের স্বচ্ছতা অনুভুত হয় । এই স্বচ্ছতায় তরঙ্গের সমভাব হেতু অনুরূপ তরঙ্গের নানা ছবি ফুটে উঠে । Wave length reflects the picture of different things which correspond to the created wave length in the brain. যে স্বচ্ছতার মধ্যে সমতরঙ্গের এইসব ছবি প্রতিফলিত হয় সেই সচ্ছতাকেই "আত্মা" রূপে বলা হয়েছে । তাই আত্মার সরূপ কি? এ ধরনের কথা বোঝাতে গিয়ে আমি "মিঠু" বলি --- আত্মা হল উজ্জ্বল, আত্মা স্বচ্ছ । এই উজ্জ্বল বা স্বচ্ছ আত্মার আরেকটি বিশেষ গুণ আছে যাকে বলা হয়েছে Viscous ও Glue অর্থাৎ একধরণের আঠা জাতীয় জিনিষ, তাই এই রহস্যগত কথা এই পর্যন্ত থাক । 

বস্তুত স্থূল জগতের অভ্যন্তরস্থ এই উজ্জ্বল ও স্বচ্ছ আত্মার অবস্থা অনেকটা ফটোর নেগেটিভের মত । স্থূল জগতে যখন যে জিনিষের মধ্য থেকে তরঙ্গ Wave Length ওঠে সেই জিনিষের অনুপাতে Proportionate to the body of the object - এই নেগেটিভ সদৃশ্য আত্মায় তাঁর প্রতিফলন পড়ে স্থায়ী হয়ে যায় । 

সম্প্রসারণশীল জগত স্বভাবগুণে সংকুচিত হয়ে মহাশূন্যে বিলীন হলে তবেই এই তরঙ্গের আনুপাতিক চিত্রগুলি মুছে যায়, নইলে আত্মার স্বচ্ছ অবস্থার নানা স্তরে ছবির মত তা ফুটে থাকে । অতীতে বস্তু জগতের যেসব ঘটনা ঘটে গিয়ে বস্তুর অস্তিত্ব লোপ পেয়েছে, তারও নানা পর্যায়ের তরঙ্গের আনুপাতিক ছবি কিন্তু সেই আত্মার দর্পনে ফুটে আছে । বর্তমানে যা ঘটেছে তাও তরঙ্গ অনুপাতে সেই স্বচ্ছ অবস্থার মধ্যে নিজেকে অনবরত বিচ্যুরিত করে দিচ্ছে । তাৎক্ষনিক এই তরঙ্গানুপাতিক ছবির বাইরেও ব্যক্তির প্রাণীজগতের নানা মানুষিক তরঙ্গ দেহানুপাতিক তরঙ্গ বিচ্যুরিত করে দিয়ে পরমাত্মায় কর্মফল হিসেবে তাঁর ছবি এঁকে রাখছে । আত্মার স্বচ্ছ দর্পন পর্যায়ে যাঁদের প্রবেশাধিকার আছে তাঁরা এইজন্যেই ভূত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ইত্যাদির নানা ছবি দেখতে পান। 

 (চলবে)