পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১৫

গাছ ও মানুষের কথা

অর্থি দৌড়ে এসে তার বাবাকে বললো - বাবা, বাবা দেইখ্যা যাও কি হইছে?

অর্থির আব্বু জামিল সাহেব একটা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। ইতিহাসের শিক্ষক হলেও দর্শন শাস্ত্রে তার অগাধ জ্ঞান। তিনি মনোযোগ সহকারে একটি বই পড়ছিলেন।সুফীবাদ চার তরীকার পীর অধ্যাপক খলীলুর রহমানের লেখা বড়ো আয়েশের ভংগিতে তিনি কেদারায় হেলান দিয়ে দুলিয়ে দুলিয়ে বই পড়ছিলেন। মেয়ের ডাক চিৎকার শুনে তিনি বইটি বুকের উপর রেখে তাকালেন

-কি রে মা ?

-বাবা আমি যেই গাছটা আনছিলাম, যে জলপা্ই গাছটা। ওইটাতে না ছোট ছোট দানা বাইর হইছে। মনে হয় এইবার অনেক জলপাই হইব। অর্থি দু হাত দিয়ে অনেক বড় ভংগিটা দেখালো

জামিল সাহেব মেয়ের আহ্ণাদ দেখে আনন্দিত চিত্তে মাথায় হাত রাখলেন। সামান্য একটি ঘটনা অথচ কতো আনন্দিত চিত্তে মেয়েটি তাকে দেখাতে নিয়ে যেতে চাইছে। তার এই মেয়েটি অল্পতেই আনন্দিত হয়। টানাটানির সংসারে মেয়ের সব আহ্লাদ পূরণ করতে পারেন না। রিপাদের বাড়ীতে জলপাই গাছ দেখে তার মনে শখ হয়েছে সেও একটা জলপাই গাছ কিনে এনে লাগাবে। জামিল সাহেব হারতার হাট থেকে একটা জলপাই গাছ কিনে এনেছেন তা প্রায় সাত/আট মাস হবে। তিনি ঠিক মনে করতে পারলেন না। সেই গাছটা কবে যে বড় হয়েছে সে খেয়ালও তার নেই। এরই মধ্যে ফল ধরেছে। শুনে তিনিও যেন আনন্দিত হলেন। তিনি আনন্দিত চিত্তে বললেন

-তাই না-কি? অনেক গুলা, এই এত্ত গুলা। তিনিও তার দু হাত প্রসারিত করে দেখালেন

দু'হাত প্রসারিত করায় অর্থি তার বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লো। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে তিনি বললেন

-চল মা। দেইখ্যা অাসি কত্ত গুলা জলপাই ধরবো?

অর্থি তার বাবা দু'জনেই সেই জলপাই গাছটি দেখতে যায়। গাছটি দেখে জামিল সাহেব অবাক হয়ে গেলেন। তার ধারণাও ছিল না এতোটুকুন গাছে কিভাবে এত তাড়াতাড়ি বোল বের হতে পারে? অবশ্য গাছটি কেনার সময়ই মনির তাকে বলেছিল-স্যার এইগাছটা নিয়া যান। এইডা ভালো জাতের গাছ। ফল দিবো তাড়াতাড়ি
গাছটি নিয়ে তিনি যখন বাড়ীর পথ ধরছিলেন, সেই সময় পথে দেখা হয় ফজলু স্যারের সাথে। ফজলু স্যার হাবিবপুর কলেজে ইসলামী শিক্ষা পড়ান। দু'জনই একই কলেজে শিক্ষকতা করেন। গাছ দেখে তিনি বললেন

-কি ব্যাপার জামিল সাহেব? হটাৎ গাছ কেনা? তাও আবার জলপাই গাছ?

-মেয়ের বায়না। তার একটা জলপাই গাছ লাগবে। তাই কেনা? তা আপনি হটাৎ এদিকটায়? কি মনে করে?

-আসলাম শরীফ ভাইয়ের কাছে। খবর পাঠিয়েছে

-তাই?

-যাবেন নাকি ঐদিকটায়? অনেকদিন কোন কথা হয় না। তাছাড়া চিশতী সাহেবের কাছে গেলে ভালো লাগবে

-এই গাছ নিয়ে?

