পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

সারমাদ দারদী আজাব সিকাস্তা কারদি তুনে-পর্ব পনেরো


(পূর্ব প্রকাশের পর)
আমি অযু করেই মাহিন আর মামুন ভাইয়ের পদাংক অনুসরণ করলাম
পথ্যিমধ্যে একজনকে দেখলাম মামুন ভাইকে ডাক দিয়ে কি যেন বলছে। সে লোক চলে যেতেই মাহিন জিগ্যেস করলো

-কি ব্যাপার মামুন ভাই?

-মাহিন ভাই বাবাজান আমাদের খবর পাঠিয়েছেন। আপনার সাথে যে লোক আছে তাকে নিয়ে যেতে

একথা শুনে মাহিন আমার দিকে তাকালো। আমি ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম আমি প্রস্তত অাছি। তারপর আমি মাহিন আর মামুন ভাইসহ আমরা সুফী সাহেবের সাথে দেখা করার জন্য তাঁর রুমের দিকে যাত্রা করলাম। তার রুমের ভেতর প্রবেশ করেই আমি হতচকিত হয়ে গেলাম সুফী সাহেবের দিকে তাকিয়ে। তার চেহারার নুরানীভাব যেন আরো বৃ্দ্ধি পেয়েছে।সমস্ত ঘর যেন আলোকিত হয়েছে কেবল তারই নুরের জ্যোতিতে। তিনি আমাকে বসতে বলে বললেন এবং আমাকে বললেন-তুমি ঐ দরবারে যেয়ে বায়াত নিও। বায়াত প্রসংগে তিনি বললেনঃ

-শুন  মিয়া আল্লাহ পাক মানবজাতিকে হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে নবী-রসুল, গাউস,কুতুব অলী-আউলিয়া পাঠিয়েছেন তাদেরকে আযাবুল কবর থেকে উদ্বার করার জন্য। মানব জাতি মুল আর্দশ হইতে বিচ্যূত হইয়া পাপে নিমজ্জিত।  রাসুলে পানাহ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দ্বিবিধ অহীপ্রাপ্ত হন। প্রথমটি ক্কোরআন শরীফে লিপিবদ্ধ। ইহা সকলের জন্য বাধ্যকর 'ইলমি-সফীনা' নামে খ্যাত। দ্বিতীয়টি অতি গোপনীয় এবং মনোনীত সাহাবীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ইহাই 'ইলমি-সিনা' নামে খ্যাত। ক্কোরআন শরীফের কতক আয়াত মোহকাম (স্পষ্ট),কতেক আয়াত মুতাশাবিহ(রুপক) মোহকাম বুঝতে ক্কোরআন, হাদীস,ইজমা, কেয়াস,উসুল,ফিকাহ প্রভৃতি ইলমি জাহিরীই যথেষ্ট। ইহাই শরীয়ত। আর মুতাশাবিহ হইল মারিফত। মুতাশাবিহ বুঝিতে রাসুল্লাহ (সাঃ) কিম্বা তাঁহার গুণ সম্পন্ন কোন ব্যক্তির আত্মিক প্রভাবের প্রয়োজন। এই আত্মিক প্রভাব রাসুলুল্লাহ(সাঃ) নিকট হইতে পরস্পরসুত্রে পীরেরা পাইয়াছেন। ক্কোরআন শরীফের কতিপয় আয়াত সাক্ষ্য দেয় যে, স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মধ্যেই সুফীবাদের বীজ নিহিত ছিল। রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলিয়াছেনঃ আনা মদিনাতুল ইলম ওয়া আলী বাবুহা। আমি জ্ঞানের শহর এবং সেই শহরের প্রবেশদ্বার আলী(আঃ) এই জ্ঞানই ইলমি-সিনা। তিনি ইহা হযরত আবু বক্কর সিদ্দিক (রাঃ) হযরত আলী (আঃ) কে বিশেষভাবে শিক্ষা দেন। এই বিদ্যা শিক্ষা করার প্রাথমিক ধাপই হইলো বায়াত লওয়া। বায়াত হওয়ার পরই কেবল এই বিদ্যা হাসিল করা যায়। এছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ নাই।

শুন মিয়া, কেতাব পড়িয়া বিদ্বান হওয়া যায় কিন্ত্তু এলমে সিনা হাছিল করা যায় না। যাহা হযরত রাসুলে পাক (সাঃ) হেরা গুহায় লাভ করিয়া ছিলেন। সেই বিদ্যা শিক্ষা করা ফরজ

