পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৫

সারমাদ দারদী আজাব সিকাস্তা কারদি তুনে-পর্ব তিন

(পূর্ব প্রকাশের পর)
সকাল থেকেই ভেবেছিলাম আজকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবো। কিন্ত্তু যেদিন দেখা যায় কাজ বেশি থাকে সেদিনই কোন না কোন ঝামেলা এসে উপস্থিত হয়। আমি দেখেছি বন্ধের দিন সবচেয়ে বেশি কাজ থাকে। সবাই ভাবে কাল শুক্রবার বন্ধের দিন আছে। সারাদিন রেষ্ট নেয়া যাবে। দেখা গেল সেইদিনই ঝামেলাটা বেশি হচ্ছে। মেজাজটা বিগড়ে যাচ্ছে। কি করি? ভাবছি....

-কি রে এমন ভাবুক ভাবে বসে আছিস কেন? মাহিন বললো।

-আরে একটা জরুরী কাজ করবো ভেবেছিলাম। কিন্ত্তু কাজটাই যে কি সেটাই মনে করতে পারছি না।

-এটা কি বললি? কি কাজ করবি সেটাই জানিস না আর বলছিস একটা জরুরী কাজ... তোর কি হয়েছে আমাকে বলতো? শ্বেতার সাথে কোন ঝামেলা করেছিস?

-না। সে রকম কিছু না।

-তাহলে

-দোস্ত আমার কিছুই ভাল লাগে না। মনটা কেমন যেন উদাস হয়ে যায়। ভাবছি সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে কোথাও চলে যাই?

-কি বলছিস আবোল তাবোল? চল তোকে নিয়ে আজকে শাহ সাহেবের কাছে যাব। সেখানে একটা অনুষ্ঠান আছে। অনেক লোকজন আসবে। কাওয়ালী হবে। সেখানে গেলে তোর ভাল লাগবে।

মাহিনের পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত রাজি হলাম। আমরা একটা রিক্সা নিয়ে শাহ সাহেবের খানকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রিক্সায় বসে জিগ্যেস করলো-তোর কি হয়েছে বলতো? তোকে কেমন যেন আনমনা মনে হচ্ছে? সবকিছুতেই কেমন উদাস উদাস মনে হচ্ছে?

-নারে। তেমন কিছু না। ভাবছি।

-কি ভাবছিস?

-ভাবছি শাহ সাহেবের কাছ থেকে আসার পর তার কথাগুলো কেমন যেন আমার মনের মধ্যে গেঁথে গেছে। কিছুতেই তাড়াতে পারছি না। জগৎ সংসারের সবকিছু যেন ফাঁকা মনে হয়। মনে হয় আমি যেন একটা গোলক ধাঁধাঁয় আটকে আছি।

-দোস্ত, তুই আমার সবচেয়ে কাছের এবং প্রিয় মানুষ। বন্ধু হিসেবেও। তোকে একটা কথা বলি-ঐসব ফিলোসোফি ছেড়ে দিয়ে বাস্তব জীবনে ফিরে আয়। শ্বেতাকে বিয়ে করে ঘর সংসার কর। চাকরী বাকরী কর। বউ পোলাপান নিয়ে সংসারী হ। দেখবি জীবন কতো সুখের...বেঁচে থাকার আনন্দটাই আলাদা..

মাহিনের কথা শুনে আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম। একজন শাহ সাহেবের ভক্ত হয়ে এইসব কি কথা বলছে ও। যদি সংসারীই হতে হয় তাহলে শাহ সাহেবের ভক্ত হয়ে ভন্ডামী করার মানে কি? দেখাচ্ছি আমি ভক্ত। ভক্তিতে আমার হৃদয় পরিপূর্ণ। আর তার থেকে আড়াল হলেই আবার সব সাবেক। আগের মতোই। তাছাড়া শাহ সাহেব কি সংসার ধর্ম পালন করেননি? তিনিওতো আমাদের মতো মানুষ। তিনিও বিয়ে থা করেছেন। ছেলে মেয়ে আছে। তাছাড়া নবীজি বলেছেনঃ লা রাহাবানিয়াত ইল্লাল ইসলাম। ইসলামে কোন বৈরাগ্যের স্থান নেই। মাহিন কি শাহ্ সাহেবকে বুঝতে পারেননি? নাকি তার দর্শন থেকে সে শুধু মৌখিকভাবেই শিক্ষা নিচ্ছে। আন্তরিক ভাবে পালন করছে না? যে শাহ্ সাহেবের কথা শুনে আমার মন মস্তিস্কে আলোড়ন তুলেছে সেই শাহ্ সাহেবের ভক্ত হয়ে মাহিন কিরুপ নির্লিপ্ত ভংগীতে বসে আছে। আমি মাহিনকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম

-তাহলে তুই বিয়ে করছিস না কেন? কেন সংসারী হচ্ছিস না?

