পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

বেদে কতজন ঈশ্বরের উল্লেখ আছে?

আমরা শুনেছি বেদে অনেক ঈশ্বরের উল্লেখ আছে।আপনি অবশ্যই ভুল উৎস থেকে শুনে থাকবেন। বেদে সুস্পষ্ট ভাবেই বলা আছে ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। এবং বেদে এমন কোন মন্ত্র নেই যা বহু ঈশ্বরবাদকে সমর্থন করে। নিম্নে কিছু উপমা দেয়া হলঃ
বেদে ঈশ্বর= বাইবেলের ঈশ্বর- ট্রিনিটির ধারণা -যীশুর কাছে আত্মসমর্পন করার আবশ্যকতা
বেদের ঈশ্বর= ইসলামের কুরানের আল্লাহ - মুহাম্মদকে শেষ নবী হিসেবে স্বীকার করার আবশ্যকতা
অন্য ভাবেও বলা যায়, যদি কেউ শাহাদার প্রথম অংশটুকু বলে ("লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই) এবং দ্বিতীয় অংশটুকু (মাহাম্মুদুর রাসুল্লাহ অর্থাৎ মুহাম্মদ হচ্ছেন তারা দূত ) অস্বীকার করে তাহলে সেটা বেদের ঈশ্বরবাদের কাছাকাছি হবে। ইসলামে আল্লাহ ব্যতীত অন্যকিছুকে উপাসনা করা হচ্ছে শিরক অর্থাৎ গুরুতর গুনাহ। তাই কেউ যদি এতটুকু মেনে নেয় এবং মুহাম্মদ অথবা জিবরাইলকে আল্লাহ প্রেরিত পুরুষ ও দূত হিসেবে আবশ্যিক ভাবে মেনে নিতে অস্বীকৃত জানাই তাহলে বেদ অনুসারে তারা শিরককে এড়িয়ে যেতে পারবে।

প্রশ্নঃ তাহলে বেদে উল্লেখিত এই বিভিন্ন ধরনের দেব দেবতা কে? আর ৩৩ কোটি দেবতাগন কি?

উত্তরঃ প্রথমেই বলে নিতে হচ্ছে দেবতা হচ্ছে সত্ত্বা যা আমাদের জন্য উপকারী। কিন্তু বেদে কোথাও এটা উল্লেখ নেই যে আমাদেরকে এই সকল সত্তাকে পূজা করতে হবে। অবশ্যই ঈশ্বরও একজন দেবতা অথবা একাধিক দেবতা এবং সেজন্যই বলা হয় মহাদেবতা। তাই শুধু মাত্র তাকেই উপাসনা করতে হবে।

বেদে ৩৩ মিলিয়ন দেবতার উল্লেখ করেনি কিন্তু ৩৩ ধরনের দেবতার উল্লেখ রিয়েছে। সংস্কৃতিতে দেবতা অর্থ হচ্ছে ধরন বা প্রকার।বিষয়টি শতপথ ব্রাক্ষনে খুবই পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই ৩৩ ধরনের দেবতাদের মধ্যে রয়েছে
৮ বসু (পৃথিবী, জল, আগুন, বাতাস, আকাশও, চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ/নক্ষত্রাদি ) যা বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের (Universe) অংশীভূত যেখানে আমরা বাস করি।
১০টি দেহের জীবনী শক্তি (প্রান, অপান, বায়ু,উদানা, সামানা, নাগা, কুর্মা, কুকালা এবং দেবাদত্ত)
১টি আত্মা যাকে বলা হয় রুদ্র
১২ টি আদিত্য(বছরের মাস সমুহ)
১ তড়িৎ চুম্বকয়ি শক্তি (Electromagnetic force )
১ যজনা (মানুষ কর্তক স্বার্থহীন পূন্যকর্ম)
এই সকল ৩৩ দেবতার প্রভু হচ্ছে মহাদেবতা অথবা ঈশ্বর যাকে শতপথ ব্রাক্ষনের ১৪ কান্ড অনুযায়ী শুধু মাত্র তাকেই উপাসনা করতে হবে অন্য কাউকে নয়। এই ৩৩ দেবতার ধারণাটি হচ্ছে বিশাল গবেষণার বিষয় এবং বিষয়টিকে যথাযত ভাবে বোঝার জন্য গভীর অধ্যায়ন প্রয়োজন। তা যাই হোক, বিভিন্ন বৈদ্যিক গ্রন্থে আলোকে এই কথাটি সুস্পষ্ট হয়েছে যে এই সকল সত্ত্বগুলো যাদের আমরা দেবতা বলি তারা কেহই ঈশ্বর নয় এবং উপাসনার যোগ্যও নয়।
ঈশ্বরে বহু গুণাবলীর অধিকারী। শুধু মাত্র মুর্খ মানুষেরাই মনে করে ঈশ্বরের এই ভিন্ন ভিন্ন গুন এক একটি ঈশ্বর। উদাহরন স্বরূপ, আজকের সংবাদ পত্রে দুটি শিরোনাম হয়েছে -একটিতে প্রধান মন্ত্রী আর অপরটি বিরোধী দলের প্রধান। কিন্তু তার অর্থ এই দাঁড়ায় না যে আমাদের দেশে দুটি প্রধান মন্ত্রী আছে !

এই সন্দেহ গুলো দূর করার জন্য বেদে কয়েকটি মন্ত্র আছে যেখানে পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করেছে যে ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় এবং তার কোন সহকারী, দূত, নবী, অবতার অথবা অধিনস্ত কোন কর্মচারী নেই যার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবো। উদাহরন স্বরূপঃ

