পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

সারমাদ দারদী আজাব সিকাস্তা কারদী তুনে-পর্ব দশ

(পূর্ব প্রকাশের পর)
দুপুরে খাবারের পর আবার মাহিনকে নিয়ে বসলাম এরই মধ্যে দেখলাম মাহিন গোসল সেরে মনোযোগ সহকারে আমার লেখাটা পড়ছে ছাত্র হিসেবে আমি মোটেও খারপ নই মাহিন আমার চেয়ে অনেক ভালো ওর কথা বলার ধরণ আমাকে মুগ্ধ করে ক্লাসে দেখেছি স্যার যখন আমাদের পড়াতেন তখন মাহিনকে খুঁজে পাওয়া যেত না ভাবে যেন তন্ময় হয়ে যেত অামি মাঝে মাঝে ভাবি-মাহিন তুই কি এতো ভাবিস? তোর ভাবনার ডানাগুলো কোথায় উড়ে বেড়ায়বন্ধু হিসেবে তুই যদি আমাকে মেনেই থাকিস তো আমাকেও নিয়ে চল তোর সাথে আমিও যাব তুই যেখানে নিয়ে যাবি

-কি রে কি পড়ছিস?

-তোর লেখাটা পড়ছি। দেখলাম কোরআন শরীফ থেকে আয়াতসহ উদ্বৃতি দিয়েছিস। আর বইয়ের যে অংশ থেকে উদ্বৃতি দিয়েছিস তার পৃষ্ঠা নং দেসনি। তোকে যদি কেউ প্রশ্ন করে - এটা আপনি কোথা থেকে পেলেন? তখন তুই কিভাবে জবাব দিবি?

-আরে ব্যাটা আমি কি কোন বই লিখছি না কোন ডকুমেন্টারী তৈরী করছি? আমি কেবল জানতে চেষ্টা করছি আমার আলোকে কোরআনে বা হাদিস শরীফে কিছু উল্লেখ আছে কি-না? কেউ যদি অন্যান্য কেতাবকে অস্বীকার করে তো কোরআনের আয়াত তো উল্লেখ করা আছেই। সেটা দেখলেইতো পারে? তাছাড়া আমি বাহাস করার জন্য তোর কাছে বসিনি। বাহাস করার ইচ্ছা আমার নেই। আমার কথা হলো আমি যেটা মানবো-তার আগে আমাকে যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে কোন্ টি সত্য? তাই কেস স্ট্যাডি করা

-তাই, না? আচ্ছা তোকে একটা ঘটনা শোনাই। শোনাই... শোন অাবু সাঈদ তারিখি ওরফে শমস তাব্রিজীর সাথে প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে দামেশকে থাকাকালীন সময়ে। তো সেই সময় শামসুদ্দীন তাব্রিজী মাওলানা জালালউদ্দিন রুমীকে প্রশ্ন করেনঃ রাসুলূল্লাহ বড় না বায়জ্বীদ বিস্তামী? উত্তরে মাওলানা রুমী বলেনঃরাসুল্লাহ। শামস তাব্রিজী পুণরায় প্রশ্ন করেন তবে কেন রাসুল্লুলাহ বলিয়াছেনঃ হে আল্লাহ! আমি তোমাকে যথাযথভাবে বুঝিতে পারিলাম না। আর বায়জ্বীদ বলিয়াছেনঃ আনা সুবাহানী আজিমুশানী। লাইছা ফি জুব্বাতি ছেওয়া আল্লাহ তায়ালা। কি বিরাট আমার মহিমা, আমার জামার নীচে আল্লাহই বিরাজমান। জালালউদ্দিন রুমী বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। তখন শাসম তাব্রীজি বলেনঃ বায়জ্বীদ সাধনার উচ্চস্তরে পৌছিয়া থামিয়া গিয়াছিলেন  এবং আত্মবিহ্বল অবস্থায় অন্তরের গুঢ় অনুভুতি প্রকাশ করিয়াছিলেন। আর রাসুলুল্লাহ সাধনার উচ্চতম স্তরে সিদ্ধিলাভ করিয়া বিনয়,কুন্ঠা বিষ্ময় প্রকাশ করিয়াছিলেন

-আচ্ছা তুই কি আল্লামা ইকবালের খুদীতত্ত্ব সর্ম্পকে কিছু জানিস?

