পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৫

বোয়াল মাছের গল্প

রহিম সাহেবের বেয়াল মাছ খুব পছন্দ। মাছ হিসেবে বোয়াল মাছ রাক্ষুসে প্রজাতির। কিন্ত্তু তাতে কি? মাছ রাক্ষুসী হোক কিংবা খোক্ষসী হোক-খেতে স্বাদ হলেই হলো। তাতে আর কি যায় আসে। তাছাড়া অনেকদিন থেকেই তার ইচ্ছে যে দিন পেনশনের টাকা পাবেন সেদিন নিজে গিয়ে বড় দেখে একটা বোয়াল মাছ কিনবেন। আকলিমাকে বলবেন-খুব সুন্দর করে পাকানো (রান্না)র জন্য। আজ তার সেই দিন এসেছে।গতকালকে তিনি পেনশনের টাকা তুলেছেন। অফিসের কলিগদের মিষ্টি কিনে খাওয়ালেন। বাড়ীর জন্য মিষ্টি কিনেছেন। নাতিদের জন্য হরলিক্স, দুধ আর চকলেট কিনেছেন। কিন্ত্তু মাছ কেনা হয়নি। আজ কিনবেন। তাই খুব সকালে ভোরে উঠে কোরআন তেলাওয়াত করেছেন। ফযরের নামায পড়েছেন। নামায শেষ করেই সকালে হাঁটতে বেড়িয়ছেন। পুব আকাশে তখনো খানিকটা লাল আভা রয়ে গেছে। মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। হাঁটতে তার বেশ লাগছে। পদ্মার পাড় ঘেঁষে ভাগ্যকুল বাজার। সেই বাজারে পদ্মা থেকে ধরে আনা নানান প্রজাতির টাটকা মাছ পাওয়া যায়। অনেক দুর দুরান্ত থেকে লোকজন এই বাজারে সদায় করতে আসে। হাঁটা শেষ করেই তিনি মদনলালের দোকানে ঢুকলেন সকালের নাস্তা করার জন্য। নাস্তা হিসেবে সকালে রুটি আর ভাজি খারাপ না। সাথে এককাপ চা। তিনি দোকানে ঢুকতেই মদনলাল বললোঃ

-দাদা নমস্কার।

-নমস্কার। কেমন আছ মদন? সব ভালোতো?

-হ দাদা। ভাল আছি। তয় আপনে এত সকালে কি মনে কইর‌্যা আইলেন?

-আসছি মাছ কিনতে। এখানে বোয়াল মাছ পাওয়া যাবে না?

-দাদা বোয়াল মাছতো পাওয়া যাইব কি-না কইতে পারমু না।

-কেন। জামাল না বড় বড় মাছ আগে বিক্রি করতো? ওর কাছে গেলে পাওয়া যাবে না?

-জামাইল্যা তো হুনছি অনেক পদের মাছ বিক্রি করে। ওর কাছে যাইয়্যা দেকতে পারেন দাদা।

-ঠিক আছে।যাব। এখন তুমি আমাকে রুটি আর ভাজি দাও।

-দিতাছি দাদা।

মদন দ্রুত পায়ে চলে গেল নাস্তা আনার জন্য। রহিম সাহেব তাকিয়ে আছেন পদ্মার দিকে। পদ্মার এক সময় ভয়ংকররুপ দেখে অনেকেরই ভয়ে প্রাণ কাঁপতো। আজ আর পদ্মার সেই বিশালতা নেই। নেই তর্জন গর্জন। আছে কেবল হাড্ডি কংকালসার জরাজীর্ণ শীর্ণ দেহটা। দেখলে মনে হয় অনাহারে আছে। অথচ এক সময় এই প্রমত্তা পদ্মার বুক চিরে বয়ে যেতো পাল তোলা নৌকা। বড় বড় স্টীমার, জাহাজ।আরো কতো কি? বিশেষ করে গুণটানা নৌকা। নৌকায় একজন হাল ধরে বসে আছে আর দুই তিন বা চারজন দাঁড় টানছে। কেউবা মনের সুখে গান গাইছে। দেখতে কতো ভাল লাগতো। আজ আর সেই যুগ নেই। যুগ পাল্টেছে। এখন চলে যন্ত্রচালিত সব নৌযান। ভট ভট করে চলে নদীর বুক চিরে......

-দাদা এই নেন নাস্তা। চা দিমু?

