পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ১৭

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে) 

“প্রভু যদি সবই দেখেন, অন্যায় তবে করি কখন ? 
প্রভু বার্তা বহেন যিনি, তিনিই তো মাথার মনি”। 

এবার এই দেহতত্ত্বের ভিত্তিতে মরমিয়া গানগুলি ব্যাখ্যা করা যাক। মরমিয়া শব্দের ইংরেজি হলঃ ‘MYSTIC’- গ্রীক শব্দ ‘MYEN’ অর্থাৎ রুদ্ধ করা। বহিঃ ইন্দ্রিয় রুদ্ধ করা থেকে ‘MYSTIC’- মরমিয়া। যিনি ইন্দ্রিয়াতীত মর্ম দ্বারা বোধ করেন - শব্দের উৎপত্তি । মর্ম দ্বারা বোধ করার সময় মানুষের চেতনার মাত্রা (DIMENSION) বৃদ্ধি পায়। ফলে Astrophysicist Carl Sagan এর মতে, INSIDE TURNS OUT বা মানুষ নিজের মধ্যে অনন্ত বিশ্ব দেখতে পায়। যে গানের ধাঁধা তুলে প্রকৃতপক্ষে বর্তমান গ্রন্থে সাধক তাঁর অন্তঃধ্যানে লালন বাবার গানটি ব্যাখ্যা করেছেনঃ “বাড়ির কাছে আরশী নগর, সেথায় এক ঘর পড়শি বসত করে,আমি একদিনো না দেখিলাম তারে।” 

উপরের গানটির যদি দেহতত্ত্ব না জেনে বাক্যর্থ করা যায় - তাহলে অর্থ দাঁড়ায় বাড়ির কাছে অর্থাৎ যে আচ্ছাদনের নিচে আমরা বাস করি তাঁর কাছে আরশি নগর অর্থাৎ আয়না বা দর্পণ নগর আছে। সেই নগর আমরা দেখতে পাইনি। এই বাক্যার্থের কোন মুল্যই নেই। কিন্তু দেহতত্ত্ব সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে এবং এ বিষয়ে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থাকলে আধ্যাত্ম জগতের এক বিরাট রহস্যময় ক্ষেত্র ধরা পড়ে যায়। এর ভাবার্থ এই রকমঃ ঘর হল মানুষের দেহ - যে দেহের মধ্যে জীবাত্মা ও পরমাত্মা দুইই বাস করে। বাইরে থেকে দেখলে এই দেহ একটি স্থুল পদার্থের রূপরেখা মাত্র। কিন্তু চোখ বুঁজে নিজের মধ্যে মনোনিবেশ করলে দেখা যায়। এখানে নানা স্তরের বিস্তৃত পরিধির একটি স্বচ্ছ জগত। সেই স্বচ্ছতা স্বাধিষ্ঠান চক্র থেকেই ফুটতে আরম্ভ করে। কিন্তু নিচের দিকে সে বেশি রকম অস্বচ্ছ এবং উপরের দিকে ক্রমশঃ বেশি স্বচ্ছ। চৈতন্য মণ্ডলে সে স্বচ্ছতম। সেই স্বচ্ছতম একটি দর্পণের মত। যেখানে বহির্জগতের নানা দৃশ্য প্রতিবিম্বের মত ফুটে আছে। মুলাধারস্থ শক্তি দেহ পর্যায়ের যে স্তরে উঠে যে তরঙ্গ মণ্ডলে বিরাজ করে - সম পর্যায়ের তরঙ্গ মণ্ডলের সব ছবিই সেখানে প্রতিবিম্ব হয়। অর্থাৎ EQUAL WAVE LENGTH CASTS THE PICTURE OF EQUAL WAVE LENGTH অর্থাৎ টি.ভি তে যেরকমটি হয়ে থাকে সেরকম। 

স্বাধিষ্ঠান মণ্ডলের স্বচ্ছতায় যে ছবি ফুটে ওঠে তা অস্বচ্ছ। কারণ, এখানকার স্বচ্ছতা ধুলা জমা আয়নার মত। চৈতন্য শক্তি আরও উপরে উঠলে অর্থাৎ আত্ম মগ্নতা আরও বেশি গভীরে প্রবেশ করলে স্বচ্ছতার এক নতুন পর্যায় লক্ষ্য করা যায়। মনিপুর চক্র এই স্বচ্ছতা হালকা মেঘে ঢাকা নিদাগের মধ্যাহ্ন গগনের মত। আত্মমগ্নতা আরও গভীর হলে নিজের দেহের মধ্যে নীলাভ স্বচ্ছ এক আকাশ চোখে পড়ে। অনন্ত পরিধি এই নীলিম আকাশে নানা দৃশ্য চোখে পড়ে। চোখ বুঁজেও এসব কিছু দেখা যায় অর্থাৎ মস্তিস্ক স্নায়ুতে তরঙ্গের সামঞ্জস্যহেতু অনুরূপ সব ছবি ফুটে ওঠে। দেহের ভিতরে বহির্বিশ্বের অনন্ত আকাশ দেখা যায়। কুলকুণ্ডুলিনীর ঊর্ধ্বগতি হেতু মানুষের ‘DIMENSION’ বৃদ্ধির ফলে ত্রিমাত্রিক মানুষ যদি চতুর্মাত্রিক বা অধিক মাত্রা লাভ করে তবে নিজে ভেতরকে বাইরে দেখবে। বিজ্ঞানে বলা হয়েছে “If a fourth dimensional creature existed in our three dimensional universe it could also turn us inside out. There are several ways in which we can be turned inside out, the least pleasant would result in our VISCERA and internal organs being on the out side and the entire COSMOS- Glowing Intergalactic gas, Galaxies, Planets everything on the inside” চলবে..................