-তাতে কি? আরে চলেন ভাই। একা যেতেও ভালো লাগছে না। দুজনে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে

জামিল সাহেব আর না করতে পারলেন না। তিনি জলপাই গাছের চাড়া নিয়ে অগ্যতা রওনা হলেন শরীফ সাহেবের উদ্দেশ্যে। শরীফ সাহেব বারাহিগুণী দরবার শরীফের মুরিদ। চিশতী স্টোর নামে একটি বইয়ের লাইব্রেরী দিয়েছেন। কোনমতে এই দিয়েই তার সংসার চলে যায়। অত্যন্ত অমায়িক লোক। সকলেই তাকে বিশেষ সম্মানের চোখে দেখে। কথা বার্তায় অসাধারণ
শরীফ সাহেব তার লাইব্রেরীতেই বসা ছিলেন। তিনি জামিল সাহেব ফজলু সাহেবকে দেখে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে সালাম দিলেন। কুশল বিনিময়ের পর তাদের বসার জন্য চেয়ার দিলেন। চায়ের কথা বলেই তার নযর পড়লো জামিল সাহেবের হাতে থাকা জলপাই গাছটির দিকে। তিনি জামিল ভাইকে গাছটির কথা জিগ্যাসা করায় ফজলু সাহেবই তার উত্তরটা দিয়ে দিলেন। জামিল সাহেব অপ্রস্তুত বোধ করায় শরীফ সাহেব বললেন

-আরে ভাই অাপনার মেয়েতো ভালো জিনিসই পছন্দ করেছে। জানেন গাছ সর্ম্পকে রাসুলে  পাক (সাঃ) কি বলেছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ" যে কোন মুসলমান বৃক্ষ লাগায় কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা থেকে পাখি বা মানুষ কিংবা চতুষ্পদ জন্ত্তু খায় তবে তা তার পক্ষ থেকে ছদকাস্বরুপ "[ (বুখারী শরীফ-পৃষ্ঠা নং৩৫১)] আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআন শরীফে বলেছেনঃ" এবং আমি সৃষ্টি করি এক বৃক্ষ যা জন্মায় সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় আহারকারীদের জন্য তেল ও ব্যন্ঞ্জন।" [সুরা মমিনুন আয়াতঃ২০]। 

শরীফ সাহেবের কথা শুনে ফজলু সাহেব বলে উঠলেন

আল্লাহ বলেন ‘এবং আমি সৃষ্টি করি এক বৃক্ষ যা জন্মায় সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় আহারকারীদের জন্য তেল ও ব্যঞ্জন।’ (সূরা মমিনুন : ২০)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে গাছের নামে শপথ করেছেন এবং তদানুসারে সূরাটির নামকরণও করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ত্বিন (এক জাতীয় বৃক্ষ) ও জায়তুনের (জলপাই জাতীয় এক ধরনের ফল) শপথ! (সূরা আত ত্বিন : ১)। - See more at: http://www.alokitobangladesh.com/islam/2013/09/11/21761#sthash.5eTt9r6c.dpuf
আল্লাহ বলেন ‘এবং আমি সৃষ্টি করি এক বৃক্ষ যা জন্মায় সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় আহারকারীদের জন্য তেল ও ব্যঞ্জন।’ (সূরা মমিনুন : ২০)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে গাছের নামে শপথ করেছেন এবং তদানুসারে সূরাটির নামকরণও করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ত্বিন (এক জাতীয় বৃক্ষ) ও জায়তুনের (জলপাই জাতীয় এক ধরনের ফল) শপথ! (সূরা আত ত্বিন : ১)। অতএব গাছপালা, বৃক্ষলতা আল্লাহ সুমহান কুদরতের অপরূপ নিদর্শন। - See more at: http://www.alokitobangladesh.com/islam/2013/09/11/21761#sthash.5eTt9r6c.dpuf
আল্লাহ বলেন ‘এবং আমি সৃষ্টি করি এক বৃক্ষ যা জন্মায় সিনাই পর্বতে, এতে উৎপন্ন হয় আহারকারীদের জন্য তেল ও ব্যঞ্জন।’ (সূরা মমিনুন : ২০)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে গাছের নামে শপথ করেছেন এবং তদানুসারে সূরাটির নামকরণও করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ত্বিন (এক জাতীয় বৃক্ষ) ও জায়তুনের (জলপাই জাতীয় এক ধরনের ফল) শপথ! (সূরা আত ত্বিন : ১)। অতএব গাছপালা, বৃক্ষলতা আল্লাহ সুমহান কুদরতের অপরূপ নিদর্শন। - See more at: http://www.alokitobangladesh.com/islam/2013/09/11/21761#sthash.5eTt9r6c.dpufশরীফ সাহেবের কথা শুনে ফজলু সাহেব বললেন
- আরে ভাই আপনিতো বোখারী শরীফের হাদিসের কথা বলছেন? পবিত্র কোরআন শরীফেইতো আছে-জলপাই গাছ মানে জয়তুন বৃক্ষ। আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআন শরীফে সুরা নুর নামে যে সুরা নাযিল করেছেন তার ৩৫ নং আয়াতেইতো জয়তুন বৃক্ষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত সুরায় বলা হয়েছেঃ" আল্লাহু নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্মাসালু নূরিহি কামিশকাতিন ফীহা মিস্বাহ ; আল মিসবাহু ফী যুজাজা।আযযুজাজাতুকা আন্নাহা কাওকাবুন দুর্রি-উই ইয়ু কাদু মিন শাজারাতিম মুবারকাতিন যাইতুনা।লা শারকিয়্যাতিন ওয়ালা গরবিয়্যাহ; ইয়া কাদু যাইতুহা ইয়ুদি~~ ওয়ালাও লাম তামসাসহু নার।নূরুন আলা নূর।ইয়াহদি আল্লাহু লিনুরিহী মাইয়্যাশা~~ ; ওয়া ইয়াদরিবুল্লাহুল আমসালা লিন্নাস; ওয়াল্লাহু বিকুল্লি শাইয়িন আলীম। " অর্থ হচ্ছেঃ-"আল্লাহ হচ্ছেন আকাশ/স্বর্গ  পৃথিবীর আলো/নূর তাঁর নূরের উদাহরনটা যেন এরকম যে-  দেয়ালের একটি তাকের ( niche)  মধ্যে একটি ল্যাম্প ( প্রদীপ) আছে, প্রদীপটি আছে কাঁচের ভিতর।কাঁচটা ঠিক যেন একটি চকচকে উজ্জ্বল নক্ষত্র, এবং ( প্রদীপটিকে) জ্বালানো হয়েছে পবিত্র জলপাই গাছের তেল থেকে, যে তেল পূর্ব বা পশ্চিম কোন যায়গাতেই পাওয়া যাবেনা এই তেলটা এমন যে আগুনের সংস্পর্শ  না পেলেও এটি প্রায় (almost) প্রজ্বলিত হয়ে উঠে এবং আলো দেয়। আলোর উপর আলো ( Light Upon Light) আল্লাহ তাঁর নূরের দিকে তাঁর যাকে ইচ্ছা, বা যে তাঁর কাছে চায়,  পথ দেখিয়ে দেন। আর আল্লাহ মানুষের জন্য উদাহরন/ উপমা ( Parable) দেন, আল্লাহ সব ব্যাপারে সব কিছু জানেন।
  
