পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

সারমাদ দারদী আজাব সিকাস্তা কারদি তুনে-ষোল

(পূর্ব প্রকাশের পর)
নুর কি?
নুর মানে আলো ( LIGHT WITH NO HEAT AND NO BURNING)। আল্লাহর নুর হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম। কেননা আল্লাহ পাক পবিত্র ক্কোরআনে বলেছেনঃ
"আল্লাহর রংয়ে রন্ঞ্জিত হও। আল্লাহর রং হতে কার রং উত্তম"? তো আল্লাহর রং কোনটি তা তোমাকে জানতে হবে। বলেছিলাম সুরা নুরের কথা। আল্লাহ পাক বলেছেনঃ আল্লাহু নুরুন সামাওয়াতি ওয়াল আরদ। সুরা নুরের ৩৫ নং আয়াতে বলা হয়েছেঃ "আল্লাহু নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্।মাসালু নূরিহি কামিশকাতিন ফীহা মিস্‌বাহ ; আল মিসবাহু ফী যুজাজা। আযযুজাজাতুকা আন্নাহা কাওকাবুন দুর্‌রি-উই ইয়ু কাদু মিন শাজারাতিম মুবারকাতিন যাইতুনা। লা শারকিয়্যাতিন ওয়ালা গরবিয়্যাহ; ইয়া কাদু যাইতুহা ইয়ুদি~~ উ ওয়ালাও লাম তামসাসহু নার।নূরুন আলা নূর। ইয়াহদি আল্লাহু লিনুরিহী মাইয়্যাশা~~ ঊ ; ওয়া ইয়াদরিবুল্লাহুল আমসালা লিন্নাস; ওয়াল্লাহু বিকুল্লি শাইয়িন আলীম।"
এখানে যে শাজারাতিম মুবারকানতিন যাইতুন বলতে একজন মোমিন ব্যক্তির কথা আল্লাহ পাক আয়াতে মুতাশাবিহর মাধ্যমে উপস্থাপন করিয়াছেন। কিভাবে? তা বলছিঃ
আল্লাহু নুরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্‌
আলো ছাড়া দেখা যায় না। যখন কোন বস্তু থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে আমাদের রেটিনাতে পড়ে, তখন-ই আমরা সেটাকে দেখতে পাই। আলো হচ্ছে “দেখার মাধ্যম” বা Means . আলো ছাড়া আমরা কিছুই দেখতে পেতাম না। Perception of Vision= Light , দেখা= আলো। Heavens and Earth বলা হয়েছে একারনে, আল্লাহ খুব ছোট কথায় বলে দিয়েছেন ” যা কিছু তোমরা দেখ” | আমাদের দেখা ( চোখ দিয়ে আর কল্পনা দিয়ে) এই পৃথিবী আর আকাশ আর মহাজগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আমরা এর বাইরে কিছু দেখতে (বা চিন্তা) করতে পারি না। কারন আমরা মহাজগতেরই একটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশ। Heaven & Earth দিয়ে এক কথায় মানুষের ক্ষুদ্র সীমারেখা বুঝিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ যে “এর বেশি তোমরা চিন্তা করতে পারবে না” ।
 আর যে বিশ্বাস করে, সে জানে যে, যা কিছু আমরা দেখি, চোখ দিয়ে, বা কল্পনা দিয়ে, সব কিছুই আল্লাহর দান, আল্লাহ চেয়েছেন বলেই আমরা পারি। কাজেই নিঃসন্দেহে মহাজগতের দেখার মাধ্যম বা লাইট বা নূর হলেন একমাত্র আল্লাহ। এটা হচ্ছে সত্যিকারের আলো। ” When you have the light of Allah in your heart then you see the universe for what it is and what it is worth “
মাসালু নূরিহি কামিশকাতিন ফীহা মিস্‌বাহ ; আল মিসবাহু ফী যুজাজা 
এই লাইনে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন “মিশকাত” ,  মানে = Niche in the wall.
Niche কথাটার মানে জানতে হবে। দেয়ালে যদি কোন গর্ত/খাঁজ/Arch থাকে সেটাকে Niche বলে।
(a shallow recess, esp. one in a wall to display a statue or other ornament.) পুরানো দিনের বাড়ি, বা মসজিদে Niche দেওয়া হয় এবং তার ভিতর যখন বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তা প্রতিফলিত হয়ে আলোর পরিমান অনেক বাড়িয়ে দেয়। তারপর বলেছেন, সেই Niche/ খাঁজ  এ একটা ল্যাম্প আছে।
মিসবাহ= ল্যাম্প। মিসবাহ এসেছে সুবহ থেকে। সুবহ মানে ভোর ( সুবহে সাদিক) , আর মিসবাহ মানে যে জিনিস ভোরের মতন উদ্দীপনা দেয়, অর্থাৎ আলো দেয়। সেই ল্যাম্পটা আছে  একটা কাঁচের ভিতরে। যুজাজা= স্বচ্ছ কাঁচ।