-আমার কথা আলাদা। আমি তোর মতো না। আমি ভাবি আমার মতো। তুই ভাবিস তোর মতো।

-সেটাই কি স্বাভাবিক না?

-হ্যাঁ সেটাতো স্বাভাবিক। তবে আমি তোর মতো করে সিরিয়াসলি কোন বিষয় নেই না।

-তার মানে তুই শুধু তোর ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই শাহ সাহেবের কাছে যাচ্ছিস? তাই না?

মাহিন আমার এ কথার কোন জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলো। রিক্সার টুং টাং শব্দই কেবল শোনা যেতে লাগলো আর মাঝে মাঝে প্রাইভেট কারের প্যাঁ পোঁ ভ্যাঁ ভোঁ হুস হুস করে চলে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন শব্দ কানে আসছিল না। মাহিন রিক্সাওয়ালাকে বললো

-ভাই ডান দিকে যান। নীরবতা ভেংগে আমি মাহিনকে বললাম

-শোন মাহিন আমি ফিলোসোফিতে পড়ি। আমার সাবজেক্টটাই আমাকে এমন চরিত্র সৃষ্টি করতে সাহায্য করেছে। এই সব অতিইন্দ্রীয় বিষয় নিয়ে আলাপ চারিতা প্রতিদিন করতে হয়। যা দেখা যায় না কিন্ত্তু অনুভব করা যায়। সেই বিষয় নিয়ে পড়া-শোনা করলে এমন্নিতেই একটু একটু পাগলা পাগলা ভাব চলে আসে।

মাহিন আমার কথায় কোন উত্তর দিল না। সে আগের মতোই নির্লিপ্ত। আমি আবার বললাম

-তু্‌ই কি আমার কোন কথায় রাগ করেছিস?

মাহিন আমার কোন কথার উত্তর না দিয়ে রিক্সাওয়ালাকে থামার নির্দেশ দিল। দেখতে দেখতে আমরা শাহ্ সাহেবের খানকার কাছে চলে এলাম। রিক্সাওয়ালাকে বিদায় দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম। গতবারের তুলনায় লোকজনের আনাগোনা অনেক বেশি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অগনিত মানুষের ভীড়। আমরা সেই ভীড় ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলাম। দেখলাম শাহ্ সাহেব তার উঁচু গদিতে বসে আছেন। তার সামনে গায়কের দল তাকে ঘিরে রেখে গান গাইছে। আর সেই গানের সুর শুনে সবাই কেমন যেন লাফালাফি করছে। আমি ভীড় ঠেলে মাহিনের সাথে সাথে গেলাম এবং একটি জায়গায় চুপ করে বসে রইলাম। শুনতে চেষ্টা করলাম কি গজল গাইছে....

আয় মেরে মাওলা তু ছবছে আলা
তুহি হ্যায় আফজাল তুহি হ্যায় আহসান।
অনাদি অনন্ত ছেফাত তোমহারি
তুমহি ছে পয়দা হ্যায় ছারে জাহান।।

আমি গানের অর্থ বোঝার চেষ্টা করলাম। মনে মনে ভাবলাম অনুষ্ঠান শেষ হলে এই গান গাওয়ার মাহাত্ম্য আমাকে জানতে হবে। আগে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করি। তারপর সুযোগ বুঝে শাহ্ সাহেবের সাথে কথা বলা যাবে। দেখলাম গায়কীর দল আরেকটি নতুন গজল গাইছে--

 উদিত শশী কিরণরাশি দুরিবে ভাতি মেঘের কালা
তুমি যেখানে নাহি সেখানে সর্বস্ব তুমি কাহারও ছায়া।।
উঠাও আবরণ দাও দরশন তোমার আমার রবে না চিনন
তুমি আসিলে রবো না আমি তোমারও আমার হবেগো দেখা।।
খন্ঞ্জন গমণ মৃগয়ালোচন ওরুপ রাশি লুকিবে কোথা
প্রেমিকও সুজন এহেনও রতন হারে কি কখন পাইলে দেখা।।

অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে প্রায় দশটা বেজে গেল। সবাই শাহ্ সাহেবের সাথে দেখা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলো। মাহিনও আমাকে নিয়ে ভেতরে যেতে চাইলো। কিন্ত্তু আমার ভাব-ভংগী দেখে বললো

-কি রে যাবি না?