শরীফ সাহেব ইতিমধ্যে সবাইকে চা খাওয়ালেন। চা পানের পর ফজলু সাহেব কিছুটা বিশ্রাম পেয়ে আবার বলা শুরু করলেন
-দেখেন সুরা নুরে আল্লাহ পাক কতো সুন্দরভাবে নিজেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি হচ্ছেন "নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ" আসমান এবং জমিনের নুর। নুর মানে আলো। তার মানে আসমান এবং জমিনের আলো। কি বুঝলেন, জামিল সাহেব?
-শুনেন, আপনি বলছেন আল্লাহ আসমান এবং জমিনের নুর। মানলাম আপনার কথা। কিন্ত্তু কোরআন শরীফ আল্লাহ পাকের একটি বিজ্ঞানময়গ্রন্থ। এই গ্রন্থ সর্ম্পকে জানতে হলে আপনাকে পূর্বাপর বিষয়সমুহ ভাবতে হবে। যেমন ধরুন এই গ্রন্থ নাযিল হবার পূর্বে রাসুলে পাক হেরা গুহায় ধ্যান মগ্ন ছিলেন। সেই ধ্যানময় অবস্থাতেই কিন্ত্তু কোরআন নাযিল হয়। যে আয়াতগুলো নাযিল হতো তা রাসুলে পাকের (সাঃ) সাহাবারা লিখে রাখতেন। সেটাই যে আপনি পাচ্ছেন তার নিশ্চয়তা কি?

- আরে এটা আপনে কি বললেনরে ভাই? তার মানে আপনি এই কোরআনের উপর সন্দেহ প্রকাশ করছেন? আপনি জানেন-আল্লাহ পাক নিজেই এই কোরআন নাযেলকারি এবং তিনিই এর হেফাযতকারী। ফজলু সাহেব কিছুটা উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বললেন

-আরে না। আমি সন্দেহ প্রকাশ করছি না। সংশয় প্রকাশ করছি। কারণ ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে বিচার করতে গেলে দেখা যায় হযরত ওসমান (রাঃ) কর্তৃক প্রকাশিত কোরআন দেখে হযরত আলী (আঃ) বলেছিলেনঃ"হাযা কুরআনুস সামিত ওয়া আনা কুরআনুন নাতিকইহা নির্বাক (মতলেক) কোরআন আর আমি হলাম সবাক (নাতেক) কোরআন।ইতিহাসইতো বিভ্রান্তির জালে আমাদের আবদ্ধ করে রেখেছে