আযযুজাজাতুকা আন্নাহা কাওকাবুন দুর্‌রি-উই ইয়ু কাদু মিন শাজারাতিম মুবারকাতিন যাইতুনা
কাওকাবুন= An unusually large star, an excessively shiny star
দুররি= অত্যন্ত উজ্জ্বল। মুবারকাতিম= পবিত্র, Blessed। যাইতুন= জলপাই
ল্যাম্পটার চারদিকে একটা কাঁচের আবরন আছে। ল্যাম্পটা যখন জ্বলে, তখন এর আলো পরিষ্কার কাঁচের উপর LENS FLARE তৈরী করে । তখন কাচঁটা দেখতে একটা উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতন লাগে। তুমি ল্যাম্পটাকে একটা হারিকেন এর মতন চিন্তা করতে পার। ভিতরে আলো, বাইরে কাঁচের আবরন। 
লা শারকিয়্যাতিন ওয়ালা গরবিয়্যাহ; ইয়া কাদু যাইতুহা ইয়ুদি~~ উ ওয়ালাও লাম তামসাসহু নার
লা= না
শারকিয়্যাতিন= পূর্ব
গরবিয়্যাহ= পশ্চিম
এই ল্যাম্পটাতে ব্যবহার করা হয়েছে পবিত্র জলপাই গাছের তেল। এই গাছগুলো পূর্ব বা পশ্চিম, কোন জায়গারই নয়, এই তেল পৃথিবীর কোন তেল্‌ই নয়। এই সম্পুর্ন বিশুদ্ধ তেল একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকেই আসে।
তেলটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যা হল  ” Its about to light up.- এটি জ্বলে উঠতে যাচ্ছে “|  দুইধরনের তেল আছে। একটি হল আগের দিনের Crude Oil যেটা জ্বালাতে অনেক কষ্ট করতে হয় এবং যার দাহ্য ক্ষমতা অনেক কম। আরেকটি হল আধুনিক Refined Oil যেমন পেট্রল, গ্যাসোলিন যেগুলো অত্যন্ত দাহ্য ( Highly Flammable). আগুনের আশেপাশে এইরকম তেল থাকলেই তাতে আগুন লাগার প্রবল সম্ভাবনা আছে। এই ল্যাম্পের তেলটি হল এইরকম দাহ্য তেল।
” ইয়ুদি~~ উ ” মানে TO LIGHT UP .
” ইয়ুনি~~ উ ” মানে TO SET ON FIRE               .
আল্লাহ ” ইয়ুদি~~ উ ”  ব্যবহার করে বলেছেন , এই তেলটি আলো দেয়, আগুন ধরে উঠে না।
নূরুন আলা নূর । ইয়াহদি আল্লাহু লিনুরিহী মাইয়্যাশা~~ ঊ ; ওয়া ইয়াদরিবুল্লাহুল আমসালা লিন্নাস; ওয়াল্লাহু বিকুল্লি শাইয়িন আলীম।  
মাইয়্যাশা= Whoever wants + Whoever He wants.
আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর নূর( আলো) দেখান । যে আল্লাহর কাছে আলো চায় আল্লাহ তাকে অবশ্যই  তা দেন। মাইয়্যাশা দিয়ে এক সাথে এই দুটি জিনিস বুঝানো হয়েছে। Its Your Will and Allah’s will. If you are willing to get His Light, He will show you His light. But if you’re not willing to, He will not show you.
এই আয়াতের মূল তথ্য টা হচ্ছে-
প্রতেকটি মানুষের একটি করে Niche/Arch/খাঁজ আছে। তা হল তার বক্ষপিঞ্জর বা RIB CAGE. তুমি খেয়াল করলেই দেখতে পাবে মানুষের বক্ষপিঞ্জর আর খাঁজটির মধ্যে মিল আছে । বুকের ভিতর একটি ল্যাম্প আছে মানুষের, তা হল আমাদের হৃৎপিণ্ড ( HEART)। হৃৎপিন্ডের চারপাশে একটি স্বচ্ছ কাঁচের মতন আবরন থাকে আমাদের জন্ম থেকে। এটার নাম Fitrah ( Nature/Instinct) । "ফিতরাতুল্লাহি ফাতরান নাসা আলাইহা "। আমরা যখন জন্ম নিয়েছিলাম এই কাঁচটি ছিল সম্পূর্ন পরিষ্কার, কারন প্রত্যেকটি শিশু নিষ্পাপ। আস্তে আস্তে বড়ো হতে হতে, পাপ করতে করতে আমাদের হৃৎপিন্ডের কাঁচগুলো ময়লা পড়তে পড়তে ঘোলা হয়ে যায়। হৃৎপিন্ডের ভেতর যে বিশুদ্ধ তেলটি আছে, সেটি পৃথিবীর কোন তেল নয়, পূর্ব পশ্চিম কোন প্রান্তেই এই তেল নেই। এর নাম রূহ, যেটি প্রত্যেকটি মানুষের আলাদা আলাদা। এই “রূহ” আমাদের সত্তা, এর কারনেই আপনি আপনার মতন, আমি আমার মতন, আমরা প্রত্তেকেই আলাদা আলাদা সত্তা।

