পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ১৬

(পুর্বপ্রকাশের পর হতে)

“আশা তো পাওনা থোওনা 
জাতে আসে বঞ্চনা কল্পনা।” 

শক্তি যখন আরও এগিয়ে যায় তখন দেহভার আর থাকেই না। দেহ শূন্যে ভাসমান হয়, জিহ্বা নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করে- কুম্ভক হয়। পার্থিব জগত লুপ্ত হয়ে শুধু মাত্র স্বচ্ছ দর্পণতুল্য এক দেশ বিরাজ করে। সেই দর্পণে জগত ব্রহ্মাণ্ড প্রতিবিম্ব হিসাবে বিরাজ করে, ব্যক্তি সর্বদ্রষ্টা হন। ইচ্ছাশক্তি করায়ত্ত হয়। ইচ্ছামাত্র সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের ক্ষমতা জন্মে। শক্তি এই চিৎ পর্যায়ে পৌঁছাবার অনেক আগেই মানুষের মধ্যে আত্মিক শক্তি জন্মায়, যাকে ইংরাজি তে বলে ‘PSYCHIC POWER’ এই আত্মিক বলে বহু লোক রোগ নিরাময় ইত্যাদি করে থাকে। চিৎ পর্যায়ে স্থিত হলে মৃতকেও জীবন দান করা যায়,পঙ্গুকে গিরিলঙ্ঘন করানো যায় অর্থাৎ ইচ্ছাশক্তি করায়ত্ত হয়। কারন এই চিৎ পর্যায়ে থেকেই শক্তি আত্মপ্রকাশ করে- এইজন্য শক্তির নাম ‘চিন্ময়ী’ ও বটে। এর উপর শক্তি যখন আরও এগোয় তখন ক্রমশ বোধশক্তিও লোপ পায় এবং একসময় সবকিছুই হারিয়ে যায়। কোনকিছুই বোধের মধ্যে থাকে না। এই হল শুন্যস্থিত শক্তির জগৎরূপ,গতিশীল রূপ ত্যাগ করে পুনরায় শূন্যে সুপ্ত হওয়া- যাকে বলা হয় ‘সমাধি’-‘মরার আগে মরো’। 

শক্তিকে বিপরীত মুখে ফিরিয়ে নিয়ে এই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা যায় বলে আচারকে ‘বাম (বিপরীত) আচার’ বা ‘বামাচার’ নাম দেওয়া হয়েছে। 

বিশ্বজগৎ তখন তার। জ্যোতির্ময় ধোঁওয়ার মত যে মেঘরূপ পাল্টে যে ছবি এঁকে তাঁর সঙ্গে কথা বলে।সেই মেঘই বা কি? আধ্যাত্ম পুরুষেরা বলেন, ইশ্বরের বিভূতি। সত্যিই কি তাই? এই জ্যোতির্ময় বিন্দুমণ্ডলের ঊর্ধ্বে যখন স্বচ্ছ কাঁচের মত জগত ভেসে ওঠে,সাধক সেখানে তখন বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিবিম্ব লক্ষ্য করেন। আরও অবাক হন যখন নিবিড় নিদ্রার মত একটা গভীর প্রশান্তির মধ্যে কিছুক্ষণ হারিয়ে যান। ফিরে এসে দেহ মনকে মনে করেন স্নিগ্ধ, স্নিগ্ধ, স্নিগ্ধ। অপূর্ব এক ভালবাসায় তখন তাঁর সমগ্র চৈতন্যসত্ত্বা ভরে যায়। তখন সাধকের মনে হয়,’এই শেষ লাভটুকুই যথার্থ লাভ,আর সবই মিথ্যা’। 

সুখ,সম্পদ,নাম-যশ, ভোগ সবার চাইতে বড় হল প্রশান্তি। শোনা যায় ইশ্বর মানুষকে সবকিছু দিয়ে শুধু এই প্রশান্তিটুকু নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। নির্বিকার নীরবতায় সেখানে হয়ত ইশ্বরের কোলে বসে তাঁর সঙ্গে সেই প্রশান্তিটুকুই ভাগ করে নেন সাধক। 
(চলবে)