পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

সারমাদ দারদী আজাব সিকাস্তা কারদী তুনে-পর্ব আঠারো

(পূর্ব প্রকাশের পর)
খালাকাল ইনসানা মিন নুৎফাতীন (সুরা নহল অায়াত নং-৪)। অর্থঃ-গঠন করিয়াছেন ইনসানকে সামান্যতম বীর্য হইতে।
সেই বীর্য কিভাবে নির্গত হয়? আলাম ইয়াকু নুৎফাতাম মেম মানি ইয়ুমনা..(সুরা কিয়ামাহ আয়াত নং-৩৭) অর্থঃ সে (মানুষ) কি সেই অতি সামান্যতম শুক্র ছিল না-যা সজোরে নির্গত/নিক্ষিপ্ত হইয়াছিল? সুম্মা কানা আলাকাতান ফাখালাকা ফাসাওওয়া(সুরা কিয়ামাহ আয়াত নং-৩৮) অতঃপর সে হইয়াছিল এমন কিছু যাহা দৃঢ়ভাবে আটকানো ছিল; ইহার পর (আল্লাহ) তাহাকে গঠন করিয়াছেন যথাযথ মাত্রায় সামন্ঞ্জস্যপূর্ণ করিয়া। "সুম্মা খালাকনান নুৎফাতা আলাকাতান-ফা খালাকনাল আলাকাতা মুদগাতান-ফাখালাকনাল মুদগাতা এজামান-ফাকাসাওনাল এজামা লাহমান"[সুরা মুমেনুন আয়াতঃ১৪] অর্থঃ অতঃপর আমরা সেই শুক্রানুকে দৃঢ়ভাবে আটকাইয়া রাখি(জরায়ুতে); পরে সেই দৃঢ়ভাবে আটকাইয়া রাখা বস্তুটাকে পরিণত করি চিবানো গোশতের পিন্ডরুপে; এবং সেই চিবানো গোশতের পিন্ডকে দেই হাড় হাড্ডিতে এবং সেই হাড্ডির উপরে দেই আবরণ-অক্ষত গোশতের দ্বারা।" এরপর তিনি দিয়াছেন তোমাদিগকে কর্ণ ও চক্ষুর অনুভুতি এবং নাড়িভুড়ি। যা সুরা সাজদা আয়াত নং-৯ উল্লেখ আছে। যে মানব শিশুটি সৃষ্টি হলো তাকে বলা হয়েছে "লাকাদ খালাকনাল ফি আহসানে তাকবীম[সুরা তীন আয়াতঃ১৬] অর্থঃ আমরা মানুষকে গঠন করিয়াছি সর্বোত্তম সাংগঠনিক পরিকল্পনানুসারে। কিন্ত্তু যখন রুহ দেওয়া হলো তখন বলা হলোঃ" ওয়া ইজ কালা রাব্বুকা লেল মালায়েকাতে ইন্নি খালেকুন বাশারাম মেন সালসালেম মেন হামায়েম মাসনুন। ফা ইজা সাওওয়ারতুহু ওয়া নাফাকতু ফিহে মেররুহি-ফাকা-উ-লাহু সাজেদিন।[সুরা হিজর আয়াত ২৮-২৯]। অর্থ "যখন তোমার প্রভু প্রতিপালক ফিরিস্তাদিগকে বলিলেন আমি একটি মানুষ তৈয়ারী করিতে যাইতেছি কাদা হইতে, নক্সাকাটা নরম মাটি হইতে। অতঃপর যখন আমি সামন্ঞ্জস্যপূর্ণভাবে তাহার গঠন পুরাপুরি সমাপ্ত করিব এবয তাহার মধ্যে আমার রুহ ফুঁৎকার করিব তখন তোমরা উহার সামনে সিজদা নত হইও।"
দেখা গেল যখন যখনই রব রুহ ফুঁৎকার করিলেন তৎপুর্বে তিনি সমস্ত ফেরেস্তাদেরকে ডাকিয়া বলিলেন - তার সামনে সেজদাবনত হইতে। চিন্তা করার বিষয়টাই এখানে। এক বচনে আনা অর্থ আমি বহুবচনে নাহনু অর্থ আমরা। সৃষ্টির পর্যায়ে আমরা তথা নাহনু শব্দটাই বেশি ব্যবহৃত হইয়াছে। যে স্থানে ফেরেস্তারা সেজদা দিল সেস্থানটা কোথায়? যাকে সেজদা দিল অর্থাৎ পরিপূর্ণরুপে সৃষ্টি হইল-তখনতো তাহার চক্ষু,কর্ণ ছিল। যদি থাকে তো তাহা দেখার এবং শ্রবণ করার কথা। তাহা নয় কি? আলাস্ত বি রাব্বিকুম এবং কালু বালা অর্থাৎ বাক্য বিনিময় হইলে কি উভয় উভয়কে না দেখে কি সাক্ষ্য দিয়াছিল? তুমি যদি বলো যে শুক্রানুই শাই আর জরায়ুতে ডিম্বাণুই কাই। এই শাই-কাই ব্যাপারটি যদি থাকে তো সেখানে রবের ভুমিকা পালন করলো কে? শুক্রানু না ডিম্বাণু? আমরা জানি ডিম্বাণুর ভেতর শুক্রাণু প্রবেশের পরই নির্দিষ্ট সময় পরেই নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া আরম্ভ হয়। যা পূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে। তারপর রুহ ফুঁৎকারের কথা বলা হইয়াছে। এর পূর্বে নয়তো? তাহা হইলে দেখা যাইতেছে যে রুহ বিষয়টি পুরোপুরিই রহস্যজনক। এই রহস্যজনক বিষয়টি ক্কোরআনে বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ রহিয়াছে। যথাঃ

