পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৫

একটি প্রশ্ন



লাখে লাখে মারা গেল কাতারে কাতার
শুমার করিয়া দেখ কয়েক হাজার।
ছোট বেলার কথা। উঠানে হারিকেনের আলোয় পুঁথি পাঠের আসরের কথা অনেকেরই মনে থাকার কথা নয়।বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের কথা তো প্রথমেই বাদ দিতে হয়। সেই প্রাণোচ্ছল উদ্দীপনা নিয়ে গা দুলিয়ে দুলিয়ে দাদু-নানু কিংবা মুরব্বী স্থানীয় কেউ যখন সুর ছন্দে পুঁথি পাঠ করতো তখন অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে গা ভাসাতো। বিশেষ করে কারবালার পুঁথি পাঠ করলেতো কথাই নেই
পুঁথি পাঠের ছন্দে মিল রাখার জন্য বেশ কিছু উদ্ভট পদ মিলানো হয়। যেমন :
ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাটিতে লাগিল
কিছুদূর যাইয়া মর্দ অগ্রসর হইলো
এখানে প্রশ্ন হলো ঘোড়ায় চড়লে মর্দ (মর্দ মানে বীর পুরুষ বা সুপুরুষ ব্যক্তি) কিভাবে হাঁটে ? কিংবা কিছুদূর গেলে মর্দ অগ্রসর হইল কিভাবে হলো, তা বোধগম্য নয়। কিন্ত্তু ছন্দের খাতিরেই হোক আর অজ্ঞতার কারণেই হোক দাদু কিংবা নানুরা কিংবা মুরব্বী স্থানীয়রা এধরণের প্রশ্নে বিরক্ত প্রকাশ করতেন। কিংবা যারা প্রশ্ন করতেন তাদের চলে যেতে হতো। অথবা বের করে দেয়া হতো
প্রসংগটা টানছি একারণে যে বর্তমান বাজারে যে কোরআনের তফসীর পাওয়া যায় তা পুঁথি পাঠের মতোই। কেউ যদি সুফীবাদে বিশ্বাসী হন তিনি যদি কোরআন তফসীর দেখেন তিনি সেটাকে সোনাভানের পুঁথি বলে ছুঁড়ে ফেলে দেবেন। বিপরীতক্রমে কেউ যদি সুফীবাদ বিশ্বাস না করেন তিনি যদি তফসীর দেখেন তাহলে তিনি কি করবেন আর কি বলবেন সেটা তিনিই ভালো জানেন। প্রশ্নটা হলো যারা জ্ঞান অর্জনের জন্য কোরআনের তফসীর পড়তে চায়, তারা কার লেখা তফসীর পড়বেন ? যেমন কেউ যদি সুফী সদরউদ্দিন আহমদ চিশতী সাহেবের রচিত কোরআনের তফসীর পড়েন আর অন্য কেউ যদি ডা: জাহান্গীর বা ঈমান আল সুরেশ্বরের কোরআনের তফসীর পড়েন এবং কেউ যদি মাওলানা মহিউদ্দিন খান অনুদিত মারেফুল কোরআন পড়েন এবং তারা যদি একসাথে বসে কোন একটি সুরার যেমনঃ- সুরা বাকারার প্রথম আয়াত আলিফ-লাম-মিম। জালিকাল কিতাবু লা রাইবা ফি হুদাল্লিল মুত্তাকীন। এই আয়াতের তফসীর করেন এবং আলোচনায় বসেন তাহলে কেউ টিকে খাকতে পারবেন কি? দেখা যাবে প্রথমেই দৌড় দেবেন যিনি মা'আরেফুল কোরআনের তফসীর পড়েছেন। বাকী থাকবেন দু'জন। একজন যিনি সুফী সদর উদ্দিন চিশতী সাহেবের কোরআনের তফসীর পড়েছেন আর দ্বিতীয় জন হলেন যিনি ডাঃ জাহান্গীর সাহেবের কোরআনের তফসীর পড়েছেন। এরপর যা হবে এরা পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হবেন। কে হবেন সেই সৌাভাগ্যবান যিনি বিজয় মুকুট পড়বেন?
প্রশ্নটা হলো যে কোরআনের তফসীর নিয়ে এতো তর্ক-বিতর্ক সেটাই প্রকৃত কোরআন কি-না ? আমরা জানি হযরত উসমানকে জামিউল কুরআন বলা হয়। কেননা তিনি সর্বপ্রথম কুরআন সংকলন করেন। অথচ আর্শ্চয্যের বিষয় হচ্ছে -