যর্যুরবেদ ৪০.১: এই সমস্ত বিশ্ব শুধু মাত্র একজন ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে।কখনই অন্যায় করো না অথবা অন্যায় ভাবে সম্পদ অর্জনের ইচ্ছা করো না।
ঋগবেদ ১০.৪৮.১: ঈশ্বর সর্বত্রই বিদ্যমান এবং বিশ্ব ব্রক্ষান্ডকে পরিচালিত করেন। পৃথিবীতে একমাত্র তিনিই জয় ও শ্বাশত কারন প্রদান কারী। প্রতিটি আত্মা অবশ্যই তাঁকেই সন্ধান করবে যেমন করে একটি শিশু তারা বাবাকে খোঁজে। শুধুমাত্র তিনি আমাদেরকে খাদ্য ও স্বর্গীয় সুখ প্রদান করেন।
ঋগবেদ ১০.৪৮.৫: ঈশ্বর সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করেন। তিনি অপরাজেয় এবং মৃত্যুহীনও। তিনি এই জগত সৃষ্টিকারী। সকল আত্মার উচিত পরম সুখ সন্ধান করা জ্ঞান অন্বেষণ ও কর্মের মধ্য দিয়ে। তারা কখনই ঈশ্বরের বন্ধুত্ব থেকে নিজেকে পরিহার করবে না।
ঋগবেদ ১০.৪৯.১: ঈশ্বরই সত্যের সন্ধানীদের সত্যজ্ঞান দিয়ে থাকেন। তিনিই শুধু জ্ঞানের প্রর্বতক এবং ধার্মিক ব্যাক্তিদের পরম সুখ লাভের জন্য পবিত্র কর্ম করতে উৎসাহী করেন। তিনিই একমাত্র জগতের সৃষ্টিকারী এবং এর পরিচালক। ঙটাই ঈশ্বর ব্যাতীত অন্য কারো উপাসনা করো না।

যর্যুরবেদ ১৩.৪: সমগ্র বিশ্বে শুধু একজনই হর্তাকর্তা রয়েছেন। শুধুমাত্র তিনিই পৃথিবী, আকাশ, এবং অন্যন্যা দৈব সত্ত্বাকে ধারণ করেন। তিনি নিজেই পরম সুখী! তিনিই শুধু মাত্র তিনিই আমাদের দ্বারা উপাসিত হবেন।
অর্থববেদ ১৩.৪.১৬-২১: তিনি না দুই, না তিন, না চার, না পাঁচ, না ছয়, এমনকি না সাত, না আট, না নয়, না দশ। তিনি একজন এবং শুধুই একজন। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ঈশ্বর নন। সকল দেবতাগণ তার মাঝেই থাকেন এবং তার দ্বারাই পরিচালিত হন। তাই তিনি ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য নাই।
অর্থববেদ ১০.৭.৩৮: শুধু মাত্র ঈশ্বরই হলেন শ্রেষ্ট এবং একমাত্র উপাস্য। তিনিই সকল জ্ঞানের ও কার্যাবলীর উৎস।
যর্যুরবেদ ৩২.১১: বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের সকল স্থানেই তিনি বর্তমান। কোন স্থানই তাকে আড়াল করতে পারে না। তিনি নিজেই নিজের কাজ করেন এবং তাঁর কাজ করার জন্য তাঁর কোন সহায়কের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। যে আত্মা অনুধাবন করতে পারে যে শুধুমাত্র ঈশ্বরই তাকে জয় করতে পারে এবং উপভোগ করতে পারে শর্তহীন অসীম আনন্দ অথবা মকশা।

বেদে এই রকম আরও অসংখ্য মন্ত্র রয়েছে যেখানে এক মাত্র ঈশ্বরকেই ব্যাখ্যা করেছে এবং উপদেশ দিয়েছে অন্য কোন দৈব সত্ত্বাকে ( অবতার, রাসূল, ফেরেশতা, দূত, দেবদেবী) না ডেকে একেবারে সরাসরি শুধু তাকেই ডাকো এবং তারই বন্দনা ও উপাসনা করো।

প্রশ্নঃ কিভাবে আপনি ঈশ্বরের অস্তিত্বকে প্রতিষ্টা করবেন?
উত্তরঃ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রমাণের দ্বারা।

প্রশ্নঃ কিন্তু ঈশ্বরেরে প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেয়াতো সম্ভব নয়। তাহলে কিভাবে আপনি ঈশ্বরকে প্রতিষ্ঠা করবেন?
উত্তরঃ প্রমাণ অর্থ হচ্ছে স্বচ্ছ জ্ঞান যা ইন্দ্রিয় অঙ্গ গুলো হতে প্রাপ্ত উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়। কিন্তু লক্ষ করুন ইন্দ্রিয় অঙ্গ গুলো শুধ মাত্র গুন সুমহকে ধারণ করতে পারে ঐ সকল গুনের কারন বা হেতুকে নয়। উদারহন স্বরূপ, যখন আপনি এই লেখাটি পড়ছেন তখন কিন্তু আপনি আমার অস্তিত্বকে ধারণ করতে পারছেন না, কিন্তু কতগুলি সাংকেতিক চিহ্ন, বর্ন, বা ছবি যা কম্পিউটার স্ক্রিনে আসছে যা আপনি অর্থপূর্ন জ্ঞানে রূপান্তরিত করছেন। তারপরে আপনি এই সিদ্বান্তে উপনীত হয়েছেন যে এই লেখাটির কোন লেখক আছে এবং এই লেখকের অস্তিত্বের প্রমান আপনার কাছে আছে বলে আপনি দাবী করেন। ্সুতরাং এটা হচ্ছে একটি পরোক্ষ প্রমাণ যদি প্রত্যক্ষ ভাবেই প্রতীয়মান হয়। ঠিক একই ভাবে এই সমস্ত সৃষ্টি যা আমরা এর বৈশিষ্ট্য দ্বারা পর্যবেক্ষন করি আমাদের ইন্দ্রিয় অঙ্গসমূহ মধ্য দিয়ে তা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে পরোক্ষভাবে প্রকাশ করে।

