পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৫

বাজার



বাজার কথাটি বললে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে একটি চিত্র। আর সেটি হলো একটি মিলিত স্থান। যেখানে হরেক রকম পণ্য বেচা-কেনা করা হয়। সেখানে বিচিত্র ধরণের মানুষের আনা-গোনা পরিলক্ষিত হয়। কেউ আসে মানুষকে ঠকিয়ে টাকা পয়সা কামানোর জন্য। কেউ বা আসে ঠকার জন্য। ব্যবসা করে টাকা কামানোর জন্য উপার্জন করা প্রতিটি মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। কিন্ত্তু মানুষকে ঠকিয়ে টাকা কামানো ব্যবসার উদ্দেশ্য নয়। ব্যবসার একটা সামাজিক দায়িত্ব হচ্ছে সমাজের প্রতিটি ভোক্তাকে তার চাহিদা মাফিক পণ্য সরবরাহ করা। অনেকেই বলেন ইসলামে ব্যবসাকে হালাল করেছে। কিন্ত্তু কোন্ ব্যবসাকে হালাল বলা হয়েছে? সেটা জানা উচিত নয় কি? আবার এটাওতো বলা হয়েছে তোমরা মাপে অর্থাৎ ওজনে কম দিও না। সেখানে যদি ওজনে কম দেয়া হয় সেটা কিভাবে হালাল হয়? হালালতো তখন হয় যখন আমি কোন একটি জিনিস দরদাম করে কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলাম। বিক্রেতা আমাকে বিক্রিত পণ্য সঠিকভাবে দিয়ে দেবে আর ক্রেতা তার সঠিক দাম দিয়ে দেবে। এটাইতো নিয়ম হওয়া উচিত। কিন্ত্তু এর ব্যত্যয় ঘটলে সেটাকে আর ব্যবসা বলা যায় না। সেটা হয়ে পড়ে বেশ্যা। যেখানে ক্রেতা নিয়মিত বিক্রেতা কর্তৃক ধর্ষিত হচ্ছে
নবীজি বলতেন - বাজার খারাপ। কথাটা অলংকৃত। অর্থাৎ যার একটা গোপন অর্থ আছে। তিনি আরো বলতেন-যার ঘরে কুকুর আছে সে ঘরে রহমতের ফেরেস্তা প্রবেশ করে না। এটাও অলংকৃত কথা। এরও একটা গোপন অর্থ রয়ে গেছে। বাজার বলতে দুনিয়াকে বুঝানো হয়েছে। আদ্দুনিয়া মাজরাতুল উখরা। দুনিয়া হচ্ছে আখিরাতের ক্ষেত্রস্বরুপ। অর্থাৎ দুনিয়াতে আমি যেরুপ কর্ম করবো আখিরাতে আমি সেরুপ ফল পাবো। আখিরাতের কথা চিন্তা করলে এবং হাশরের কথা চিন্তা করলে আমাদের মনের মাঝে ভেসে ওঠে একটি চিত্র। আর সেটি হলো-মসজিদে ইমাম সাহেবরা (?) প্রায়ই বলে থাকেন বিশাল একটি ময়দানে সব মৃতরা জীবিত হয়ে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি বলছে। কেউ কেউ বলে থাকেন প্রকান্ড সূর্যকে একহাত মাথার উপর এনে রাখা হবে। সুর্যের উত্তাপে মগজ গলে গলে পড়বে। পানির পিপাসায় বুকের ছাতি ফেটে যাবে। এটাই যদি সত্য হয় তাহলে কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। আর সেটা হলো-পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৪ কোটি ৯৬ লাখ কিমি. যে সূর্য আমাদের মাথার উপরে আছে সেখান থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে প্রায় / মিনিট। আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল। এত দ্রুতগতির সূর্যের আলো যখন আমাদের উত্তাপ দেয় তখন আমরা গলর্দ ঘর্ম হই। তৃষ্ঞায় আমাদের বুকের ছাতি ফেটে যেতে চায়। সেই সুর্য যখন আমাদের মাথার উপর রাখা হবে তার উত্তাপে তো আমাদের জ্বলে পুড়ে ভষ্ম হয়ে যাবার কথা।  মাথার মগজ গলে গলে পড়বে কখন?