-একটু পরে যাই। শাহ সাহেবের সাথে আমার একটু কথার প্রয়োজন আছে।

-থাক তুই। আমি গেলাম।

-আরে দাঁড়া না। তুই আমাকে নিয়ে এসেছিস। অামি না করিনি। এখন আমি বলছি একটু পরে যাব। আর তুই যেতে চাইছিস?

-ঠিক আছে। তোর কথাই রাখলাম। 

মাহিনের হাসিতেই বলে দিচ্ছে আমার দেরীতে যাওয়ায় সে যেন আনন্দিত।

লোকজন চলে যেতেই আমি মাহিনকে নিয়ে সুফী সাহেবের রুমে ঢুকলাম। তিনি আমাকে দেখে বেশ আনন্দিত ভংগিতেই বললেন

-তুমি আসছো বাবা? আমি খুব খুশি হয়েছি। তা খাওয়া দাওয়া করেছো তো?

-জ্বি।

-তো বল কি খবর তোমার? 

-হুজুর আমি জানতে চাইছিলাম এই যে আপনারা গান বাজনা করেন। সেই গান শুনে লোকজন লাফালাফি করে। এটা কেন?

আমার এ কথা শুনে শাহ সাহেব অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। তিনি বললেন

-একবিংশ শতাব্দিতে কেউ এ প্রশ্ন করে না গান হালাল না হারাম? জায়েজ না না-জায়েজ? বাজারে অসংখ্য লেখকের বই আছে এ বিষয়ে লেখা নিয়ে। সে কিতাব পড়লেইতো হয়। সেটা পড়লেইতো জানা যায়। আর ঐযে বললে না লাফালাফি করে কেন? আচ্ছা ধর তোমাকে নিয়ে যদি একটি নদীতে কিংবা একটি পুকুরে ফেলে দেয়া হয়, তুমি কি করবে? হাত-পা না নাড়িয়ে থাকতে পারবে? তোমাকে হাত-পা নাড়াতে হবে। শুন

ইসকের সাগরে যখন কোন আশেক তার মাশুককে খোঁজার জন্য ঝাঁপ দেয় সে কি হাত-পা না নাড়িয়ে থাকতে পারে? তাকে তো সাঁতার কাঁটার জন্য হাত পা নাড়াতেই হবে। তাই না? গানের সাথে বাদ্য বাজনা থাকায় সেই বাদ্য বাজনার তাল লয় যখন কোন আশেককে আকৃষ্ট করে ঠিক সেই তালের মাঝেই সে যিকিরে ফানা হয়ে যায়। তার হুঁস জ্ঞান বলতে কিছুই থাকে না। সে কি করে কি বলে তার কোন খেয়াল থাকে না। জগতে বিখ্যাত বিখ্যাত অলী-আল্লাহগণ এ ব্যাপারে সবাই একমত এবং চিশতীয়া খান্দানভুক্তদের জন্য এটা ফরযের পর্যায়ভুক্ত। অর্থাৎ সামার মজলিশ থাকতেই হবে। আর সামার মজলিশে এরুপতো তুচ্ছ ঘটনা এরচেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মহত্ত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে।

-আচ্ছা হুজুর আপনার অনুষ্ঠানে যে গজলগুলো গাওয়া হলো তার দু'একটা লাইন যদি একটু ব্যাখ্যা করতেন?