যখন প্রত্যক্ষভাবে একটি সত্ত্বার সাথে একটি সংবেদনশীল তথ্যের যোগসূত্র ঘটাতে পারবেন তখন আপনি দাবী করতে পারবেন যে আপনার প্রত্যক্ষ প্রমান আছে। উদাহরণ স্বরূপ, যখন আপনি আম খান তখন আপনি এর মিষ্ট গুনকে উপলব্ধি করতে পারেন এবং যে আমটি খেয়েছিলেন তার সাথে এই মিষ্ট গুনটিকে সংশ্লিষ্ট করতে পারছেন। এখানে গুরুত্বপুর্ন দিকটি হচ্ছে আপনি "প্রত্যক্ষ প্রমান" কে শুধু মাত্র সংশ্লিষ্ট করতে পারছে নির্ধারিত কোন ইন্দ্রিয় অঙ্গ দিয়ে যা আপনি ব্যবহার করেছিলেন ঐ গুনটিকে পর্যবেক্ষন করার জন্য। অর্থা আমের এই প্রত্যক্ষ প্রমান আপনি কর্ন ইন্দ্রিয়ের মধ্য দিয়ে পাবেন না। এটা কেবল জিহ্বা, নাসিকা, ও চক্ষু দ্বারাই সম্ভব। ঠিক তেমনি বাস্তবে আমরা "পরোক্ষ প্রমাণ" গুলিও পাই যদিও আমরা এগুলোকে "প্রত্যক্ষ প্রমান" বলে থাকি।

যেহেতু ঈশ্বর হচ্ছেন সবচেয়ে সুক্ষ অতীন্দ্রি়য় সত্ত্বা সেহেতু ঈশ্বরের "প্রত্যক্ষ প্রমান" আমাদের এই অসুক্ষ অশিষ্ট সীমিত শক্তির ইন্দ্রিয় অঙ্গ যেমন নাক, কান, চোখ, জিহ্বা, চর্ম দ্বারা সম্ভব নয়। যেমন আমরা অতি পারমানবিক কণাকে এমনকি অনেক শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে পারি না, আমরা শ্রবণাতীত শব্দ (Ultrasonic Sound ) শুনতে পারি না, আমরা স্বরন্ত্র একটি অণুর স্পর্শ অনুভব করতে পারি না। অর্থাৎ ঈশ্বরকে এই দুর্বল ও অসুক্ষ ইন্দ্রিয় অঙ্গ দ্বারা প্রমাণিত করা যাবে না ঠিক যেমন আমকে কর্ন দ্বারা অথবা অতি পারমানবিক কণাকে কোন ইন্দ্রিয় অঙ্গ দিয়ে ইন্দ্রগ্রাহ্য করা যাবে না।

একমাত্র ইন্দ্র যা ঈশ্বরকে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য করতে পারে তা হলে মন। যখন মন সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রিত এবং সকল ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টিকারী উপাদান (যেমন চিন্তা যা সর্বদা জাগ্রত থাকে) থেকে মুক্ত এবং ঈশ্বরের সকল গুন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান যা অধ্যায়ন ও চর্চার মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে, তাহলেই বুদ্ধিবৃত্তির মধ্যে দিয়েই প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বরকে প্রমান করা যাবে যেমন করে ঐ আমকে এর স্বাদ দ্বারা প্রমান করা হয়েছিল। এটাই হচ্ছে জীবনের উদ্দেশ্য যা একজন যোগী করার চেষ্টা করেন মন নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্বতী প্রয়োগ করেন। এই পদ্ধতি গুলোর মধ্যে রয়েছে অহিংসা, সত্য সন্ধান, পর দুঃখকাতরতা, সকলের জন্য পরম সুখ সন্ধান, উন্নত নৈতিক চরিত্র, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই, মানুষের মাঝে একতা ইত্যাদি, ইত্যাদি।

এভাবে আমাদের প্রাতাহিক জীবনে আমরা ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ প্রমানের ইঙ্গিত পাই। যখন আমরা চুরি, প্রতারণা, পাশবিকতার মত কোন ভুল কাজ করি তখন আমরা ভয়,ভীতি, লজ্জা, সন্দেহের ইত্যাদি আকারের আমরা ক্ষীণ ভেতরকার ক্ষীন কণ্ঠস্বর শুনতে পাই। আর যখনই আমরা কোন মঙ্গল সূচক কাজ করি যেমন কাউকে সাহায্য করা, কোন শিশুকে আর্শীবাদ করা ইত্যাদি, তখনও আমরা ভেতরকার ক্ষীণ কণ্ঠস্বর শুনতে পাই ভয়শূন্য, আত্মতৃপ্তি, প্রত্যয়ী ও পরম সুখবোধ আকারে।

এই ভেতরের কণ্ঠস্বরটি আসে ঈশ্বরের কাছ থেকে। আমরা প্রায়শই এর শ্রাব্যতাকে কমিয়ে চুপ করে রাখার চেষ্টা করি আমাদের চারপাশে উচ্চ শব্দের DJ Music এর মত নির্বোধ প্রবণতার মাধ্যমে। কিন্তু তখন আমরা সবাই কোন এক সময়ে ভেতরের কণ্ঠস্বরকে আরও উচ্চ শব্দে শুনতে পাই যখন এই সব কিছু তুলনামূলকভাবে নিঃশ্চুপ।

যখন আত্মা নিজেকে সকল মানসিক বিশৃঙ্খলা থেকে নিজেকে শুদ্ধ করে এবং ঐ DJ ক্লাব থেকে বেরিয়ে আসে তখন আত্মা নিজেই নিজেকে ও ঈশ্বর প্রত্যক্ষভাবে প্রামানিক হয়। এভাবে আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরকে প্রতিষ্টা করতে পারি পরিষ্কার ভাবে যেভাবে বিভিন্ন সত্ত্বাকে আমরা করতে পারি।

প্রশ্নঃ ঈশ্বর কোথায় থাকেন?
উত্তরঃ
১. ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান সেই জন্যে তিনি সকল স্থানেই বিদ্যমান। ঈশ্বর আকাশে কোন বিশেষ জায়গায় অথবা কোন বিশেষ সিংহাসনের মত কোন নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করতেন তাহলে তিনি সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ, সর্ব শক্তিমান, সকল কিছুর পরিচালক, সৃষ্টিকারী ও ধ্বংসকারী হতে পারতেন না। তিনি যেখানে বর্তমান নেই সেখানে তিনি তার কোন ক্ষমতায় প্রয়োগ করতে পারবেন না।

