পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন – পর্ব- ১০

(পুর্ব প্রকাশের পর হতে) 

"মেরামতে তাই দক্ষ
অতি শ্রমিক তার অধিপতি।”

 যে স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস ক্রিয়াতে ঘুমন্ত মুলাধারস্থ শক্তি (ENERGY)বিকিরণ করে, সেই স্থুল শ্বাস প্রশ্বাস ক্রিয়াকে সুক্ষ্ম করতে পারলে জ্যোতির্ময় বায়ুর শক্তি আরও বেড়ে যায়। শক্তিশালী বায়ু তখন মূলাধারে ১০ শতাংশ অপেক্ষাও অনেক বেশি শক্তিতে জাগরিত করতে পারে। বায়ুকে শক্তিশালী করার পদ্ধতির নাম ‘প্রাণায়াম’। ‘প্রান’ অর্থাৎ বায়ু, ‘আয়াম’ মানে নিয়ন্ত্রণ। যিনি শ্বাস-প্রশ্বাস ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারেন, তিনি বায়ুর শক্তি বৃদ্ধি করতে পারেন। বায়ুর শক্তি বৃদ্ধি মানে বায়ুর স্থুলতা নাশ। বায়ুর স্থুলতা নাশ হবে বায়ু যত কম প্রবাহিত হবে তত। শ্বাস প্রশ্বাস যত কম বইবে ও কম বিলম্বিত হবে অর্থাৎ নাসারন্ধ্র থেকে নিচের দিকে যতই কম যাবে ততই তার শক্তি বৃদ্ধি পাবে। হোমিওপ্যাথি ওষুধের পটেন্সির মত যতই তার পরিমান কম,ততই তার সুক্ষ্মতা ও শক্তি বেশি। বায়ুকে নিয়ন্ত্রিত করার জন্য নাক টিপে প্রানায়াম করার বিধান আছে। যাকে বলা হয় রেচক,পুরক ইত্যাদি। এসব কৃত্রিম পদ্ধতি। স্বাভাবিক পদ্ধতি হলঃ মনকে কোন বিষয়ে নিবদ্ধ করা। মন কোন বিষয়ে নিবিষ্ট চিত্ত হলে স্বাভাবিক ভাবেই বায়ুর ক্রিয়া কমে যাবে। পরিমানে শ্বাস ও প্রশ্বাস কমও বিলম্বিত হয়। যে কোন মানুষ সহজেই তার প্রমান পেতে পারেন – রুদ্ধশ্বাস কোন বইয়ের কাহিনী পড়ার আগে নাসারন্ধ্রে একবার হাত দিয়ে দেখুন। এবং তারপর বই পড়ার সময় নাসারন্ধ্রে হাত রেখে দেখুন। তাহলেই শ্বাস প্রশ্বাস ক্রিয়ার পার্থক্য বুঝতে পারবেন। মন যত একাগ্র হবে বায়ু অর্থাৎ শ্বাস প্রশ্বাস ক্রিয়া ততই সুক্ষ্ম হবে আর শ্বাস প্রশ্বাস ক্রিয়া যতই কমবে তার শক্তিও ততই বাড়বে।

মূলাধারস্থিত শক্তি থেকে ১০ ভাগেরও বেশি এনার্জি বিচ্ছুরিত হলে উত্তাপে তা ব্যারোমিটারের পারার মত গলে যাবে। তখন সে বেরিয়ে যাবার পথ খুঁজবে। মেরুদণ্ডের রন্ধ্রপথ দিয়ে উপরে উঠতে চাইবে। মূলাধার এক ধরনের গর্ত বা CAVITY তে সুপ্ত থাকে। এই গর্তকে বলা হয় অনার্য ভাষাতে ‘কুণ্ড’। কুণ্ডস্থিত শক্তির এজন্য নাম হয়েছে ‘কুণ্ডলিনী’। 

মেরুদণ্ডের অভ্যন্তরস্থ রন্ধ্রপথে নানা স্থানে আবর্জনা জমে বন্ধ হয়ে থাকে। এই আবর্জনাগুলি হল কামনা, বাসনা, লোভ-লালসা, হিংসা- বিদ্বেষ, গীবত, অহঙ্কার, রাগ, সন্দেহ।  দেহের আবর্জনা আবেগ।  ছয়টি ক্ষেত্রে এই জঞ্জাল অত্যন্ত বেশি। এই ছয়টি ক্ষেত্রই ‘জট চক্র’ নামে পরিচিত। শক্তি উপরে ওঠার সময় প্রবল বেগে এই আবর্জনাগুলিকে সরিয়ে দিতে চায়। ফলে তার প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে দেহ নড়ে ওঠে। এঁকে বলা হয় ‘দেহ কম্পন’। বায়ুকে নিয়ন্ত্রিত করার প্রয়োজনে মনঃসংযোগের ক্ষেত্রে এজন্য তিনটি পর্যায় আছে। যাকে বলে যোগঘর্ম, কম্পন ও ভুমি ত্যাগ। ভুমিত্যাগই হল আসনের শ্রেষ্ঠ পর্যায়। এই সময় মানুষের জিহ্বারও ক্রিয়া আরম্ভ হয়। কারণ জিহ্বার শেকড় রয়েছে মূলাধারে। শক্তির চাপে এই জিহ্বা তখন বিলম্বিত হয়। কখনও বড় হয়ে বাইরে আসে। কখনও ঘুরে অর্থাৎ উল্টে গিয়ে নাসারন্ধ্র অর্থাৎ নাক বন্ধ করে শ্বাস প্রশ্বাস ক্রিয়াকে রুদ্ধ করে দেয়। তখন বায়ু গতিহীন হয়ে প্রবলতর হয়। মুলাধার থেকে অকল্পনীয় শক্তি সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। জিহ্বার এই বিলম্বিত ভাবই ‘খেচরীমুদ্রা’ নামে পরিচিত। শুন্যে ঝুলন্ত দেহের ভারসাম্য রাখে তখন এই জিহ্বা। এসব হল দেহতত্ত্বের ক্রিয়ার কথা। এর সঙ্গে যুক্ত আছে অসংখ্য শিরা-উপশিরাও। যাকে তন্ত্র শাস্ত্রে ‘ইড়া’, ‘পিঙ্গলা’, ‘সুষুম্না’ ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়েছে। তন্ত্রবিদদের মতে, দেহের মধ্যে বাহাত্তর হাজার (৭২,০০০) বা ততোধিক শিরা উপশিরা আছে কিন্তু এসব জটিল তথ্যের খোঁজ না করেও শুধুমাত্র মনসংযোগ ক্রিয়া করতে পারলেই যে কোন ব্যক্তি যোগ সিদ্ধি অর্জন করতে পারেন। 

চলবে.........