শুন, তোমাকে আরেকটি কথা বলি। তুমি যে দেহ দেখছো তার বাম দিকে সে আসন গেড়ে বসে আছে আর ডান দিকে বসে  আছে তোমার রুহ  (Spirit বা চৈতন্য)।  রুহ (Spirit বা চৈতন্য) এবং নফসের(Soul বা প্রবৃত্তিময় আত্মা) মধ্যে পার্থক্য আছে। তোমাকে এই পার্থক্য ধরিতে হইবে। তবেই তুমি তাহার রহস্য কিছুটা হইলেও বুঝিতে পারিবে। দেহের মধ্যে যে অমংগল ও মালিন্য আছে নফস বলিতে তাহাকেই বুঝান হয়। নফসই ষড় রিপুর আস্তানা। এই আস্তানা ধ্বংস করিবার জন্য সাধনা করিতে হয়। সাধনা=সাধ+না। সাধ বা ইচ্ছাকে নাস্তি করিবার প্রণালীই সাধনা। সাধ বা ইচ্ছাকে অনেকেই ধংস করার ক্ষমতা রাখে না। কারণ হইল - তুমি যাহাকে ধংস করিতে চাহিতেছ সে তোমাকে বিনা যুদ্ধে কখনোই ছাড়িয়া দিবে না।  নফস এর গুরু হচ্ছে খান্নাছ। সুরা নাসে আছে - মিন শাররিল ওয়াছ ওয়াছা খান্নাস। এই খান্নাসকে দুর করতে পারলেই সেখানে কেবল আল্লাহ পাকই বিরাজ করিবে। তখন তোমার ইচ্ছা খোদার ইচ্ছায় পরিণত হইয়া যাইবে। তখন কেবল হু-ই বিরাজ করিবে। কেননা ক্কোরআন শরীফে বলা হইয়াছেঃ কুল্লি নাফসিন জায়কাতুল মউত। নফসই মৃত্যূর স্বাদ গ্রহণ করিবে। রুহ নয়। বলা হয় নাই কুল্লি রুহিন জায়েকাতুল মউত। কাজেই তোমাকে সেই কাজে পারদর্শী হইয়া উঠিবার জন্য নফসের ধরণ সর্ম্পকে জানিতে হইবে এবং তাহাদের মউত সর্ম্পকে জানিতে হইবে। সেই সর্ম্পকে কিণ্ঞ্চিত আলোচনা করিতেছি।

শুন নফসের পবিত্রতা অনুসারে নফস নিম্নপ্রকারের হয়ঃ
১. নফসে অাম্মারা-নীতিহীন আত্মা
২. নফসে লাউয়াম্মা-অভিয়োগকারী আত্মা
৩. নফসে মুলহিমা-অনুপ্রাণিত আত্মা
৪. নফসে মুতমাইন্না-শান্ত আত্মা
৫. নফসে রাদিয়া-পরিতৃপ্ত আত্মা
৬.নফসে মারদিয়া-তৃপ্তিদাতা আত্মা
৭. নফসে সফিনা ওয়া কামিলা-পরিস্কৃত ও পরিপূর্ণ আত্মা।

আর নফসের মৃত্যূ তিন প্রকারের।যথাঃ
১. মাউতুল আবিযাদ (শ্বেতমৃত্যূ বা সাদা মৃত্যূ )-ক্ষুধাজনিত অনুভুতি হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত হইলে নফসের এই প্রকার মৃত্যূ হয়।
২. মাউতুল আখতার (হরিৎ মৃত্যূ বা হলুদ মৃত্যূ )-দারিদ্য বরণের জন্য জীর্ণবস্ত্র পরিধান করার স্পৃহাকে হরিৎ মৃত্যূ বলে।
৩. মাউতুল আসওয়াদ (কৃষ্ঞ মৃত্যূ বা কালো মৃত্যূ)-স্বেচ্ছায় শোকদুঃখ বরণ এবং অন্যের দ্বারা নিন্দিত হইবার অভিলাষকে কৃষ্ন্ঞ মৃত্যূ বলে।
কোরআনের আলোকে তোমাকে নফস এবং রুহের ব্যাখা পড়ে বুঝাইয়া দিব
(চলবে)