-নাহ্। তেমন কিছুই জানি না। কেন তুই কি কিছু জানিস?

-মোটামুটি। আল্লামা ইকবালের ধারণাঃ সুফীবাদের ফানাফিল্লাহ প্রেমিকের আদর্শ নয়। বাকাবিল্লাহই তার আদর্শ হওয়া উচিত। আল্লাহর মধ্যে থাকিয়া নিজেকে অমর করিবার আদর্শের ধ্যানই তার মতে "খুদী" বা বাকাবিল্লাহ। এই খুদীর (আত্মতত্ব) সন্ধান তিনি ক্কোরআন সুন্নায় পেয়েছেন। তিনি একথা নিঃসংকোচে বলেছেন যে-তিনি রুমীর ভাবশিষ্য
তার খুদী রমুজে বেখুদী নামক দুটি গ্রন্থ আছে। আল্লামা ইকবালের খুদী মাওলানা রুমীর ফানাফিল্লাহ ওয়া বাক্কাবিল্লাহর মধ্যে কি অপূর্ব মিল তাই না? তার একটা শের শুনাইঃ

" তেরে যমীর পর যবতক না হো নযুলে কেতাব
 সেরে কে শাহে রাজী না সাহেবে কাশশাফ।"
যতক্ষন পর্যন্ত তব অন্তরে কেতাব অবতীর্ণ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত এর মর্মগ্রন্থী আল্লামা রাজীই হোন আর সাহেবে কাশশাফের তফসীরকার আল্লামা জামাকসারীই হোন কেউ এর মর্মগ্রন্থী খুলতে পারবে না

-হুম। তোর কি জানা আছে শ্রীচৈতন্যদেব রুমীর পদান্ক অনুসরণ করতেন?

-নাহ। শোন। শ্রীচৈতন্যদেব বৈষ্ণব ভক্তি প্রচার করেন।  মসনবী প্রেমধর্মের অনন্ত আকর। এই মসনবী সতত আবৃত্তি করার জন্য জগাই-মাধাই বৈষ্ঞব ইতিহাসে "মহাপাপী" নামে আখ্যাত হয়ঃ
মসনবী আবৃত্তি করে থাকে নলবনে
মহাপাপী জগাই-মাধাই দুই জনে
মহাপাপী এই ভ্রাতৃদ্বয়কে চৈতন্যদেব হরিনাম শিক্ষা দিয়া উদ্ধার করিয়াছিলেন। জগাই-মাধাই মসনবীর ভক্ত-পাঠক না হইলে তারা কখনো শ্রীচৈতন্যদেবকে "প্রেমের অবতার" রুপে স্বীকার করিতেন না

-আচ্ছা ভালো কথা মনে করেছিস। এই বৈষ্ণব সম্প্রদায় হতেইতো বাউল সম্প্রাদায়ের লোকেরা তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। তাই না?

-আমি ঠিক জানি না। তবে যেটা জানি বৌদ্ধ সহজিয়ারা চর্যাপদ নামক যে পদ রচনা করেছিল তাতে এই মৈথুনাত্মক রুপ পাওয়া যায়?

-কেন তুই কাহ্নপা, লুইপা এদের নাম শুনিসনি?

-শুনেছি। তবে দেখিনি

-ব্যাটা আমিওতো দেখিনি। পড়েছি মাত্র। যেমনঃ

বিরুবাপাদানাম্
রাগগবড়া

এক সে শুণ্ডিনি দুই ঘরে সান্ধঅ
চীঅণ বাকলঅ বারুণী বান্ধঅ।
সহজে থির করি বারুণী সান্ধঅ
জেঁ অজরামর হোই দিঢ় কান্ধঅ।
দশমি দুআরত চিহ্ন দেখইআ
আইল গরাহক অপণে বহইয়া।
চউশটি ঘড়িএ দেল পসারা
পইঠেল গরাহক নাহি নিসারা ।।
এক সে ঘরলী সরুই নাল
ভণন্তি বিরুআ থির করি চাল।