-ভাই, আপনি ইতিহাস মানবেন না আল্লাহ পাকের কালাম মানবেন? সুরা বাকারার ২নং আয়াতেইতো আল্লাহ পাক বলেছেনঃ আলিফ-লাম-মীম। যালিকাল কিতাবু লা রাইবা ফিহী হুদাল্লিল মুত্তাকিন। আলিফ-লাম-মীম ওটা সেই কেতাব যাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ [ভ্রান্তি, অনিশ্চয়তা, ভুল ধারণা] নেই। একটি পথ নির্দেশক (হুদা) আল্লাহর প্রতি পূর্ণ সচেতনদের (মুত্তাক্বী) জন্য।”  ( সুরা বাকারা, আয়াত ) তো আপনি যদি মুত্তাকী হন, তাহলে তার প্রতি বিন্দুমাত্র সন্দেহ থাকা উচিত নয়

-শুনেন, আপনি কিন্ত্তু আলিফ-লাম-মীম এর অর্থ না করেই এর অর্থ বিকৃত করলেন। অর্থাৎ আলিফ-লাম-মীম দ্বারা আল্লাহ পাক কি বুঝাতে চেয়েছেন, তার কোন ব্যাখ্যা দেননি। আলিম-লাম-মীম অর্থ আলে মীম। অর্থাৎ মুহাম্মদের বংশধর। সৃষ্টির শুরুই হয় মুহাম্মদী নুর হতে। এখানে মুহাম্মদের বংশধর বলতে নুরী বংশধর বোঝায়। কারণ আল্লাহ পাক দেহধারী কোন পুত্র সন্তান নেন না। যেটা আমরা সুরা ইখলাসে পাই। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ"আউয়ালা খালাক্কাল্লাহু নুরী ; আনা মিন নুরুল্লাহি ওয়া কুল্লু শাইইম মিন নুরী"। অর্থাৎ সর্বপ্রথম আল্লাহ আমার নুর সৃষ্টি করেন; আমি আল্লাহর নুর হতে এবং বিশ্বজগৎ আমার নুর হতে। এই নুর সর্ম্পকে জিলি তাঁর বিখ্যাত  "ইনসানুল কামিল" গ্রন্থে বলেছেনঃ"মুহাম্মদের হাক্কীকত এই যে, তাঁর এক নাম "আমারুল্লাহ (আল্লাহর হুকুম)" মহত্ত্ব পদবীতে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁকেই কেন্দ্র করে সকল সৃষ্টি আবর্তন করছে। বস্তুুতঃ তাঁর সত্তাই সকল সত্ত্বার ধারক বাহক। তাঁর প্রকৃত নামঃ "মুহম্মদ" পৈতৃক নামঃ আবুল কাসিম। তাঁর বর্ণনাঃ আবদুল্লাহ, তাঁর খিতাবঃ শামসুদ্দীন। জিলি আরো বলেছেনঃ আল্লাহ মুহাম্মদের রুপকে তাঁর স্বীয় নাম "বদীউল-ক্কাদীর ( সর্বশ্রেষ্ঠ স্রষ্টা)' নামের নুর হতে সৃষ্টি করে উক্ত রুপকে তাঁর অন্য নিজস্ব অন্য নাম 'মা্ন্নানুল-কাহির(মুহ্যমান দাতা)' নামের দ্বারা ধ্যান করেন। অতঃপর আল্লাহ রাসুলুল্লাহর রুপের উপর তাঁর অন্য নিজস্ব নাম 'লাতিফুল-গাফ্ফির  (ক্ষমাশীল প্রশ্রয়দাতা)' নামের আলোকপাত করেন। এই আলোক প্রক্ষেপণের ফলে 'মুহাম্মদ' নাম দ্বিখন্ডিত হয়। উহার এক অংশে বেহেশত এবং অন্য অংশে দোযখের সৃষ্টি হয়। তো আপনি সেই গুরুত্বপূর্ণ অংশের অর্থ না করেই আপনার মতো করে ব্যাখ্যা করে দিলেন? আপনিতো আল্লামা ইকবালের কথা শুনে থাকবেন? তিনি কি বলেছেন? তিনি বলেছেনঃ
"তেরে যমীরপর যবতক না হো নুযুলে কিতাব
শেরা কে শাহে রাজী না সাহেবে কাশশাফ।"
অর্থঃ যতক্ষণ পর্যন্ত তব অন্তরে কেতাব অবতীর্ণ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বিখ্যাত তফসীরকার আল্লামা রাজীই আর বিখ্যাত তফসীরকার আল্লামা যামাকসারীই হোন কেউ এর মর্মগ্রন্থী খুলতে পারবে না
তাছাড়া আপনি যে আয়াতের অর্থ করলেন-তার দার্শনিক মতবাদ তুলে ধরতে আপনি ব্যর্থ হয়েছেন?
কথাগুলো বলে জামিল সাহেব একটু থামলেন। তিনি দেখলেন ফজলু সাহেব একেবারেই চুপ করে বসে আছেন। কিন্ত্তু শরীফ সাহেব মিট মিট করে হাসছেন। তিনি শরীফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললেন 