সমস্ত সৃষ্টিই আলমে-আমর আলমে খালক্কের অধীন। 'কুন' (হও) বাণী দ্বারা আল্লাহ যে জগত সৃষ্টি করেন, তাই আলমে-আমর (হুকুমেরজগত) এবং আলমে আমর হইতে যে জগত সৃষ্ট তাই আলমে-খালক্ক তথা আলমে নাসুত (সৃষ্ট-জগত)এই উভয় আলমকে একত্রে 'আলমে কাবীর (Macrocosm বা বৃহৎজগত) বলা হয়।আলমে-কবীর হতে পার্থক্য দেখাইবার জন্যই মানুষকে আলমে-সগীর(Microcosm বা ক্ষুদ্রজগত) বলা হয়।ক্কালব (Heart বাহৃদয়), রুহ (spirit বা চৈতন্য), সির(Intuition বা বজ্ঞা), খাফী(Deep Intuition বা গভীর স্বজ্ঞা), আখফা(Deepest Intuition বা গভীরতম স্বজ্ঞা) আলমে আমরের অন্তর্গত।পক্ষান্তরে নফস (Soul or Ego বা আত্মা বা অহং), বাদ (বাতাস), আতেশ (আগুন), আব (পানি) খাক (মাটি) আলমে খালকের অর্ন্তগত।এদের প্রত্যেকটি হলো লতিফা (সূক্ষ্ম-হাল্কা)
আলমে খালকের পাঁচটি লতিফা মানব শরীরের জন্য নির্ধারিত এবং আলমে আমরের পাঁচটি লতিফা আল্লাহর সহিত মানুষের যোগাযোগ রক্ষার জন্য মনোনীত। ক্কালবের স্থান আল্লাহর আরশের উপরে অবস্থিত
ক্কলব সমন্ধে রাসুলে পাক সাঃ বলেছেনঃ ক্কলুবুল মুমীনিনা আরশিল্লা (অর্থাৎ মোমিনের অন্তর আল্লাহর আরশ) এই হাদীছের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করিলে বুঝা যায় যে, বিশ্বজগত আল্লাহকে ধারণ করিতে পারে না। একমাত্র বিশ্বাস ব্যক্তিদের অন্তঃকরণেই আল্লাহ বিধৃত। নফস রুহের সংযোগে ক্কালব সৃষ্ট। ক্কালব, আলমে আমর আলমে খালক্কের বরযোখ (সীমারেখা) অন্যথায় ক্কালব মানুষের শারীরিক অাত্মিক শক্তির সংযোগস্থল। এইজন্য আল্লাহর অলীগণ ক্কোরআন শরীফের আয়াতঃ "ওয়া ফি আনফুসুকুম, আফালা তুবসিরুন" অর্থাৎ আমি তোমাদের মধ্যেই আছি তোমরা কি দেখ না?
এছাড়া ্কোরআন শরীফে সুরা নুরে যে কথা বলা হইয়াছে তাহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণউহা বুঝিতে পারিলেই তুমি আল্লাহর আরশ সর্ম্পকে জানতে পারবা। তাহার পূর্বে আরশ ও কুরশী সর্ম্পকে বলিতেছি

আরশ ও কুরশীল্লাহর পবিত্রতার বিকাশ মানুষ এবং জিনের মন ছাড়া সমগ্র সৃস্টিতে প্রাকৃতিক নিয়মেই চলিতেছে। ই সল সৃষ্টি হইল আল্লাহর কুরসী। ইহাদের মধ্যে আল্লাহর পবিত্রতা তার রচিত বিধান অনুযায়ী আপনা আপনি প্রকাশিত হইতেছে। আল্লাহর আদেশ নির্দেশ যে মনের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে কাযকরী হয় সেই মনকে আরশ বলে। মানুষ এবং জিনের মন যখন তসবীহ করিতে সক্ষম হয় তখনই তসবীহ হইয়া যায় হামদএবং সেই মন বা নফস র্শে পরিণত হইয়া যায়। র্শের মধ্যে ল্লাহর দেশ, নির্দেশ পূর্ণভাবে কার্যকরী হইতে থাকে। র্শ আল্লাহর কর্তৃত্ব। মোমিনের ক্কলই কর্তৃত্ব প্রকাশের অধিকারী হইয়া থাকে। মোমিনগণের ক্কলবগুলি আল্লাহর আরশ। মমিন আল্লাহর আদেশের ব্যতিক্রম কাজ আর কখনো করেন না।

তসবিহ ও হামদঃ তসবীহ অর্থ আপন রবের পবিত্রতা প্রকাশ করা। সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর হামদ (প্রশংসা) স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশিত হইতেছে কিন্ত্তু নিম্নমানের সৃষ্টি তাহার প্রশংসা করিতে অক্ষম এবং কখনো করে না- ইহারা করে তসবীহ। জিন এবং মানুষের মন আমিত্বের কারণে স্বাভাবিকভাবে তসবীহ করিতে পারে না। সানা=ল্লাহর গুণাবলীকে চরিত্রগত না করিয়া শুধু মৌখিক প্রশংসাকে সানা বলে।
 
 সুরা নুরের ৩৫ নং আয়াতকে বলা হয় নুরুন আলা নুর (Light upon light)। নুরুন আলা নুর বুঝিতে হইলে তোমাকে বুঝিতে হইবে নুর কি? 

(চলবে)