২. যদি তুমি বল ঈশ্বর কোন এক জায়গা থেকে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করছেন যেমন করে সুর্য লক্ষ কোটি মাইল দূর থেকে আলো ছাড়ায় অথবা যেমন করে রিমোর্টের মাধ্যমে তুমি টেলিভশনকে নিয়ন্ত্রণ কর, এগুলো সব দুর্বল যুক্তি। কারন সূর্য পৃথিবীকে আলোকিত করা ক্ষমতা রাখে এবং রিমোর্ট কন্ট্রোল টেলিভশনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে রশ্মিবিচছুরণ তরঙ্গের (radiation waves) মধ্য দিয়ে যা অর্ন্তবর্তি কাল ও সীমার মধ্যে ( interim space) সীমাবদ্ধ। যেহেতু আমরা তাদের দেখতে পারি না তাই আমরা একে দূর নিয়ন্ত্রক (remote control) বলি। কিন্তু বাস্তবে দূর নিয়ন্ত্রক বলে কিছু নেই। মূল কথাটি হচ্ছে ঈশ্বর কোন কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করছেন বলতে আমরা বুঝি তিনি সেখানে উপস্থিত থেকেই নিয়ন্ত্রণ করছেন।

৩. অধিকন্ত যদি ঈশ্বর সর্বশক্তিমান হয়ে থাকেন তাহলে কেন তিনি ভীত হয়ে নিজেকে একটি ছোট জায়গায় সীমাবদ্ধ করবেন। এতে করে ঈশ্বর সীমিত শক্তির হয়ে যাবেন। খ্রিষ্টানরা বলে যে ঈশ্বর আছেন ৪০ আসমানে আর মুসলিমরা বলে সাত আসমানে। এবং তাদের অনুসারীরা পরস্পরের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকে তার নিজের মতটা সত্য ও যর্থাত বলে প্রমাণ করা জন্য। তার মানে কি GOD এবং আল্লাহ্‌ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তারা ভিন্ন ভিন্ন আকাশে বাস করবেন যাতে করে তারা তাদের অনুসারীদের মত ঝগড়ায় লিপ্ত না হন?

প্রকৃত পক্ষে এটা একটা শিশু সুলভ বক্তব্য। যেখানে ঈশ্বর সর্ব শক্তিমান এবং সমস্ত বিশ্ব ব্রক্ষান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করেন সেখানে কোন কারনই নেই যে তিনি ভয়ে বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের কোন এক ক্ষুদ্র সীমিত জায়গায় আত্মোগোপন করবেন। যদি তিনি তা করে থাকেন তাহলে তাকে সর্বশক্তিমান বলা যাবে না।

প্রশ্নঃ তার মানে কি ঈশ্বর অ্যালকোহল, মূত্র, বিষ্ঠার মত নোংরা জিনিসেও বিদ্যমান?
উত্তরঃ
সমস্ত সৃষ্টি ঈশ্বরের মাঝেই। কারন হলো ঈশ্বর এই সকল জিনিসের বাইরে কিন্তু এই সকল জিনিস ঈশ্বরের বাইরে নয়। সুতরাং পৃথিবীর সমস্ত কিছুতে ঈশ্বর পরিব্যাপ্ত। উপমা স্বরূপ বলতে পারি আমরা ঈশ্বরের মাঝে আছি যেমন করে এক টুকরো কাপড় এক বালতির জলে মধ্যে থাকে। কাপড়টির মধ্যে, বাইরে এবং চারিদিকে জল বিদ্যমান। পুরো কাপড়ের টুকরোটিতে জলে ভিজে গেছে কিন্তু জল কাপড়ে বাইরে।

তাই কোন কিছু ভাল ও মন্দ নির্ভর করে সেটার প্রতি আমাদের দ্বায়িতটা কি রকম তার উপর। এক ধরনের কত গুলো অণু মিলে একটি মিষ্টি আম হিসেবে গড়ে ওঠে যা আমাদের জন্য খুবই কদরের বস্তু। কিন্তু যখন এই অণুগুলোকে আলাদা করা হয়, অন্যন্যা রাসায়নিক পর্দাথের সাথে বিক্রিয়া করা হয় এবং সেগুলোকে মলমূত্রে পরিণত করা হয় তখন তা আমাদের জন্য নোংরা হয়ে যায়।প্রকৃতপক্ষে এই সকল জিনিসের সার হচ্ছে শুধু মাত্র প্রকৃতির বিভিন্ন অণুর সমন্বয় মাত্র। যেহেতু পৃথিবীতে আমাদের একটা মিশন রয়েছে, তাই আমরা সমস্ত কিছুকে আমরা বিশ্লেষণ করি আমাদের মিশন অনুযায়ী এবং কিছু গ্রহন করি আর কিছু পরিত্যাগ করি। যা আমরা ত্যাগ করি তা আমদের জন্য নোংরা আর যা আমরা গ্রহন করি তা আমাদের জন্য ভাল। কিন্ত ঈশ্বরের কাছে এই ধরনের দ্বায়িত নেই এবং তজন্ন তার কাছে কোন কিছুই নোংরা নয়। অন্য ভাবে বলা যায়, তার কর্ম ও দ্বায়িত আমাদের চেয়ে ভিন্ন। তাই জগতের সমস্ত কিছু তার স্পর্শের বাইরে নয়।

আপনি যদি অন্য ভাবে দেখতে চান তাহলে বলব যে ঈশ্বর কোন নাম মাত্র সমাজ কর্মী নন যিনি সশরীরে দুর্দশাগ্রস্থ মানুষদের দুর্দশা পর্যবেক্ষন করার জন্য দুর্গত স্থান পরিদর্শন না করে দূর থেকেই শাতীতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসেই পরিকল্পনা করতে পছন্দ করেন। বরং ঈশ্বর সকল স্থানের নোংরাগুলির মাঝে বর্তমান থাকেন আমাদের উপকারের জন্য। যেহেতু ঈশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ সেহেতু তিনি সর্বত্র ব্যাপী এবং সমস্ত তার মাঝে বর্তমান হওয়া সত্ত্বেও তিনি ঐ সকল বিষয় হতে বাইরে ও ভিন্নতর।

প্রশ্নঃ ঈশ্বর কি দয়ালু এবং ন্যায় বিচারক?

উত্তরঃ হ্যাঁ তিনি দয়ালু এবং ন্যায়বিচারক।

প্রশ্নঃ কিন্তু এগুলোতো বিপরীতার্থক লক্ষণ কারন দয়ালুতা মানেইতো অন্যায়কারীদের ক্ষমতা করে দেয়া। এবং ন্যায়বিচার অর্থ হচ্ছে দোষীদের শাস্তি দেয়া। তাহলে কিভাবে এই দুটি বিষয়কে এক সাথে অবস্থান করবে?

