পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

সারমাদ দারদী আজাব সিকাস্তা কারদী তুনে-বিশ

(পূর্ব প্রকাশের পর)

আমাকে নিঃস্তব্ধ দেখে মুরব্বী যেন মনে হলো কিছুটা মালিন্যবোধ করলেন। তিনি বললেন

-শুন ভাই, তোমরা যুবক ছেলে। তোমাদের মনে নানা রংবেরং জিনিস খেলা করে বেড়ায়। সাধনার বিষয়ে বিশেষ ভাগ রয়েছে। সেই ভাগগুলি জানতে হয়। আল্লাহ জাল্লাজালুহুর শান বোঝা এতো সহজ নয়। তুমি যদি সুরা বাকারার ৩৫-৩৭নং আয়াতে দেখ সেখানে দেখতে পাবে আল্লাহ পাক বলছেনঃ
৩৫নং আয়াতঃ " ওয়া (এবং) কুলনা (আমরা বলিলাম) ইয়া (হে) আদামু (আদম) উসকুন (বসবাস করো) আনতা (তুমি) ওয়া (এবং) জাওজুকা (তোমার স্ত্রী) জান্নাতা (জান্নাত) ওয়া (এবং) কুলা (দুইজনে খাও) মিনহা (ইহা হইতে) রাগাদান (পর্যাপ্ত, প্রশস্ত ভাল করিয়া,খুব) হাইসু (যেখানে,যেস্থানে) শিমুতা (দুইজনে তোমরা চাও) ওয়া (এবং) লা (না) তাকরাবা (দুইজনে কাছে অথবা নিকটে যাইও) হাজিহি (এই) শাজারাতা (গাছের) ফাতাকুনা (সুতরাং তোমরা দুইজনে হইবে) মিনাস (হইতে, অন্তর্ভুক্ত) জালিমিন (জালিমদের)। অর্থঃ এবং আমরা বলিলাম, হে আদম, বসবাস করো তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে এবং দুইজনে খাও ইহা হইতে পর্যাপ্ত যেখানে তোমরা দুইজনে চাও এবং এই গাছের কাছে দুইজনে যাইও না(যদি যাও) সুতরাং তোমরা দুইজনে হইবে জালিমদের অর্ন্তভুক্ত।
৩৬. ফাআজজালামহুমা (সুতরাং তাহাদের দুইজনকে বিচ্ছিন্ন করিল) শাইতানু (শয়তান) আনহা (উহা হইতে) ফাআখরাজাহুমা (সুতরাং তাহাদের দুইজনকে বাহির করিল) মিম্মা (সেখান হইতে) কানা (ছিল) ফিহে (ইহার মাধ্যে) অর্থঃ উহা হইতে শয়তান সুতরাং তাহাদের দুইজনকে বিচ্ছিন্ন করিল সুতরাং তাহাদের দুইজনকে বাহির করিল সেইখান হইতে ইহার মধ্যে দুইজনে ছিল।
৩৭. ওয়া (এবং) কুলনা (আমরা বলিলাম) ইহবিতু (বিতাড়িত হও, নামিয়া যাও) বাদুকুম (তোমাদের এক) লিবাদিন (অপরের জন্য) আদুভুন (দুশমন,শত্রু)। অর্থঃ এবং আমরা বলিলাম তোমরা বিতাড়িত হও তোমরা একে অপরের জন্য শত্রু। ওয়া (এবং) লাকুম (তোমাদের জন্য) ফি (মধ্যে) আরদি (পৃথিবীর) মুমতাকাররুন (কিছুকালের অবস্থান) ওয়া (এবং) মাতাউন (জীবনোপকরণ, জীবন সামগ্রী) ইলা (দিকে) হিনিন (একটি নির্দিষ্ট সময়)। অর্থঃ এবং পৃথিবীর মধ্যে তোমাদের জন্য কিছুকালের অবস্থান এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের দিকে জীবনোপকরণ।
৩৭.ফাকালাককা (সুতরাং বাণী পাইল, শিখিয়া লইলো) আদামু (আদম) মিন (হইতে) রাব্বিহি (তাহার রবের নিকট হইতে) কালিমাতিন (কিছু কালাম/বাণী) ফাতাবা (তিনি তওবা করিলেন) আলাইহ (উহার দ্বারা)। অর্থঃ সুতরাং আদম শিখিয়া লইলেন তাহার রবের নিকট হইতে কিছু বাণী তিনি উহার দ্বারা তওবা করিলেন। ইন্নাহু (নিশ্চয়ই তিনি) হুয়া (তিনিই) তাওয়াবু (তওবা গ্রহণকারী) রাহিমুন (দয়ালূ)। অর্থঃ নিশ্চয়ই তিনিই তওবা গ্রহণকারী দয়ালু।

