পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ২৫

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

যেমনঃ পরশুরামের কথাই ধরা যাক । পরশুরাম দশ অবতারের এক অবতার । অবতার বলতে আমরা বুঝি - দেহ ধারন করে জগতে ঈশ্বরের আবির্ভাব । জৈবিক দেহ ধারণ করলেও প্রাণীকূলের কাছে তিনি নমস্য । এই নমস্য হবার জন্য এমন কতগুলি গুণ তাঁর মধ্যে প্রকটিত হয়, যেগুলি শ্রদ্ধাযোগ্য । যেমনঃ পিতা মাতাকে শ্রদ্ধা, সত্য ভাষণ, অহিংসা মনোভাব, জীবে প্রেম ইত্যাদি । কিন্তু পরশুরামের কাহিনী যদি বিচার করি, তাহলে তাঁর মধ্যে এমন কোন শ্রদ্ধা করার মত গুণই নেই । তিনি মাতৃ হত্যা করেছিলেন। হিংসার বশবর্তী হয়ে একুশবার পৃথিবীকে নিঃক্ষত্রীয় করেছিলেন । 

একটা মানুষ যে গুণে দৈব সত্ত্বা প্রাপ্ত হয়, সে গুণও তাঁর ছিল না। যেমনঃ বশিষ্ট । বশিষ্ট ঠিক পরশুরামের বিপরীত মেরুর মানুষ । শত পুত্র নিহত হলেও তিনি বিশ্ব মিত্রের প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করেননি । এইজন্য তিনি ব্রাক্ষণ শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ আত্মবশ । বশিষ্ট শব্দের অর্থ হল আত্মবশ। সেই বশিষ্টের উদাহরণের পাশে হিংসায় উন্মুক্ত পরশুরাম কি করে অবতার অর্থাৎ ঈশ্বরের গুণাবলী নিয়ে অবতার হিসাবে চিহ্নিত হতে পারেন ? 

আসলে এই গল্পটির একটি রূপকার্থ আছে । রূপকার্থ এইরকম --------- মাতা মানে 'Energy জগত' । শুণ্যতার বুকে সুপ্ত এই Energy বা শক্তি স্বভাব গুণে ফুটে উঠে গোলাকার জগতের রূপ নেয়। এই জগতকে হনন করে অর্থাৎ জয় করে অর্থাৎ নিষ্ক্রিয়য় করে সেই শূন্যতে যিনি ধ্যান মার্গে ফিরে যেতে পারেন, তিনিই ঈশ্বররূপে গ্রাহ্য হন । পরশুরাম এই জগতকে জয় করেন নির্গুণ শুণ্যতায় তিনি স্থিত হতে পারতেন । সুতরাং তিনি ছিলেন ঈশ্বরতূল্য। জগত অর্থাৎ শক্তিজয়ী হিসাবে তিনি মাতৃঘাতী । কারণ শক্তিকে স্ত্রীলিঙ্গ বা মাতারূপে কল্পনা করা হয় ।

ক্ষত্রিয় হলেন তিনি যার মধ্য সত্বঃ রজঃ ও তম গুণের মধ্য রজঃ ও তম গুণের প্রাধান্য বেশি থাকে । কোন সাধক একুশ দিন সমাধিস্থ থাকলে এই রজঃ ও তম গুণের সম্পূর্ণ নাশ হয় । তখন তিনি ঈশ্বরের নির্ভেজাল সত্বঃ গুণের অধিকারী হন । পরশুরাম একুশ দিন সমাধিস্থ থেকে জড় দুই গুণ অর্থাৎ রজঃ ও তম কে জয় করতে পেরেছিলেন বলেই একুশবার ক্ষত্রিয় নিধনকারী রূপে বর্ণিত হয়েছেন । তিনি কুঠারধারী। এ কুঠার নরহত্যার প্রয়োজনে ব্যবহৃত কুঠার নয়। এ হলো জ্ঞান কুঠার । যার দ্বারা অজ্ঞানরূপ অন্ধকারকে ছেদন করে সত্যের সন্ধান পাওয়া যায় । সেইজন্য অদ্যবধি শৈব সাধকরা কুঠার প্রতীক ধারণ করে থাকেন । গল্পের এই রূপকার্থ খুঁজে পেলে পরশুরামের অবতার তত্ত্বের যুক্তিযুক্তকতা প্রমাণিত হয় । কিন্তু এই রূপকার্থ ধরা না গেলে তা কুসংস্কার ও অজ্ঞানতার তূল্য হয় । 

চলবে...