উত্তরঃ দয়ালুতা এবং ন্যায়বিচার মূলত এক ও অভিন্ন। কারন দুটির উদ্দেশ্যই এক। দয়ালুতা মানে ওন্যায়কারীকে ক্ষমা করে দেয়া নয়। কারন যদি তাই হয় তাহলে অনেক নিষ্পাপ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এই ভাবে যদি ন্যায়বিচারের মাধ্যমে অন্যায়কারীদের তাদের প্রাপ্য সাজা না দেয় তাহলে কেউ নিরীহ ও নিষ্পাপ মানুষের প্রতি দয়ালু হতে পারবে না। শুধু তাই নয় এটা অন্যায়কারীদের প্রতি অবিচার হবে কারন তাকে ভবিষ্যতে আরও অন্যায় করা থেকে বিরত করা হচ্ছে না।

যেমন যদি একজন ডাকাতকে ক্ষমা করে দেয়া হয় তাহলে সে আরও মানুষের ক্ষতি করবে। কিন্তু যদি সে কারাদণ্ড ভোগ করে তাহলে সে আর অন্যায় করতে পারছে না। এই ভাবেই ন্যায় বিচার দয়ালুতার মাঝেই সবার জন্য নিহিত থাকে।

প্রকৃত পক্ষে দয়ালুতা, মহানুভবতা বলতে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যকে বুঝায় আর ন্যায় বিচার বলতে তার ধারাকে বুঝায়। যখন ঈশ্বর দোষীদের শাস্তি দেন তখন তিনি অন্যায়কারীদের আর অপরাধ কর্ম করা থেকে বিরত রাখেন। এবং নির্দোষী ব্যাক্তিদের বিরত রাখেন শাস্তি পাবার হাত থেকে কোন অপরাধ না করার জন্য। এই ভাবে ন্যায় বিচারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সকলের জন্য দয়ালুতা।

বেদ ও প্ররযবেক্ষনাসুরে সকল দুঃখের মূল হচ্ছে অজ্ঞতা যার দরুন মানুষ ভুল কর্ম করে তাকে আমরা বলি অপরাধ, তাই যখন কোন আত্মা এই রকম কোন ভুল কাজ করে তখন ভুল কর্ম না করার জন্য ঈশ্বর তার স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করে দেয়। এবং তাকে সকল অজ্ঞতা ও দুঃখ দূর করার সুযোগও দেন।

শুধু মাত্র দুঃখিত বলে কেউ ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা পাবে না। সমস্ত পাপ ও অন্যায়ের উৎস হচ্ছে অজ্ঞতা এবং যতক্ষণ না পর্যন্ত তা দূর হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে আত্মা তার কৃত কর্মে জন্য যথাযথ শাস্তি ভোগ করবে তার প্রতিটি জন্মের ও মৃত্যর প্রতিটি মূহুর্তে। এই সকল ন্যায় বিচারের উদ্দেশ্যই হচ্ছে আত্নার প্রতি দয়ালুতা করা পরম সুখ ভোগের পুরুস্কারের মাধ্যমে।

প্রশ্নঃ তার অর্থ এই যে ঈশ্বর আমাকে আমার পাপের জন্য ক্ষমা করবে না? তাহলে ইসলাম অথবা খ্রিষ্ট সম্প্রদায়ই অধিকতর ভালো। কারন আমি যদি আমার অপরাধ স্বীকার করে নেই এবং ক্ষমা চাই তাহলে আমার পূর্বের সমস্ত পাপের তালিকা মুছে (Delete) যাবে। এবং আমাকে একেবারে নতুন করে আবার সুযোগ দেবে।

উত্তরঃ ঈশ্বর আপনার পাপকে ক্ষমা করে দেবে। তার ক্ষমা আপনার কর্মের ফলের উপর নির্ভর করে এবং তিনি তা করে থাকেন পূর্বের পাপকে মুছে না দিয়ে। যদি তিনি আপনার পূর্বের পাপ রেকর্ডকে মুছে দেন তাহলে তিনি আপনার সাথে অনেক বড় অন্যায় করবেন। কারন এক্ষেত্রে তিনি আপনাকে পরবর্তী ধাপে উন্নতি করে দিচ্ছেন যেখানে আপনি যোগ্য নন এমনকি আপনি বর্তমান ধাপেও উর্ত্তীন হননি। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তিনি অন্যদের সাথেও অন্যায় করছেন যারা তার সাথে ছিল।

ক্ষমা করা অর্থ হচ্ছে আপনার উপযোগিতাকে উন্নত করার সুযোগ এবং তোমাকে ১০০% নম্বর না দেয়া যেখানে আপনি ০% পাবার যোগ্য। আর এটাই ঈশ্বর করে থাকেন। মনে রাখবেন যে কোন কিছুর উন্নতি সাথে সাথে হয়ে যায় না অথবা শুধু দুঃখিত বললেই হয়ে যায় না। এর জন্য প্রয়োজন বেশ সময় ধরে ধর্য্যের সাথে আত্নমগ্নময় চর্চা ও প্রচেষ্টা। একমাত্র অলস ব্যক্তিই কোন অধ্যায়ন না করেই ১০০% নাম্বার পাবার জন্য সংক্ষিপ্ত পথ খোঁজে।

দুঃখজনক ভাবে ঐ সকল সম্প্রদায়ের মানুষ অন্যদের আকৃষ্ট করে এই বলে যে তোমরা যদি আমাদের সম্প্রদায়ের অর্ন্তভূক্ত হও তাহলে আল্লাহ্‌, খোদা তোমাদের সকল পাপ, গুনাহ্‌ মাফ করে দেবে।আসলে তার নিজেরা বোকা এবং অন্যদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। বিষয়টা এমন একজন ডাকাতি করে,অনেক মানুষকে হত্যা করে বিশাল সম্পত্তি বানিয়েছে, কিন্তু সে যদি এখন দুঃখিত বা মাপ চেয়ে তাদের সম্প্রদায়ের অর্ন্তভূক্ত হয় তাহলে আলাহ্‌ খোদা তার সমস্ত ডাকাতি আর খুনের নথিপত্র মুছে ফেলবেন। ্তাহলে আল্লাহ খোদা ঐ সকল ক্ষতিগ্রন্থ মানুষের প্রতি কিভাবে ন্যায়বিচার করে মানবতা প্রতিষ্টা করবেন।

