পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ২৩

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে)

এই জন্য খুব কম সাধকই দীর্ঘক্ষণ ব্রহ্ম সান্নিধ্যে বা সমাধিতে নির্বিকল্প অবস্থায় থাকতে পারেন। অধিকাংশ সাধকই ব্রহ্মা সান্নিধ্যে থাকেন ততটুক সময়ই যতক্ষণ একটি সরষের দানা মশের শিঙের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। এই ব্যক্তি চেতনা অবলুপ্তি ভীতিকে লক্ষ্য করেই রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন “ কেনরে এই দুয়ারটুকু পার হতে সংশয়, জয় অজানার জয়।” 

কিন্তু এইসব কি তিনি সচেতনভাবে লিখেছেন অথবা পূর্ব জন্মের সংস্কার বশে তন্ময় অবস্থাতে এসব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তা স্পষ্ট করে বলা খুবই দুষ্কর। কারণ সচেতনভাবে এ সম্পর্কে তার রচনা যেমন ‘ধর্ম’ নিবন্ধ সত্যি সত্যি অধ্যাত্ম জগতে বিচরণশীল ব্যাক্তিদের কাছে অত্যন্ত অপর্যাপ্ত ও দুর্বল বলে মনে হয়। ফলে ধারনা হয় যে, পূর্ব জন্মের সংস্কারই তার তন্ময় মুহূর্তে ফুটে উঠে তাকে এমন অতিন্দ্রিয় মরমিয়াভাবে রঞ্জিত করেছে। যোগীদের কাছে শোনা যায়, ষষ্ঠতলে এখনও রবীন্দ্রনাথ নিদ্রামগ্ন অবস্থায় সুক্ষ্মাদেহে বিরাজমান। 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ শুন্যতাবোধের অতীত। কিন্তু শুন্যতায় সমাধিস্থ হয়ে ফিরে এলে পরম প্রশান্তি অনুভুত হয়। এজন্য কবি অজানার (বোধাতীতের) জয়গান করেছেন। বিজ্ঞান কিন্তু শুন্যতা বোধের অতীত হলেও IR RESPONSIVE নয়। কারন VACUUM এ FIELD তৈরি হলে তার চারপাশে শুন্যতায়ও আলোড়িত হয়। SPACE এ বৃহদায়তন OBJECT থাকলে তার চতুর্দিকে শুন্যতা বেকে যায়। শ্রী শ্রী চণ্ডীর এই শ্লোকটিও এই অর্থে অত্যন্ত কৌতুহল উদ্দীপক। এর বাক্যার্থ সহজ হলেও ভাবার্থ নিতান্ত কঠিন। এবং এই ভাবার্থ বোঝা না গেলে এসব পাঠ করা নিরর্থক। 

চণ্ডীতে শুম্ভ যখন পার্বতীকে রমনীরত্ন হিসাবে তাকে অথবা তার অনুজ নিশুম্ভকে পতিত্বের বরন করতে বলেছেন তখন পার্বতী বা দুর্গা তার জবাবে বলেছেনঃ “যো মাং জয়তি সংগ্রামে যো মে দর্পং ব্যপোহতি যো মে প্রতিবলো লোকে স মে ভর্তা ভবিষ্যতি।” অর্থাৎ আমি প্রতিজ্ঞা করেছি যে, যিনি আমাকে সংগ্রামে পরাজিত করতে পারবেন, তাকেই আমি পতিত্বে বরণ করব। এ কথার বাহ্যিক অর্থ এই যে, শুম্ভ- নিশুম্ভ তাকে সংগ্রামে পরাজিত করতে পারলে তাদের একজনকে তিনি পতিত্ব বরন করবেন। এই কাহিনীকে যারা যথার্থ অর্থে বিশ্বাস করেন তারা মূর্খ। তাদের চণ্ডী পাঠের কোন মুল্য নাই। অধ্যাত্ম জগতেও অনুপ্রবেশ ঘটেনি। এই ভাবার্থই হল সত্য।

চলবে.........