এছাড়া আমাদের মনে এও চিত্র অংকিত হয় - এক অজানা এক অচেনা ব্যক্তি ঈশ্বর একটি আসন পেতে বসে আছে। আর সবাই তার সামনে বিচারের জন্য দাড়িয়ে আছে। বিচারকের ভুমিকায় অবর্তীণ ঈশ্বর কোনরুপে বিচার করবেন সেটা নিয়েও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কারণ একই ঈশ্বর কখনো দয়ালু কখনো কঠিন।বাস্তবতার নিরীক্ষে ঈশ্বর বিভিন্নরুপ পরিগ্রহ করে থাকে। কখনো তাকে পাওয়া যায় দয়ালু (রহিম-রহমান) রুপে। কথনো পাওয়া যায় একজন ওয়াদুদ তথা প্রেমময় হিসেবে। কখনো পাওয়া যায় কঠিন (কাহ্হার) রুপে। ইসলাম ধর্মে ঈশ্বরের নিরানব্বইটি গুণবাচক নাম রয়েছে। বিচারক হিসেবে তার রুপ আল-আদিল (অর্থাৎ সূক্ষ্ম বিচারক) রুপে। আপনার পাওনা আপনাকে পুংখানুপুংখরুপে বুঝিয়ে দেবেন। কিন্ত্তু ঈশ্বর শব্দটির মুল হচ্ছে-ঈশ্ যার অর্থ শক্তি। আর আমরা জানি শক্তির কোন আকার নেই। তাকে কোন একটি রুপের মধ্যে না আনলে তার স্বরুপ বোঝা মুশকিল। আর ইসলামে ঈশ্বরের নরত্ব আরোপবা Anthropomorphism করা নিষেধ। অর্থাৎ অাল্লাহকে আপনি কোন আকারের মধ্যে আনতে পারবেন না। যেমন হিন্দুগণ যখন পুজা করে তখন তারা তাদের দেবতাদেরকে মাটি দিয়ে তৈরী করে নেয়। তাকে একটা আকারে এনে সেটাকে পুজা করে। যেমন দূর্গা বা লক্ষীর কথা বলা হলে তাদের মানস পটে ভেসে ওঠে দেবী দুর্গার চিত্র যার দশটি হাত আছে। দশ হাতে দশটি অস্ত্র আছে। যা দিয়ে সে শত্রুকে বধ করে। কিন্ত্তু আল্লাহ বললে মুসলমানদের মানস পটে কোন চিত্রই ভেসে আসবে না। কারণ আল্লাহ নিরাকার। নিরাকার = নির অর্থ পানি + আকার; যার অর্থ হচ্ছে পানির আকার। অথচ আবু বক্বর (রা.)-এর একটা বিখ্যাত বাণী রয়েছে এই প্রসঙ্গে, যার সারমর্ম হচ্ছে এরকম যে, “তোমার মনে আল্লাহ্ সম্বন্ধে যে ধারণাই আসবে, আল্লাহ্ তার সবকয়টির চেয়ে আলাদা সোজা বাংলায় বলতে গেলে যে কোন মানুষ আল্লাহ্ সম্বন্ধে ভাবতে গিয়ে, আল্লাহকে যা কিছুর মত ভাববেআল্লাহ্ তার কোনটির মতই নন। এছাড়া ইসলামী ধর্মতত্ত্ব পড়াতে গিয়ে স্কলাররা বলেন যে, Deification of Humans (মানুষের দেবত্বারোপণ করা) অথবা Humanization of the Deity (ঈশ্বরের মানবরুপ ধারণ করা) দুটোই হচ্ছে শিরকের মত অমার্জনীয় পাপের দুটো প্রধান উৎস। উদাহরণস্বরূপ শ্রদ্ধা করতে করতে রবীন্দ্রনাথকে কিছু মানুষ এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন যেটাকে অনায়াসে Deification of humans বলা যায়আর তারাও তাই তাকেগুরুদেববলে ডাকতে পারেন নিঃসঙ্কোচে। এখানে দেখা যায় ইসলাম ধর্মতত্ত্ববিদদের মতে-রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব বলে কিছু মানুষ মহা শিরক করে ফেলেছেন। কেননা রবী ঠাকুরকে গুরুদেব বলে - মানুষের প্রতি দেবত্বারোপণ করা হয়েছে। মানুষকে কখনোই দেবতার আসনে বসানো যাবে না বা আল্লাহ বলে স্বীকার করা যাবে না। কিন্ত্তু তাদের যখন বলা হয় - আল্লাহ আদমকে তার নিজ সুরতে সৃষ্টি করেছেন। এবং তার মধ্যে নিজ রুহ ফুকে দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আদমের চেহারাটা যদি আল্লাহর চেহারা বলা হয়, তাহলে কি পাপ হবে? বা শিরক করা হবে? যদি তাই হয় তাহলে তিনি কিভাবে বিচার করবেন? বা কিরুপে বিচার করবেন? তার কাহহার রুপটি কি রুপ? রহমান বা রহিম রুপটি কেমন? বা তিনি কিভাবে বিচার করবেন? আল মিজান দ্বারা কিভাবে পরিমাপ করবেন ? দেখা গেল মিজানটি আছে কিন্ত্তু যে পরিমাপটি করছেন তাকে দেখা যাচ্ছে না। বা অদৃশ্যভাবে বিচার হচ্ছে। বলা বাহুল্য ধর্মের মধ্যে অধর্মের সৃষ্টি করেছেন এই শ্রেণীর অতি চিন্তনীয় ধর্মবিদরা। আরজ আলী মাতুবর সাহের তার গ্রন্থে বেশ কিছু প্রশ্ন ঐসমস্ত ধর্মবিদদের প্রতি রেখে গেছেন। দু:খের সাথে বলতে হচ্ছে-ঐসমস্ত ধর্মবিদরা তার প্রশ্নের সদুত্তোর দিতে পারেননি।
দ্বিতীয়ত: বলা হয়েছে - যে বাড়ীতে কুকুর থাকে সেই বাড়ীতে রহমতের ফেরেস্তা থাকে না। এই কথাটি রুপক। কুকুর নামক এই বোবাজাত প্রাণী কি এমন অন্যায় করেছে যে সে বাড়ীতে থাকলে রহমতের ফেরেস্তা আসবে না? তাছাড়া এই কুকুরের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রভু ভক্তি যে প্রভু ভক্তির জন্য এত খ্যাতি সেই সৃষ্টি কর্তা মহান প্রভুর সৃষ্টি রহমতের ফেরেস্তারা আসতে চান না? কারণটা কি? আসলে কুকুর অতি বলতে বুঝানো হয়েছে হিংসার প্রতীকরুপে। কোন একটি কুকুর আরেকটি কুকুরকে সাথে নিয়ে খেতে পারে না। হিংসার কারণে সে সর্বদাই কোন কারণ বা অকারণে ডেকে বিরক্তির কারণ উৎপাদন করে। অপরিচিত কাউকে দেখলেই সে ডেকে ওঠে। একারণে বাড়ীতে অনেকেই যেতে চাননা। যে বাড়ীতে এই কুকুর স্বভাবের নারী/পুরুষ থাকে - সে সংসার কখনোই সুখের হতে পারে না