[শব্দার্থ : শুণ্ডিনি = মদ্য বিক্রেতা স্ত্রী লোক, সান্ধঅ = প্রবেশ করলো,চীঅন =চিক্কণ/সূক্ষ্ম, বাকলঅ = বল্কলের দ্বারা,বারুণী = মদ, বান্ধঅ = বানালো/তৈরী করলো, থির= স্থির, অজরামর = জরাহীন মৃত্যুহীন, হোই = হয়, দিঢ়কান্ধঅ = দৃঢ়স্কন্ধ, দশমি দুয়ারত = দশমী দ্বারে, দেখইয়া = দেখে, আইল = এলো, গরাহক = গ্রাহক/খরিদ্দার, অপণে = নিজে, বহইয়া = পথ বেয়ে, চউশটি = ৬৪ চৌষট্টি, ঘড়িএ = ঘড়ায়, দেল= দেখালো,পসারা = পসরা/বিক্রয় যোগ্য দ্রব্যাদি,পইঠেল = প্রবেশ করলো, নিসারা = নিষ্ক্রমণ, ঘরলী = ছোট ঘড়া, সরুই= সরু, ভণন্তি = বলেন, চাল = চালো/ চালনা করো ]

প্রাকৃত সন্ধ্যা ভাষায় লিখিত এই চর্যাপদ টি কে বিশুদ্ধ বাংলায় রূপান্তর করলে সাধারণ অর্থ দাঁড়ায়:-
একই মদ বিক্রেতা শুণ্ডিনি দুইটি ভিন্ন ঘরে প্রবেশ করলো আর সূক্ষ্ম বল্কলের সাহায্যে মদ চোলাই করলো।সহজে চিত্ত স্থির করে মদ চোলাই করো, যেন মদ্য পানকারী জরাহীন অমর দৃঢ়স্কন্ধ হয়। দশমীর দুয়ারেতে আমন্ত্রণের সঙ্কেত দেখে গ্রাহক নিজেই পথ বেয়ে চলে এলো। মদ বিক্রেতা শুণ্ডিনি চৌষট্টি টি ঘড়ায় সাজানো মদের পসরা গ্রাহক কে দেখালো। খরিদ্দার ভিতরে প্রবেশ করার পরে আর বের হবার নাম নেই। একটাই ছোট ঘড়া,তার মুখ সরু। বিরুবা বলেন,ধীরেধীরে চালনা করো

প্রাকৃত বাংলায় রচিত চর্যাপদটি এমনই অদ্ভুত যে, এর সাধারণ অর্থের ক্ষেত্রে যেমন কঠিন সব ইঙ্গিত রয়েছে, তেমনই সহজিয়া বৌদ্ধ সাধন পদ্ধতির ভাবগত অর্থেও দুর্বোধ্য সব ইঙ্গিত রয়েছে। বিশুদ্ধ বাংলা রূপান্তরের প্রতিটি ছত্রকে বিশ্লেষণ করে দেখানো হলো, যেন পাঠকেরা দ্বৈত অর্থ সম্বলিত চর্যাপদের স্থূল বাহ্যিক সূক্ষ্ম বৌদ্ধ সাধন তত্ত্বের মাধুর্য রস উপলব্ধি করতে পারেন

একই মদবিক্রেতা শুণ্ডিনি দুইটি ভিন্ন ঘরে প্রবেশ করলো আর সূক্ষ্ম বল্কলের সাহায্যে মদচোলাই করলো” - মদ বিক্রেতা শুণ্ডিনি দুইটি ভিন্ন ঘরে প্রবেশ করলো, কারণ দুই ঘরে তার দুইটি পেশা একসঙ্গে চলছে। একটা ঘরে সে বকযন্ত্র বা চোলাই যন্ত্র দিয়ে উত্তম মদ প্রস্তুত করে এবং তা সাজিয়ে রাখে। সহজ আনন্দ লাভের আশায় যারা আসেন,তাদের মদের যোগান দিয়ে উচ্চ মার্গের তুঙ্গ আনন্দ দেওয়াই তার প্রধান পেশা। অপর ঘরে সে গ্রাহক কে দেহ মিলনে তৃপ্ত করে,এটি তার দ্বিতীয় পেশা

