পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৫

সারমাদ দারদী আজাব সিকাস্তা কারদি তুনে-পর্ব এক

সারমাদ দারদী আজাব সিকাস্তা কারদী
ঈমা বা ফেদায়ে চাশমে মাস্তে কারদী
উমরে কে বায়াতো আহাদিস গুজাস্তে
রাফতি নেসারে বুত পারাশতে কারদী।
অর্থঃ কোন্ প্রচন্ড হৃদয়ের বেদনায় কি অদ্ভুত রুপ আমার সর্ব-অঙ্গে ধারণ করেছো, কেবল তুমি। আমার সবকিছু এমনকি বুদ্ধিজ্ঞান আর প্রখরতার প্রতিভাগুলো একদম অকোজো করে দিলো কেবলই তোমার তন্দ্রায় আচ্ছন্ন চোখ দুটি। অনন্ত অনাদিকালের গোলাম হয়ে কাটিয়ে দেওয়ার দয়া হতে তুমি আমাকে বন্ঞ্চিত করো না। কারণ, সবকিছু স্বেচ্ছায় হারিয়ে তুমি আমাকে তো কেবলই পীর পুজারক বানিয়ে দিলে। 
বুজলেন বাবা হযরত খাজা আমীর খসরু (রহঃ) তার মুর্শিদের শানে এই কথাগুলি বলেছিল। হযরত খাজা আমীর খসরু (রহঃ) ছিলেন হযরত খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রহঃ)-এর প্রধান খলিফা। কথাগুলো বলে সুফী সাহেব একটু দম নিলেন। তিনি আবার বলা শুরু করলেনঃ- আল্লাহ পাক সুরা ইউনুসের ৬২ নং আয়াতে বলেছেন - " আলা ইন্না অলিল্লাহে লা খাওফুন আলাইহিম ওয়ালা জানুন।" অর্থঃ-"সাবধান, আমার বন্ধুদের না কোনো ভয় আশংকা না কোনো চিন্তা আছে।" ওয়া আতিউল্লাহা ওয়া আতিউর রাসুল ওয়া উলিল আমরি মিনকুম। "তোমরা আল্লাহর অনুসরণ কর, রসুলের অনুসরণ কর এবং তাদের প্রতিনিধিদের অনুসরণ কর।" সুরা নেসা আয়াত - ৫৯। তো বাবা, আল্লাহ যেখানে নিজেই অলী আল্লাহদের অনুসরণ করার কথা বলছেন তো সেখানে আমরা কেন অলীদের অনুসরণ করবো না?

দেখলাম সবাই অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে সুফী সাহেবের কথা শুনছে। আমি এককোণে চুপ করে বসে রইলাম। আমাকে সুফী সাহেবের কাছে নিয়ে আসছে মাহিন। মাহিন সুফী সাহেবের একজন ভক্ত। আমি বুঝি না কেন সবাই এই সুফী সাহেবের কাছে আসে? তাকে দেখে আহামরি কিছুই মনে হয়নি আমার। শুকনো স্বাস্থ্য। মাথার সমস্ত চুলগুলো পাকা। ধবধবে সাদা ফতুয়া গায়ে। চেহারাটা বেশ। লম্বাটে কপালের অগ্রভাগটা বেশ উজ্জ্বল। নাকটা বাঁশির মতো লম্বা। বেশ পরিস্কার গায়ের রং। ঠিক মতো তার চেহারার দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। চোখের চাহনি বেশ তীক্ষ্ম। আমি দেখলাম সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সুফী সাহেবের কথা শুনছে। আমি আস্তে আস্তে করে মাহিনকে ডাকলাম

-মাহিন। এ্যাই মাহিন....

আমার ডাকে মাহিন সাড়া দিল না। তাকে আবার খোঁচা দিতেই সে আমার দিকে বিষের দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। ভাবটা এমন যেন সে আমাকে জ্বালিয়ে দেবে তার জালালী দৃষ্টি দিয়ে। ভাগ্যিস তাকে সেই ক্ষমতা বিধাতা দেয়নি। দিলে হয়তো আমি এতোক্ষনে পুড়ে ছাই হয়ে যেতাম। আমি আর অপেক্ষা করতে পারলাম না। আমি ওকে রেখেই বাহিরে আসলাম