-আমি ভাবছিলাম গতবার যখন এসেছিলে আজকে হয়তো তারচেয়েও আরো গভীরে আলোচনা করবো? কিন্ত্তু তোমার আজকের আলোচনাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে হ্যাঁ যে গজলগুলো গাওয়া হলো তার তাৎপর্য অনেক গভীরে। যেমন প্রথম গজলটার কথায় আসি।

আয় মেরে মাওলা তু ছবছে আলা
তুহি হ্যায় আফজাল তুহি হ্যায় আহসান।
অনাদি অনন্ত ছেফাত তোমহারি
তুমহিছে পয়দা হ্যায় ছারে জাহান।

হে আমার মাওলা। তুমি সবচেয়ে উপরে। অর্থাৎ তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ। মাওলা অর্থ প্রভু। প্র-প্রকৃষ্টরুপ ভু-ভুত অর্থাৎ দৃষ্টিগোচর হওয়া। প্রভু= প্রকৃষ্টরুপে দৃষ্টিগোচর হওয়া। মাওলাকে দেখে তার প্রশংসা কীর্তণ করা। না দেখলে কি তার প্রশংসা করা যায়? আফজাল-ফজল অর্থাৎ মংগলময়। কল্যাণময়ী। আহসান-হাসান অর্থাৎ সুন্দর। আলা অর্থ প্রতিষ্ঠিত (The Higher Stage)। অনাদি ন আদি অর্থাৎ যার কোন শুরু নেই। অনন্ত ন অন্ত অর্থাৎ যার কোন শেষ নেই। ছেফাত অর্থ গুণাবলী। তাহলে গজলটির অর্থ দাঁড়ায় 

হে আমার প্রভু তুমিই সর্বশ্রেষ্ঠ
তুমিই কল্যাণময়ী তুমিই সুন্দর
যার কোন আরম্ভ নেই শেষ নেই সর্বক্ষেত্রেই তোমারই প্রশংসা 
তুমিই পয়দা (সৃষ্টি করা) করেছো ছারে(সাড়া) জাহান (দুনিয়া)।

এই গজলে রবের দর্শন করার পর তার প্রশংসা কীর্তন করা হয়েছে। সুরা ফাতেহার সুফী দর্শনের আলোকে বর্ণিত হয়েছে।

দ্বিতীয় গজলটির ব্যাখ্যাঃ

 উদিত শশী কিরণরাশি দুরিবে ভাতি মেঘের কালা
উদিত শশী অর্থ হচ্ছে চন্দ্রের উদয় হওয়া। চন্দ্র উদয় হলে সেখানে কোন রুপ কালো আবর্জনা তথা বস্তুমোহ লোভ, লালসা,হিংসা মোহ অর্থাৎ ষড় রিপুর কোনরুপ প্রবন্ঞ্চনা থাকবে না। সবকিছু দুর হয়ে যাবে। অন্ধকার কেটে যাবে।
মানব দেহের শত্রু হচ্ছে এই বস্তুমোহ যা সাধককে প্রলুব্ধ করে রাখে। তাই যেখানে পূর্ণ চন্দ্র উদয় হয় সেখানেই একটি চন্দ্র বিন্দু দেয়া হয়। অর্থাৎ বিন্দুকে তিনি জানতে পেরেছেন বা ছেদ করতে পেরেছেন।

তুমি যেখানে নাহি সেখানে সর্বস্ব তুমি কাহারও ছায়া।।
তুমি যেখানে বলতে রবকে বুঝানো হচ্ছে। নাহি সেখানে অর্থাৎ সেখানে কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই। সর্বস্ব তুমি কাহারও ছায়া। সর্বস্ব সর্বস্বত্ত্বা তুমি হে রব তুমি কাহারও ছায়া। অর্থাৎ যেখানে আলো থাকে সেই আলো যখন কারো উপর পতিত হয় তখন মুল বস্তুটির ছায়া প্রতিবিম্বিত হয়। অর্থাৎ মুল বস্তুটি থাকে আড়ালে তাহার ছায়া পতিত হয়। নাফাক্কতু ফি মির রুহি বলে যে রুহ ফুকেঁ দেয়া হলো মুলতঃ তাহা মুল বস্তুটির ছায়া।