১. "তানাজজালুল মালাইকাতু ওয়ার রুহু ফিহা বিইজনি রা্ব্বিহিম মিন কুল্লি আমরিন[সুরা কদর আয়াত-৪] অর্থঃ তাহার মধ্যে (সেই রাত্রিতে) অবতরণ করিয়াছে ফেরেস্তাগণ এবং রুহ উহার মধ্যে তাহাদের রবের অনুমতিতে প্রত্যেক আদেশ হইতে।

২. "ইউলকির(নিক্ষেপ করেন, ক্ষেপন করেন, সম্মুখে স্থাপন করেন, অর্পণ করেন) রুহা(রুহকে, পরমাত্মাকে) মিন(হইতে) আমরিহি(তাহার আদেশে) আলা(উপরে) মাই(যাহাকে) ইয়াশাউ(ইচ্ছা করেন)"।[সুরা মোমিন আয়াত নং-১৫] অর্থঃ নিক্ষেপ করেন রুহ তাহার আদেশ হইতে যাহার উপর ইচ্ছা করেন।


৩."ওয়া (এবং) ল্লাতি (যে) আহসানাত (রক্ষা করিয়াছিল,সংরক্ষণ করিয়াছিল, বজায় রাখিয়াছিল,টিকাইয়া রাখিয়াছিল) ফারজাতা (তাহার কামপ্রবৃত্তিকে, তাহার সতিত্বকে, যৌন সম্ভোগকে) ফানাফাখনা (সুতরাং আমরা ফুৎকার দিয়াছিলাম) ফিহা (তাহার[মরিয়ম]মধ্যে) মিন(হইতে) রুহিনা (আমাদের রুহ) ওয়া (এবং) জাআলনাহা (তাহাকে বানাইয়াছিলাম) ওয়া (এবং) আবনাহা (তাহার পুত্রকে)আয়াতাল(একটিঅায়াত[নিদর্শন])লিল(জন্য)আলামিন(সমস্তআলমের,বিশ্বাসীদের)।"[সুরা আম্বিয়া আয়াত নং-৯১] অর্থঃ  এবং যিনি (মরিয়ম) তাহার সতীত্বকে রক্ষা করিয়াছিলেন সুতরাং আমরা ফুঁৎকার দিলাম তাহার মধ্যে আমাদের রুহ হইতে এবং তাহাকে বানাইয়াছিলাম এবং তাহার পুত্রকে একটি আয়াত সমস্ত আলমের জন্য।

৪. "ইন্নামাল(নিশ্চয়ই) মাসিহু(মসিহ) ইসাবনু(ইসা[যিনি] পুত্র) মারিয়ামা(মরিয়মের) রাসুলুল্লাহি(আল্লাহর রসুল) ওয়া(এবং) কালিমাতুহু (তাহার কালাম) আলকাহা(তিনি [আল্লাহ] যাহা নিক্ষেপ করিয়াছিলেন) ইলা(দিকে) মারিয়ামা(মরিয়মের) ওয়া(এবং) রুহহুন(রুহ) মিনহু(তাহার[আল্লাহ]হইতে।" [সুরা নিসা আয়াত-১৭১] অর্থঃ নিশ্চয়ই মরিয়মপুত্র ইসা মসিহ আল্লাহর রসুল এবং তাহার কালাম। তিনি (আল্লাহ) যাহা নিক্ষেপ করিয়াছিলেন মরিয়মের দিকে এবং তাহার(আল্লাহ) হইতে রুহ।