-একটু পরে দাও।

রহিম সাহেব দ্রুত নাস্তা শেষ করলেন। চা-টা একটু দ্রুত খাবার চেষ্টা করছেন। চা-টা শেষ করেই তিনি দ্রুত জামালের কাছে যাবার চেষ্টা করছেন।খাবারের বিলটা দেবার জন্য তিনি পকেট থেকে টাকা বের করলেন। বিল চুকিয়ে দিয়েই তিনি মদনকে বললেনঃ

-মদন আসিরে।পরে দেখা হবে।

-ঠিক আছে দাদা। আবার আইসেন।

কথা না বাড়িয়ে রহিম সাহেব বের হয়ে আসলেন। বাইরে তখনো পুরোপুরি রোদ তার পাখা মেলতে শুরু করেনি। আস্তে আস্তে পেখম তুলছে। নরোম রোদের হাল্কা ছোঁয়া ভালোই লাগছে তার। তার উপর সকালের নদীর দৃশ্যটা মনোরোম দেখায়। গাংচিলের হুড়োহুড়ি...নানা পাখ-পাখালির কল-কাকলি দৃশ্যটাকে উপভোগ্য করে তোলে।দুর থেকে দেখতে পেলেন জেলেরা মাছ ধরে নৌকাগুলো কূলে ভেরাচ্ছে। রাশি রাশি ইলিশ মাছ। মাছের উপর হাল্কা রোদ পড়ায় কেমন চকচক করছে রুপালী ইলিশ।

রহিম সাহেব হাঁটতে হাঁটতে সেদিকটায় গেলেন। জেলেরা আড়তে মাছ উঠাতে ব্যস্ত। মাছের খাঁজি মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে আড়তের দিকে। আড়তের মহাজন শ্যামলাল আড়ষ্ট ভংগিতে বসে আছেন গদীতে। পাশেই তার ক্যাশিয়ার মধুমিয়া মাথা নুইয়ে লেখায় ব্যস্ত। অন্য দু'জন মাছ গণনায় ব্যস্ত। তিনি উঁকি ঝুঁকি দিয়ে জামালকে খোঁজার চেষ্টা করছেন। কিন্ত্তু জামালকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তিনি মহাজন শ্যাম লালের আড়তে ঢুকে জামালের কথা জিগ্যেস করলেন। শ্যামলাল রহিম সাহেবকে দেখে বললেনঃ

-আদাব দাদা। কেমন আছেন?

-ভালো। মাছের আমদানীতো বেশ ভালেই মনে হচ্ছে।

-আছে আপনাদের দোয়ায়। তয় আগের মতো না। আগেতো অনেক মাছ পাওয়া যাইতো। এহনতো আর আগের মতো পাওয়া যায় না।

-যা পাওয়া যায় তাই বা খারাপ কি?

-মন্দের ভালো। হা ..হা..

শ্যামলাল অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। তার হাসি শুনে আশে পাশের কুলি মজুররা তার দিকে তাকালেন। মাথা উচু করে মধু মিয়াও তাকালো। পরক্ষণেই আবার যার যার কাজে মন দিল। রহিম সাহেব বুঝলেন তার ব্যবসা খুব একটা খারাপ যাচ্ছে না। তিনি মধুকে জিগ্যেস করলেনঃ

-মধু মিয়া জামালকে দেখেছো? আসছে নাকি আজ?

-না ভাই। জামাইল্যারে তো দেকতাছি না। আইবো নে।

-ওহ। রহিম সাহেবের কন্ঠে খানিকটা হতাশার ভাব ফুটে উঠলো।

-দাদা জামাইল্যারে খুঁজতাছেন কেন? কোন দরকার? মধু জানতে চাইলো।

-দরকার আছে।

-বহেন আইবো নে। মধু কিছুটা হলেও আশার বাণী শুনালেন। রহিম সাহেব আড়তে বসেই দেখতে পেলেন জামাল আসছে। কিন্ত্তু তার মাথায় বা হাতে কিছুই নেই। অনেকটা হতাশা নিয়েই বসে আছেন। জামাল আড়তে ঢুকেই শ্যামলালকে দেখেই বললেনঃ

-আদব দাদা। কেমুন আছেন।

-আছি ভালো। তর জন্য রহিম ভাই অনেকক্ষণ ধইর‌্যা অপেক্ষা করতাছে।

 রহিম সাহেবকে দেখে জামাল বললোঃ

-আসসালামুআলাইকুম। দাদা ভালো আছেন?

