(পূর্ব প্রকাশের পর)
তোমাকে
বলিয়াছিলাম - ইবাদতের জন্য প্রয়োজন হইতেছে
প্রেম। প্রেম ব্যতীত ইবাদত
শুস্ক। তোমাকে আজকে বলিব
কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা। যা তুমি
পূর্বে শোন নাই। যদিও
শুনিয়া থাকো তাহা হইলেও
উহা উপলব্দি করো নাই। কোরআন
নাযিল হইয়াছে কেবল আমানুদের
জন্য। জগতে যত আমানু
আছে তাহাদের দিক-নির্দশন হিসাবে
কোরআন আসিয়াছে। কেননা কোরআনের ভাষ্য
মতে-বলা হইয়াছেঃ "ইয়া
আইয়্যুহাল লাজিনা আমানু "।
কোথাও বলা হয় নাই
" ইয়া আইয়্যুহাল লাজিনা মোসলিমু"।
কেন বলা হয় নাই
তাহা তোমাকে উপলব্দি করিতে
হইবে। ইনসান উন্স হইতে
আসিয়াছে। উন্স অর্থ প্রেম।
ইনসান পর্যায় হইতেছে আমানু
পর্যায়ে আসার প্রথম ধাপ।
কোন একজন নবীর প্রচারিত
নীতিকে স্বীকার করিয়া তাহার নিকট
অথবা তাহার নীতির অনুসারী
প্রতিনিধির নিকট আত্মসমর্পণ (বায়াত গ্রহণ) করিলে
তাহাকে বলা হয় মুসলিম
অর্থাৎ আত্মসমর্পণকারী। ইহার পর মোমিন
হওয়ার জন্য ঈমানের কাজ
করিতে থাকিলে তাহাকে বলা
হয় আমানু। কোরানের সকল
নির্দেশ আমানুগণকেই দেওয়া হইয়াছে। যেহেতু
ইহারা ঈমান লাভের জন্য
সকল প্রকার (মানসিক ও দৈহিক)
সৎ কাজে ব্যস্ত আছে।
ঈমান অর্জনের পথে পূর্ণ সফলতা
যখন অর্জিত হইয়া যায়
তখন আমানু মোমিন হইয়া
যান। মোমিনকে লক্ষ্য করিয়া কোরানে
একটি নির্দেশও দেওয়া হয় নাই।
কারণ তাহার জন্য তখন
নিষ্প্রয়োজন। মোমিনগণ পরিপূর্ণতা প্রাপ্ত হইয়া তাহাদের নবীর
প্রকৃত প্রতিনিধি বা নায়েবে রসুল
হন। এই পর্যায়ে আসার
জন্য প্রয়োজন স্রষ্টার সহিত প্রেমপূর্ণ সর্ম্পক
গড়িয়া তোলা। তাই তোমার
স্বত্তা হইতে উদগত প্রেমই
তোমাকে রক্ষা করিবে। পার্থিব
এবং জৈবিক প্রেমও তুচ্ছ
নহে। বরণ্ঞ্চ উহা ঐশী প্রেমের
পাদপীঠ এবং উহাই তোমাকে
প্রেমমার্গে উত্তোলন করিবে। আলিফ, বে
অক্ষর না শিখিলে তুমি
কিরুপে মহাক্কোরআন পড়িবে? সাবধান, এ
কথা বলিও না যে,
আল্লাহ সৌন্দর্যময় এবং তুমি তাহার
প্রেমিক। তুমি মুকুর সদৃশ্য।
যাহাতে আল্লাহর রুপের ছায়া পড়ে।
পবিত্র-প্রেম আল্লাহ হইতেই
নিসৃত হইয়া তোমার মধ্যে
প্রকাশিত হয়। 'আমি এবং
তুমি' একটা কল্পনামাত্র। সঠিকভাবে
দেখিতে পারিলে বুঝা যাইবেঃ
তিনিই দর্শক, তিনিই দৃশ্য,
তিনিই মুকুর, তিনিই ধন,
তিনিই ধনাগার। সংক্ষেপে তোমাকে ইস্কে হাকিকী
ও ইস্কে মাজিজী বুঝাইতে
চেষ্টা করিয়াছি। তো এখন বল
তোমার কি ইচ্ছা?
