পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন-পর্ব ৩১

(পুর্ব প্রকাশের পহ হতে) 
তবে এইসব প্রতীকী ভাষার ব্যাখ্যা স্বরূপ বুঝতে হলে দেহতত্ত্ববোধ আগে থাকা প্রয়োজন । 

ব্রহ্মবিদ্যার অধিকারীগণ নিজেরা আত্মচেতনায় আধ্যাত্মজগতের আঙিনায় প্রবেশ করে যথার্থস্বরুপ চৈতন্যসত্ত্বায় উপলব্ধি করতে পারেন অনায়াসে এই প্রতীকী ভাষার, এই কারনে আধ্যাত্মজগতে প্রবেশের পর মনে হবে সব রহস্যময় । বস্তুগ্রাহ্য ভাষা দিয়ে তার যথার্থ রূপরেখা অঙ্কন করা যায় না । সেইজন্য প্রতীকময় ভাষায় এবং রূপক গল্পে এর স্বরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে । যেমনঃ অগস্ত্যের সমুদ্র শোষণ, একটা ছোটখাট মানুষ সমুদ্র শোষণ করে ফেলবেন তা সম্ভব নয় । 

আসলে এ হল জীবাত্মার সীমিত বন্ধন হারিয়ে অনন্ত হওয়া, নিজের মধ্যে অনন্তকে ধারণ করা--- অর্থাৎ নিজেই অনন্ত হওয়া--- যে অনন্ত আবারনের সীমার মধ্যে তার নিজের অভ্যন্তরেই রয়েছে, যে কথা মনে রেখে আধ্যাত্মিক কবি নজরুল লিখেছিলেন '' ভাবিস তুই ক্ষুদ্র কলেবর, ইহাতেই অসীম নীলাম্বর । '' পিঁয়াজের খোলা ছাড়িয়ে নিলে ভেতরকার শূন্য যেমন বাইরের শূন্যের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়, সেইরকম অর্থাৎ পিঁয়াজের ভেতরকার শূন্যতা অনন্ত শূন্যতাকে গ্রাস করে অর্থাৎ আত্মস্থ করে, অর্থাৎ নিজের অসীমত্ব উপলব্ধি করে । নিজস্ব কোন প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা না থাকলে আধাত্ম প্রতীক ব্যাঞ্জনার কোন স্বরূপ ধরা যায়না এবং কাউকে বোঝানও সম্ভব নয় । 

উপরোক্ত যে মরমিয়া গানের কথা আমি '' মিঠু " বলেছি সে সবই আধ্যাত্মজগত থেকে আহরিত প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার প্রতীকময় রুপ, কোন অধমের সেই আধ্যাত্মজগতের কোন অভিজ্ঞতা না থাকলে এইসব প্রতীকী ব্যাঞ্জনার স্বরূপ প্রকাশ করা যায় না । বাক্যার্থে কথাগুলির অর্থ এক, ভাবার্থে আর এক । 

তাইতো মরমিয়া শব্দের অর্থ হল-- " To close অর্থাৎ to close outer senses ." বহিরিন্দ্রিয় বন্ধ করলে মানুষ মরম বা অন্তরের মধ্যে প্রবেশ করে কুন্ডুলিনীর শক্তি বৃদ্ধি হেতু অনন্ত আকাশের রহস্য দেখতে পায় । মরমে এই দর্শন হয় বলে এরাঁ মরমিয়া নামে পরিচিত। Greek শব্দ Myem = to close থেকে মরমিয়া শব্দের ইংরেজি হল Mystic. আর অধি Para beyond আত্ম (জীবাত্মা) থেকে অধি+আত্ম = আধ্যাত্ম শব্দ । ধর্ম আর আধ্যাত্ম শব্দ এক নয় । ইংরেজি Religion শব্দের অর্থও ধর্ম নয়, আধ্যাত্মতা । কারণ Religion শব্দের উৎস হল ল্যাটিন শব্দ Religare অর্থাৎ Tie back. অর্থাৎ উৎসের সঙ্গে গীটছড়া বাঁধা । 

চলবে.........