আসলে এই সকল ধারণাগুলি মারাত্মাক ভুল। তারা বিশ্বাস করে জীবন মাত্র একটা এবং পুনজন্ম নেই। তাই তারা তাড়াহুড়ো করে কিছু Artificial Formula তৈরী করেছে অন্যদের আকৃষ্ট করার জন্য। এবং যারা অস্বীকার করবে তাদের দোজখের ভয় দেখায়। আমরা ইতিমধ্যে এক জীবনের তত্ত্বের ছিদ্র ঢেকে দিয়েছি। তাদের কথা শুনে মনে হয় তাদের আল্লাহ্‌ নিশ্চুয়ই উন্মাদ!

বৈদ্যিক দর্শন হচ্ছে একবারে নিরপেক্ষ, যুক্তি সিদ্ধ এবং ন্যায় সঙ্গত। কোথাও কোন নরক বা দোজখ নেই যেখানে ঈশ্বর ছুঁড়ে ফেলবেন অনন্তকাল পোড়ার জন্য। ঈশ্বর যিনি মায়ের মত স্নেহশীল মমতাময়ী। আবার তিনি কাউকে সুযোগ প্রাপ্ত হতে বঞ্চিত করবেন না যা পেয়ে মানুষ ধর্য্য শীল নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার উপযোগিতাকে তুলে ধরবে যা সে পাবার যোগ্য। মোটের উপর আমাদের কোনটি অধিকতর পরিতৃপ্ত করেঃ

ক- পরীক্ষায় নকল, ভুয়া সনদপত্র, নম্বর পত্রের মাধ্যমে প্রথম স্থান অর্জন করা যেখানে কেউ শূন্য পাবার যোগ্য, অথবা
খ-দিন রাত কঠোর সাধনা ও তপস্যা করে, অনেক তেল পুড়ে কঠিন অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে গর্বিত ভাবে প্রথম স্থান অর্জন করা এবং তার সর্বোচ্চ ঢেলে ঐ বিষয়ে পাণ্ডিত্য লাভ করা।

উওর অবশ্যই "খ" হবে। সুতরাং বেদে সফলতা পাওয়ার জন্য কোন সংক্ষিপ্ত অথবা দীর্ঘ রাস্তা নেই। সেখানে একটাই পথ আর তা হলে যথাযত পথ। এবং যারা "খ" এর পন্থা অবলম্বন করে সফলতা প্রাপ্ত হয় তারাই বেশী আত্মতৃপ্তি উপভোগ করেন।

প্রশ্নঃ ঈশ্বর সাকার নাকি নিরাকার?
উত্তরঃ বেদ এবং সাধারন বুদ্ধি অনুসারে তিনি অবশ্যই নিরাকার।
১. তার যদি কোন আকার থাকত তাহলে সর্ব ব্যাপী হতে পারতেন না। কারন আকার বলতে আমরা বুঝায় একটি নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ অবয়ব। এবং সেই জন্য তার যদি কোন আকার থাকে তাহলে সে তার সীমার বাইরে যেতে পারবেন না।

২. যদি ঈশ্বর অশিষ্ট সাধারন নগণ্য হতে তাহলে তার আকার দেখা যেত। কারন কোন বস্তু যা অন্য আরেকটি বস্তু যার আলোক তরঙ্গ প্রতিফলিত হতে পারে, তার চেয়ে সুক্ষতর তাহলে আমরা তা খালি চোখে দেখতে পাই না। ঈশ্বর হচ্ছেন সবচেয়ে সুক্ষতম, ফাঁকহীন, এবং সর্বত্র একরূপ (সূত্রঃ যর্যুরবেদ ৪০.৮) সেজন্য তার কোন আকার হতে পারে না।

৩. যদি ঈশ্বরের আকার থাকে তাহলে কেউ তার আকার সৃষ্টি করেছে। এটা একে বারেই অসম্ভব। যদি আপনি বলেন তিনি নিজেই নিজের আকার তৈরী করেছেন, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে তিনি আগে নিরাকার ছিলেন।

৪. যদি আপনি বলেন ঈশ্বর সাকার ও নিরাকার উভয়ই তাহলে এটা পরস্পর বিরোধী হয়ে যাবে।

৫. যদি বলেন তিনি যুগে যুগে বিভিন্ন ঐশ্বরিক আকার (Devine Form) ধারণ করেছেন, তাহলে দয়া করে বলবেন কি ঐশ্বরিক বলতে আপনি কি বুঝেন? ধরুন ঈশ্বর কোন একটি মানুষের ঐশ্বরিক আকার ধারণ করলেন। তাহলে এখন আপনি কিভাবে ঈশ্বরের সীমাবদ্ধ দেহের অণুগুলো ও অঈশ্বরের অণুগুলো নির্ধারন (Define) করবেন। অধিকন্তু তিনি সর্বত্র এক রূপে বিরাজ করেন তাহলে তিনি কিভাবে মানব দেহধারী ঈশ্বর ও পৃথিবীর বাকি অংশের মাঝে আলাদা করবেন? যদি তিনি সবর্ত্র এক রূপে বিরাজ করে থাকেন তাহলে তিনি আমরা কিভাবে তার নির্দিষ্ট অবয়বকে সর্বত্র দেখতে পাবো?

৬. আমরা কি দেখি যে প্রকৃতপক্ষে মানব দেহ হচ্ছে সদা পরিবর্তন শীল। এটা এক্কেবারে অসম্ভব মানব দেহ অথবা পৃথিবীর বাকী অংশের অণুগুলোকে স্বতন্ত্র করা। ঠিক তেমনি মানব ঈশ্বরের দেহকে পৃথক করাও অসম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ যদি বলি তাহলে মানব ঈশ্বর দেহ থেকে যে থু থু, মূত্র, ঘাম, মল বা অন্যন্যা যা নির্গত হবে তাও কি ঐশ্বরিক?