সহজিয়া বৌদ্ধ সাধন তত্ত্ব মতে মানব দেহে মেরুদণ্ডের নিম্ন দেশে গুহ্য লিঙ্গের মধ্য স্থলে কুন্দস্থানে রয়েছে মূলাধার চক্র। এই মূলাধার চক্র সুষুম্না নাড়ীর একটি গ্রন্থি। বৌদ্ধ তান্ত্রিক শাস্ত্রে সুষুম্না লো নৈরামণি বা নৈরাত্মা, বোধিচিত্ত, অবধূতী বা যোগীনির প্রতীক। সুষুম্না নাড়ীর বাম দিকে ইড়া ডান দিকে রয়েছে পিঙ্গলা নামক আরও দুইটি নাড়ী। ইড়া পিঙ্গলা যথাক্রমে শক্তি শিবের প্রতীক। মানব দেহে সঞ্চারমান প্রাণবায়ূ ইড়া পিঙ্গলা নাড়ীর মধ্য দিয়ে সতত চক্রাকারে আবর্তিত হয়। ইড়া পিঙ্গলাকে সংযত করার সাধনাই তন্ত্র সাধনা। ইড়া পিঙ্গলাকে সাধনার মাধ্যমে সুষুম্নাতে মিশিয়ে দিতে পারলে সাধনা বলে সুষুম্না পরিণত হয় সহস্রায় বা মহাসুখ চক্রে,সেখানেই আছে মহা সহজানন্দ অর্থাৎ সেখানেই শক্তি শিবরূপী জীবাত্মা পরমাত্মার মিলনে নির্বাণ সুখ লাভ হয়। সুষুম্নাই হলো স্থলে শুণ্ডিনি। তার একটি ঘর হলো ইড়া অপর ঘরটি হল পিঙ্গলা। সাধনতত্ত্বের রসে আপ্লুত সাধক কে সুষুম্না প্রথমে ইড়াতে সাধনার সুরায় আসক্ত করে,তারপরে পিঙ্গলাতে মিলন সুখে তৃপ্ত করে। কাম প্রবৃত্তি থেকে যে যৌন শক্তির উদ্ভব হয় তাকে সাধকেরা কুম্ভক প্রক্রিয়ায় ইড়ার মাধ্যমে উর্ধ্ব পথে মস্তিস্কে পাঠায়। মস্তিস্কে সঞ্চিত যৌন শক্তি সাধনার প্রভাবে ওজঃ বা আধ্যাত্মিক শক্তিতে পরিণত হয়ে পিঙ্গলার পথে মূলাধার চক্রে ফিরে আসে। এই প্রক্রিয়ায় সমস্ত যৌন শক্তি ওজঃ শক্তিতেরূপান্তরিত হলে মোহ মুক্তি ঘটে এবং সহস্রায় জীবাত্মা পরমাত্মার মিলনের ফলে মহা সহজানন্দ লাভ হয়

সহজে চিত্ত স্থির করে মদ চোলাই করো, যেন মদ্য পানকারী জরাহীন অমর দৃঢ়স্কন্ধ হয়” – মদের চোলাই যত ভালো হয়, গ্রাহকেরা তত বেশী তৃপ্ত হয়, তাই মন স্থির করে মদ চোলাই করতে বলা হয়েছে, যেন মদ্য পানকারীরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়
আসলে বৌদ্ধ সাধকদের বলা হয়েছে, তারা যেন একাগ্র চিত্তে কুম্ভক সমাধির মাধ্যমে মূলাধার চক্রে কুলকুণ্ডলিনী কে জাগ্রত করে সাধন পর্ব সমাধা করেন,যাতে তারা জরাহীন মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে মাথা উঁচু করে চলতে পারেন