-আছি ভালো।

-আপনে নাকি আমারে খুঁজতাছেন?

-হ্যাঁ।

রহিম সাহেব কিছুটা হলেও অপদস্ত বোধ করলেন। এই ভাগ্যকুলে এমন কেউ নেই যারা তাকে না চেনে। তিনি হরলাল সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তার অনেক ছাত্র-ছাত্রী এই দেশের অনেক নামী-দামী সরকারী কর্মকর্তা। অনেকেই আবার বিদেশে অাছেন। তাকে আগে সালাম না দিয়ে শ্যামলালকে সালাম দেয়ায় তিনি কিছুটা মনঃক্ষুন্ন হলেন। প্রথমে ভাবছিলেন কিছু বলবেন না। আবার ভাবলেন এই ভাগ্যকুল বাজারে জামালই সবচেয়ে বড় বড় মাছ ধরে বিক্রি করে। ওর কাছেই সবাই বড় মাছের জন্য অর্ডার দেয়। ওর এই গুণের কদর সর্বত্রই। তাই তিনি তার সিধান্ত পরিবর্তন করে বললেনঃ

-তোমাকে খুঁজছি মাছের জন্য। বোয়াল মাছের জন্য। অনেক দিনের ইচ্ছে একটা বোয়াল মাছ কিনবো। তাই তোমাকে খুঁজছি।

-দাদা এইর লাইগ্যা খুঁজতাছেন? বোয়াল মাছতো খুব বেশি একটা পাওয়া যাইবো না। তয় উত্তর পাড়ায় আইজ একটা ডেংগায় যামু। ঐখানে হয়তো পাওয়া যাইতে পারে।

-কখন যাবে?

-এইতো একটু পরেই যামু। ঘন্টা দুয়েক লাগবো।

-ঠিক আছে। আমি তোমার জন্য ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষা করবো। তুমি মাছ পেলে আমার বাড়ীতে দিয়ে আসবে।দাম যা হয় দিয়ে দিব।

-হেইড়া আমারে কইতে অইবো না।

-ঠিক আছে। তাহলে আমি অাসি।

রহিম সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। তাকে উঠতে দেখেই শ্যাম লাল তাকে চা-খাওয়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলো। মধুকে চায়ের কথা বললেন। মধু ক্যাশ থেকে টাকা বের করে চা আনতে পাঠালেন। চা খেয়েই রহিম সাহেব বেড়িয়ে পড়লেন। বাজারে গিয়ে বড় দেখে একটা লাউ কিনলেন। লাউ হাতে নিয়ে তিনি হাঁটতে হাঁটতে বাড়ীর পথ ধরলেন। বাড়ীতে পৌঁছিয়ে তিনি আকলিমাকে ডাকলেন। সুর্য তখন তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। আকলিমা খুব ভোরেই উঠে। ঘর-দুয়ার গোছগাছ করে রাখে। উঠোন ঝাড়ু দেয়। কলপাড়ে গিয়ে থালা বাসনকোষন পরিস্কার করে ধুইয়ে রাখে। চারদিকে বেশ একটা পরিস্কার পরিচ্ছন্নভাব লক্ষ্য করা যায়। এই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার মাঝেই কেমন যেন একটা প্রশান্তি বিরাজ করে। তিনি আবারো আকলিমাকে ডাকলেন। স্বামীর ডাকের শব্দ পেয়েই আকলিমা উঠে দাঁড়ালেন। দেখলেন তার স্বামী একটি বড় লাউ কিনে এনে বৈঠকখানার মাঝে রেখেছে। অন্য কোন মাছ বা তরিতরকারী না দেখে তিনি খুব আর্শ্চয্য হলেন। আকলিমা তার স্বামীকে জিগ্যেস করলেনঃ-

-কি ব্যাপার? খালি একটা লাউ আনছো? আর কিছু লাগবো না? খালি লাউ দিয়া কি করমু?