৭. বেদে ঈশ্বরের সাকার রূপ ধারণ করার কোন ধারণা নেই। অধিকন্তু সেখানে এমন কিছুর উল্লেখ নেই যে ঈশ্বর আকারহীন হয়ে কিছু করতে পারবে না তাই তাকে অবশ্যই আকার ধারণ করতে হবে।

৮. আমরা সাধারণত শ্রী রামচন্দ্র এবং শ্রী কৃষ্ণ এর মত কাউকে ঐশ্বরিক মানব রূপ বলে গণ্য করি তারা আসলে ঐশ্বরিক ভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। মনে আছে আমি আমরা এখানে ঈশ্বরের ভেতরের কণ্ঠস্বরের কথা বলেছিলাম? এই সকল কাল জয়ী চরিত্রগুলো ছিলেন মনের বিশুদ্ধতা ও উপাস্য ঈশ্বরের সংক্ষিপ্তসার মাত্র। এবং সেজন্য সাধারন মানুষ তাদেরকে ঈশ্বর জ্ঞান করে। কিন্তু বেদ ঈশ্বর ছাড়া অন্য কাউকে উপাসনাকে নিষিদ্ধ করেছে। এইরূপে এই সকল চরিত্রগুলোকে যা সাধারন মানুষ ঈশ্বর মনে করে তাদের পূজা করার বদলে তাদের অনুকরণ করে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি। এই সকল বীরদের ভক্তদের বেদ অনুযায়ী বলা হয়েছে এখনই সময়! বেদকে জান।

৯. যদি ঈশ্বর আকার ধারণ করবে এবং সেই সকলই আকারের পূজার মাধ্যমে মুক্তিলাভ হবে তাহলে অবশ্যই বেদে এই বিষয়ে বর্নণা থাকত। কিন্তু বেদে এই রকম কোন ইঙ্গিতই দেয়া নেই।

প্রশ্নঃ তার মানে কি সকল মন্দির ও রাম, কৃষ্ণ, দূর্গা, লক্ষি এদের পূজা করা ভুল?

উত্তরঃ ধরুন একজন ধার্মিক মা যিনি একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করেন। একদিন তার ছেলেকে সাপে কেটেছে। সে তার ছেলের জীবন বাঁচানোর এক ঝাড় ফুঁকওয়ালার কাছে ছুটে গেল। এখন আপনি কি তাকে ভুল বলবেন নাকি সঠিক বলবেন?

আজকাল ঈশ্বরের উপাসনা তা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যাই হোক না কেন সবাই আসলে একই অবস্থায় আছে। তাদের উদ্দেশ্য, ভক্তি, শ্রদ্ধা কিন্তু একেবারে খাঁটি। কিন্তু অজ্ঞতার দরুন তারা ঈশ্বরের উপাসনার ভুল পথকে গ্রহন করেছে। একটা বিষয় নিশ্চিত যে সকল হিন্দুরা যারা বেদ সম্পর্কে সামান্য কিছুটা জ্ঞান রাখে তারা মানতে বাধ্য যে বেদই হচ্ছে সর্ব শ্রেষ্ট। তাই ইতিহাসের কালজয়ী এ সকল মহৎ পুণ্যবানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সঠিক পন্থা হচ্ছে তাদের সকল গুন গুলো আতস্থ করা এবং তাদের ন্যায় মহৎ কর্ম করা। উদাহরণ স্বরূপ, রাবণকে আমরা দেখতে পাই একজন স্বেচ্ছাচারী, পাপাচারী, ধ্বংসকারী, অন্যায়কারী এক রাজা হিসেবে। যদি আমরা এক হয়ে বর্তমানের সকল রাবণের বিরুদ্ধে লড়াই করে সেটাই হবে শ্রী রাম চন্দ্রের যর্থাত মহিমা প্রকাশ ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন। ঠিক একই ভাবে শ্রী কৃষ্ণা, দূর্গা, হনুমান ইত্যাদি।

আমি আমার সারা জীবনে হনুমানের ভক্ত ছিলাম। তাকে শ্রদ্ধা নিবেদনের আমার পন্থা ছিল নৈতিক চরিত্র গঠন এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যবান হওয়া যাতে আমি সমাজের উপকার করতে পারি। তা না করে যদি আমি হনুমানের ঐ দূর্বল দেহ এবং লাড্ডু খেতে খেতে যে বিশাল ভূরি হয়েছে, ঐ রকম হনুমানকে পূজা করার কি মানে দাঁড়ায় আর কেনই বা করবো।

আমরা এই ভাবে ঐ সকল পুণ্যবান আত্মাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারি এবং আমরা সকল সম্প্রদায়ের ভক্তদের প্রতি আন্তরিক ভাবে প্রণাম জানিয়ে তাদের নিকট প্রার্থণা করবো যেন সকল ভক্তরা সে ভাবেই ঈশ্বর উপাসনা করবেন যেভাবে শ্রী রাম চন্দ্র ও শ্রী কৃষ্ণ করেছিলেন তাদের জীবদ্দশায় ।

প্রশ্নঃ ঈশ্বর কি সর্বশক্তিমান ?

উত্তরঃ হ্যাঁ ঈশ্বর সর্ব শক্তিমান। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তিনি যাই চান তাই করবেন। কেউ যদি যা করতে মন চায় তাই করে তবে সেটা হবে উচ্ছৃঙ্খলতার প্রতীক। কিন্তু উপরন্ত ঈশ্বর হলে সবচেয়ে সুশৃঙ্খল। সর্বশক্তিমান অর্থ হচ্ছে ঈশ্বরের নিজের কাজ করার জন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না যেমন সৃষ্টি, পরিচালনা, ধ্বংস, নাশ করার জন্য তার কারো প্রয়োজন নেই তিনি নিজেই তা করতে সামর্থ রাখেন।

প্রশ্নঃ ঈশ্বরের কি শুরু আছে?

উত্তরঃ ঈশ্বরের কোন শুরু ও শেষ নেই। তিনি সর্বদা বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও তাই। তার সকল গুনসূমহ সর্বদা একই থাকবে। আত্মা এবং প্রকৃতি এই দুই সত্ত্বার শুরু ও শেষ নেই।

প্রশ্নঃ ঈশ্বর কি চান?