বাহিরে আসতেই দেখলাম পরিবেশটা যেন নতুন করে সেজেছে। চারদিকে কেমন যেন একটা হাল্কা বাতাস সাড়া গায়ে পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে।  উত্তুরে বাতাস বিদায় নিতে শুরু করেছে। আমি একটি সিগারেট বের করে ধরালাম। ধুয়া ছাড়তেই দেখলাম একরাশ ধুয়া কেমন করে যেন বাতাসে মিলিয়ে গেল। আমার মনে একটা চিন্তা পেয়ে বসলো - এই যে ধুয়াটা আমি দেখছি সেটা এখন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। পরক্ষণেই আবার তা মিলিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমরা যাকে আত্মা বলি তার মৃত্যুর পর তার রুহটা কি এভাবেই হারিয়ে যায়? যে আত্মার সম্মিলনে মানবদেহ তার পরিচালক হিসেবে যে রুহ রয়েছে সেটা তাহলে কোথায় কিভাবে পালিয়ে যায়? যে দেহটা পড়ে থাকে তাকে আমরা বলি লাশ। অথচ কিছুক্ষণ পূর্বেই তো সে বেঁচে ছিল। তাহলে তার দেহটা পড়ে রইল কিন্ত্তু কোন বস্তুটা বের হয়ে গেলে তাকে আমরা মৃত বলি? সেটা কি চেতনা? না-কি অন্য কিছু?

- কি রে ব্যাটা? কি ভাবছিস?

মাহিনের ডাকে আমার চিন্তায় ছেদ পড়ে। অামি মাহিনের দিকে তাকিয়ে বললাম

-এই মাহিন, তোর শাহ সাহেবের সাথে আমি কিছু কথা বলতে চাই। তুই কি আমাকে একটু সময় বের করে দিতে পারবি?

-কি হলো তোর? হটাৎ সুফী সাহেবের সাথে দেখা করতে চাচ্ছিস?

-না। তেমন কিছু না। তাকে কিছু প্রশ্ন করবো?

- তা বেশতো করবি। কিন্ত্তু আগে আমাকে একটা সিগারেট দে। অনেকক্ষণ ধরে সিগারেট খাই না

আমি মাহিনের দিকে সিগারেটের প্যাকেটটা দিলাম। মাহিন সেখান থেকে একটা সিগারেট বের করে বেশ কায়দা করে ধরালো। আমি মাহিনের সিগারেট ধরাটা দেখলাম। সিগারেটটা ঠোটের মাঝে রেখে ম্যাচ বের করে একটা কাঠি বার করে সেটাকে বেশ জোরে ঘসা দিতেই আগুন বার হলো। সেই আগুনে সে সিগারেটটা ধরালো। তারপর ধুয়া বের করে দিল। আমি সেই ধুয়াটা দেখলাম-সেটা একটা কুন্ডলি তৈরী করে আস্তে আস্তে বাতাসে মিলিয়ে গেল। মাহিন বললো

- কিরে কি দেখছিস?

-দেখছি তোর সিগারেট ধরাটা। কেমন করে ধরাস?

-শালা! এর আগে কি তুই আমাকে সিগারেট ধরাতে দেখিস নি?

-দেখেছি। কিন্ত্তু আজকে আবার নতুন করে দেখলাম

- কি দেখলি?

-দেখলাম ধুয়াটা কেমন করে হারিয়ে যায়?

-আরে ব্যাটা, ধুয়াটাতো বাতাস। সেই বাতাসটা বাতাসে মিলিয়ে গেল আর কি? এটা দেখার কি আছে?

-দেখারতো অনেক কিছুই আছে। শিক্ষারও আছে অনেক কিছু

-শালা। সিগারেটের গায়ে লেখা বড় করে লেখা আছে - " ধুমপানের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয় " সেটা থেকে কি এমন শিখার আছে?

-আছে বলেইতো বলছি। এই যে দেখ্ যে ধুয়াটা তুই বের করে দিলি তা কেমন করে বাতাসে মিলিয়ে গেল। তুই আর ধুয়াটা দেখতে পাবি না। যেটা একটু আগে তোর কাছে দৃষ্টির সীমার মধ্যে ছিল তা কিছুক্ষণের মধ্যেই তোর সামনেই হারিয়ে গেল। অথচ তার অস্তিত্ব এই বাতাসেই ছিল এবং আছে

- কি তুই আবোল তাবোল বলছিস?

-যে ধুয়াটা তুই দেখছিস সেটা হলো রুহ। আর সিগারেটটা হলো আত্মা। সিগারেটের অস্তিত্ব আছে। সেটা ধরানোয় সেটার আত্মা পুড়ে শেষ হবার পুর্বেই ধুয়াটা রুহটা কেমন করে হারিয়ে গেল। আমি সেটাই এতক্ষণ ধরে ভাবছি

-থুর ব্যাটা। তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তোরে যদি সুফি সাহেবের সাথে দেখা করতে দেই তাহলে তুই সুফী সাহেবের মাথাটাও খারাপ করে দিবি

-নারে। তার মাথা খারাপ হবার নয়। আমার মাথাটা ঠিক করার জন্যই আমার জ্ঞানের কথা তার সাথে শেয়ার করতে আসলাম

-তাই। তুই একটু অপেক্ষা কর। আমি সুফী সাহেবের সাথে তোকে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি

-ঠিক আছে। আমি বাইরে অপেক্ষা করছি। তুই আমাকে দেখা করার ব্যবস্থা করে দে
(চলবে.....)