দশমীর দুয়ারেতে আমন্ত্রণের সঙ্কেত দেখে গ্রাহক নিজেই পথ বেয়ে চলে এলো” - মানব দেহে দশটি ছিদ্র বর্তমান,যাদের দশ দুয়ার বলা হয়। দুইটি চক্ষু ছিদ্র, দুইটি কর্ণ ছিদ্র,দুইটি নাসিকা ছিদ্র, একটি গ্রাস নালী ছিদ্র, একটি পায়ু ছিদ্র, একটি রেচন ছিদ্র একটি জনন ছিদ্র মিলিয়ে মোট দশটি ছিদ্র লো দশ দুয়ার। দশমীর দুয়ার অর্থাৎ যৌনাঙ্গে আমন্ত্রণের সঙ্কেত পেয়ে গ্রাহক নিজেই শুণ্ডিনির কাছে এলো
বৌদ্ধ ধর্মমতে জগতের কল্যাণ সাধনের জন্য যিনি স্বয়ং নির্বাণ লাভ থেকে বিরত থেকে অপরকে নির্বাণ লাভে সহায়তা করেন, তাকে বলা হয় বোধিসত্ত্ব। বুদ্ধত্ব লাভের জন্য বোধিসত্ত্বগণকে জন্ম জন্মান্তরে দশ পারমী পূর্ণ করতে হয়। এই দশ পারমী হলো - দান, শীল, নৈষ্কম্য,ক্ষান্তি, বীর্য, সত্য, অধিস্থান, মৈত্রী, উপেক্ষা প্রজ্ঞা। সাধকেরা বুদ্ধত্ব লাভের জন্য সাধনা করতে গিয়ে জানতে পারলেন এই দশ পারমীর কথা এবং এই দশ পারমী লাভের উপায় সুষুম্নাতে নিহিত আছে জানতে পেরে সাধকেরা নিজেই সুষুম্নার শরণাপন্ন লেন

মদ বিক্রেতা শুণ্ডিনি চৌষট্টি টি ঘড়ায় সাজানো মদের পসরা গ্রাহক কে দেখালো” - নর নারীর যৌন জীবনকে সুখী, তৃপ্তিকর সন্তোষজনক করার জন্য নারীদের কণ্ঠ সঙ্গীত, যন্ত্র সঙ্গীত, চিত্রাঙ্কণ, নৃত্যকলা, কেশ শয্যা, হস্ত শিল্প, রন্ধন প্রভৃতি চৌষট্টি প্রকার গুণে দক্ষ হতে হয়। এদের বলা হয় চৌষট্টি কলা। এই চৌষট্টি কলার কয়েকটিতে পারদর্শিনী হলেই নারীরা পুরুষদের হৃদয়ে গভীর অনুরাগের সৃষ্টি করতে পারেন। শুণ্ডিনিকে  পুরুষের মনোরঞ্জন করতে হয়, তাই শুণ্ডিনি গ্রাহকের মন বুঝে এই চৌষট্টি কলার কোন না কোন একটির সাহায্যে তার মন জয় করে
আসলে এখানে বলা হয়েছে, নারীদের চৌষট্টি প্রকার কাম কলার সবগুলি থেকে মুক্ত হতে না পারলে সাধনায় সিদ্ধি লাভ অসম্ভব। সুষুম্নার সহায়তায় কুলকুণ্ডলিনীকে জাগ্রত করে দীর্ঘ সাধনায় এক একটি করে কাম কলার মোহ হতে মুক্ত হতে হয়। সুষুম্নারূপী নৈরাত্মা সাধকদের এক এক করে চৌষট্টি প্রকার কাম কলা হতে মুক্ত করে

খরিদ্দার ভিতরে প্রবেশ করার পরে আর বের হবার নাম নেই” - শুণ্ডিনির সান্নিধ্য পেয়ে গ্রাহকেরা এতই মত্ত যে আর বাইরে আসার নাম নেই
আসলে বলা হয়েছে উপযুক্ত সাধন পথের সন্ধান পেয়ে সাধকেরা একবার যদি নৈরাত্মার সাহচর্যে সহজানন্দের সন্ধান পান, তবে আর গৃহী জীবনে ফিরে আসেন না

একটাই ছোট ঘড়া, তার মুখ সরু। বিরুবা বলেন,ধীরে ধীরে চালনা করো ” – মিলনের পথ সংকীর্ণ,তাই অহেতুক তাড়াহুড়ো অনুচিৎ
সুষুম্না নাড়ী মানব দেহের একটি ক্ষুদ্র অংশ। সুষুম্নার সূত্রাকার পথ অতিসূক্ষ্ম। এই সূক্ষ্ম পথেই জীবাত্মা পরমাত্মার মিলন ঘটে তাই বিরুবা উপদেশ দিচ্ছেন অতি ধীরে ধীরে সাধনার পথে এগিয়ে চলো


-তু্ইতো শালা অনেক কিছু জেনে গেছিস

আমি মাহিনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। আর ভাবলাম - বোঝা যায় না যে কতো গভীর জলের মাছ। ওর কাছ থেকে আমার আরো অনেক কিছু জানার বাকী আছে। (চলবে)