পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ১৩

( পুর্বপ্রকাশের পর হতে )

“কক্ষ ঘোরে কার পরে
 বলছো না কিসের তরে?
তারা গ্রহ মরে ঘুরে,
কার আকর্ষণের জোরে?”

এরপর শক্তি যখন অনাহুত চক্রে গিয়ে স্থির হয় তখন শুধু নীল নীল আর নীল দেখায়। পরতে পরতে নীল সরে গিয়ে আরও সুক্ষ্ম জ্যোতির্ময় নীল দেখা দিতে থাকে। কেন্দ্রের যত কাছাকাছি যাওয়া যায়, ততই আরও বেশি গাঢ় নীল রং হয়। সেই নীলের মধ্যে নানা ধরনের ছবি ফুটে উঠতে থাকে। যেমনঃ দূর দেশ, পর্বতশৃঙ্গ, সাগর, মরুভুমি, গ্রহান্তর-গ্রহান্তরের জীব, দেব-দেবীর জীবন্ত ছবি। দেশে (SPACE) জীবন্ত যেসব দেব-দেবী ও জীবের ছবি দেখা যায়, তার উৎপত্তি স্থান সম্ভবত- INTER STELLAR MEDIUM এ। কখনও কখনও ভিন্ন গ্রহে রক্ত মাংসের উন্নত জীব দেখা যায়- ASTROPHYSICS মনে করে যে, যখনই কোন নক্ষত্রের জন্ম হয় তখনই তার সাথে থাকে গ্রহের সমাবেশ। 

আমাদের সৌরজগতের কাছাকাছি এই ধরনের আটটি নক্ষত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। BURNARD’S STAR এর দুইটি গ্রহ সঙ্গী আছে বলে মনে হয় - যাদের MASS আমাদের বৃহস্পতি গ্রহের 0.8 time বেশি রয়েছে। অনুমান করা হয় যে, আমাদের ছায়াপথে অন্তত বিশ বিলিয়নেরও বেশি নক্ষত্র রয়েছে। এদের প্রত্যেকটি নক্ষত্রেরই অন্তত এমন একটি করে গ্রহ আছে যেখানে উত্তাপের তীব্রতা খুব বেশি নয় বা শীতলতাও অতিরিক্ত নয়। আবহাওয়া অনেকটা আমাদের পৃথিবীর মতই। এখানেই ভিন্ন জগতের জীব দেখা যায়। তবে বৈজ্ঞানিকেরা গ্রহ জাতীয় ক্ষেত্রে তিন ধরনের সভ্যতা অনুমান করেছেন। 

প্রথম ধরনের গ্রহে - প্রাণীকুল পরিবেশকে পরিবর্তিত করতে পারলেও তারা নিজেদের গ্রহস্থ উপাদানসমুহ নিয়েই তৃপ্ত থাকে। দ্বিতীয় ধরনের সভ্যতায় - কেন্দ্রস্থ নক্ষত্রের সকল শক্তিই ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। তৃতীয় ধরনের সভ্যতায় - একদল নক্ষত্রের উপর নির্ভর করতে হয়। তাদের কার্যকলাপ হয় ‘GALACTIC’ পর্যায়ে। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধরনের সভ্যতার সঙ্গে যোগাযোগ করা কষ্টসাধ্য। যাদের মধ্যে কারও কারও আকৃতি আমাদের পৃথিবীর পুজ্য দেব-দেবীদের মত। শুধু দেব-দেবীদের নয়, বড় বড় পণ্ডিত ও সাধকদের চেহারাও ধ্যানে আসতে থাকে যা দেখলে মনে হয় অনেক অনেক পরিচিত ছবি। বোধ হয় যোগীরা ধ্যানে এইসব দূরবর্তী গ্রহের জীব দেখেই দেব-দেবীর কল্পনা করেছিলেন। যে জন্য বলা হয়েছে, ‘যোগীনাম ধ্যান নিমির্তম’। এই ধ্যানলব্ধ মূর্তির সঙ্গে তত্ত্ব যুক্ত করে তাকে ভিন্নতর রূপ দেওয়া হয়েছে যেমন-‘মা-কালী’। 