আকলিমার গলায় কেমন যেন একটা খেদ মিশানোর ঝাঁজ পেয়ে রহিম সাহেব কিছুটা ইতঃইস্ত করে উঠলেন। খানিকটা ঘাবরিয়ে গেলেন। অতঃপর বললেনঃ-

-মাছের কথা জামালকে বলেছি। জামাল ঘন্টা খানেক পরেই মাছ পাঠিয়ে দেবে।

আকলিমা আর কথা না বাড়িয়ে লাউটা হাতে করে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন। রহিম সাহেব কল পাড় গিয়ে হাত-মুখ ভালো করে ধুলেন। পরে চোখে মুখে বার বার পানির ঝাঁপটা দিলেন। শুনেছেন-চোখে মুখে ভালভাবে পানি দিলে চোখ ভাল থাকে। চোখের ময়লা আবর্জনা দুর হয়ে যায়। মন শান্ত হয়। হাত মুখ ধুইয়ে তিনি কল পাড় হতে বারান্দায় এসে হাত-মুখ মুছলেন। টেবিল হতে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে পত্রিকায় মনোনিবেশ করলেন। অধিকাংশ খবরই বেশ গুরুত্বহীন। দেশে এই হচ্ছে। ঐ হচ্ছে। হামতাম করা মন্ত্রীদের বিরক্তিকর কটুক্তি শুনতে শুনতে দেশের জনগণ অতিষ্ঠ প্রায়।
মাথার উপর রোদ বেশ চড়ে বসেছে। কেমন যেন শরীরে বেশ জ্বালা ধরাচ্ছে। উঠানে রোদের আলো পড়ায় কেমন যেন ঝলমল করছে। মোরগ মুরগীগুলো কেমন যেন খুঁটে খুঁটে খাবার খাচ্ছে। ডালিম গাছের উপর বসা দুটি চড়ুই পাখি খুনসুটি করছে। রহিম সাহেব পত্রিকা বন্ধ করে সেদিকটায় তাকিয়ে রইলেন।

-চাচা বাড়ী আছেননি?

হাশেমের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল। রহিম সাহেব বললেনঃ-

-কে হাশেম?

-জ্বে চাচা। আপনের লিগা মাছ পাডায় দিছে।

হাশেমের হাতে একটি বড়ো সড়ো বোয়াল মাছ দড়ি দিয়ে বাঁধা। সাদা পেটটা ঝলমল করছে। উঁচু হওয়া পেটটার দিকে তাকিয়ে কেমন যেন মনটা স্যাঁৎ করে উঠলো।

-কি রে? এত বড় মাছ কোথা থেকে আনলি?

- জ্বে চাচা ওই উত্তরপাড়ার ডেংগা হেচতে যাইয়া পাইছি।

-ঠিক আছে। মাছটা রেখে যা। দাম কতো কিছু বলছে?

-না। কিছু কয় নাই। খালি কইছে মাছটা আপনের কাছে দিতে।

-ঠিক আছে। রেখে যা। আমি জামালের সাথে কথা বলে টাকা দিয়ে দেব। আর শোন্ টাকা নে।  নাস্তা করিস।

-জ্বে আইচ্ছ। বলে হাশেম বেড়িয়ে গেল। 

হাশেমকে বিদায় করে দিয়েই তিনি আকলিমাকে ডাকলেন। আকলিমা তখনো রান্না ঘরে বসে কি যেন কাটাকুটি করছিল। হাশেমের গলার আ্ওয়াজ পেয়ে সেও আসতে চাইছিল। কিন্ত্তু আসতে পারে নাই। হাতের কাজ শেষ করেই সে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। বোয়াল মাছ দেখে সে চমকে উঠলো। এত বড় বোয়াল মাছ? সে অনেকটা আর্শ্চয্য হয়েই জিগ্যেস করলো?

-তোমাকে না বলেছিলাম পেনশনের টাকা পেলে বড় দেখে একটা বোয়াল মাছ কিনবো? তাই আনলাম।

-তাই বইল্যা এত বড় বোয়াল লাগে? ছোট দেইখ্যা একটা আনলেইতো পারতেন? খামাখা কতোগুলা টাকা নষ্ট।

