পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

সারমাদ দারদী আজাব সিকাস্তা কারদি তুনে-পর্ব সতেরো

(পূর্ব প্রকাশের পর)
তোমাকে বলিয়া ছিলাম রুহ এবং নফস-এর মধ্যে পার্থক্য কি এবং কোরআনে সর্ম্পকে কি বলা হইয়াছে তাহা বুঝাইয়া দিব। প্রচলিত কথায় একটি কথা আমরা প্রায়ই শুনি আর তাহা হইলঃ "আল ইনসানু সিররি ওয়া আনাসির রুহ" অর্থ হইলঃ আল=সর্ব ইনসানু-নাস=মানুষ বা মানব সিরসি=রহস্য, যাহার সর্ম্পকে বিশেষভাবে কিছু জানা যায় না। ওয়া=এবং আনা=অামি(আল্লাহ) সির=রহস্য রুহ=চৈতন্য। সর্ব মানুষ রহস্য এবং আমি রহস্য রুহের। শব্দগত অর্থে দাঁড়ায় তাই। এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হইল "আমি মানুষের রহস্য মানুষ আমার রহস্য কথাটি কি ভাবে আসিল তাহা বিশেষভাবে চিন্তার বিষয়। রুহ সর্ম্পকে পবিত্র ক্কোরআনে বলা হইয়াছেঃ "কুল্লির রুহ মিন আমরি রাব্বি" তথা রুহ হইতেছে রবের আদেশ তথা হুকুম। হুকুম দিতে হইলে কালাম উচ্চারণ করা দরকার। আর উচ্চারণ করিলেই শব্দ উৎপন্ন হইবে। সেই শব্দ শুনিবার জন্য কর্ণ আবশ্যক। আমরা যখন আলমে আরওয়াহ তথা রুহের জগতে ছিলাম সেই সময় আল্লাহ পাক বলিয়াছিলেনঃ "আলাস্ত বি রাব্বিকুম"? আমি কি তোমাদের প্রতি পালক নই? আমরা স্বীকার করিয়া বলিয়াছিলামঃ " কালু বালা " হ্যাঁ আপনিই আমাদের রব। প্রশ্ন হইলঃ আমরাতো না দেখিয়া সাক্ষ্য দেই নাই। দেখিয়া শুনিয়াইতো বলিয়াছি এবং স্বীকারোক্তি দিয়াছি। তো সেই সময় রবকে যদি দেখিয়া থাকি তাহা হইলে এই জগতে সেই রবের চেহারাটা কোথায়? আর রবওতো আমাদের দেখিয়াছিলেন এবং আমাদের কথা শুনিয়াছিলেন। সেই সাক্ষ্যতো স্বয়ং রব নিজেই নিয়াছেন। উল্লেখ করার বিষয় হইলো - সেইখানে কিন্ত্তু আল্লাহ রুপে পাই না। পাই রবরুপে। কেন? বিষয়টা ভাবিবার মতো নয় কি? যেইরবকে দেখিয়া তুমি সাক্ষ্য দিয়াছিলে সেই রবকে বর্তমানে কেন চিন না? তোমাকে আমি সম্মুখে দেখিতেছি। তোমার হাসি, তোমার চেহারা, তোমার দেহপল্লবি, তোমার হাত, পা, সবই যখন আমার মনে গাঁথা হইয়া যাইবে,তো তুমি যতদুরেই খাকো না কেন, তোমাকে আমি ঠিকই চিনিতে পারিব। ঠিক কি-না? যদি ঠিক হইয়া থাকে তাহা হইলে এখন সেই রবকে কেন খুঁজিয়া বেড়াও না? কেন তাহাকে দেখ না?