তিনি
আমার দিকে ইংগিত করে
বললেন। আমি কোথা থেকে
শুরু করবো বুঝতে পারছি
না। তার কথাগুলো ভাববার
চেষ্টা করছি। ফিলোসফিতে একটি
কথা আছেঃ সংশয় দ্বারা
সমাধানে পৌঁছানো। অথচ বিশ্বাস থেকে
বিচ্যুতির প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে
সংশয়। ভাববাদ নামক যে
দর্শন আছে তা কেবল
মনের গহীনে অবস্থান করা
ভাব। অর্থাৎ মনের গতি
প্রকৃতি দ্বারা নির্ণয় করা।
ভাববাদীরা সবকিছুই ভাবের মাধ্যমে দেখার
চেষ্টা করে। সুফী সাহেবের
মতবাদ অনেকটা সেই ভাববাদীদের
মতোই মনে হচ্ছে। ইসলামী
সুফী সাহিত্য সর্ম্পকেও আমাদের পাঠ্যসুচীর অর্ন্তভুক্তি
ছিল। সেইখানেও পড়েছি-ইমাম গাজ্জালী
সাহেব একটি হাদীছে উল্লেখ
করিয়াছেনঃ ইন্নালাহা সাবঈনা আলফা হিজাবুম
মিন নুরী ওয়া যুলুমাত।
অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর জন্য সত্তর হাজার
নুর ও অন্ধকারের পর্দা
আছে। এই পর্দার বাইরের
অর্ধাংশকে অন্ধকার এবং ভিতরের অর্ধাংশকে
আলো বলে। আল্লাহর সান্নিধ্যে
যেতে আত্মাকে এই অন্ধকার ও
আলোর সাতটি স্তর অতিক্রম
করতে হয়। সাতটি স্তরে
দশ হাজার পর্দা আছে।
তাছাড়া সুফীরা মনে করেনঃ
পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বরুপ প্রকাশের সময়
আল্লাহকে কতোগুলো স্তর অতিক্রম করতে
হয়। নিম্নতম হতে উচ্চতম স্তরে
যখন সুফীর অগ্রগতি হয়,
তখন ঐশী স্বরুপ পরিবর্তনের
ক্রম অনুসারে তাকে উপরের স্তরগুলি
পরিভ্রমণ করতে হয়। আল্লাহর
নিম্নগামী ভ্রমণকে সফরাতুল-হাক্ক এবং উর্ধ্বগামী
ভ্রমণকে সফরাতুল-আব্দ বলে। কিন্ত্তু
এগুলোতো সবই পড়া। ব্যবহারিক
দিকতো আমাদের ছিল না।
পরীক্ষায় পাস করার জন্য
পড়া। মোটা মোটা বই
পড়ে বিদ্যান হয়েছি। অহংকার করতে
কেবল এটুকুই করতে পারি-আই এম এ
ফিলোসোফার। কথায় পান্ডিত্য দেখাতে
পারি। লোকজনের বাহবা কুড়াতে পারি।
কিন্ত্তু ব্যবহারিক দিক থেকেতো একেবারেই
শুণ্যকোঠা। কি করি?আমি সুফী
সাহেবকে ইমাম গাজ্জালীর হাদিসটি
শুনিয়ে দিয়ে জানতে চাইলাম
এর প্রকৃত ব্যাখ্যাা কি?
আমার প্রশ্ন শুনে তিনি
বললেনঃ-
যে
সাতটি স্তরের কথা বলা
হইয়াছে সেই সাতটি স্তর
হইলঃউবুদিয়াত (সেবা), ইস্ক (ঐশীপ্রেম))
, যুহদ (পরিহার), ওয়াযদ ( মত্ততা), মারিফাত (জ্ঞান), হাক্কীকাত ( সত্যতা) এবং ওয়াসল (মিলন)। অাল্লাহর
পথের সাতটি স্তর অতিক্রম
করা কালে সাধককে কয়েকটি
অবস্থার সম্মুখীন হইতে হয়। এই
সকল অবস্থাকে মোকাম বলে। মোকামের
মধ্যে প্রথম মোকাম তওবা
(অনুতাপ) অতঃপর ইনাবাত (রুপান্তর),
যুহদ এবং তাওয়াক্কুল(নির্ভরতা)।
-শুন
পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বরুপ প্রকাশের সময়
আল্লাহকে কতোগুলি স্তর অতিক্রম করিতে
হইয়াছে। নিম্নতম হইতে উর্ধ্বতম স্তরে
যখন সাধকের অগ্রগতি হয়,
তখন ঐশী স্বরুপ পরিবর্তনের
ক্রম অনুসারে তাহাকে উপরের স্তরগুলি
পরিক্রমক করিতে হয়। উরুযের
(উর্ধারোহণ) সময় আত্মাকে চারটি
অবস্থার মধ্য দিয়া যাইতে
হয়।
১.নাসুত(মানবতা)-এই
স্তরে সাধককে শরীয়ত মানিয়া
চলিতে হয়।
২.মালাকুত(ফেরেস্তায়ী)-এই স্তরে সাধক
তরিক্কাতের পথে অগ্রসর হয়।
৩.জাবারুত(শক্তি)-এই স্তরে
সাধক মারিফত (জ্ঞান) প্রাপ্ত হয়।