৫. "ফাততাখাজাত (সুতরাং তিনি[মরিয়ম]গ্রহণ করিলেন) মিন দুনিহিম (তাহাদের হইতে) হিজাবান (পর্দা) ফা আরসালনা (সুতরাং  আমরা[আল্লাহ] পাঠাইলাম) ইলাইহা (তাহার দিকে) রুহানা (আমাদের[আল্লাহর]রুহ) ফাতামাসসালা (সুতরাং উহা প্রকাশিত হইল) লাহা (তাহার জন্য) বাশারান (বাশার[মানুষ]) সাউইইয়ান (পরিপূর্ণ)।" সুরা মরিয়ম আয়াত-১৭)। অর্থঃ সুতরাং তিনি(মরিয়ম)পর্দা গ্রহণ করিলেন তাহাদের হইতে সুতরাং আমরা(আল্লাহ)পাঠাইলাম তাহার দিকে আমাদের(আল্লাহ) রুহ সুতরাং উহা প্রকাশিত হইল তাহার জন্য পরিপূর্ণ বাশার(মানুষ)।

সুতরাং দেখা যাইতেছে যে রবরুপেই রুহের অবস্থান আছে। তথা রব প্রচ্ছন্নভাবে অবস্থান করছেন আমাদেরই মাঝে। কিন্ত্তু আমরা তা দেখতে পাইতেছি না। কারণ আমাদের অন্তঃকরণ কুফুরি অবস্থায় আছে। এই কুফুরি অবস্থা হইতে তোমাকে মুক্ত হইতে হইবে। আজকে অনেক রাত হইয়া গিয়াছে। তাই তোমাকে কালামে সামস তাব্রীজি হইতে কিছু কালাম বলিতেছি মনোযোগ সহকারে শুনঃ



মালেকুল মুলক  লা শারিকালাহু ওয়াদাহু লা ইলাহা ইল্লাহু

শামস তাব্রেজ গার খুদাতালাই খুশবু কালা লাইলাহা ইল্লাহু

কোনাইনকা মশজুদ বা মাবুদ হে তু।

অর জো  তেরি শাহিদ হে  কে মশহুদ হে তু
অর এককে লপ্পর হ্যায় তেরি হমাদ সা'না


অর সোজমে অর সাঝমে মজুদহে তু


তেরেহি নামছে অর ইফতেদা হে


তেরেহি নাম তক অর ইনতেহা হে


তেরি হামদ সানা অালহামদুীল্লাহ তু মেরে মুহাম্মদ কা খুদা হে


ইয়ে জমি যাব না থি অর ইয়ে জাঁহা যাব না থা


চাঁদ সুরজ না থে আসমা যাব না থা


ইয়ে রাজ হামভি কিসি পার জব না থা


জব না থা কুছ ইহা মাগার তু তি তু।
পৌঁছে মেরাজ মে আরশে তক মুস্তফা তাব মাবুদ না বান্দা মে পর্দা রাহা
তাব মালায়েকনে হযরতছে ঝুঁককার কাঁহা ছারি মাখলুকমে হকনোমা তুহি তু।

তোমাদেরকে অনেক কথা বলিয়াছি।প্রয়োজনবোধ করিলে আবার আসিও। এখন তোমরা মাহফিলে যাও। রাত অনেক হইয়াাছে। আমাকেও মাহফিলে যাইতে হইবে।

আমরা সবাই তাকে সালাম করে রুম হতে বের হয়ে এলাম। বাহিরে এসে দেখি লোকজনের খাওয়া দাওয়া শেষ হয়েছে। মাইক থেকে ঘোষণা আসছে-"বিদেশী মেহমানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা যারা এখনো..."। লাইটের ঝলমলে আলো আঁধারের খেলা আর আজকের পরিবেশ আমাকে সম্পূর্ণ ভিন্নরুপে উপস্থাপন করেছে। বিশেষ করে মামুন ভাই আর মাহিন যখন বললো-কি কিছু্ইতো বুঝতেছি না। তোকে সামনে পেলেই যেন সুফী সাহেব অনেক কথা বলেন। আর আমাদের সামনে তেমন কোন কথা বলে না। তাছাড়া তোকে আবার কোন দরবারের ঠিকানা দিয়েছে সেখানে যাবার জন্য।ব্যাপারটা কেমন যেন রহস্যজনক মনে হচ্ছে। আমিও বেশ অবাক হলাম। কিন্ত্তু ঐমুহুর্তে কিছু বলতে পারিনি। কারণ আমার মাথায় তখন চিন্তা। মামুন ভাই বললেন
-চলেন ভাই, চা খেয়ে আসি। তারপর মাহফিলে যাবনে।

আমরা আর কেউ অমত করলাম না। মামুনভায়ের সাথে চলে গেলাম চায়ের দোকানে।

(চলবে)