শক্তির দুর্বোধ্য শিহরণ রূপে তার বর্ণ করা হয়েছে কালো।  অর্থাৎ যে আদি, যে শক্তির স্বরুপ ধারনার মধ্যে আনা যায় না। তাই সৃষ্টিকর্তারই রূপ। কৃষ্ণ বা কালো বর্ণ হলঃ দুর্বোধ্যতার প্রতীক। বিজ্ঞানেও দেখা যায় যে, ‘BIG BANG’ রূপ বিস্ফোরণের পর শক্তি পাঁচ লক্ষ বছর ধরে আলোহীন অন্ধকার রূপে এই জগত ব্যক্ত হয়ে ছিল। শক্তির এই আদি অবস্থা অর্থাৎ ‘PRIMORDIAL ENERGY’ রূপ মা-কালীর বর্ণ। তাই কালো। চুল শক্তির প্রতীক। তাই তার দীর্ঘ বিলম্বিত এলোকেশ। শ্বেত শিবের বুকের উপর তাকে দাঁড় করিয়ে এইটুকু বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, শূন্যের বুকে নিষ্কম্প আবেগ বা চিৎ বা চৈতন্য (শ্বেতবর্ণ) থেকে তার জন্ম। তার নাম ‘মা-কালী’ দেওয়া হয়েছে এই কারনে যে, ENERGY রূপে তিনি নড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই কালের জন্ম হয়েছে।

কালের (TIME) জন্মদাত্রী হিসাবেই তিনি ‘মা-কালী’। তাঁকে চার হাত দান করা হয়েছে এই কারনেই যে, তাঁর দ্বারা মহৎ একটি তত্ত্ব বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে অর্থাৎ মহাশক্তি। যিনি জগতরূপে ফুটে আছেন। তিনিই তা পালন করছেন। তিনিই তা ধ্বংস করছেন। দক্ষিণ দুই করে ( ডান পাশের দুই হাতের তালু) বর ও অভয়। খড়গ ধৃত বাম করে (বাম হাত) ধ্বংস এবং মুণ্ডধৃত বাম করে (বাম হাত) সৃষ্টি। তিনি যে উলঙ্গ তার কারণ আদি পর্যায়ে শক্তি ‘গুণত্রয়’ দ্বারাও বেষ্টিতা ছিলেন না। গুণ বসন স্বরুপ। দেবী ‘পরাবিদ্যা’ বলেই গুণ দ্বারা আচ্ছন্না নন। গলার পঞ্চাশটি মুণ্ডমালা পঞ্চাশটি কোয়ান্টাম লীপের প্রতীক। 

হাতের মুণ্ড সৃষ্টির প্রতীক। দেবীর চার হাত ‘SYMMETRY BREAKING’ এর চারিটি শক্তিও হতে পারে। তাঁর গলায় পঞ্চাশটি ও হাতে একটি মুণ্ডু দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে একান্নটি তরঙ্গে শক্তি রূপে তিনি স্থুল জগতে আকৃতি গ্রহণ করেছেন। তাঁর বিলম্বিত জিহ্বা ‘খেচরীমুদ্রা’র প্রতীক, অর্থাৎ তিনি প্রকৃতি সৃষ্টি করে তাতে সাম্য রক্ষা করেছেন।

সাধকের দেহ ভুমিত্যাগ করলে ‘খেচরীমুদ্রা’র সাহায্যে তিনি দেহের সাম্য বা BALANCE রক্ষা করেন। মুলতঃ শক্তির ঊর্ধ্বগতিতে মস্তিষ্ক তন্ত্রীর তরঙ্গ মাত্রার সঙ্গে সমপর্যায়ে তরঙ্গায়িত যত গ্রহ-গ্রহান্তর, জীব, সবই দেখা যায়। গঠন এবং আকৃতিতে তারা পার্থিব জগতের জীব থেকে ভিন্ন নয়। এমনকি উন্নত জীব। যাদের দেখে যোগীরা ধ্যানে দেব-দেবী কল্পনা করেছেন। তারাও মানুষেরই মত দ্বিহস্ত-দ্বিপদ যুক্ত। পৃথিবীতে তাদের রুপান্তর মানুষের ভাবাদর্শ যোগ হবার জন্য। না হলে জীব জগতের চূড়ান্ত আকৃতিগত পরিনতি দ্বিহস্ত-দ্বিপদের মধ্যেই রয়েছে। কারণ মনুষ্যাকৃতি এই দেহের মধ্যেই জীব জগত তার চূড়ান্ত সিদ্ধি অর্জন করেছে। সৃষ্টিতত্ত্বের মূলকথা - “যেখান থেকে উৎপত্তি সেখানেই পরিনতি।” এই বৃত্ত বা CYCLE শেষ হলেই সৃষ্টি উদ্দেশ্য চূড়ান্ত পরিনতি লাভ করে। সৃষ্টি যে পর্যায়ে জীব বা প্রানীজগত আত্মপ্রকাশ করেছে,তা স্থুল জড় পর্যায়।

 চলবে..................