৪.লাহুত(ঐশীত্ব)-এই
স্তরে সাধক আল্লাহর মধ্যে
বিলীন হইয়া হাক্কীক্কাত(সত্যতা)
প্রাপ্ত হয়।
আল্লাহর
দিকে চলিবার জন্য তিনটি
পথ আছে।
১.সায়ের ইল্লাল্লা (আল্লাহর দিকে ভ্রমণ) - এখানে
সৃষ্টির জগৎ হইতে হুকুমের
জগতে সাধকের যাত্রা। সাধক
এস্থলে ওয়াহিদিয়াতের স্তর পরিক্রমণ ও
পরিভ্রমণ করিয়া "হাক্কীক্কাতে মুহাম্মদীয়াতে" পৌছায়।
২.সায়েরফিল্লাহ (আল্লাহর মধ্যে ভ্রমণ) - এখানে
সাধক ঐশী-স্বত্তায় বিলীন
হয়। ইহাই আহদিয়াতের মোকাম।
এই মোকামে মনসুর হাল্লায
"আনাল হক্ক" (আমিই সত্য) বলেন।
৩.সায়ের আনিল্লা (আল্লাহর নিকট হইতে ভ্রমণ)
- এই পর্যায়ে সাধক ঐশীগুণ প্রাপ্ত
হইয়া প্রকাশমান-জগতে ফিরিয়া আসে।
ইহাকেই ফানার পর বাক্কার
(অনস্তিত্বের পর অস্তিত্ব) মোকাম
বলে।
আমার দিকে তাকিয়ে সুফী সাহেব বললেন
-এখন তুমি সিদ্ধান্ত নাও তুমি কোন্ পথে চলবে?
-আমাকে কিছুদিন সময় দেন। আমি চিন্তা ভাবনা করে আপনাকে জানাবো। তবে আমি আপনার কাছে আবার আসবো। সারারাত ঘুমাতে পারিনিতো। তাই মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে।
-ঠিক আছে। তোমার সাথে অনেক কথা বলেছি। তুমি সময় নাও। চিন্তা-ভাবনা কর। আজ আর নয়। আমি উঠি।
সুফী সাহেব ওঠার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। আমি তাকে পা ছুইয়ে সালাম করলাম। আর বললাম
-আমার জন্য দোয়া করবেন।
-আমি তোমার জন্য দোয়া করি বাবা। তোমাকে দেখেই আমার খুব ভালো লেগেছে। জানার আগ্রহ আছে তোমার। ফি আমানিল্লাহ।
সুফী সাহেব চলে যেতেই আমি খানকা হতে বের হয়ে এলাম। প্রথমে অফিসে ফোন করে বললাম আমি অফিসে আসতে পারবো না। আমার শরীর খুব খারাপ। দুই-তিনদিন ছুটি দরকার। ফোন করে জানালাম - করিম সাহেবের কাছে। করিম সাহেব বলেছেন তিনি বসকে জানাবেন। আমার কথা হলো-অফিস ছুটি দিক বা না দিক আমি দুইদিন যাবো না। আমাকে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। ভাবনায় ডুবে যেতে হবে - গভীর থেকে গভীরে..
আমার দিকে তাকিয়ে সুফী সাহেব বললেন
-এখন তুমি সিদ্ধান্ত নাও তুমি কোন্ পথে চলবে?
-আমাকে কিছুদিন সময় দেন। আমি চিন্তা ভাবনা করে আপনাকে জানাবো। তবে আমি আপনার কাছে আবার আসবো। সারারাত ঘুমাতে পারিনিতো। তাই মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে।
-ঠিক আছে। তোমার সাথে অনেক কথা বলেছি। তুমি সময় নাও। চিন্তা-ভাবনা কর। আজ আর নয়। আমি উঠি।
সুফী সাহেব ওঠার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। আমি তাকে পা ছুইয়ে সালাম করলাম। আর বললাম
-আমার জন্য দোয়া করবেন।
-আমি তোমার জন্য দোয়া করি বাবা। তোমাকে দেখেই আমার খুব ভালো লেগেছে। জানার আগ্রহ আছে তোমার। ফি আমানিল্লাহ।
সুফী সাহেব চলে যেতেই আমি খানকা হতে বের হয়ে এলাম। প্রথমে অফিসে ফোন করে বললাম আমি অফিসে আসতে পারবো না। আমার শরীর খুব খারাপ। দুই-তিনদিন ছুটি দরকার। ফোন করে জানালাম - করিম সাহেবের কাছে। করিম সাহেব বলেছেন তিনি বসকে জানাবেন। আমার কথা হলো-অফিস ছুটি দিক বা না দিক আমি দুইদিন যাবো না। আমাকে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। ভাবনায় ডুবে যেতে হবে - গভীর থেকে গভীরে..