সুফী সাহেবের কথা শুনে আমরা কেহ কোনরুপ শব্দ উচ্চারণ না করে নিমগ্ন শ্রোতার মতো তার পানে বসে আছি। তিনি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তিনি আবার বলা শুরু করলেনঃ

শুন মিয়ারা, একজন কুমার যখন মাটি দিয়া পাত্র বানায় তখন তাহার মধ্যে কিছুটা স্থান ফাঁকা রাখা হয়। কেন রাখা রাখা হয়? যাহাতে সেই শুণ্যস্থানে কোন কিছু রাখিতে পারে। যেমনঃ কলস, হাঁড়ি ইত্যাদি। কোন কিছুকে আকৃতি দিবার জন্য একটি ছাঁচ তৈরী করিয়া সেই ছাঁচে গলিত কিছু ফেলিলে উহা যখন শক্ত হয় তখন বস্তুটি দেখিতে কেমন হইবে? সেইটা দেখতে অবিকল ছাঁচটির মতোই হইবে। তাহা নয় কি
আল্লাহ পাক যখন আদম নামক এই ছাঁচটি তৈরী করিলেন তখন শুন্যস্থানে রবরুপে বসিলেন। যা ছিল তাহার হুকুম। নাফাকতু মির রুহ নাফাক শব্দটির অর্থ হইতেছে ফুঁকে দেওয়া। মুল বস্তুটি হইতেইতো উহা আসিয়াছে। যে বস্তুটি আসিয়াছে তাহা হইতেছে - একটি রহস্যপূর্ণ বাতাস। যেমন আমি তোমাকে যদি ফুঁ দেই তুমি কি আমার তরফ হইতে ফুঁ দেওয়া বাতাসের স্পর্শ পাইবে না? যদি পাও তাহা হইলে ধরিয়া লও 'রুহ' হচ্ছে সেই রহস্যপূর্ণ বায়ু। এই বায়ুই তোমার দেহে রব রুপে সর্বক্রিয়া সম্পন্ন করিতেছে। সুফীরা সেই মহান স্বত্তাকেই স্বীকার করিয়াই ইবাদত বন্দেগী করেন।
সুরা বাকারার ২৮ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেনঃ 
কাইফা(কেমন করিয়া,কিরুপে,কিভাবে)তাকফুরুনা(কুফরী করা, অস্বীকার করা, মিথ্যারোপ করা) বিল্লাহি(আল্লাহর সহিত বা সংগে,আল্লাহকে)ওয়া(এবং)কুনতুম(তোমরা ছিলে)আমওয়াতান(মৃত)
ফাআহইয়াকুম(সুতরাং তোমাদেরকে জীবিত করিয়াছেন)সুম্মা(তারপর)ইউমিতুকুম(তোমাদেরকে মৃত্যুদান করিবেন)সুম্মা(তারপর)ইউহয়িকুম(তোমাদেরকে জীবিত করিবেন)সুম্মা(তারপর)ইলাইহে(তাহারদিকে)
তুরজাউন(প্রত্যাবর্তন তথা ফিরিয়া আসা)।-এই আয়াতে প্রথমেই 'তোমরা মৃত ছিলে' বলার আগে 'এবং' শব্দটি ব্যবহার করা হইয়াছে। 'এবং' অর্থটি হলো মানবের অতীত জীবনের ইংগিত বহন করা। সেখান থেকে তিনি তোমাদেরকে জীবন দান করলেন। তারপর তোমাদেরকে মৃত্যু-ঘটনাটি দান করেন। তাপর তোমাদেরকে জীবন দান করেন। তারপর তাহার দিকে প্রত্যাবর্তন কর। এই 'তারপর' শব্দটি তিন-তিনটি বার উল্লেখ করিয়া জন্ম-মৃত্যুর পুনরাবৃ্ত্তির ইংগিত দিতেছেন। সুরা মুলুকের ২নং আয়াতেও বলা হইয়াছে যে মানুষকে পরীক্ষা করার জন্যই আল্লাহ জন্ম-মৃত্যু সৃষ্টি করিয়াছেন। সুতরাং জন্মটা যতটুকু রহস্যপুর্ণ মৃত্যুটাও সেইরকম রহস্যপুর্ণ। 
তিনি কিরুপে জীবনদান করেন?(চলবে)