পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ২৬

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে) 

ঠিক এমনিভাবেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণও দুশ্চরিত্র ও লম্পটে পরিণত হন। যদি তাঁর নানা লীলা কাহিনীর অন্তর্নিহিত অর্থ ধরা না পড়ে। -- গোপিনীদের বস্ত্রহরণ তো পর্নোগ্রাফীর গল্প পর্যায়ে পড়ে। তাছাড়া ষোল হাজার পত্নীও সুসংযমী চরিত্রের পরিচায়ক নয় । কিন্তু গোপিনীদের যদি জীবাত্মা বলে ধরি এবং বস্ত্র কে যদি কামনা বাসনা রূপ পাশ বলে ধরি, তাহলে অশ্লীল গল্পটি অতি শ্লীল ও মহৎ ভাবাদর্শে উদ্বোধিত হয় । 

জীব সকল পাশ বন্ধন মুক্ত হলেই অন্তর্নিহিত সত্যের সন্ধান মেলে। অর্থাৎ ভগবান শ্রী কৃষ্ণের সাক্ষাৎ পায় বা তাঁকে লাভ করে । এই শ্রীকৃষ্ণ মূলত বৈকুন্ঠাধিপতি অর্থাৎ এমন এক অবস্থায় বিরাজ করেন যেখানে কোন প্রকার কুণ্ঠা আলোড়ন নেই। UN STIRRED STATE OF VACUUM. ষোল হাজার পত্নী হলো ভগবান শ্রী কৃষ্ণের ষোল হাজার গুণের প্রতীক । এই গুণ হলো COUNTLESS DIMENSIONS. আমরা মানুষ মাত্র একটি সময় ও তিনটি মাত্রা দেখতে অভ্যস্ত । এতে SPACE TIME কে Flat দেখায়। যেন কমলা লেবুর খোসা রূপ আবরণের মত। 

কাছ থেকে দেখলে সবই বাঁকা ও ভাঁজ করা দেখায় । দূর থেকে দেখলে সুডৌল, খুব ছোট হলে এটি দশ মাত্রার এবং বেশি রকম বাঁকানো । কিন্তু বৃহত্তর বৃত্তে এর বক্রত্ব অতিরিক্ত মাত্রায় দেখা যাবে না। তবে এই প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন জাগে যে - কিছু কিছু মাত্রা বেঁকে গোল হয়ে গেলেও সব যায় না কেন ? এর একটি সম্ভাব্য উত্তর এই যে, দেশের দুটি মাত্রা আমাদের মত জটিল জীবের উদ্ভবের পক্ষে সহায়ক নয় । এক্ষেত্রে তার খাদ্যাখাদ্য, রক্ত চলাচল ব্যাখা করা অসম্ভব । ত্রিমাত্রার বেশি হলেও আমাদের মত ত্রিমাত্রিক জীবের পক্ষে তা ব্যাখা করা দুরূহ। তিন মাত্রাধিক দুটি জিনিসের দূরত্বের ক্ষেত্রে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব ত্রিমাত্রিক জিনিসের ক্ষেত্রে তার প্রভাব অপেক্ষা কম । অনুপাত এই ধরণেরঃ তিন মাত্রার ক্ষেত্রে ১/৪, চার মাত্রায় ১/৮, পাঁচ মাত্রায় ১/১৬ চতুর্মাত্রায় এবং অনুরূপভাবে কম হ্রাসমান । এমনও অনেক জগত আছে যেখানে সব মাত্রাই ক্ষুদ্র বৃত্তাকার কিংবা চতুর্মাত্রার বেশি মাত্রিক বস্তুও FLAT. তবে এক্ষেত্রে কোন বুদ্ধিমান প্রাণীর এসব বিচার করে দেখার জন্য অস্তিত্ব না থাকাই সম্ভব। সুতরাং বহু মাত্রার গুণ হিসাব করা যায় না । গুণই পুরুষের স্ত্রী হিসাবে কল্পিত । 

পুরাণ কাহিনীতে চিত্রগুপ্তের অর্থাৎ আত্মার একটি গল্প আছে ----- তিনি নাকি মানুষের সকল কর্মের হিসাব রাখেন । মৃত্যুর পর হিসাবের খাতা খুলে মানুষের কর্ম অনুযায়ী তাকে জাহান্নাম (নরক) বা জান্নাত (স্বর্গ) বাসের অনুমতি দেন । গল্পটি হাস্যকর প্রমাণিত হবেই---- যদি না তার অন্তর্নিহিত সত্যকে ধরা যায় । আসলে জড় জগতের অন্তরালে সূক্ষ্ম এক জগত আছে। যেমন নির্দিষ্ট FREQUENCY নিয়ে দৃষ্টিগ্রাহ্য আলোর বাইরে একটি সূক্ষ্ম আলো আছে । সেই সূক্ষ্ম জগত সূক্ষ্ম আলোর মতই আমাদের কাছ থেকে গুপ্ত থাকে । সেই সূক্ষ্ম জগতের চরিত্র অনেকটা ফটোনেগেটিভের মত । 

মানুষের কর্মজনিত তরঙ্গ বা Vibration কর্মকারীর সম আকৃতির তরঙ্গ সৃষ্টি করে ফটোনেগেটিভের উপর দাগ ফেলার মত ব্যক্তি মানুষের সূক্ষ্ম ছাপ ফেলে যায়। তাতে কর্মজনিত কম্পনের ফলস্বরূপ তার সূক্ষ্ম চিত্র ফুটে ওঠে । এই চিত্রটি সাধারণ মানুষের স্থূল দৃষ্টির অগোচরে গুপ্ত ভাবে থাকে বলেই একে 'চিত্রগুপ্ত' বলা হয়েছে, অর্থাৎ 'যে চিত্র গুপ্ত' । সূক্ষ্ম দৃষ্টির অধিকারী সাধক সেই সূক্ষ্ম চিত্র দেখতে পেয়ে প্রতিটি মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন । এই সূক্ষ্ম দৃষ্টির কথাই চিত্র গুপ্তের কাহিনী আকারে পুরাণে স্থান লাভ করে আছে । সেই পুরাণ পড়ে কেউ যদি চিত্র গুপ্তের হাত পা ওয়ালা কোন জীব বলে ধরে নেন। যিনি মুদিখানার হিসাব রক্ষকের মত হিসাব লিখে চলেছেন, তাহলে এর চাইতে ভ্রান্ত ধারণা আর কিছুই হতে পারে না । 

এ ধরণের কাহিনীকে যিনি সত্য বলে গ্রহণ করেন তিনি অজ্ঞ এবং বর্বর ছাড়া আর কি হতে পারেন ? যেমন ছোটবেলা থেকে শুনে আসছিঃ " এই... খারাপ কাজ করিস না ! তোর দুই কাঁধে দুই ফেরেস্তা আছে। যাদের নাম মুনকির আর নকির । ওরা তোর কর্মের হিসাব লিখছে । সাবধান !" এইভাবেই পুরাণ, কোরআন, বেদ, গীতা, বাইবেল বিভিন্ন গ্রন্থের রূপকের ব্যাখ্যাগুলি বিকৃতরূপে প্রতিফলিত হয়ে আছে এইসব ভাষ্যে । সুতরাং বিধাতার ললাট লিখনও সেই ধরণেরই একটি কাহিনী, সন্দেহ নাই।

চলবে.........