উপরোক্ত আয়াতে দ্যাখো আল্লাহ পাক বললেনঃ "লা (না) তাকরাবা (দুইজনে কাছে অথবা নিকটে যাইও) হাজিহি (এই) শাজারাতা (গাছের) ফাতাকুনা (সুতরাং তোমরা দুইজনে হইবে) মিনাস (হইতে, অন্তর্ভুক্ত) জালিমিন (জালিমদের)।" এই যে শাজারাতা(গাছের) কথা বলা হযেছে সেই গাছ কোনটি? কেন সেখানে যাইতে নিষেধ করেছেন? আবার বলেছেন গেলে তোমরা জালিমদের পর্যায়ভুক্ত হইবে? আবার আদমকে পৃখিবীতে পাঠানোর সময়  রবের তরফ থেকে কিছু বাণী শিখিয়া লইলেন। সেই বাণী কি?
দ্যাখো আল্লাহ পাক যখন সমস্ত ফেরেস্তাদের ডেকে আদম সৃষ্টির কথা বলেছিলেন তখন ফেরেস্তারা বলেছিলঃ "ওয়া (এবং) ইজ (যখন) কালা (বলিলেন) রাব্বুকা (আপনার রব, পালনকর্তা) লিলমালাইকাতি (ফেরেস্তাদের জন্য) অর্থঃ এবং যখন আপনার রব ফেরেস্তাদেরকে বলিলেন। ইন্নি (নিশ্চয়ই আমি) জায়েলুন (নির্বাচন করিব) ফিল (মধ্যে) আরদি (পৃথিবীতে) খলিফাতান (প্রতিনিধি,খলিফা) অর্থঃ নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীর মধ্যে খলিফা নির্বাচন করিব। কালু (তাহারা বলিল) আতাজআলু (তুমি কি নির্বাচন করিবে?) ফিহা (ইহা র মধ্যে)। অর্থঃ তাহারা বলিল তুমি কি ইহার মধ্যে নির্বাচন করিবে? মাই (যাহারা) ইউফসিদু (ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা) ফিহা (ইহার মধ্যে) ওয়া (এবং) ইয়াসফিকু (ঝরানো, প্রবাহিত করা) দিমাআ (রক্ত)।অর্থঃ যাহারা ইহার মধ্যে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করিবে এবং রক্ত ঝরাইবে। ওয়া (এবং) নাহনু (আমরা) নুসাববেহু (তাসবিহ করি) বিহামদিকা (তোমার প্রশংসা) ওয়া (এবং) নুকাদদেসু (পবিত্রতা বর্ণনা করি) লাকা (তোমার)। অর্থঃ এবং আমরা তাসবিহ করি তোমার প্রশংসা এবং পবিত্রতা বর্ণনা করি। কালা (বলিলেন) ইন্নি (নিশ্চয়ই আমি) আলামু (জানি) মা (যাহা) লা (না) তাআলামুন (তোমরা জানো)। অর্থঃ(আল্লাহ বলিলেন) নিশ্চয়ই আমি যাহা জানি (তাহা) তোমরা জানো না।[সুরা বাকারা আয়াত নং ৩০]
এখানে দেখা যাইতেছে যে, মনে হয় ফেরেস্তারা পূর্ব হইতে জানিত যে আদম নামক যে বস্তুুটি আল্লাহ পাক সৃষ্টি করতে যাইতেছেন সেটা মারামারি কাটাকাটি হানাহানি ছাড়া আর কিছুই করিবে না। কিন্ত্তু আল্লাহ পাক তার উত্তরে বললেনঃ আমি যাহা জানি তোমরা তাহা জানো না। তার মানে আল্লাহ পাকের বিশেষ উদ্দেশ্য আছে এই আয়াতেই বুঝা যায়। আবার এটাও বুঝা যায় যে ফেরেস্তারাও আদমের ব্যাপারে জানতো। তা নাহলে তারা কিভাবে বলে যে তুমি কি এমন সৃষ্টি