-আরে রাখ তোমার টাকা। মাছটা ভাল করে রান্না কর।

আকলিমা মাছটা নিয়ে রান্না ঘরের দিকে গেল। বটি দিয়ে মাছটি কাটার আগে বেশ করে কয়েকবার ঘষে নিল। আকলিমা মাছ কাটা আরম্ভ করে দিয়েছে। রহিম সাহেব দাওয়ায় বসে মাছ কাটা দেখতে লাগলেন। মাছের পেটটা কাটতে গিয়ে খেয়াল করলেন উঁচু হওয়া মাছের পেটের ভেতর আরেকটা মাছ। বোয়াল মাছটা বোধকরি এই ছোটমাছটিকে গিলে খেয়েছিল। মাছটিতে তেমন কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করলো না। মাছটিতে পচন ধরেনি। হয়তো ধরা পড়ার আগে এই মাছটিকে গিলে খেয়েছিল। প্রাণটা বোধকরি এখনো ক্ষাণিকটা আছে। মাছটির কানসার দু দিকটা একটু আধটু লাফাচ্ছে। হয়তো কিছুক্ষণ পরেই জানটা চলে যাবে। রহিম সাহেব উত্তর পাড়ার মাওলানা সাহেবের ওয়াজে শুনেছিলেন-ইউনুস নবীরে প্রথমে একটা মাছে খাইল। হেইমাছটারে আরেকটা বড় মাছে গিল্ল্যা খাইলো। আশি হাত পানির নিচে। চল্লিশদিন পর্যন্ত মাছের পেটে। উইথআউট অক্সিজেন। বাতাস নেয়ার কোন ব্যবস্থা নাই। কেমতে আল্লায় ইউনুস নবীরে বাচাইয়া রাখলো? কি মিয়া সাব রা? কথা কন না ক্যা? আল্লাহয় ইচ্ছা করলে কি-না করতে পারে। আল্লায় তাকে একটা দোয়া শিখাইয়া দিল। যেইড়ারে আমরা দোয়া ইউনুস কই - " লাইলাহা ইল্লা আনতা ছুবহান্নাকা ইন্নি কুনতু মিনাজজোয়ালেমিন "। এইডা পাঠ কইর‌্যা ইউনুস নবী বাইচ্চ্যা রইলো। কেমতে? এই দোয়া পাঠ করায় মাছের পেটে জ্বালা যন্ত্রণা আরম্ভ অওয়ায় মাছটা বমি কইর‌্যা দেয়। ইউনুস নবী জিন্দা বাইর অইলো ঐ মাছের পেট থিক্কা। পেট থিক্কা বাইর অইয়্যা কি খাইবো? চাইর দিকে চাইয়া দেহে খালি বালি আর বালি। খাওনের কিছুই নাই। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাইলো-মাবুদগো। তুমিতো আমারে বাচাইছো। এহনতো না খাইয়া জানটারে বাচাইতে পারুম না। কি করুম? আমার আল্লায় রহমানের রাহিম। তিনি কাউরে না খাওয়াইয়্যা রাখেন না। তিনি কি করলেন - দুজন ফেরেস্তা দিয়া লাউ গাছের বিচি পাাড়াইয়া দিয়া কইলেন- এই ফেরেস্তা যা তোরা। আমার দোস্তরে এই লাউয়ের বিচি দিয়া কইবি লাগাইতে। হেই লাউ খাইলেই তার শান্তি আসবো।

রহিম সাহেব মাওলানা সাহেবের ওয়াজ শুনে এ ব্যাপারে বিভিন্ন কোরআনের তফসীর পড়েছেন। কিন্ত্তু কোন সদুত্তোর পাননি।তিনি সুজন শাহ্ কে এব্যাপারে জিগ্যেস করেছিলেন। সুজন শাহ তার বন্ধু মানুষ। তিনি লালন শাহের ভক্ত এবং আশেক। তিনি তার গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। তাকে জিগ্যাসা করায় সে স্মিত হাস্য বদনে বললেন-রহিম ভাই, এ সামান্য ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন না? এটাতো খুব সিম্পল ব্যাপার। বোয়াল মাছটা হচ্ছে রুপক ভাষায় আমাদের বাহিরের দেহটা। আর ছোট মাছটা হচ্ছে - আমাদের হৃদপিন্ড আর ইউনুস নবী রুপকার্থে ইনসানুল কামিল। আর লাউ খাওয়ার অর্থ হচ্ছে স্তন পান করা.... এ কথা বলেই সুজন শাহ হাসতে শুরু করে দিলেন। তার হাসির পরিমাণ আরো বিস্তৃত হলো যখন দেখলেন - রহিম সাহেব থ মেরে বসে রইল।

সেই কবেকার ঘটনা। সেটাই আবার নতুন করে মনে পড়লো আকলিমার মাছ কাটতে দেখে। তিনি একবার মাছের দিকে তাকালেন আরেকবার তাকালেন সত্যিকার লাউয়ের দিকে..কেমন যেন মনের মধ্যে ঢেউ খেলে যাচ্ছে।