খলিফা হযরত ওসমান গণী (রাঃ) এর সংকলিত কোরআন দেখে মওলা আলী (আঃ) বললেনঃ ’’হাযা কুরআনুস সামিত ওয়া আনা কুরআনুন নাতিক’’।যার অর্থ উহা মুক কুরআননির্জীব কুরআন (কোরআনুন মোতলেক) আর আমি হচ্ছি কথা বলা কুরআন-সজীব জীবন্ত কোরআন (কুরআনুন নাতেক) লেখা কুরআনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবে মানুষ-কুরআনের  উল্লেখ রাসূল (সাঃ) কেন করেছেন-তা ভাববার লোক কোথায় ?
মাওলা আলী (আঃ) বলেছেনঃ ’’সুলূনী সুলূনী কাবলা আন তাবকুদুনি ’’। অর্থঃ আমি তোমাদের মুকাবিলায় থাকতে থাকতে যা জিজ্ঞাসা আছে প্রশ্ন করে জেনে নাও। অবশ্য জমীন হতে আসমানের বিষয়ে আমি অধিক বলতে পারব
এক রাতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস মওলা আলী (আঃ) এর কাছে কুরআনের তাফসীর শুনতে আসেন। সে সময় ছোট সূরা আল ফাতিহার তাফসীর করতেই রাত ফজর হয়ে গেল দেখে আব্বাস বললেনঃএক সূরা ফাতিহার তাফসীর করতেই রাত ফজর হয়ে গেল বাকি কিতাব তো পড়ে রইল হযরত আলী (আঃ) বললেনঃ কুরআনের মূল এই সূরা ফাতিহা আর সূরা ফাতিহার মূল বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের মূল হচ্ছে- বিসমিল্লাহ আর বিসমিল্লাহর মূল হচ্ছেঃবেহরফটিবে-হরফের মূল হচ্ছে এর নীচের নুক্তাটি আর এই নুক্তাটি কে তা জানো ? ইবনে আব্বাস বললেনঃনা তখন মওলা আলী (আঃ) বললেনঃআনা নুক্তাতু তাহতালাবা অর্থঃ আমিইবে-নীচেকার এই নুক্তা
সদর উদ্দীন চিশতী তার কোরআন দর্শনের তাফসীরে আলিফ,লাম,মিম এই তিন হরফের ব্যক্ষ্যা যে ভাবে করেছেন তা উল্লেখ করছি আলিফ,লাম,মিম আলে মিম   ইহার অর্থ মোহাম্মদের বংশধর তিন অক্ষরের এই সংক্ষেপ দ্বারা দুইটি কথা বুঝায় আলিফ লাম দ্বারা হয়আলঅর্থাৎ বংশধর আর মিম দ্বারা বুঝায় মোহাম্মদ এই দুইটি মিলাইয়া হয় মোহাম্মদের বংশধর। এই দুয়ের উপরে অসীম মদ স্থাপন করিয়া বুঝান হইতেছে - মোহাম্মদ যেমন অসীম কাল ব্যাপ্ত। তেমনি তাঁহার বংশধরও অসীম কাল ব্যাপ্ত। কোরনূল হাকিম অনুযায়ী নবীরআল বলিতে নূরের বংশধর বুঝায় তাঁহার পূর্ব-পরবর্তী নবী-রাসূলগণ এবং পরবর্তী মহা পূরুষগণ সকলেই তাঁহারআল
মিমের উপর তাসদীদ রহিয়াছে ইহা দ্বারাআলএবং মোহাম্মদ অবিচ্ছেদ্য বুঝায়। মোহাম্মদ আলাইহে সালাতু আসসালাম তাঁহারআলসহকারে সৃষ্টির মধ্যে জাহের এবং বাতেনে চিরন্তন হইয়া বিরাজমান রহিয়াছেন। কোরনূল হাকিমে মোহাম্মদের আল অর্থ তাঁহার নূরের বংশধর। আদিতে মোহাম্মদ এবং অন্তে মোহাম্মদ মধ্যে মোহাম্মদ তাঁহাদের সবাই মোহাম্মদ। সৃষ্টির আদি অন্তে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে সর্বত্র তাঁহারাই কর্ত্যাব্যক্তি। মিমের উপর তাসদীদ রহিয়াছে ফলত ইহার উচ্চারণ মিম দ্বিগুণ হইতেছে অর্থাৎ মোহাম্মদই মোহাম্মদ তাঁহারা সবাই মোহাম্মদ কোরআনে ছয়টি সূরার প্রারম্ভে এই সংকেত স্থাপন করা হয়েছে ।।।।।।
সুত্রঃ শানে পাক পাঞ্জাতন রেজা মাহবুব চিশতী কোরান দর্শন ,সদর উদ্দিন চিশতী