করতে যাইতেছ যারা রক্তারক্তি করবে। তারচেয়ে আমরাইতো তোমার তাসবিহ করিতেছি। লক্ষ্যণীয় বিষয় হইল রবই তোমার প্রথম শিক্ষাগুরু। সে তোমাকে কিছু বাণী শিক্ষা দিয়াছিল। এবং শিক্ষা দেওয়া হইলে সে যে ফেরেস্তাদেরকেও অতিক্রম করিয়া যাইতে পারে তাহার প্রমাণ পরের আয়াতগুলিতেই আছে। যথাঃ ওয়া (এবং) ইজ (যখন) কুলনা (আমরা বলিয়াছিলাম) লিলমালাইকাতি (ফেরেস্তাদেরকে) উসজুদ (সেজদা দাও) লিআদামা (আদমের জন্য) ফাসাজাদু (সুতরাং সবাই সেজদা দিলো) ইল্লা (ব্যতীত) ইবলিশ (ইবলিশ)।অর্থঃ এবং যখন আমরা ফেরেস্তাদেরকে বলিয়াছিলাম সেজদা দাও আদমকে সুতরাং তাহারা সেজদা করিল ইবলিশ ব্যতীত। আবা (সে অস্বীকার করিল এবং অহংকার করিল) ওয়া (এবং) আসতাগবারা (অহংকার করিল) অর্থঃ সে অস্বীকার করিল এবং অহংকার করিল। ওয়া (এবং) কানা (হয়) মিনাল (হইতে) কাফিরিন (কাফেরদের)। অর্থঃ এবং হইল কাফেরদের অর্ন্তভুক্ত।
দ্যাখো একই জিনিসের নাম রব ফেরেস্তাদেরকে এবং আদমকে শিক্ষা দিয়াছিলেন এবং তাহাদের নাম জিগ্যাসা করা হইলে আদম সেইগুলির নাম বলিয়াদিতে পারিয়াছিল কিন্ত্তু ফেরেস্তারা না পারায় আদমকে সেজদা দিবার আদেশ আল্লাহ পাক সরাসরি দিয়াছিলেন। এখানে যারা সেজদা দিয়াছিল তারা ফেরেস্তাদের অর্ন্তভুক্ত আর যারা অহংকার করিয়াছিল তাহারা ইবলিশের অর্ন্তভুক্ত হইল। ইবলিশ "বালাসা" অর্থাৎ অহংকার আর ইবলিশ হচ্ছে অহংকারী। ভালো করিয়া দেখিলে দেখিতে পাইবে যে উপরোক্ত আয়াতগুলিতে আল্লাহ শব্দ পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় রব রুপে। কেন? আবার দেখ "আনা" আমি এক বচন ব্যবহার না করিয়া বহুবচন নাহনু "আমরা" শব্দ ব্যবহার করা হইয়াছে। কেন?

-কি বুঝলেন ভাই সাহেব? আমার দিকে তাকিয়ে মুরব্বি গম্ভীর গলায় বললেন।

তার বলার ধরণ দেখে চিন্ত্তার কিছুটা খোরাক অবশ্য পাওয়া গেল। কিন্ত্তু আমার যে কি হলো তাই ঠিক বুঝছি না। এখানে আসার পর দেখছি আমার বুদ্ধির সমস্তদ্বারগুলো যেন কেমন অচল হয়ে যাচ্ছে। কোনকিছুই কাজ করছে না। যার সাথেই কথা বলছি দেখা যাচ্ছে কেউ না কেউ এ বিষয় নিতে নিজস্ব দৃষ্টিভংগী তৈরী করছে। সবার ভেতর যে একটা প্রচ্ছন্ন দর্শন লুকিয়ে আছে - মানুষের সাথে কথা বললেই তা ধরা যায়। যদিও সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে আগ্রহী নয়। মনের ভেতর যে ডুগডুগি সুফী সাহেব বাজিয়েছিলেন এখানে আসার পর দেখছি সবাই সেই ঢোলেই একটার পর একটা বারি মারছে। কি যে করি?
(চলবে)