-কি শরীফ সাহেব? আমি কি কথাগুলো খারাপ বলেছি?

-কি যে বলেন, আপনি? সবইতো আমি শুনলাম। কিন্ত্তু আমি ভাবছি অন্য কথা

-আপনি আবার কি ভাবছেন? বিজয়ীর বেশে মুখে হাসি নিয়ে জামিল সাহেব জিগ্যেস করলেন?

-আমি ভাবছি যে জয়তুন গাছ নিয়ে এত কথা হলো সেই গাছটি দেখে আমার ভেতরের কথা মনে পড়লো

-সেটি কি রকম? জামিল সাহেব জিগ্যেস করলেন

-সেটা হলো আমাদের দেহগত বিষয় নিয়ে। আমাদের দেহে নফস,ক্কলব, রুহ,সির খফি, আগফা নামক ছয়টি লতিফা আছে। মেরুদন্ডকে কেন্দ্র করে এই ছয়টি লতিফা দুদিক দিয়ে বেঁকে গিয়ে উপর দিকে উঠে গিয়েছে। গাছটির দিকে লক্ষ্য করেন। দেখেছেন

শরীফ সাহেবের কথা শুনে জামিল সাহেব গাছটির দিকে ভালো করে তাকালেন। সত্যিই তো। শরীফ সাহেব আবার বলতে শুরু করেছেন

-দেখেন আমাদের দেহের দিকে। এখানে নফস, ক্কলব, রুহ, সির,খফি আগফা। ছয়টা পাতা। ছয়টা লতিফা। কোরআনে বর্ণিত যে গাছের কথা বলা হয়েছে সেটা আমাদের এই দেহের ভেতরই অবস্থিত। আল্লাহর কোরআন এই দেহেই নাযিল হয়। সেটার কথাই কোরআনে রুপকভাষায় বর্ণিত হয়েছে। রুপক না বুঝলে আসল কোরআন বুঝা মুশকিল। কারণ আমার বাবাজান তাঁর চিশতী উদ্যানে বলেছেন-

তোমাকে বুঝাইবার তরে
এই সকলই পয়দা করে
সকলরুপই তুচ্ছ জান 
তার রুপেরই ছামনা। 

তিনি আরো বলেছেনঃ
কেতাব তো ভাই মানুষ নয়
নিত্য নতুন কথা কয়
ভবের ভাবুক হইয়া কেন
কেতাব দেখনা।

যখন এই গাছটিকে লালন পালন করা হয় তখন সেখানে বাসা বাঁধে অচিন পাখি। নানান ভাষায় কথা কয়। গান গায়। সেই গান শোনা যায়। সেই কথা সেই গান শোনার জন্য চাই একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করা। নীরবে নিঃশব্দে শুনতে হয় সেই গান
হৃদয় বনে অতি গোপনে
একার বাঁশি শুনেছি প্রাণে
জামিল সাহেব অবাক দৃষ্টিতে একবার শরীফ সাহেবের দিকে আরেক বার জলপাই গাছটির দিকে তাকিয়ে রইলেন

-এ্যই বাবা কি হইছে? তুমি কথা বলছো না কেন?

অর্থির ধাক্কায় জামিল সাহেব চমকে উঠেন। সেই কবে এই গাছটি তিনি মেয়ের জন্য কিনে এনেছিলেন। আনার পথে কতো কথা কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই গাছটির সাথে। মেয়ের মমতায় স্বস্নেহে গাছটি আজ ফল দিতে শুরু করেছে। প্রতিদিন সকালে পানি দিতে দেখেছে মেয়েকে। যত্ন নিতে দেখেছে গাছটির। তিনি কি পারবেন সেই ভাবে শরীফ ভাইয়ের মতো করে তার দেহের এই জয়তুন বৃক্ষের যত্ন নিতে। সে প্রশ্নটাই এখন তাকে ভাবিয়ে তুলছে