পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৭

ধ্যানে দেহ জগত দর্শন- পর্ব ২২

লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে সেই বিন্দু থেকে অজস্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরমাণু সদৃশ ফুলকি বেরিয়ে আসে। আসলে এই বিন্দু হল আত্মজগতের জ্যোতি সমুদ্রে শতদল পদ্মের মত। জ্যোতি সমুদ্রে চৈতন্য সত্তাকে ছড়িয়ে দিয়ে যে সাধক এই বিন্দু নির্গত পরমাণু কনাগুলি দেখতে পান তিনি অপার আনন্দে মুগ্ধ হন। এই বিন্দু জ্যোতি কণাই শতদল অনন্তদল পদ্মের মধু স্বরূপ। সেই অলৌকিক মধুর দৃশ্য দেখে বিহ্বল হওয়ার অর্থ হল- শতদল পদ্মের মধু পান করা।

রবীন্দ্রনাথের আরেকটি গানের কলি " কেন রে এই দুয়ারটুকু পার হতে সংশয়, জয় অজানার জয়।" এও এক অদ্ভুত হেয়ালী ভরা গান। এ গান সম্পূর্ণ মরমিয়া, অদ্ভুত এক তন্ময় অবস্থা থেকে এ বোধ আসে অর্থাৎ TRANCE থেকে। দেহতত্ত্বে ষষ্ঠ চক্রের কথা বলেছি। এই ষষ্ঠ চক্র ভেদ করে সাধক যখন বিন্দুর জ্যোতির্মণ্ডল পার হন এবং চৈতন্যলোকের স্বচ্ছতা অতিক্রম করতে যান,তখন কেন্দ্রস্থিত শুন্যতা সমস্ত বোধ লুপ্ত করে দিয়ে অদ্ভুত এক নির্বিকল্প সমাধির মধ্যে টেনে নিয়ে যেতে চায়। দেহতত্ত্বের এই পর্যায় পর্যন্ত সাধকের এক সছেতন প্রয়াস থাকে অর্থাৎ তাঁর সুক্ষ্মা অহংতত্ত্ব এই পর্যন্ত কাজ করে। কিন্তু এরপর শুন্যতার টানে তাঁর বিচারবোধ হারিয়ে যেতে চায় তখনই সুক্ষ্মা অহংবোধ সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। পাছে তাঁর ব্যাক্তি সত্ত্বা হারিয়ে যায় এই ভয়ে সে নিঃশেষে নিজেকে সেই মহাশূন্যের টানের কাছে ছেড়ে দিতে পারেনা আবার ব্যাক্তি চেতনার ভিতর ফিরে আসে। 

এই অবস্থাকে 'মোক্ষভীতি' নাম দেওয়া হয়েছে। এজন্যই ব্রহ্মন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে ব্রহ্মন হলেন 'মহদ্ভয়ম' অর্থাৎ ব্রহ্মন হলেন বিরাট ভয়ের কারণ। কিন্তু ব্রহ্মন কাউকে ভয় করেন না। ব্রহ্মন ভয় করবেন কি? তাঁর তো কোন বোধই নেই। তিনি সমস্ত কিছু আত্মস্থ করে নির্বিকল্প ও নির্গুণ হয় আছেন। বস্তুত নির্গুণ হয়ে আছেন ব্রহ্মন নয় পরব্রহ্মন, ব্রহ্মন হলেন গতিশীল-EXPANDING. বৃ = To Grow থেকে বৃহমান = স্ফীত হওয়া ব্রহ্মন। এই নির্গুণ অবস্থায় ব্যক্তিসত্ত্বার সমস্ত বোধকে ছেড়ে দেওয়া সত্যি সত্যি বহুজনের কাছেই ভয়ের হয়ে ওঠে।

 চলবে...............