উত্তরঃ ঈশ্বর চান সকলের তরে পরম সুখ। তিনি চান সকলে এই পরম সুখ অর্জন করুক যথাযথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে মেধা অনুসারে।

প্রশ্নঃ আমাদের কি ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিত নাকি উচিত না? কেনই বা তার আরাধনা করবো? কারন তিনিতো আমার কখনই ক্ষমা করেন না!

উত্তরঃ এটা সত্য যে ঈশ্বরের আরাধনা করে আপনি বা যে কেউই উর্ত্তীন হবার সনদপত্র পাবে না সংক্ষিপ্ত পন্থা অবলম্বন করে যেখানে আপনি উত্তীর্ণ হবার যোগ্যাতা রাখেন না। শুধু মাত্র অলস এবং প্রতারকরাই অন্যায় ও বিবেকবর্জিত অসদুপায় পন্থা অবলম্বন করে সাফল্য কামনা করে।

ঈশ্বর উপাসনার মাধ্যমে বিবিধ মঙ্গল লাভ করা যায়ঃ
১) ঈশ্বরের উপাসনার মাধ্যেমে একজন মানুষ ঈশ্বরকে এবং তার সৃষ্টিকে শ্রেয়তর ভাবে বুঝতে পারবেন।
২) উপাসনার দ্বারা যখন কেউ ঈশ্বরের গুনসূমুহকে শ্রেয়তর বুঝতে পারবেন তখন তিনি তা নিজের জীবনে গ্রহন করবেন।
৩) উপাসনা দ্বারা যখন কেউ ভেতরের কণ্ঠস্বর (Inner Voice) আরও শ্রেয়তর ভাবে শুনতে পারবেন এবং তিনি আরও স্পষ্টতর ভাবে ঈশ্বর থেকে দিক নির্দেশণা পাবেন।
৪) উপাসনা দ্বারা একজন তার অজ্ঞতা দূর করতে পারবে, শক্তি অর্জন করতে পারবে এবং আত্ম বিশ্বাসের সাথে জীবনের সকল বাধার বিপত্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবে।
৫) পরিশেষে সে যখন সমস্ত অজ্ঞতা দূর করতে পারবে তখন পরম সুখ দ্বারা মুক্তি লাভ করবে।

দয়া করে লক্ষ করুন উপাসনা মানে মনের শূন্যতা অথবা নিয়মানুযায়ী আবৃত্তি করা নয়। এটা হচ্ছে কর্ম, জ্ঞান এবং ধ্যান অনুশীলনের মধ্য দিয়ে ধীশক্তি আত্মাভূত করার একটি প্ররোচক পদ্ধতি বা Proactive Approach ।

প্রশ্নঃ যদি ঈশ্বরের কোন দেহের অঙ্গ এবং ইন্দ্রিয় অঙ্গ থাকে তাহলে কিভাবে তিনি তাহার সকল কর্ম সম্পাদন করেন?

উত্তরঃ তার কর্মের জন্য অসুক্ষ অঙ্গের কোন প্রয়োজন নেই কারন তার কর্ম সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মতম বা অতি আণবীক্ষনতম স্তরে হয়ে থাকে। তিনি এসব করে থাকেন তার প্রকৃতিজাত ক্ষমতা দিয়ে। তিনি চোখ ছাড়াই দেখতে পারেন, কান ছাড়া শুনতে পারেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ সকলের অজ্ঞাতে। ঈশপোনিষদে তা আরও বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা আছে।

প্রশ্নঃ ঈশ্বরের কি সীমা আছে?

উত্তরঃ ঈশ্বর সকল বিষয়ে সীমাহীন। তিনি সর্বজ্ঞ। এর মানে হচ্ছে তিনি জানেন যা কিছু সত্য সুন্দর। ঈশ্বর জানেন তিনি সীমাহীন অসীম তাই বিষয়টি তার জন্য অজ্ঞতার পরিচায়ক হতো যদি তিনি তার শেষ কোথায় সেটার জানার চেষ্টা করতেন।

প্রশ্নঃ ঈশ্বর স্বগুনা না নির্গুনা?

উত্তরঃ উভয়য়ই। ঈশ্বর স্বগুনা যদি আপনি তাকে দয়ালু, ন্যায়বিচারক, সৃষ্টিকারী, প্রতিপালক ইত্যাদি গুনগুলোকে উল্লেখ করেন। আবার তাকে আপনি নির্গুনা বলতে পারেন কারন কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা ঈশ্বরের মাঝে অনুপস্থিত যেমন অবিবেচক, বিচার বুদ্ধিহীন, ক্রোধ, প্রতারণা, জন্ম, মৃত্যু ইত্যাদি।

প্রশ্নঃ বেদ অনুসারে ঈশ্বরের প্রধান বৈশিষ্টগুলির সারমর্ম করবেন দয়া করে?

উত্তরঃ তার বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী অসীম এবং সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এখানে কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

তিনি বর্তমান
তিনি জাগ্রত
তিনি সমস্ত সুখ ও আনন্দের উৎস
তিনি নিরাকার
তিনি অপরিবর্তনীয়
তিনি সর্ব শক্তিমান
তিনি ন্যায় বিচারক
তিনি দয়ালু
তিনি আজন্মা
তিনি মৃত্যুহীন
তিনি অসীম
তিনি সর্বব্যাপী
তিনি ত্রুটিহীন
স্থান ও কালে তার শুরু ও শেষ নাই
তিনি অতুলনীয়
তিনি সমস্ত বিশ্ব ব্রক্ষান্ড প্রতিপালন করেন
তিনি সমস্ত বিশ্ব ব্রক্ষান্ড সৃষ্টিকারী
তিনি সর্বজ্ঞ
তিনি সর্বদাই সর্বোচ্চতম যর্থাথ
তিনি ভয়শূন্য
তিনি পবিত্র
তাঁর কোন দূত নেই এবং তিনি সকল আত্মার সাথে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করেন
তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা যাবে না

পরম সুখ লাভের এবং সমস্ত দুঃখ নাশ করার এটাই একমাত্র পথ।


ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি