পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৫

টু-লেট

 টু-লেট
বাসা ভাড়া দেওয়া হইবে।
৪ রুম। ড্রইং,ডাইনিং, প্রশস্ত বারান্দা, এটার্চবাথসহ।
যোগাযোগ করুনঃ-
রোড নং-৭৮৬ হাউস নং-১৫২
মহাখালী,ঢাকা।
টুলেটের এই বিজ্ঞাপনটি দেখে চোখ আটকে গেল আবীরের। সে পাশের দোকান থেকে জেনে নিতে চাইল ঠিকানাটা কোন দিকে। দোকানদার তার পান খাওয়া লাল ঠোঁট দুটি বাঁকিয়ে বললো- ঐ যে দেকাতছেন বড় রোডটা তার ভিতরে গেলেই দেকবেন একটা পাকা মসজিদ আছে। মসজিদের সামনের গলির পরের গলিটায় গেলেই দেকবেন বড় একটা বিল্ডিং আছে। রব সাবের বাড়ী। ঐহানে যাইয়া জিগাইলেই পাইবেন। ঐ গলিতে যারে জিগাইবেন রব সাবের বাড়ী কোনডা তাইলেই সবাই দেহাই দিব। বিরাট পয়সাওয়ালা মানুষ। দীলওয়ালা। সবাই তারে চিনে।
আবীর মনে মনে ঠিকানাটা মুখস্ত করে নিল। রব সাবের বাড়ী।পাকা মসজিদের সামনে। বড় দিলওয়ালা মানুষ। কাউকে কিছু না বলে আবীর ঠিকানা খুঁজে বের করার জন্য হাঁটতে শুরু করলো। হাঁটতে হাঁটতে সে বড় রাস্তাটা পেরিয়ে পাকা মসজিদটা দেখতে পেল। মসজিদটা দেখেই কেমন যে হা হয়ে গেল আবীর। মসজিদটির মুল ফটকের সামনে বড় করে  লেখা " বায়তুল আতীক" অর্থাৎ প্রাচীন মসজিদ। অথচ মসজিদটিকে তার কাছে কোন মতেই প্রাচীন বলে মনে হচ্ছে না। আধুনিক কারুকাজ করা এ মসজিদটিকে কি কারণে বায়তুল আতীক নাম করা হলো-তার কোন কিছুই আবীরের মাথায় ঢুকছে না। সে মসজিদটি পেরিয়ে সামনের দিকে আসতেই চোখে পড়লো রব সাহেবর বাড়ীটি। পাশে দেখলেন দুটি লোক দাঁড়ানো। আবীর লোক দুটোর সামনে এসে জিগ্যেস করলেন-রব সাহেবের বাড়ী কোন্ দিকে? লোক দুটো অবাক হয়ে জানতে চাইলেন-কোন্ রব সাহেবের কথা বলছেন? আবীরতো হতবাক। কি জবাব দেবে ভেবে পাচ্ছিল না। দোকানদার বলেছিল রব সাহেবকে সবাই এক নামে চেনে। লোকটির কথা মতো তো সব কিছুই ঠিক ছিল। বড় রাস্তা পেয়েছে। মসজিদও পেয়েছে। বলেছিল মসজিদের সামনে গেলেই রব সাহেবের বাড়ী দেখা যায়। দেখতে পাচ্ছে। অথচ লোক দুটোর কথায়তো রীতি মতো সে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে। আবীর মনে করার চেষ্টা করলো-দোকানদার আরো কিছু কি বলেছিল না-কি? হ্যাঁ মনে পড়েছে। বড় দিলওয়ালা মানুষ। সে লোক দুটোকে বললো-যে রব সাহেব দিলওয়ালা মানুষ। আবীরের কথা শুনে লোক দুটোর মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। তারা আবীরকে পখটি চিনিয়ে দিল।
আবীর আস্তে আস্তে সেই রব সাহেবের বাড়ীর দিকে হাঁটা শুরু করলেন।বাড়ীটির সামনে নেইম প্লেটে লেখা " বায়তুল রহমান।" তিনি বাড়ীটিতে প্রবেশ করে কলিংবেল চাপলেন। দেখলেন শান্ত,সৌম স্বভাবের একটি লোক এসে দরজা খুলে দিল। লোকটির চেহারার দিকে তাকিয়ে আবীর অবাক হয়ে রইল। অবিকল তার মতোই দেখতে। তার গায়ের রং শ্যামলা। আর রব সাহেবের গায়ের রং উজ্জল শ্যাম বর্ণ। তাকে দেখেই আবীর হা হয়ে গেল।
মিষ্টি হেসে রব সাহেব বললেন
-বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি?
কথা শুনেই আবীরের ভীমরি খাবার মতো অবস্থা। এম্মনিতেই কেমন যেন সব গুলিয়ে ফেলেছে। তার উপর ভদ্রলোকের কথা শুনে আরো নার্ভাস হয়ে গেল। নিজেকে যতটা পারলো সংযত করে নিয়ে বললো
-জ্বী। আমি বাসা দেখতে আসছি। রাস্তার ওপাশে আপনি টুলেট টাংগিয়ে ছিলেন। সেটা দেখেই আসছি।
-আচ্ছা। ভেতরে আসুন। দরজা থেকে সরে আবীরকে জায়গা করে দিলেন ভিতরে ঢোকার জন্য।
আবীর ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে টের পেল কেমন যেন তার শরীর হিম শীতল একটা অনুভুতি কাজ করছে।মনটা কেমন যেন ঠান্ডার পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে। চোখ আপনা আপনিই বুঁজে যেতে চাইছে।
আবীর ভেতরে ঢুকলো। রব সাহেব তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব কিছু দেখালেন। বাড়ীটা দেখে আবীরের খুবই পছন্দ হলো। কথায় কথায় আবীর রব সাহেবের কাছ থেকে তার ব্যক্তিগত সব কিছু জেনে নিলেন। সে কোথায় কি করে? কিভাবে বাড়ীটি বানালো। রব সাহেবও অবলীলায় সব কিছুই তাকে জানালেন। কথার ফাঁকে আবীর খেয়াল করলো-প্রতিটি কথায় সে শান্ত। কোন উত্তেজনার ভাব নেই। অসম্ভব রকমের সৌম্যভাব বিরাজ করছে। কিন্ত্তু আবীর কিছুতেই তার চোখ খুলে রাখতে পারছে না। বার বার তা বুঁজে যেতে চাইছে। সে গভীর আবেশে চোখ বুঁজে রইল।
-কি ব্যাপার ওমন বেড়ালের মতো বার বার চোখ বুজছো কেন?
শ্বেতার কথায় সে যেন সম্ববিদ ফিরে পেল।
-হ্যাঁ কি যেন বলছিলে?
-বলছিলাম তোমাকে টু-লেট দেখার জন্য। দেখেছো?
-হ্যাঁ দেখেছি। ৪ রুমের ড্রইং,ডাইনিং, কিচেন, এটাচ বাথ, বারান্দা সবই আছে। রব সাহেবের বাসা। বাসার ঠিকানা রোড নং-৭৮৬, হাউস নং-১৫২।মহাখালী, ঢাকা। আবীর গভীর আবেশে চোখ বুঁজে বুঁজে শ্বেতাকে বলতে লাগলো। আবীরের কথা শুনে শ্বেতার বিষ্ময়ের সীমা রইলো না। কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না। সে আবীরকে আবার ধাক্কা দিয়ে সজাগ করার চেষ্টা করছে।
-এ্যাই তুমি কি যেন বললে? রব সাহেবের বাসা...
শ্বেতার ধাক্কা খেয়ে আবীর ধরমড় করে উঠে বসে। কি বলেছিল আর কি দেখেছিল সব ভুলে গেল।
-রব সাহেবের বাসা? আবীরও অবাক হয়?
-এইতো তুমি একটু আগেই না বললে?
-তাই নাকি? ও তুমি বুঝবে না্ তার চেয়ে তুমি আমাকে চা করে দাও। চা-টা খেয়েই বেড়িয়ে পড়ি। আজ মাসের ২৮ তারিখ। বাসাতো একটা খুঁজে পেতে হবেই।
শ্বেতা চা করে আনে আবীরের জন্য। চা খেয়েই বেড়িয়ে পড়ে আবীর টু-লেট খোঁজার জন্য। আর মনে মনে ভাবতে থাকে তদ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় দেখা সেই টু-লেটের রব সাহেবের বাসাটার কথা। বাসার নাম্বার - ১৫২ রোড নাম্বার - ৭৮৬। মহাখালী। ঢাকা। কাউকে জিগ্যেস করতে হবে - এই ঠিকানাটা কেউ চেনে কি-না?