উঠাও আবরণ দাও দরশন তোমার আমার রবে না চিনন
উঠাও আবরণ দাও দরশন অর্থাৎ যে পর্দা তোমাকে ঘিরে রেখেছে সেই মুল বিষয়টি তাঁকেই উদ্দেশ্য করে বলা। যে পর্দা তোমাতে আমাতে দুরত্ব সৃষ্টি করে রেখেছে সেটা তুলে দাও। সেটা তুলে দিলে কি হবে? তোমার আমার রবে না চিনন। অর্থাৎ যথন তুমি পর্দা হটিয়ে দেবে তখন তোমার আমার কোন পার্থক্য থাকবে না। আমি-তুমি একাকার হয়ে যাব।
এ প্রসংগে একটি কথা বলতে চাই। সেটা হলো মহর্ষি মনমোহন বলেছিলেন - অামি তুমি থেকে আ এবং তু শব্দটি বাদ দিয়ে মিমি করে মায়ের পদতলে পড়ে থাক। মা এসে ঠিকই কোলে তুলে নিবেন। তার মানে কি? তার মানে হলো - ব্যবধান দুর করে দেয়া।
বাবা তুমি বিরক্ত হচ্ছো নাতো? আমার দিকে তাকিয়ে শাহ সাহেব বললেন

- না না বিরক্ত হচ্ছি না। বরং শুনতে ভালো লাগছে। আপনি বলুনঃ

শাহ সাহেব আবার বলা শুরু করলেনঃ 

তুমি আসিলে রবো না আমি তোমারও আমার হবেগো দেখা।।
যখন তুমি আসবে তখন তোমাকে আমি দেখতে পাবো। তোমার আমার দেখা হবে। অর্থাৎ মিলন হবে। তার অর্থ আমি তোমাতে ফানা হয়ে যাব। ওয়াছেল হবে। কে তুমি কে আমি কোন পার্থক্য থাকবে না। সেই আকুতি নিয়েই আসলে মিলানাকাংখা নিয়ে বর্ণিত হয়েছে।

খন্ঞ্জন গমণ মৃগয়ালোচন ওরুপ রাশি লুকিবে কোথা
খন্ঞ্জন গমণ মৃগয়ালোচন অর্থ হচ্ছে খন্ঞ্জন মানে তলোয়ার বা ছোড়া গমন অর্থ যাওয়া মৃগ+লোচন মৃগ অর্থ হরিণ  আর লোচন অর্থ চোখ। যার অর্থ দাঁড়ায় - ছোড়া বা তলোয়ার যদিও যায় ঐ হরিণীচোখের রুপ তুমি কোথা লুকাবে। মানে তোমাকে তো আমি দেখেছি। তোমার ঐ হরিণী চোখের রুপ তোমার অবয়ব তুমি কোথায় লুকিয়ে রাখবে? তার মানে কি?  যে রবের ছায়া তথা রুহকে ফুঁকে দিয়েছিলো সেই ছায়ার মুল তথা প্রভুর রুপ আমি দর্শন করেছি।

প্রেমিকও সুজন এহেনও রতন হারে কি কখন পাইলে দেখা।।
প্রেমিকও সুজন। সু মানে সুন্দর জন। এহেনও রতন অর্থাৎ সেই প্রভুর রুপ হারে কি কখন অর্থ কখনো কি হারাতে পারে? পাইলে দেখা। দেখা যদি হয়েই যায় সেই প্রভুর রুপ কি কখনো হারাতে পারে? যে প্রেমিক সুজন হয়?

তো বাবা এই হলো গজলের সরল অর্থ। বুঝতে পারছো কিছু?

-কিছু কিছু পারছি। পুরোপুরি না। তবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করছি।

-তোমার জানার আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। আজকাল তো অধিকাংশই আসে কেবল তাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা সমস্যা নিয়ে। কেউ কোন কিছু জানার আগ্রহ নিয়ে আসে না। তাদের আসা-যাওয়াই সার। যাক আজ অনেক রাত হয়ে গেছে। বাড়ীতে চলে যাও।

আমি শাহ সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাহিরে বের হয়ে এলাম। আর আসতেই মাহিন আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো

-দোস্ত তোর কল্যাণেই আজকে আমি এই গজলের অর্থ বুঝতে পারলাম। দোস্ত তুই না...

-আরে বেটা ছাড়। দম আটকে মরে যাব তো? 

আমাদের পাগলামি দেখে আসে পাশের মানুষের কৌতুহল দৃষ্টি একসাথে নিবদ্ধ হলো। সবাই আমাদের দেখছে। অনেকে হাসছে। আর অনেকেই দেখলাম তাকিয়ে আছে। আর আমি মনে মনে ভাবলাম -আচ্ছা শাহ সাহেবকে তো জিগ্যাসা করা হয়নি গজলগুলো কে লিখেছে.....